আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোয়াইন ফ্লু : দায়গুলো অন্য কারো, মৃত্যুগুলো আমাদের

হাঁটা পথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে হে সভ্যতা। আমরা সাত ভাই চম্পা মাতৃকাচিহ্ন কপালে দঁড়িয়েছি এসে _এই বিপাকে, পরিণামে। আমরা কথা বলি আর আমাদের মা আজো লতাপাতা খায়।

গুজব আর আতঙ্কের মতো দ্রুতগামী আর কিছু নয়। সোয়াইন ফ্লু বা বরাহজ্বরের থেকে এ নিয়ে আতঙ্ক-জ্বরের তাপ বেশি অনুভব করা যাচ্ছে।

অন্য রোগ না থাকলে এতে মৃত্যু ঘটার আশঙ্কা কম। তারপরও প্রচারমাধ্যমের কল্যাণে অপ্রমাণিত ভয় মানুষের দুরুদুরু মনকে চেপে ধরেছে। কারণ, মৃত্যু তো ঘটছে। তাই সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। দুঃখের বিষয় স্বয়ং ডব্লিউএইচও, বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থা, এমনকি অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের আচরণ সমস্যাটিকে মোকাবেলার ব্যাপারে অস্পষ্টতার জন্ম দিয়েছে।

এ অবস্থায় সরকারের একটি সিদ্ধান্তে ভয় আরও বেড়েছে। এখন থেকে পরীক্ষা না করেই কারও সোয়াইন ফ্লু হয়েছে কি না তা শনাক্ত করা হবে। কারণটা সরকারি ভাষায়, ‘দেশে সোয়াইন ফ্লুর বিস্তার বেড়ে যাওয়ায়...’। দেশে সোয়াইন ফ্লু বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ কী? প্রমাণ পত্রিকার সংবাদ। বুধবার পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২৫৯।

পরীক্ষা ছাড়া এই ২৫৯ জন যে সোয়াইন ফ্লুতেই ভুগছে, তা বুঝব কীভাবে? এই পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক ও অনিরাপদ। এজন্যই প্রবাদে বলে, রোগী সারায় ডাক্তার কিন্তু ডাক্তার সারাবে কে? সম্প্রতি ভুল প্রেসক্রিপশনে নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর প্যারাসিটামল সিরাপ হয়ে সরকারি হিসাবেই ২৭টি নিষ্পাপ শিশুর ঝরে যাওয়া এখনো মনে কাঁটা বিঁধিয়ে রেখেছে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে হেলাফেলার এই খাসলত তবুও গেল না? তথ্যগুলো কীভাবে আসে? আমাদের সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) পন্থাই অনুসরণ করছে। গত মে মাসে ডব্লিউএইচও মহামারির সতর্কতা লেভেল ৫ থেকে ৬-এ তোলে। এর অর্থ, মহামারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

কীভাবে তারা এটা বুঝল? ঘটনার ধারা খেয়াল করুন। ২৯ এপ্রিল ডব্লিউএইচও জানায়, নয়টি দেশে ১৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে একজন। কিন্তু জানানো হয় না যে এই ১৪৮টি ঘটনার কতগুলো ল্যাব-পরীক্ষায় প্রমাণিত আর কতগুলো সন্দেহের ভিত্তিতে সাব্যস্ত। এটা না করে ডব্লিউএইচও ও সিডিসি একযোগে বলে যে যেহেতু রোগ ছড়িয়ে গেছে, সেহেতু এখন আর পরীক্ষার প্রয়োজন নেই (ডব্লিউএইচও, ব্রিফিং নোট, ২০০৯)। এর পরপরই ডব্লিউএইচও-র বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে সোয়াইন ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

