আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফাইবার অপটিকস এবং সিসিডি প্রযুক্তির নোবেল জয়

আমার ভুবন কান পেতে রয় ... ... দ্বীপ নিভে যায় সকলই ঘুমায় মোর আঁখি রহে জাগিয়া

দেখা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতিটা হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞানের হাত ধরে। আমরা এইযে আজ ব্লগ লিখছি বা মোবাইল চ্যাট করছি একটু ভেতরে গেলেই দেখবেন এসবই সম্ভব হয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের কল্যানে। এক কথায় পদার্থবিজ্ঞান হচ্ছে সকল মৌলিক আবিষ্কারের সুতিকাগার। কিন্তু দু:খের বিষয় হচ্ছে এখন ছেলেমেয়েরা পদার্থবিজ্ঞানের মত মৌলিক বিজ্ঞান না পড়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তেই বেশি আগ্রহী। বেশি অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যেই যে এমনটা ঘটছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

পদার্থবিজ্ঞানের একজন সামান্য ছাত্র এবং অনুরাগী হিসেবে এজন্য আমার একটু খারাপও লাগে। আমার তো সবসময়ই মনে হয় পদার্থবিজ্ঞান হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় একটি বিজ্ঞান যা সব মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেয় কিংবা দেওয়ার চেষ্টা করে। যাইহোক এবার আসি এবারের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের বিষয়ে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এমন দুটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ২০০৯ সালের পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ৩ জন পদার্থ বিজ্ঞানী। চার্লস ক্যাও, উইলার্ড এস বয়েল এবং জর্জ ই স্মিথ ফাইবার অপটিকস এবং আলোক সংবেদী সেন্সর প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য তাদের এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

আর তাদের উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ইতিমধ্যেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এ তিন বিজ্ঞানী চার্লস ক্যাও, উইলার্ড বয়েল এবং জর্জ স্মিথকে নোবেল জুরিবৃন্দ ‘দ্য মাস্টার্স অব লাইট’ খেতাবে ভূষিত করেন। তামার তারের মাধ্যমে পরিচালিত পুরনো টেলিফোনি ব্যবস্থা এবং প্রথাগত চিঠিপত্রের যুগটাকে সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট মাধ্যমে এবং ই-মেইল ও ইন্সটেন্ট মেসেজিংয়ের যুগে পাল্টে ফেলার জন্য তাদের এ বিশেষণে বিশেষিত করা হয়। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের হারলো-তে গবেষনাগারে চার্লস ক্যাও এ বছরের পদার্থ বিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয় দুটো পৃথক বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের জন্য। আর ওটাকে ভিত্তি করেই পরবর্তীতে গড়ে উঠেছে বা উঠছে আজকের দিনের নেটওয়ার্কড-সোসাইটি ।

এছাড়া দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রার নানা ব্যবহারিক উপাদানেও ব্যবহৃত হয়েছে এ বিজ্ঞানীত্রয়ের আবিষ্কার। এ দুটো প্রাযুক্তিক উন্নয়নের একটি হচ্ছে ফাইবার অপটিক কেবল। এ ব্যবস্থাটির কল্যানে আলোর গতিতে তথ্য প্রেরণ সম্ভবপর হয়েছে। আর অন্যটি হচ্ছে ডিজিটাল সেন্সর। যেটা ডিজিটাল ক্যামেরার ‘ইলেকট্রনিক চোখ’ স্বরূপ।

তথ্য-যোগাযোগর মাধ্যম হিসেবে গ্লাস ফাইবার এর মাধ্যমে আলো-কে ব্যবহার করার অনবদ্য সাফল্যের জন্য এ পুরস্কার পেলেনচার্লস ক্যাও। তিনি পুরস্কারের অর্ধেক অর্থ পাবেন। হংকংয়ে জন্মগ্রহণকারী ক্যাও একইসাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য উভয় দেশেরই নাগরিক। অন্যদিকে পুরস্কারের বাকি অর্ধেক ভাগ করে নেবেন উইলার্ড বয়েল এবং জর্জ স্মিথ। বয়েল কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে উভয় দেশেরই নাগরিক এবং স্মিথ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

উল্লেখ্য পূরস্কারের মোট অর্থের পরিমান ১.৪ মিলিয়ন ডলার। বয়েল এবং স্মিথ পুরস্কারটা পেয়েছেন ইমেজিং সেমিকন্ডাকটর সার্কিট উদ্ভাবন করার জন্য। এটা সিসিডি বা চার্জড কাপলড ডিভাইস সেন্সর নামেই বেশি পরিচিত। এটার কল্যাণেই ডিজিটাল ক্যামেরা এত দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পেরেছে। বয়েল এবং জর্জ সিসিডি সেন্সর উদ্ভাবন করেন ১৯৬৯ সালে।

