আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এবারে বোধহয় মোবাইল গেমই বানাতে হবে

আমি একজন শিল্পী, গেমার এবং প্রোগ্রামার
আপনারা আগে যদি আমার ব্লগ পড়ে থাকেন তো নিশ্চই জানেন যে আমি একজন গেম ডেভেলপার। আজকে আমি আমার গেম ডেভেলপিং নিয়ে কিছু বলি। আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখনই আমার কম্পিউটারের প্রতি খুবই আকর্ষন অনুভুত হয়। আগে যখন ছোট ছিলাম তখন ভিডিও গেমসের দোকানে মোস্তোফা গেমটা দেখে মনে হত যে আমিও একটা বানাব এমন। যদিও তখন আমি ২ বারের বেশি কোন গেম খেলতে পারিনি বিভিন্ন সমস্যার কারণে।

পরে বড় আপা একটা ব্রিক গেমের ছোট কনসোল আমাকে আর ভাইয়াকে দিয়েছিল। সেটা অসংখ্যবার খেলেছি। খেলে ভাবতাম যে এই গেমগুলোতে চারকোনা বাক্সকেই ব্যবহার করা হয় সবকিছু দেখাতে। আমি তখন ভাবলাম যে তাহলে এটা দিয়ে কি রঙিন ছবি বানানো যাবে!! তখন অনেক গবেষণায় আমি কম্পিউটারের রেজুলেশনের ব্যাপারটা ধরতে পারি। এবং ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে টিভি ইত্যাদি ইত্যাদি আমি পাঠাগার থেকে বই এনে পড়ে বুঝে নিলাম।

একসময় গেমিং কনসোলটা ভেঙ্গে গেল। আমি এর ভিতরের সার্কিট দেখে তেমন কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে এটুকু আন্দাজ করেছিলাম যে এটাতে মুল ব্রেইনটা আছে। ব্যাস তখন অনেক পরিকল্পনা করে ফেললাম। একটা কাঠ দিয়ে বানানো রোবোটের নকসা করে ফেললাম শুধু ব্রেইনের জায়গাটায় লিখে দিলাম যে ভিডিও গেমের সার্কিট।

অনেকদিন সার্কিটটা নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম আর মাঝে মাঝেই ওর সাথে কথা বলতাম খেলার ছলে কেননা আমি ভাবলাম যে কারেন্ট পেলেই তো এটা জীবন্ত হয়ে উঠবে। আমি ওর নাম দিয়েছিলাম সালমা। পরে যখন সিক্সে উঠলাম তখন সার্কিটের জটিল গঠন দেখে না বুঝলেও ভেবেছিলাম তার মানে ব্রেইনটাও নিজে বানাতে হয়!!! আমি ভেবেছিলাম যে ওটা বোধহয় আল্লহ বানিয়ে দেয়। আর তখন বুঝলাম যে সালমা জীবন্ত হলেও সে বুদ্ধিমতি হবেনা। তাই তাকে ডয়ারে বন্দি করে রেখেদিলাম।

কম্পিউটারের প্রথম যে বইটা লাইব্রেরী থেকে এনেছিলাম দুর্ভাগ্যক্রমে সেটি ছিল ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের। কম্পিউটার না থাকলেও সেটি থেকে আমি শিখেনিলাম। যদিও আমি কখনোই বলব না যে সে শেখাটা ১০০% ছিল। তবে আশা করি ৩৫% তো হবেই। আমার মামাতো ভাই কম্পিউটার কিনেছে সেখানে আমার বসার সুযোগ হল যদিও কেউ বাচ্চাকে বসতে দিতে চায়না তাও আবার সে নতুন ইউজার বলে সে কম্পিউটারকে সব সময় পারলে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখত কেননা যদি গরম হয়ে নষ্ট হয়ে যায়।

বসেই আমি হা কেননা ওটা ছিল উইন্ডোজ ৯৮। আমি বেশ চিন্তাতে পরে গেলাম। আমার আরেক ভাইকে ব্যাপারটা বললে সে বলল যে যদি ইন্টারনেট থাকত তাহলে নাকি আরও অন্য রকম হত। আমি বেশ হতাস হয়ে গেলাম। তবে কিছুদিন পর আমি অপারেটিং সিস্টেমের ব্যাপারটা বুঝে গেলাম এবং ঐ ভাই এর কথা যে সত্য না তা ধরে ফেললাম।

এবং তাকেও আমি ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিলাম। পরে আমি এস.এস.সি. পর্যন্ত অনেক প্যাকেজ প্রোগ্রামের বই পড়ে তা শিখলাম এবং জমিয়ে রাখলাম ইমপ্লিমেন্ট করার জন্য। এস.এস.সি. -র পরে আমি আপার বাসায় কম্পিউটার পেলাম। ব্যাস সবকিছু করে দেখেনিলাম। আর সবাই এ ঘটনা দেখে ভুত দেখার মত হয়ে গেল।