তাদের যুক্তি অদ্ভুত, যেহেতু রোগ ছড়িয়েছে সেহেতু পরীক্ষা নিষ্প্রয়োজন। সদস্য দেশগুলোকে নিশ্চিত আক্রান্তের তথ্য দিতে না বলার কারণটি ডব্লিউএইচওর প্রধান মার্গারেট চ্যান পরিষ্কার করেননি। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ১৩ আগস্ট পর্যন্ত গোটা বিশ্বে এক লাখ ৮২ হাজার ১৬৬ জন আক্রান্ত হলেও মারা গেছে মাত্র এক হাজার ৭৯৯ জন। এই এক হাজার ৭৯৯ জনের মৃত্যুর মূল কারণ যে সোয়াইন ফ্লু, তার বৈজ্ঞানিক প্রমাণও হাজির নেই। অথচ সিডিসি গত ২৮ মে বলছে, ‘আমাদের হাতে ১১-১২টি মৃত্যুর খবর আছে।

...এর মধ্যে ১০ জনের বেলায় অন্য রোগের উপস্থিতি ইনফুয়েঞ্জাজনিত সমস্যাকে মারাত্মক করেছে। ’ এভাবে বাড়িয়ে ধরা এবং অন্য রোগের উপসর্গগুলোকে হিসাবে না ধরার ফল বিভ্রান্তিকর। ইংল্যান্ডে সম্ভাব্য আক্রান্ত হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে তিন হাজার ৯০৬ জন। বিপরীতে স্কটল্যান্ডে নিশ্চিতভাবে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৪৩ জন। ব্রিটেনে অধিকাংশ তথ্য স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা সংগৃহীত নয়।

কেবল তাই-ই নয়, সেখানে অনলাইনে ও সরাসরি টেলিফোন নম্বর দিয়ে বলা হয়েছে, যাঁরা আশঙ্কা করছেন তাঁরা যেন ওই নম্বরে ফোন করে পরামর্শ নেন। যিনিই ফোন করছেন, তাঁর নাম আক্রান্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ হচ্ছে। এভাবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দেখানো যাচ্ছে। একই জিনিস বাংলাদেশেও ঘটছে। ডব্লিউএইচও থেকে শুরু করে আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগশনাক্ত পদ্ধতির বিবর্তনটা অনেকটা এ রকম: প্রথম ধাপে পরীক্ষা করা, পরের ধাপে সন্দেহের ভিত্তি ঠিক করা এবং সর্বশেষ রোগীকে নিজে নিজেই ঠিক করতে বলা (Self Categarization)।

অথচ কে না জানে যে, রোগের উৎস, সঠিক অবস্থা ও ধরন না জেনে ব্যবস্থা নেওয়া আত্মঘাতী! মেক্সিকোর ভেরাক্রুজ শহরের একটি গ্রাম থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলা হচ্ছে। যেখানে মেক্সিকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোয়াইন ফুতে মৃতের সংখ্যা মাত্র সাত বলে নিশ্চিত করেছে, ডব্লিউএইচওর প্রধান দাবি করেছেন, মেক্সিকোয় সোয়াইন ফুতে মারা গেছে ১৭৬ জন! আমেরিকায় একমাত্র সিডিসিই ভাইরাসের প্রকৃতি শনাক্ত করতে সম। গোটা আমেরিকা মহাদেশের তথ্যগুলোও তারাই সরবরাহ করছে। আর বৈশ্বিকভাবে তথ্য দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের এই একচেটিয়া অবস্থানের ভুল হলে, কে তা শোধরাবে? গলদটা গোড়ায় হলে সব ক্ষেত্রেই ভুল হতে বাধ্য।

