আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: মনের ভিতর মনস্তাপ এবং একটি ডুমুরপত্রিকা

ডুবোজ্বর

আবার ঘুমোতে চেয়েছি আমি/ অন্ধকারের স্তনের ভিতর/ যোনির ভিতর/ অনন্ত মৃত্যুর মতো মিশে থাকতে চেয়েছি... --জীবনানন্দ দাশ। _____________________________________________ ০১. দেখা হলে নিশ্চয় চা খাওয়াবো। এবং ক্যাম্পে কবিতাটি পড়বো। আমার বান্ধবী নেই, কিন্তু বন্ধু আছে। কেননা মেয়েরা কেবল শরীরেই মেয়ে আর সবদিক দিয়ে মানুষ।

০২. নদী ভেঙে তাকে দিতে পারো ঘুম তার চোখে চোখ রেখে রাত্রি নিঝুম এই দিলাম দুইলাইন পদ্য। জীবনানন্দ আমার প্রথমপ্রেম। তাই একটু অন্যমনস্ক হলেই তিনি ঢুকে পড়েন। তবে বুঝতে পারলেই তাকে অন্যত্র তার গ্রন্থেই সযতনে তুলে রাখি। ০৩. কবিতা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্প।

আর শিল্প কারো কাছে দায়বদ্ধ নয়। তাই কবিতা কোনো মেসেজ বহন করে না। যেসব কবি(?) কবিতা(?) কে কালের মেসেন্জার বানিয়েছেন, তারা এবং তাদের সৃষ্টি কিছু হয়েছে কিনা তা বিবেচ্য। কবিতা মূলতই স্বতঃস্ফূর্ত এবং কবির অস্তিত্বের যন্ত্রণাকে প্রকাশ করে। অথবা কবির উপলব্ধি এবং একান্ত সুন্দর অথবা আত্মরতিকে প্রকাশ করে।

প্রতিক্রিয়া কিংবা দায় থেকে আর যা-ই সৃষ্টি হোক শিল্প হয় না। ০৪. গন্জিকা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর সত্যি কিন্তু শিল্পের পক্ষে কিছুটা উপকারী। তাই শিল্পের স্বার্থে যিনি নিজের ক্ষতি করতে পারেন, আমার মনে হয় কথিত-মেধাবীরা তার পায়ের নখের যোগ্যও নন। ০৫. অনুপ্রেরণা খারাপ কিছু না। খারাপ হলো প্রভাব।

কারও দ্বারা অনুপ্রাণিত হলে সেটা উল্লেখ না করলেও চলে। যদি মনে করেন কারও প্রভাব আছে তাহলে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়। ০৬. বাহুল্য মানে হলো আপনার কবিতায় হাজার হাজার শব্দ, কিংবা পরপর চিত্রকল্প। মানে ঠিক অতোটা কমপ‌্যাক্ট না। এটা অবশ্য আপনার স্টাইলও হতে পারে।

কিন্তু পাঠক (অবশ্যই একনিষ্ঠ)হিশেবে আমার মনে হলে যতোটা না কবিতার ঘোর, তারচে' বেশি শব্দের ঘোর আপনার; শব্দের 'পরও আপনার দারুণমায়া। যদিও আপনার শব্দ এবং শব্দবন্ধগুলো ভযানকসুন্দর। তথাপি পড়তে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি, কোন জায়গায় রাখবো ধ্যান। এটা অনেকটা অদ্ভুতসুন্দর নকশার মতো: দৃষ্টি কেবল ঘুরতে থাকে উপরে, এটা ধাঁধা তৈরি করে। ভিতরে ঢুকে গেলে পাশাপাশি অনেক সুন্দরকে অবহেলা করে যেকোনো একটি সুন্দরের ভিতর ঢুকে পরিভ্রমণ করতে হয়।

ফলে অন্যান্য সুন্দরের জন্যে হাহাকার জাগে প্রাণে। আমি যেটা মানি, কবিতার পরিণতি শিল্পনন্দনে, নকশায় নয়। একটি কবিতা একটিমাত্র দরোজা; যে-দরোজার ওপাশে অভাবনীয় সুন্দরতা প্রতীক্ষায় কম্পমান-- পাঠক ঘোরলাগাসারল্যে প্রবেশ করবে এবং সৌন্দর্যের ভুবনকে উত্তরোত্তর সুন্দর করবে তার স্বপ্নসত্যকল্পনায়। এবং অবশ্যই প্রতিটি পাঠকই আলাদা স্রষ্টা। কবি কেবল এক অপার সৌন্দর্যের দুয়ারই তৈরি করে দেন।

