আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আলোর নাচন



এই যে পৃথিবীর মধ্যে আমরা এইরকম দৌড়ের ওপরে থাকি তার পেছনে মোটামুটি পুরোটাই অবদান সূর্যের। আমরা যেই খানাখাদ্য খাই তার মধ্যে উদ্ভিজ গুলো সূর্যের আলো থেকে খাবার বানায় আর প্রানীজগুলো সেই গাছপাতা খেয়ে বাঁচে। আর যেসব কলকারখানা, যন্ত্রপাতি দৌড়াচ্ছে তার অধিকাংশই জীবাশ্ব জ্বালানী থেকেই চলছে যা হল কিনা আগেরকালের প্রাণীজ আর উদ্ভিজ সূত্রের সারাংশকৃত রূপ। আজকাকলার জীবাশ্ব জ্বালানীর ক্রমহ্রাসমান সঞ্চয়ের যূগে সারা পৃথিবীতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে জীবাশ্ব আর আণবিক জ্বালানীর বাইরের উৎস থেকে শক্তি আহরণের জন্য। কদিন আগে ইকনমিস্টের একটা লিঙ্ক পেলাম।

তাতে দেখলাম এক বেচারা মাথা চুলকাচ্ছে তার বাড়ির জন্য সোলার প্যানেল বসালে লাভ হবে না ক্ষতি হবে (ব্যাবসাপাতির লোক আগে পয়সায় লাভক্ষতি খোঁজে)। তবে সব মিলিয়ে সে বেচারার সিদ্ধান্ত হল গলিত লবণের মিনি রিএক্টর যদি একটা পাওয়া যেত তবে তার কাজ হয়ে যেত। তাই পড়ে মনে হল সৌরশক্তির বিষয়ে আরেকটু খোঁজখবর করে দেখি দুনিয়া কদ্দুর আগালো। বিকল্প শক্তির সমস্যা হল, এই শক্তির ঘনত্ব কম, জমিয়ে রাখা যায়না, ঠিক প্রয়োজনের মূহুর্তে উৎস কার্যকরী নাও থাকতে পারে আর প্রাথমিক স্থাপনা খরচ বেশ বেশী। এরমধ্যে প্রাথমিক খরচের ধাক্কাই আমাদের বেশীরভাগকে উল্টিয়ে ফেলে দেয়।

সেই সূত্রে আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মনে হয় দুটি ভাল খবর আছে। প্রথমতঃ গতবছরের তেলের দাম বাড়াতে সারা পৃথিবীতে প্রচন্ড চাহিদা বেড়ে যায় সোলার প্যানেলের। তাই আমেরিকা আর চায়নায় অসংখ্য নতুন কারখানা গড়ে ওঠে আর বর্তমান কারখানাগুলোও তাদের ক্ষমতাকে অনেক বাড়ায়। কিন্তু কারখানা তো আর একদিনে তৈরি হয়না। তাই যন্ত্রপাতি আর কারখানা বসে উৎপাদন শুরু হতে হতেই তেলের দাম পড়ে ফুট্টুশ আর বিপুল উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে আছে ।

ফলে যেই সোলার প্যানেলের দাম গতবছর দেড় হাজার ডলারে ছিল সেটি দিব্যি পাঁচ ছশ ডলারে নেমে এসেছে। আর দ্বিতীয় খবর হল সম্ভবত এবছরের বাজেটে সোলার প্যানেলের ওপর থেকে ট্যাক্স না ভ্যাট কি যেন কমানো হয়েছে যেটি নিয়ে ব্যাবসায়ীরা দুনম্বরী না করলে জনগণের কিছু সুফল পাবার কথা। সেই সাথে আরো কিছু চোখ বুলানোর পরে সামনে আসল, সৌরশক্তিকে আরো ভালভাবে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই। আর সেই নিয়ে দুচারটি লিঙ্ক আরো শেয়ার করছি। যেমন স্কাইফুয়েল তাদের বড়মাপের সোলার ট্রাফ নিয়ে কাজ করে রূপোর পাত লাগানো আয়না দিয়ে সৌররশ্মি কেন্দ্রীভূত করে তা দিয়ে আবার লবনের গলিত মিশ্রণকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন।

উইকির কনসেন্ট্রেটিং সোলার পাওয়ারের পাতাটিতে বেশ গুছিয়ে লেখা আছে। আর তার ভেতরের লিঙ্কগুলো ঘাঁটলেও আরো ইন্টারেস্টিং মেলা তথ্য। পাইরন টেকনলজী সোলার সেলের সামনে কি যেন লেন্স বসিয়ে আর ক্যাপটিভ হিট ধরার সিস্টেম করে মেলা কারসাজী করে যাচ্ছে। আজকের পৃথিবীর অবস্থায় এগুলো ছড়ানো ছিটানো বিচ্ছিন্ন আলোর ফুলকি মনে হলেও বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে থাকা প্রযুক্তিগত আবিষ্কারগুলো এক সময় পরে একটির সাথে অন্যটি যুক্ত হওয়া শুরু করে। আশা করছি আগামী দশ থেকে পনর বছরের মধ্যেই সৌরশক্তিগত ক্ষেত্রে পৃথিবীর মানচিত্র পালটে যাবে।

সারা পৃথিবীর মরুময় প্রান্তরগুলো শক্তির আধার হিসেবে আমাদের সাহস যোগাবে। বাংলাদেশে সৌরশক্তির ভবিষ্যত কি সেটিই আমি ভাবি মাঝেমধ্যে। গুগল তাদের হেডকোয়ার্টারের পুরো ছাদ সোলার প্যানেল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে বহু আগেই। ফেডেক্সও কদিন আগে তাদের পুরো অফিসের ছাদ সোলার করে নিল। তাতে প্রাথমিকভাবে মেলা খরচ হলেও তাদের হিসেবে বিদ্যুত বিলের ত্রিশ থেকে চল্লিশভাগ ছাদের থেকেই মিটে যায়।

আমাদের কর্পোরেট কসাইগুলোর মাথায় যদি এই জিনিষ মারপিট করেও ঢুকানো যেত তবে একটা উপকার হত। সারা ঢাকাময় সোলার প্যানেল বসিয়ে যদি শহরভরা এয়ার কন্ডিশনের বিদ্যুতটুকুও সাপ্লাই করা যেত তবে মনে হয় সারা দেশের মানুষের মৌলিক বিদ্যুত চাহিদার এক বড় অংশ যোগান দেয়া সম্ভব হত। আর এই আগামাথাবিহীন বিদ্যুত উৎপাদন করে সেটি কোথায় সংরক্ষণ করা? সেটি আরেক বিশাল গল্প। বেশকিছুদিন ধরে ইচ্ছা ছিল যে বলিভিয়া নিয়ে লিখব কিন্তু সেদিন দেখি আরেকজন সেটি নিয়ে ইতিমধ্যে লিখে ফেলেছে । তাই মিজাজ ত্যাক্ত করে এই অফটপিকেই ঝেড়ে দিলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.