বার্ড ফুর বেলায় ডব্লিউএইচওর পদ্ধতি ও ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ হয়েছে। তাই আজ জনস্বার্থে দাবি ওঠা দরকার যে রোগ শনাক্তকরণ, আক্রান্তের সংখ্যা নিরূপণ ও চিকিৎসা বিষয়ে স্বচ্ছতা আনা হোক। এসব বিষয়ে আইসডিডিআরবি কিংবা তাদের কোনো সিস্টার কনসার্নের একচেটিয়া অধিকার অতি বিপজ্জনক। ভোলা যাবে না যে, জনস্বার্থে বিপজ্জনক জীবাণু গবেষণার অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানকে এক দশক আগে সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এও মনে রাখা দরকার যে, এর প্রতিষ্ঠা হয়েছে ষাটের দশকে মার্কিন-পাকিস্তান-তুরস্ক মিলে সিয়াটো-সেন্টোর চুক্তির অধীনে।

এই চুক্তির বিরোধিতা করেই ভাসানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাপ গঠন করেন। কারও গুদাম পোড়ে, কেউ আলুপোড়া খায় প্রবাদ হচ্ছে, কারও গুদাম পোড়ে আর কেউ সেই পোড়া আলু খায়; আবার লবণও চায়। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষকে সোয়াইন ফুর টিকা দেওয়ার জন্য তোড়জোড় লেগে গেছে। ডব্লিউএইচও প্রায় ৫০০ কোটি টিকা কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে। মার্কিন সরকার বরাদ্দ করেছে ৪০০ কোটি ডলার।

ফ্রান্সে বাধ্যতামূলক টিকাদানের খরচ ধরা হয়েছে ১০০ কোটি ডলার। মন্দার এই সময় ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া ব্যবসা ঠেকায় কে? অথচ ১৯৭৬ সালে আমেরিকার নিউ জার্সির ফোর্ট ডিক্স সামরিক ঘাঁটি থেকে সোয়াইন ফু ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেয় মার্কিন সরকার। চার কোটি লোককে টিকা দেওয়ার পর দেখা যায়, রোগের থেকে ওষুধ বেশি বিপজ্জনক। কর্মসূচিটি বন্ধ হয়। এই ভাইরাসে মারা গিয়েছিল সর্বমোট একজন।

কিন্তু টিকায় মারা গেছে ৩০ জনেরও বেশি এবং ৫০০ জন আক্রান্ত হয়েছে গুইলেঁ-বার নামের মারাত্বক প্যারালাইসিসে (সিবিসি নিউজ আর্কাইভ)। ২০০৫ সালের বার্ড ফু-হিড়িকেও অনেক হইচই হয়। এর প্রতিষেধক তামিল ফুর পেটেন্ট নেওয়া ছিল মার্কিন ঝবধৎষব কোম্পানির। প্রতিরামন্ত্রী হওয়ার আগে ডোনাল্ড রামসফেল্ড ছিলেন এর সিইও। মন্ত্রী থাকা অবস্থাতেই তিনি এর বিরাট অঙ্কের শেয়ারের মালিক।

বিশদ বলার সুযোগ নেই। কেবল এটুকু বলি, এ পর্যন্ত বেশির ভাগ টিকাই ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে (http://www.i-sis.org.uk)। রোগ ঠেকানোর সেরা উপায় হচ্ছে, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনপ্রণালী, দূষণহীন পরিবেশ ও সুষ্ঠু খাদ্যাভ্যাস। মিসাইল মেরে শত্র“ দমন করা যায়, কিন্তু মিসাইলসদৃশ অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টি-ভাইরাস সব ক্ষেত্রে মানবশরীর সয়নি। বর্তমান সোয়াইন ফু-র চলতি ভ্যাক্সিনটিও কিন্তু ব্যবহারকারীদের শরীরে মারাÍক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ÔIt’s The Vaccines Stupid!’ (Click This Link) গোড়া আছে, সেখানে হাত দিন বার্ড ফুর ঘটনায় ডব্লিউএইচও ভেবেছিল, স্থানীয় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা যা-ই হোক, তাদের দ মেডিকেল আমলাতন্ত্রই মহামারি ঠেকাতে সম। ১৯৯৭ সালে ডব্লিউএইচও বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে মিলে মহামারি রোধের একটা কৌশল দাঁড় করায়। আক্রান্ত এলাকাকে বিচ্ছিন্ন করে সবাইকে ধরে ধরে ভ্যাক্সিন (যদি থাকে) দিয়ে দেওয়াই ছিল এর কৌশল। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। কারণ, এখনকার অণুজীবাণুগুলো দ্রুতই দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বার্ড ফুর বেলায় তা-ই হয়েছিল। যেসব কারণে মহামারির জন্ম হয় এবং যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ সেসব কারণ দূর করা এবং সেসব এলাকাকে সহায়তা করার বদলে ধনী দেশগুলো জৈব গবেষণায় টাকা ঢেলেই খালাস। এরই ফল হলো দৈত্যাকারের ওষুধ কোম্পানির উদয়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর দাবি, অ্যান্টি-ভাইরাল টিকাগুলো ওষুধ কোম্পানিগুলোর মুনাফার কবল থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক, যাতে সরকারিভাবেই এগুলোর উৎপাদন ও বণ্টন করা যায়। সোয়াইন ফু সেই প্রয়োজনটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