এটা আলোক সংকেতকে বৈদ্যুতিক সঙ্কেতে রূপানত্মরিত করতে পারে। আর এর মূল ধারণা গড়ে উঠেছে আলবার্ট আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ ক্রিয়া (ফটো ইলেকট্রিক ইফেক্টে)’র ওপর ভিত্তি করে। এই আবিষ্কারের জন্য ১৯২১ সালে আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। উইলার্ড এস বয়েল (বামে) এবং জর্জ ই স্মিথ সিসিডি সেন্সর উদ্ভাবন করেন। বেল ল্যাবে ১৯৭৪ সালে তোলা এক ছবিতে তাদের দেখা যাচ্ছে পরীড়্গামূলক একটি টিভি ক্যামেরা প্রদর্শন করতে যেখানে প্রথাগত টিভি ক্যামেরার ভ্যাকুম টিউবের বদলে ব্যবহৃত হচ্ছিল একটি সিসিডি সেন্সর।

বয়েল এবং স্মিথের এই সিসিডি সেন্সর ফটোগ্রাফিতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলে। এর ফলে আগে ফটোফিল্মে রাসায়নিক উপায়ে আলোর যে নির্দিষ্ট রুপ ধরে রাখা যেত, সিসিডির সাহায্যে ফিল্ম ছাড়াই ইলেকট্রনিকভাবে সেটা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক যন্ত্রপাতিতেও সিসিডি সেন্সর ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন ডায়াগানস্টিক বা মাইক্রো সার্জারির কাজে মানুষের শরীরের ভেতরের অংশ দেখার জন্য এখন সিসিডি সেন্সর ব্যবহৃত হয়। ব্যবহারকারীর জন্য প্রথম সিসিডি ক্যামেরা তৈরি হয় ১৯৮১ সালে।

কিন্তু সেটা ছিল একটা বিপ্লবের সুচনা মাত্র। আজকের দিনের অধিকাংশ ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবহৃত হয় আরও কার্যক্ষম এবং কম উৎপাদন খরচের সিমস (কমপিস্নমেন্টারি মেটাল অক্সাইড সেমিকন্ডাকটর) সেন্সর। তবে উঁচুমানের ফটোগ্রাফিতে এখনও সিসিডি সেন্সর ব্যবহৃত হচ্ছে। এ দু’জন বিজ্ঞানী তাদের সব গবেষণা কাজই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে অবস্থিত বেল ল্যাবরেটরিতে। উইলার্ড বয়েলের বয়স এখন ৮৫ বছর।

পুরস্কার পাওয়ার খবরে তাঁর উচ্ছাসটা ছিল এমন, ‘এটা দারুণ একটা ব্যাপার। আর আমি এটা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে প্রতিদিনের দৈনন্দিন জীবনে নিজের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দেখতে কার না আনন্দ হয়। ’ এছাড়া বিভিন্ন অবজারভেটরী থেকে পাওয়া সিসিডি সেন্সরে গৃহীত গ্রহ-নক্ষত্রের ছবিগুলো দেখেও গর্ব অনুভব করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে চার্লস ক্যাও যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেন সেটাই আজকের ফাইবার অপটিকস যোগাযোগ সম্ভব করেছে।

ক্যাও হচ্ছেন সেরকমই একজন মানুষ যারা সবসময়ই সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকেন। ১৯৬৬ সালেই তিনি হিসেব কষে দেখিয়ে দিলেন কিভাবে আলো-কে ১০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত প্রেরণ সম্ভব হতে পারে। যেখানে ৬০ এর দশকের ফাইবার ক্যাবলের সাহায্যে মাত্র ২০ মিটার দুর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হতো। তিনিই প্রথম বলেন, কাঁচ থেকে ভেজাল (ইমপিউরিটি) দূর করে আরও বিশুদ্ধ কাঁচ তৈরি করতে পারলে আরও এফিশিয়েন্ট গ্লাস ফাইবার তৈরি সম্ভব, যার মাধ্যমে অনেক দূরেও আলো প্রেরণ সম্ভব হবে। তার উদ্ভাবন অন্যান্য বিজ্ঞানীকেও এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

আর এর ফলেই ১৯৭০-এ প্রথম আল্ট্রাপিউর ফাইবার ক্যাবল তৈরি হয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.