কেননা কেউ জানত না আমি কি পড়ছি সবাই ভাবত যে আমি খেলা করি হাঃ হাঃ হাঃ। তবে আম্মা জানত আর ভাইয়া জানত। তো সবাই যখন আমাকে আল্লহর স্পেশাল সৃষ্টি বলতে শুরু করল তখন আমি তাদের ভুল ভাঙ্গিয়ে দিলাম। এরপর এইচ.এস.সি. পড়তে গিয়ে প্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করলাম। ব্যবহার করতে গিয়ে বেশ কিছু নতুন জিনিসের নাম শুনলাম যেমন HTML, DHTML, JAVASCRIPT ইত্যাদি।

আমি ক্ষেপে গিয়ে সবগুলো শিখে ফেললাম। এরপর এক এক করে QBasic, Visual Basic, Lingo Script, Action Script ইত্যাদি সহ আরও অনেক ল্যাংগুয়েজ শিখে ফেললাম। আমি H.S.C. তে বায়োলজি না নিয়ে কম্পিউটার শিক্ষা নিয়েছিলাম কেননা আমি ডাক্তার হতে চাইনা প্রোগ্রামার হতে চাই। আর যদি আমি বায়োলজি নিতাম তাহলে সবাই আমাকে জোর করে ডাক্তারিতে পরীক্ষা দিতে বলত। হা হা হা হা।

আমাদের যখন ল্যাব হত তখন কম্পিউটারের স্যার আমাকে ল্যাব নিতে দিতেন। স্যার আমার কাছ থেকে মাঝে মাঝেই প্রোগ্রামিং টিপস নিতেন। তবে স্যার খুবই ভাল মানুষ তিনি নিজে যা নতুন জানতেন তখনই আমাকে খুজে জানিয়ে দিতেন। H.S.C. এর পরে আমি গেম প্রোগ্রামিং এর সাথে পরিচিত হলাম যদিও সেটা ছিল 2D এবং আমি একটা গেমের কথা চিন্তা করলাম নাম দিলাম Superstars। যাতে আমি চেয়েছিলাম যে বিভিন্ন নায়কেরা মর্টাল কমব্যাটের মত মারামারি করবে।

তবে আমি পারলাম না কেননা আমার কাছে সব নায়কের এনিমেশন সিকুয়েন্স ছিলনা। তবে আমি প্রোগ্রামিং সবটাই প্রায় করেছিলাম। আমি আবার কিছুদিন অনেক কিছু শেখলাম এর মধ্যে ছিল C, C++, CSS, AJAX, JAVA, Perl, PHP, VC++, Ruby, ASP, JSP, Python, Prolog, PASCAL, COBOL, ... ইত্যাদি .. . অবশেষে OpenGL যদিও তখনও আমি কম্পিউটার গ্রাফিক্স শিখিনি। আমি ব্যাস আবার একটা গেমের কথা চিন্তা করলাম নাম Visitor : the last chance গেমটাতে অনেকটা Shade : Wrath of Angels গেমটার ছাট ছিল। আমি আমার টিম তৈরী করলাম তবে প্রধান সমস্যাটা হল আমার মত আর কাউকে পেলাম না।

আর আমাদের মধ্যে কেউ 3D মডেল তৈরী করতে পারত না। তাই আবার মুষরে পরে গেলাম। এবার আমি 3D Studio Max, Maya, Poser, Cinema 4D, Lightwave সহ আরও অনেক সফটওয়্যার শেখলাম। তবে আমি কখনও কারও কাছ থেকে শিখিনি। আমি নিজেই বিভিন্ন ই-বুক পড়ে শিখেছি।

আমি 3D মডেল ডিজাইনার হিসেবে ভালই পরফর্মেন্স দেখালাম। কিন্তু আবার সমস্যা সেটা হল আমিই যদি মডেলার হই তাহলে কেউ লিড প্রোগ্রামার নেই। তাই আমি আবার প্রোগ্রামারের কাজেই ফিরে গেলাম। এবং আমি এরপর কোনদিন ডিজাইনিং এ যাইনি। কেননা আমি প্রোগ্রামার, ডিজাইনার না।

এবং আমি দেখলাম যে সকল গেম কম্পনিতেই এবং মুভি কম্পানিতেও ডিজাইনার হতে হলে বেশ ভাল প্রোগ্রামিং জানতে হয়। তবে আমাদের দেশে না। যাককা। এরপর আমি Bey of Bengal নামে আরেকটি স্ট্রাটেজি গেম বানাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এটাও হলনা।

এরপর আমি DirectX সহ Computer Graphics এর জটিল এ্যালগরিদমগুলো শিখে নিলাম। এবং "পদ্মা নদীর মাঝি" নামে আরও একটি স্ট্রাটেজি গেম বানাতে গেলাম। এবং এবারও ধাক্কা খেলাম। আমি বাস্তবতা বুঝলাম। এবং দমে গেলাম।

এরপর একদিন আমার মেসের এক ভাই আমাকে এসে একটা রেসিং গেম বানানোর জন্য ধরতে লাগল। আমি তো ততদিনে বাংলাদেশের মানুষের দৌড় বুঝেগেছি। আমি বললাম আপনি আমাকে প্রাথমিকভাবে কিছু মটর সাইকেল, মানুষ, গাছপালা আর শহরের বিভিন্ন মডেল তৈরী করে দেন। আমি কাজ শুরু করব। তাকে আমি ২ বছর সময় দিলাম সে আমাকে আর কোনদিন কিছু বলল না এ ব্যাপারে।