স্বাস্থ্য তদারকি, বৈজ্ঞানিক ও রোগনিয়ন্ত্রণকারী অবকাঠামো, সবার জন্য মৌলিক চিকিৎসাসেবা এবং বৈশ্বিকভাবে জীবনরাকারী ওষুধ সহজপ্রাপ্য করা দরকার। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে হয় এর দায়িত্ব বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির হাতেই ছেড়ে রাখতে চায়। তামিল ফুর প্রতিষেধকের একচেটিয়া নিয়ে নিয়েছে রোশে, নোভার্টিস, বাক্সটার ও গ্ল্যাক্সোস্মিথকেইনসহ গোটা কয়েক কোম্পানি। এই সেপ্টেম্বরে টিকাগুলো বাজারে আসবে। বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণার জন্য এরাই নিরন্তর ডব্লিউএইচওর ওপর চাপ জারি রেখেছিল।

সোয়াইন ফু ভাইরাস দেখা দেওয়ার এক বছর আগেই ২০০৮-এর আগস্টে বাক্সটার এর টিকার পেটেন্টের আবেদন করে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রিয়ায় এদের গবেষণাগার থেকে ভাইরাসবাহী উপাদান ছড়িয়ে পড়ার কথা ডব্লিউএইচও তো বটেই বাক্সটারও স্বীকার করেছে। এর জন্য তাদের কোনো শাস্তি হয়নি। যে প্রক্রিয়ায় বার্ড ফু তৈরি হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়াই সোয়াইন ফুর বিবর্তনকে এগিয়ে দিয়েছে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, অতি উৎপাদনশীল যান্ত্রিক কৃষি ও করপোরেট বাণিজ্যিক খাদ্যশিল্পই হলো ইনফুয়েঞ্জার রূপান্তরের কারণ।

যেমন বার্ড ফু ছড়ানোর জন্য থাইল্যান্ডে শারোয়েন পকফান্ড এবং সোয়াইন ফুর জন্য মেক্সিকোয় খামার করা মার্কিন স্মিথফিল্ডকে দায়ী করা হয়। অদ্যাবধি এদের কেউ জরিমানা করেনি, কিন্তু জনগণের টাকার শ্রাদ্ধ করে অনির্ভরযোগ্য শত শত কোটি টিকা কেনা হচ্ছে। অন্যদিকে বার্ড ফুর ধাক্কায় বাংলাদেশসহ অনেক দেশের অজস্র ক্ষুদ্র খামার পথে বসেছে আর এখন সোয়াইন ফুর সময় মিসরসহ অনেক দেশের গ্রামীণ শূকরপালকেরা হাহাকার করছে। বহুজাতিক পরিবেশবিধ্বংসী খামার ও কারখানাগুলো গ্যাট ও নাফটা চুক্তির বলেই তৃতীয় দুনিয়ায় চলে আসতে পারছে এবং বিপর্যস্ত করছে এখানকার জীবন ও প্রাণীদের বাস্তুসংস্থান। এখানে শ্রম ও কাঁচামাল সস্তা এবং সরকার কমবেশি দুর্নীতিগ্রস্ত।

