আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপকূলে ইলেশের গন্ধও পাওয়া যায় না

zahidmedia@gmail.com

এক সময় মেঘনা নদীর কাছে গেলেই রূপালী ইলিশের গন্ধ নাকে আসতো। উপকূলের বাতাসে বইতো শুধু ইলিশের গন্ধ। বাড়ির পাতিল ভর্তি থাকতো ইলিশ মাছে। মাছ ব্যবসায়ীরা এলাকায় আত্মীয় স্বজনের মাঝে ইলিশ মাছ বিলি করতেন। শশুর বাড়িতে যেতেও হাতে করে কয়েক হালি ইলিশ নিয়ে যাওয়া হতো।

এখন আর সেই সোনালী অতীত নেই। নাক পেতেও ইলিশের গন্ধ খুঁজে পাওয়া যায় না। সেই সোনালী এতিহ্যকে কাছে পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি নাম গন্ধও। মেঘনা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে পনরজন জেলে ও মাঝি-মাল্লা নিয়ে ৫দিন ধরে নদীতে থেকে মাত্র ১৮টি মাছ নিয়ে ফিরেছি। এই ৫দিনে ট্রলারের জ্বালানী, খাবার এবং মজুরীসহ খরছ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।

কিন্তু ধৃত ইলিশ মাছগুলো বিক্রি করলে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাবে না। অথচ গত বছর এমন দিনে ৫ দিন নদীতে থাকলে ৫০ হাজার টাকার মাছ মিলতো। এখন মাছ যেমন কম পাওয়া যায় তেমনি দামও কম। এমন যদি হয় তাহলে বাঁচা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাটে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাগুলো বললেন আবুল কালাম মাঝি (৪৬) ।

ভরা মওসুমে নোয়াখালী উপকূল জুড়ে চলছে ইলিশের এমন আকাল। ফলে ইলিশের নৌকায় বিনিয়োগকারী (দাদনদার), জেলে ও মাঝিরা দিশেহারা হয়ে উঠেছে। বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে উপকূলের ঘাটগুলো আড়তদার, ফড়িয়া, ব্যাপারী ও জেলে এমনকি ইলিশ রপ্তানীকারকদের কোলাহল থাকলেও এবছর ঘাটগুলো নিষ্প্রাণ। নোয়াখালী উপকূলের প্রায় ৩০টি ঘাটেরই এমন চিত্র। বৃহস্পতিবার দিনভর হাতিয়ার বয়ারচরের চেয়ারম্যান অবস্থান করে দেখা যায় শূন্য পড়ে আছে আড়তদারদের বাক্সগুলো।

দপুর সোয়া ২টায় একটি আড়তদারের বাক্সে ৪টি বড় সাইজের ইলিশ নামার সাথে সাথে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বেপারীরা। বিকাল ৬টা নাগাদ ৭টি নৌকা থেকে মাছ নামে আড়তে তাও ৪/৫টা থেকে সর্বোচ্ছ ১৮টা মাছ নামে । নদী থেকে মাছ ধরে ফেরত জেলে ও মাঝিদের মাঝে এনিয়ে হতাশার শেষ নেই। কারণ মাঝ যেমন কম ধরা পড়ছে তেমনি দামও এবার কম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলেদের জালে মাছ না পড়ার কারণে দাদনদার এবং মাঝিরা নৌকা ভাসাতে আগ্রহ দেখান না।

তাদের দাবি নদীতে একদিন টেম্পু (ইলিশ ধরার বড় ট্রলার) ভাসাইলে ছবিল (জ্বালানী ও খোরাকী) বাবত ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়। অথচ মাছ পাওয়া যায় দেড় থেকে ২ হাজার টাকার। তাই এভাবে লোকসান গুনা সম্ভব নয়। তারওপর নদীতে চাঁদবাজি এবং জলদস্যুদের হামলা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকেই ভরা মওসুমে এখনো নদীতে নামেননি।

এনিয়ে আলাপচারিতায় ট্রলারের মাঝি আরিফ (৩৬) জানান, ৭দিন নদীতে থেকে মাত্র ৩টি মাছ পেছেন তিনি। বরফ ও ছবিলসহ তাঁর খরছ হয়েছে ৯ হাজার ৮’শ টাকা অথচ মাছ পেয়েছে মাত্র ৫৫০টাকার। এতি কিভাবে পোষাবেন। রামগতির লোকমান মাঝি (৪৮) জানান, ১৪জন মাঝি-মাল্লা ও জেলে রয়েছে তাঁর নৌকায়। ইলিশ কম ধরা পড়ায় ৩দিন ধরে তিনি নদীতে যাননা।

বেকার বসে আছেন নদীর কূলে। জেলেরা জানিয়েছে, এদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে কেদারী (ইঞ্জিন বিহীন) নৌকা এবং ছোট টেম্পু নৌকা। এ নৌকাগুলো দিনে একবার নদীতে গিয়ে আবার ফিরে আসে ৪ থেকে ৮/৯টি মাছ মিলে প্রতিটি নৌকায়। খরছ কম হওয়ায় তারা পুষিয়ে নিচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে হাতিয়া মৎস ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান ঘাটে ৫৪টি আড়ত রয়েছে।

এসকল আড়তের বাক্সে এখন প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে আড়াই পন ( ৮০ পিজে ১ পন) ইলিশ উঠে। অথচ গত বছর এমন সময় ৩০ থেকে ৪০পন মাছ উঠতো। এবার মাছের দামও কম প্রতিপন মাছ ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর এমন সময় মাছের দাম ছিলো ১৪ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আড়তদার, জেলে আর ব্যাপারী সবারই লোকসান গুনতে হবে।

কারণ ইতোমধ্যে ইলিশের নৌকাগুলোতে ল ল টাকা লগ্নি (দাদন) করা হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.