আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিএনজি ও ক্যাব চালকদের দৌরাত্ম্যে নাকাল ঢাকাবাসী ( (

ফেসবুক আইডি:নাই
তেজতুরি বাজারের বাসিন্দা ব্যাংকার হাবিবুল ইসলাম শুক্রবার সকালে কারওয়ান বাজার থেকে কেনাকাটা করে বাসায় ফিরছিলেন। ওয়াসা ভবনের কোণে এসে তিনি ব্যস্ত ভঙ্গিতে সিএনজি অটোরিকশা চালককে ডাকতে থাকেন। ১৫ মিনিটের মধ্যে অনেক সিএনজি অটোরিকশা চালককে ডেকেও গন্তব্যে যেতে কাউকে রাজি করাতে পারলেন না তিনি। কেউ এতো কম দূরত্বে যেতে রাজি নন। এর মধ্যে দুজন ভাড়া চাইলেন ৫০ টাকা।

মেজাজ খারাপ করে তিনি ট্যাক্সিক্যাবে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কোনো ক্যাবও ৫০ টাকার কমে যেতে রাজি হলো না। অগত্যা বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাঝারি কর্মকর্তা এ ভদ্রলোক বাজারের দুই ব্যাগ দুই হাতে নিয়ে হেঁটেই ছুটলেন বাসার দিকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবুল কালাম গত বুধবার দুপুরে নয়াপল্টন থেকে তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়ে যেতে সিএনজি অটোরিকশা খুঁজতে থাকেন। একাধিক চালককে অনুরোধ করেও তার গন্তব্যে যেতে কাউকে রাজি করাতে পারলেন না।

যে দুজন যেতে রাজি তারাও মিটার বাদ দিয়ে সরাসরি অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। এ নিয়ে তর্ক বেধে গেলে এক চালক বলেন, এতো কথার দরকার কী? না পোষাইলে হাঁইটা যানগা। মিরপুরের গৃহবধূ সাদিয়া পারভীন বলেন, তিনি সিএনজি অটোরিকশায় চড়া ছেড়েই দিয়েছেন ছিনতাইয়ের ভয়ে। চোখের সামনে অনেক ছিনতাই দেখে আতঙ্কে থাকেন, সিএনজি অটোরিকশায় চড়লেই হয়তোবা ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়বেন। ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকা অবস্থায় ছিনতাইকারীরা ব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল সেট টান দিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়।

সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের যোগসাজশ রয়েছে। একাধিক যাত্রীর সঙ্গে আলাপ করলে তারা অসহায় কণ্ঠে বলেন, আগে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা গ্যাস সঙ্কটের কথা বলতেন। এখন বলেন, মালিকের জমা বেড়ে গেছে। অনেকে কোনো অজুহাত ছাড়াই বাড়তি টাকা দাবি করেন। একই অবস্থা ট্যাক্সিক্যাবের ক্ষেত্রেও।

নিম্নমানের গাড়ি আর যন্ত্রাংশের অভাবে নগরীতে ক্যাবের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ট্যাক্সিক্যাব পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। আর যে সামান্যসংখ্যক ক্যাব রাস্তায় চলছে সেগুলোও এখন মিটারে চলে না। ফলে নারী, শিশু, বয়স্ক লোক ও রোগী পরিবহনে সিএনজি ও ক্যাব অত্যন্ত ব্যয়বহুল সার্ভিস হিসেবে পরিণত হয়েছে। অথচ সরকার নির্ধারিত নীতিমালায় ট্যাক্সিক্যাব ও সিএনজি অটোরিকশা যে কোনো স্বল্পতম দূরত্বের গন্তব্যে মিটারে যেতে বাধ্য।

কিন্তু বাস্তবে এ বাধ্যবাধকতাকে চালকরা পাত্তাই দিতে চান না। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার কোনো ক্যাব-সিএনজি অটোরিকশাকে ন্যূনতম দুই কিলোমিটারের দূরত্বে যেতে বাধ্য করতে পারছে না। ক্যাব ও সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা খুব সহজেই বেশি দূরত্বের ভাড়া পেয়ে যান। ফলে অল্প দূরত্বের রাস্তায় তারা এখন যেতে চান না। একটা সময় ছিল দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর তাদের গ্যাস ভরতে হতো।

এখন রাজধানীতে শতাধিক সিএনজি ফিলিং স্টেশন হয়েছে। ফলে যানবাহন প্রতি ফিলিং স্টেশনের অনুপাত কমে এসেছে। এখন একটি ক্যাব বা সিএনজি অটোরিকশা কয়েক মিনিটের মধ্যেই গ্যাস ভরতে পারছে। কিন্তু তারপরও তারা কম দূরত্বের রাস্তায় যেতে চাইছে না। উপরন্তু যানজট বেশি হলে কিংবা সন্ধ্যার পর নিরাপত্তার অজুহাতে তারা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে।

যাত্রীরা বাধ্য হয়ে এসব যানবাহনে বাড়তি ভাড়া দেয়। একাধিক সিএনজি অটোরিকশা চালক জানান, সিএনজি থ্রি হুইলারের দৈনিক জমা এখন ৬০০ টাকার বেশি। অনেক মালিক ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত জমা রাখেন। এ টাকা জমা দিয়ে তাদের লাভ করতে হয়। এ জন্য তারা মিটারে ও কম দূরত্বে যেতে চান না।

সরকারি হিসাব মতে, বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন নেয়া সিএনজির সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এর বাইরেও একই নাম্বার প্লেট নিয়ে আরো কয়েকশ ভুয়া রেজিস্ট্রেশনধারী সিএনজি অটোরিকশা চলছে ঢাকার রাস্তায়। ট্যাক্সিক্যাব চলছে প্রায় দেড় হাজার। এ বিপুলসংখ্যক যানবাহনের চালকদের দৌরাত্ম্যে প্রতিদিন নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। গত বছর ২৫ এপ্রিল সরকার সিএনজির দাম বাড়িয়ে পরদিনই সিএনজি থ্রি হুইলার ও ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ করে দেয়।

সিএনজি থ্রি হুইলারের ন্যূনতম ভাড়া ১৮ টাকা, নন-এসি ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া ৩০ টাকা এবং এসি ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তারপরও সিএনজি অটোরিকশা ও ক্যাব চালকরা যাত্রীদের প্রতিদিন চরম হয়রানি করছেন। বিআরটিএর একাধিক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপপরিচালক বলেন, এটা ট্রাফিক পুলিশের ব্যাপার। রাস্তায় তারা আইন প্রয়োগ করতে পারেন না।

রাস্তার দায়িত্ব পুলিশের। বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম মাসুদ আলম যায়যায়দিনকে জানান, ক্যাব-সিএনজি অটোরিকশা মালিকদের অতিরিক্ত জমা এবং চালকদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে তারা শিগগির অভিযান পরিচালনা করবেন। এরই মধ্যে তারা বেশ কিছু ক্যাব ও সিএনজি অটোরিকশা আটক করেছেন। --যায়যায়দিনে ছাপানো।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.