আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্নি টু 'যশোর’ - পথে পথে প্রথম দিন

নিজেকে নিয়ে কিছু একটা লেখার চেষ্টা, এখোনো করে যাচ্ছি . . .

২৩ সেপ্টেম্বর,২০০৯; বুধবার। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ী যশোর ভ্রমণের বাসের টিকেট পূর্বেই কনফার্ম ছিলো, অবশ্য আগের রাতে বাস সার্ভিসেরা ফোনে সময়টা একদফা চেঞ্জ করেছিলো, সময়টা একদম ভোরে । আমি আর বাবা যাবো মার্সিডিজে - নতুন বাস-এসপি গোল্ডেন লাইন, ঢাকা টু সাতক্ষীরা। আর বাকী তিনজন, মা, ছোটটা আর আমার বন্ধু ওরা একই সার্ভিসের অন্য বাসে, আমাদের সময় সকাল সাড়ে সাতটা আর ওদেরটা সাড়ে আটটা। অবশ্য রাতেই সব গোছানো শেষ।

সমস্যা বাঁধলো যখন অত ভোরে রিকশাও পাওয়া যাচ্ছিলোনা; কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যেতে হবে। শেষ মেষ একটা গতি হলো তাও অনেক চড়াই উৎরাই-এর পর। বাস স্ট্যান্ডে পৌছে মায়ের খেয়াল হলো বাসার ছোট কাজের মেয়েটা গ্যাসের চুলা বন্ধ করেছিলো কিনা, ছোটটা আবার ছুট দিলো বাসায়, এর মধ্যে মার্সিডিজে আরো তিনটে সিটের বন্দোবস্ত হলো, গাড়ী ছাড়ারও সময় হয়েছে, ছোটটা তখনও বাসা থেকে ফিরতে পারিনি, অস্থিরতায় পায়চারী করছি আর ফোনে বারবার ডায়ালিং। গাড়ী থামিয়ে টিকেট চেঞ্জ করলাম ততক্ষনে, অবশ্য এক্সট্রা পে করতে হলো এজন্য। তবুও ভাল একসাথে সবার টিকেটও হলো আর মজা করেই একসাথে যাওয়া যাবে।

ছোটটা গাড়ীতে উঠলে সাতটা চল্লিশে স্টেশন ছাড়লো গাড়িটি। বেশ বিলাশবহুল বাস। মা আর বাবা সামনের সিটে; সি-থ্রি ও সি-ফোর, ছোটটা আর বন্ধু জি-থ্রি, জি-ফোর; আর আমি জি-টু, কিছুটা পেছোনে। আমার পাশের সিট জি-ওয়ানে একটা মেয়ের সিট, পায়ে সার্জারীর ব্যান্ডেজ, কম্বল গায়ে পা তুলে বসা ছিলো, আমি বসাতে সরে বসলো। গাইড কম্বল দিতে চাইলে প্রথমে না করলেও টেম্পারেচার এত লো’তে ছিলো পরে দেখি সবাই কম্বল জড়িয়ে আছি, আমিও বাদ গেলাম না।

সাভার ক্রসের পরপরই বৃষ্টি; অল্প, তাতে কি ! নীল পর্দায় সাদা কাচেঁর ফাকে যতটুকুন দিনের আলো আসছিলো তাতে মেঘের আধাঁরই ছিলো বেশী। মেয়েটির বসতে অসুবিধা হওয়াতে পেছনের ফাঁকা একটা সিটে উঠে গ্যালো। আমার বন্ধুটির মিচকি হাসির অর্থ বুঝলাম না। বাসের মধ্যে এলসিডি স্ক্রীণে হুমায়ুর আহমেদের কিছু হাসির নাটক হচ্ছিলো তখন, অবশ্য ততক্ষনে হেডফোনের আওয়াজে কান ঝাঝালো। আরিচা ঘাটে পৌছালাম সাড়ে ন’টার আগেই, ঈদের রাস্তা-এম্নিতেই ফাঁকা।

ফেরী পেতে অসুবিধে হয়নি। ফেরীর একদম উপরের ডেকে উঠেছিলাম, আকাশও পরিষ্কার, নদী আর বিস্তীর্ণ পাড়ের সবুজ সজীবতা ছুয়ে গ্যালো এক পশলা। ও পাড়ের রাস্তাটা দূর হওয়ায় সময়ও লাগে বেশী। মাঝে একটা রেস্টুরেন্টে পনেরো মিনেটের ব্রেক, বার্গার, ক্লোড ড্রিংকস্ আর চমুচা নিয়ে উঠলাম। চমুচা জিনিসটি আমার খুব প্রিয়।

যশোর শহরে পৌছতে পৌছতে দুপুর একটা। মেয়েটা সেখানেই নেমে গ্যালো। আমাদের গন্তব্য আরও দূরে। দু’টোর দিকে যখন গন্তব্যস্থল ‘বাগআচড়া’ পৌছালাম কড়া রোদের তেজে মাথা তেতে যাচ্ছিলো। খালাতো ভাই-শাপ্পু আর তৌহিদ আংকেল আগেই বাজারে অপেক্ষায় ছিলো আমাদের নেবার জন্য।

‘খালামণির’ বাড়ীর পথে ভ্যান-ই একমাত্র উত্তম মাধ্যম। প্রায় পৌনে তিনটেই পৌছে গেলাম আমরা সকলেই। “খালু, আসসালামু আলাইকুম” – ‘ওয়ালাইকুম আসসালাম, কেমন আছো বাবা’ নিজেদের পুকুরে কলার ভেলায় ভেসে জাল ফেলছিলো আর উত্তোর দিলো আমায়। “খালু, উঠে আসেন তো আর মাছ ধরা লাগবেনা” – ‘তোমরা যাও আসতিছি’, খালামণি’টা তো একদম পুরোদস্তুর মায়াবী। “কিরে কেমন আছিস” - ছোট খালাতো ভাইটা হাসি দিয়েই ব্যাগ গুলো বয়ে ভেতরে চললো।

ঈদের আগ থেকেই আমি কিছুটা অসুস্থ, আগের দিন হাসাপাতালের ইমার্জেন্সিতে ইনজেকশন নিতে হোলো আর সাথে তো হাই এন্টিবায়োটিক শুরু। সারাদিনের ক্লান্তির চেয়ে এমন অসুস্থতা বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দিলো, এতদিন পর বেড়াতে এসে ... কার ভালো লাগে ! পুকুরের তাজা রুইয়ের ঝোল আর গরুর মাংসে দুপুরের খাবার খেতে খেতে প্রায় পাঁচটা বেজে গ্যালো। ছোটটা আর বন্ধু-নবীন, খালাতো ভাইদের সাথে বাইরে বের হোলেও আমি বিছানায় কাত হলাম। এক কাতেই সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, তাও মাঝ রাত। ছোট খালাত ভাই আর মা দুজনের ডাকাডাকিতে যখন চোখ মেলে তাকালাম দেখি ঘড়ির কাটায় তখন রাত সাড়ে এগারোটারও বেশী।

রাতের ওষুধ খেতে হবে বিধায় কোনমতে ঘুম চোখে দু-মুঠো খেয়েই আবার শুয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে পড়লাম তো পরলাম..... রাত কাবার .... . . . অনাবৃত সাত !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।