আর কিছু না। দরজার ওপারের জগত পাঠকের সৃষ্ট। মহাত্মা রোঁলা বার্থের 'ডেথ অব অথর' তত্ত্ব আমার মনে হয় কবি এবং কবিতার ক্ষেত্রেও খাটে। অবশ্য আমার কথাগুলি একান্তই আমার নিজস্বদৃষ্টিভঙ্গি। ০৭. কবিতা আমার কাছে একইসাথে সুরা(মদ) ও সুন্দর।

সুরা পান করতে হয় ধীরে ধীরে তাহলে বমিও হয় না এবং অভাবনীয় ঘোর তৈরি হয়, সুন্দরের কাছেও তেমনি যেতে হয়। ০৮. জীবনানন্দের কবিতা আমাকে শান্তি দেয়। ঘোর দেয়। হাহাকার দেয়। কিন্তু হাংরির কবিতা আমাকে আরো হাংরি করে দেয়।

মন চায় আকাশ কামড়াই, বাতাস কামড়াই। ০৯. সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করার মতো সীমা এখনো অতিক্রম করি নাই, দাদা। তবে একটা ছোট্ট পরামর্শ দিতে পারি, নার্সিসাস হয়েছেন তো মরছেন। নিজের লেখা যতোবার পড়বেন ততোবার ফাঁক পাবেন। নিজের সদ্য লেখা কবিতাটি বিরতি দিয়ে অন্তত তেইশবার পড়েন নিজেই বুঝতে পারবেন, কী সমস্যা।

১০. এলেনের দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিক ছিলো। কারণ তার জানাশোনার পরিধি ব্যাপক ছিলো। কিন্তু তিনিও কবিতা নিয়ে এক অর্থে স্টান্টবাজিই করেছেন। যেহেতু তিনি একটা সময় কবিতা লিখেছেন তাই নথিভূক্ততো অবশ্যই থাকবেন। কিন্তু ইয়েট্স, বোদলেয়ার, নের্ভাল, জীবনানন্দ, সিলভিয়া প্লাথ, এমিলি ডিকিনসনের মতো মানুষের বুকের ভিতর তার কবিতা লেখা থাকবে? আর কবিতা আমার কাছে সংগ্রাম।

আমার রক্তের ভিতর কথা বলে। এটা খুবি সিরিয়াস বিষয়। খেলা অবশ্যই নয়, ভাবালুতাও নয়। কবিতা আমার কাছে পরম। পরম মানে নিত্য।

পরমের কাছে আমি রক্তাক্ত হয়েই যাবো। ১১. সার্থক শব্দবন্ধ হলে কবিতা সবকিছুই হজম করতে পারে, মূত্র থেকে মধু পর্যন্ত। যেসব ছন্দমূর্খ কবিতায় শব্দের প্রয়োগ জানে না, তাদের লেখা পড়তে গেলে কিছু শব্দ চোখা পেরেকের মতো লাগে শব্দ। ১২. মলয়ের ক্ষমতা আছে সন্দেহ নাই। কিন্তু কবিতায় নানা নিরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি কবিতার কী দশাটা যে করেছেন, পড়লেই বুঝতে পারবেন।

আপনার মনে থাকার কথা তার প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার কবিতাটির আমি প্রশংসা করেছিলাম। এখনো করি। কেননা সেই কবিতার মধ্যে তিনি যে প্রচণ্ড গতির সঞ্চার করতে পেরেছিলেন-- সেই গতি তার বাক্যস্থ শব্দ ছাপিয়ে অবয়ব নিয়ে তীব্রবেগে প্রবাহিত হয়েছে। হাংরি জেনারেশন হলো এলেনের বিট জেনারেশনের অনুকরন। শক্তি আর সুনীল বেরিয়ে গিয়েছিলেন।

তাই শক্তি সার্থক। সুনীলেরও কিছু কবিতা খুবি ভালো। সুনীল যদি কেবল কবিতাই লিখতেন, তাহলে অনেক ভালো কবি হতেন। তিনি একই সাথে সবকিছু হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সবাই রবীন্দ্রনাথ হতে পারে না।

জীবনানন্দও পারেন নি। তাই তার গল্প আর উপন্যাস ব্যর্থ। হাংরি জেনারেশনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কবি উৎপলকুমার বসু। আর মলয় এখন পোস্টমর্ডানিজমের রাসুল। কবিতা লেখেন আমেরিকান রন প‌্যাজেটদের অনুকরণে।

১৩. প্রকৃতপ্রস্তাবে যিনি কবিতার পাঠক তিনি কখনোই মাথামোটা গাভী নন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।