সুতরাং নো জবাবদিহি, নো সতর্কতা। পাখি বা শূকরের কী দায়? সুতরাং সোয়াইন ফু না বলে একে নাফটা ফু বলাই শ্রেয়। মার্কিন পিউ রিসার্চ সেন্টার তাদের এক যুগান্তকারী প্রতিবেদনে জানায়, ‘শিল্পের মাধ্যমে বিরাট আকারে গবাদিপশু উৎপাদন-ত্রেগুলোতে মারাÍক সব ভাইরাসের চক্র সৃষ্টি হয়ে চলেছে। এসব ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হওয়ার মতো রোগ-ব্যাধির জন্ম দিতে পারে। ’ কিন্তু এসব কোম্পানি অমিত মতাধর।

বিশ্বব্যাপী এদের রাজনৈতিক মতাও কম নয়। এরা পিউকে বাধা দেয় এবং তহবিল বন্ধের হুমকি আসে। বিশ্বের চিকিৎসা-ব্যবস্থা, চিকিৎসক ও চিকিৎসা পদ্ধতি অনেকভাবেই এদের হাতে বাঁধা। গত ২ সেপ্টেম্বর মার্কিন আদালত বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি ফাইজারকে ২.৩ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে ভুয়া ওষুধ তৈরি ও বিক্রির জন্য। এসব ওষুধ বাজারজাত করায় চিকিৎসকদের ঘুষ দেওয়া ছিল তাদের কৌশলের অংশ।

দায়গুলো তাদের কিন্তু মৃত্যু-ক্ষতি-ভয় কেন কেবল আমাদেরই? সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ সন্ত্রাস কমাতে পারেনি, ভাইরাসবিরোধী যুদ্ধও ভাইরাস ঠেকাতে অম হবে। তবে ব্যবসায়িক দিক থেকে তাদের সফলতার কোনো জুড়ি নেই। এর মানে জনস্বাস্থ্যের আরও অবনতি এবং জীবন বাঁচানো ওষুধের ওপর বড় ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য। এসব করপোরেটের পাথুরে দেয়ালে মাথা খুঁড়ে মরে প্রতিকারের আশা ও সম্ভাবনা। যুদ্ধ-মহামারি-আর্থিক সংকট-জলবায়ু পরিবর্তন তারা ঘটায় কিন্তু মরে ও ধোঁকে সাধারণ মানুষ।

দায়গুলো তাদের কিন্তু মৃত্যু-ক্ষতি-ভয় কেন কেবল আমাদেরই হবে? কিন্তু আজ যখন মানবজাতি বিপন্ন, তখন আগুন কে লাগিয়েছে তা বেশি দিন গোপন থাকবে না। এক রিকশাচালককে বলতে শুনি, ‘যাক, কোথাও থোওয়া যায় না, তাই ভয়। ’ আমরা ভীত, কারণ আমরা আমাদের ভয়গুলোকে কোনো সরকার, কোনো বিশেষজ্ঞ সংস্থা কিংবা কোনো বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের জিম্মায় রেখে শান্তি পাচ্ছি না। কিন্তু আমাদের শিশুদের জীবনের দায়িত্ব, মানবজাতির অস্তিত্বের ভার নিতে হবে আমাদেরই। জনগণের সতর্কতা ও নজরদারির তাই কোনো বিকল্প নেই।

কারণ, আমাদের কেবল আমরাই আছি। (গত তিন তারিখে এই লেখার সংক্ষিপ্ত একটি সংস্করণ প্রথম আলোর উপসম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশ পায়। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।