আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈদের শপিং আর মাসাকাল্লি(মাছাককালি ) কথন !



ক'দিন ধরে ভাবছি ঈদ নিয়ে কিছু লিখি.... ব্লগে বসা না হলে লেখার তাড়না টুকুও কমে আসে। ভাবনাবিলাসী আমি ভেবে ভেবেই সময় করি পার। রোজা আসার শুরুতেই ছেলেদের স্কুল শুরু হয়ে গেলো। ওদের বাবা বলে ঈদের কাপড় কেনো। কত কার নাম যে বলে।

এর জন্য কেনো ওর জন্য কেনো। আমার আব্বাও ছোটবেলায় রোজার শুরুতে এমন শুরু করতেন। কাপড় কেনো ,জামা বানাও। খুব অবাক হয়ে যাই আমার আব্বাকে ও মোটে কয়েকদিনের জন্য দেখেছে। বিয়ের পর দেশ ছাড়লাম আমরা।

আব্বা চলে গেলেন আমরা প্রথমবার দেশে যাবার আগেই। খুব অবাক লাগে মাঝে মাঝেই খেয়াল করি ওর অনেককিছু আব্বার সাথে মিলে। আমার আব্বাও ছোটবেলায় বন্ধুরা বাসায় আসলে ট্রানস্লেশন ধরতেন। অংক ধরতেন। বানান ধরতেন।

ও ঠিক একই কাজ করে। আমি কখনো বলি ,কখনো বলিনা। শুধু অবাক হই........ভালোও লাগে। আমার বড় ছেলে মাঝে মাঝে অস্বস্তিতে ভোগে। ভাবে বন্ধুরা কিছু মনে করলো কিনা! ..আমি ওকে বলি তোমার বাবার স্বভাব এটাই।

ওকে আমার বাবার গল্প ও করি। যাই হোক কদিন খুব ঘোরাঘুরি করলাম। সবচেয়ে মজা লাগলো আমার ভাগনীর মেয়ের জন্য কাপড় কিনতে গিয়ে। আমার নিজের মেয়ে নাই বলে এত ছোট কাপড় কেনা হয়নি। মেয়েদের সেকশনে যেয়ে এটা দেখি ,ওটা দেখি।

এত সুন্দর সুন্দর সব জামা। মনে হচ্ছিল আমি পরী রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি.....কত রকম রং এর কাপড়গুলো। সাথে আবার ব্যাগ,জুতা ম্যাচিং করা। পুরা মাথা নষ্ট। ছেলেদের কাপড় কেনা খুব সোজা।

টি শার্ট ,সার্ট না হয় প্যান্ট। রাশীক ইদানিং পছন্দ গুলো প্রকাশ করে। রাইয়ান এর এবারকার পছন্দ বুকের কাছে মারিও লেখা টি শার্ট। আমি নিজেও কিছু কাপড় কিনলাম ওর জন্য। বুকের কাছে নানান গ্রাফিক্স করা টি শার্ট গুলো রাশীকের পছন্দ।

বললাম ঈদে ভালো কিছু নাও। জিন্স আর টিশার্ট ই নিলো। উপরে পড়ার জন্য কয়েকটা বুকের কাছে চেন দেয়া সোয়েট সার্ট। ওদের বাবার জন্য আমারি কিনতে হয়.....ওর পছন্দের রং সাদা....এবার ওর জন্য সাদা আর কালো মেলানো ফুল স্লিভ টি শার্ট কিনলাম। ওকে বলছিলাম দেশে থাকলে কত ভালো হতো।

কত কার কথা যে মনে হয়। প্রিয় কত মুখ। সবার জন্য ঘুরে ঘুরে শপিং করতাম ....আসলে দেয়ার মত আনন্দের কিছু নেই। মা ও ফোনে বলছিলো সেই কথা। গ্রামে গেছিলেন যাকাতের কাপড় দিতে।

মা বললেন একটা শাড়ি পেয়ে মানুষ যে কত খুশী হতে পারে ওদের মুখ দেখে তা বোঝা যায়। নিজের শাড়ী কিনতে গিয়েও বেশ মজা হলো এবার। দেশ থেকে আনা শাড়িগুলো ঠিকমত পড়া হয়নি এ কথা বললাম বেশ কয়েকবার। কে শোনে কার কথা। ! গত সপ্তাহে একবিকালে ও বলে চলো মন্ট্রিয়ল যাই।