আরও কিছুদিন পর আমার এক Communication এ পরদর্শী বন্ধু এসে আমাকে বলল যে আমরা কি পারিনা কোন গেম তৈরী করতে। আমি তাকে স্ট্রিট ফাইটার এর মত একটা গেম বানানোর জন্য বললাম। সে কিছুদিন দৌড়া দৌড়ি করল। আমি নিজেও আমার ইন্সটিটিউটে খুজলাম এমন লোক যে কিনা গেমিং এর কিছু পারে, আমি পেলাম না। কিছুদিন পর আমার সেই বন্ধুটা আচ্ছামত জব্দ হল।

আমি মাঝে মাঝেই তাকে এ নিয়ে খোচাই। হা আহ হাঃ। এত বড় ব্লগ লেখা আসলে তাকে খোচানোরই আরও একটা প্রচেষ্টা মাত্র। তবে সে খোচা খুব ভাল মতউ হজম করতে পারে। মাঝখানে আমি Funcom নামে নরওয়ের একটি কম্পানিতে Tools Programmer এর জন্য Java টেস্ট দিলাম।

এবং আমি সবচেয়ে ভাল করলাম। এবং কাজটা আমি করলাম ২ দিন কম সময়েই। তারা আমাকে বলল যে আপনি আমাদের দেশ থেকে অনেক দুরে আপনাকে আনতে হলে খরচ বেশি, আপনি অনার্স শেষ করেননি তাই এত বড় একটা পোস্টে আপনাকে বসাতে আমাদের এখানের ওয়ার্ক পারমিট জোগাড় করতে হবে এবং তা অনেক ঝামেলা সাপেক্ষ, আপনি আগে কোন গেমিং কম্পানিতে কাজ করেননি। এজন্য আমরা আপনার পরের তিনজনকে নিলাম। এরপর আমি অনেক কিছু চিন্তা করে Shaders, Physx in Gaming, Simulating Human in Games, Art of Games, Sex twist in story ইত্যাদি নিয়ে অনেক লেখা পড়া করলাম তবে কোথাও কিছু করলাম না।

কেননা আমি অনার্স শেষ করে কাজ করব। পাশা পাশি আমি একজন J2ME Programmer হিসেবে ইচ্ছা হলে কাজ করি না হলে ডাইরেক্ট না করে দিই এমনভাবে কাজ করছি। আর পি.এইচ.পি. এর উপর ডজনখানেক ছাত্রকে পড়াই। তবে আমার চেয়ে ছোট কোন ছাত্র আমার নেই। হা হা হাঃ তাই সবাইকেই বলতে হয় অমুক ভাই একটু দেখেন বা অমুক সাহেব একটু এটা করেন।

আমি শখের বসে Pacman গেমটা j2me তে বানিয়েছি। আমি বর্তমানে বিভিন্ন গেম খেলি, গেমিং ওয়ার্ল্ডে নতুন যা আসে ডেভেলপারদের জন্য তা শিখি আর ব্লগে সামান্য কিছু লিখি। বর্তমানে আমি Lua Script নিয়ে এবং Assassin's Creed এর Crowd টেকনোলজি নিয়ে ব্যাস্ত আছি। আমার কিছু কাজ করা টেকনিক আছেঃ Team Ninja -র Bouncing Boobs টেকনিক, Doom এর লাইটের সামনের ধুলার টেকনিক, NFS এর সর্টকাট খোজার টেকনিক ইত্যাদি... আমি কিছু লজিক্যাল পাজলও বানিয়েছিঃ ফ্যান্টস্টিক ফোর প্রবলেম, সেড গেমের প্রবলেম, NFS এর প্রবলেম ইত্যাদি। অবশেষে আমার ইদানিং মনে হচ্ছে আসলে আমরা বাঙ্গালীরা ঠিক মত ভাতই খেতে পাই না আর গেম তৈরী!! যে টুকো টেকনোলজির বিকাশ হয়েছে তাই বা আমাদের ক্ষেত্রে কম কি!! বর্তমানে আমরা আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

যেমন ধরুন আমার সকল কলেজের বন্ধু ফেসবুক ব্যবহার করে। অর্থাৎ একটা ক্লাস মানে আমাদের কলেজের এক ইয়ারের সব ছাত্র ছাত্রীই ফেসবুক ব্যবহার করে। সাইন্স, আর্টস, কমার্স সবাই ব্যবহার করে। তাহলেই বুঝুন আমরা উন্নতি হচ্ছি নাকি পিছিয়ে পরছি?!?! তাই আমি চিন্তা করছি আমি অনার্স শেষ হতে হতে একটা ফাটাফাটি মোবাইলের গেম বানিয়ে ফেলি। এজন্য ভাবছি একটা দল তৈরী করব।

এখন বাকী সব আল্লহর ইচ্ছা। আপনারা দোয়া করবেন। আজ আর না খোদা হাফেজ।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.