হেসে বললাম পূর্ণিমা নাতো ! বলে চলো ইফতার করতে যাই। বুঝলাম কোন প্লান তো আছেই। তবু না বোঝার ভান করে রওনা দিলাম। কিছু সময় এমন অবাক করে দিতে চাইলে আমার অবাক হবার ভান করতে অসুবিধা কি! পথে বলে রোজা করছো আর শাড়ি কিনবানা তা কি করে হয়! বললাম জানতাম এমন কিছু। ও হাসলো আর বললো আমি বলতাম না কিন্তু জানোতো বেশীক্ষন কথা পেটে রাখতে পারিনা।

তোমাকে বলতেই হয়! ইফতার করলাম একটা দোকানে বসে। নাসিমাকে খুব মিস করছিলাম। ও থাকলে ওর বাসায় বেশ যাওয়া যেতো। ওরা সাসকাচুয়ান এ চলে গেছে জুলাই এ। যতবার রাস্তায় চোখ পড়ছিলো মনে হচ্ছিল নাসিমা যদি হঠাৎ আসতো! দোকানটার নাম সানা।

জেরী আর কার্বস এর কর্ণার এ। জান্তালনের উপর অনেকগুলো বাংলাদেশী দোকান... দোকানে ঢুকে দেখি ও যেনো কি বলতে চায়। বললাম কি বলবা বলো ....বলে মাসাকাল্লি ড্রেস কোনটা। আমি তো অবাক । বলে কি..... আশে পাশে তাকায় বললাম কি বলো? ও বলে,ইউ টিউবে গান দেখেছি ।

ভালোই তো! বলে কি? যে জীবনে খুব কম হিন্দী সিনেমা দেখেছে সে বলে সে গান এর ভিডিও দেখেছে! হাসতে হাসতে শেষ। আমি কি আর মাসাকাল্লি চিনি? দোকানের ভাবীকে বললাম ভাবী মাসাকাল্লি কোনটা? ভাবী হাত দিয়ে দেখালো। পুতুলে পড়ানো.....হাতটা পুরা নেট। ঘিয়া আর লাল ........বেশ সুন্দর রং। আমি এবার জোরে জোরে হাসতে শুরু করলাম।

এই জামা পড়তে হলে বয়সটা বেশ কয়েকবছর কমানো দরকার .... এ কথা শুনে তো ওর মেজাজ খারাপ। বলে চাচামিঞার বউ পড়তে পারে... তুমি পারবা না? আমি বলি কোন চাচা মিঞা ? বলে ব্লগের চাচা মিঞা। এই কথা শুনে হাসতে হাসতে দম আটকায় আর কি!....( ও মনে হয় চাচামিঞাকে উনার প্রফাইলের পুরাতন ছবির মত বৃদ্ধ ভাবছে। আমি বলি বুঝছি চাচামিঞাই কারণ! বলে না চোরকাঁটাও তো কবিতা লিখেছে। যাইহোক ভাবীরা তো আমাদের কথোপকথন শুনছে আর ভাবছে কাহিনী কি? আমি যত শাড়ি দেখি।

ও দেখে মাছাকাল্লি। বললাম ভাগ্যিস দেশে নাই.... নাহলে তো এমন ঘোরা কত ঘুরতে হতো। বললাম দেশে থাকলে বুঝতা.........ঈদের শপিং নিয়ে শওকত হোসেন মাসুমের পোষ্ট পড়েও তো কম দীর্ঘশ্বাস পড়েনি......বলে কত কিছু মিস হয়ে যাচ্ছে। কি যে মিস হচ্ছে সেটা কি করে বলি। যাইহোক আমার পছন্দের পোশাক শাড়ি কিনে এবারকার মত বাড়ি ফেরা হলো।

শাড়ির কোন নাম আছে কিনা ব্যস্ততায় জানা হয়নি। .......এইহলো আমার এবারকার ঈদের টুকরো টুকরো স্ম্বতি। কাল চাঁদ দেখা গেলে পরশু ঈদ। বন্ধুরা বলেছে কাল রাতে আমার বাসায় আসবে। সবাই মিলে মেন্দি পড়বে।

এখনো ঈদ আসলে ছোটবেলা মনে পড়ে। নতুন জামা। ঈদগাহে যাওয়া। এখানে ও সবাই একসাথে নামাজ পড়তে যাই। এই ব্যাপারটা ভালো লাগে।

দেশে মায়েরা বাসায় নামাজ পড়ে একা একা। সবার জন্য অনেক শুভকামনা থাকলো। যে যেখানে থাকি সবাই যেনো এই আনন্দ উপভোগ করতে পারি। ঈদ শুভেচ্ছা সবার জন্য।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.