আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌন্দর্যবোধের ধারণা

ফ্রম দ্যা হার্ট অফ ডার্কনেস
সৌন্দর্যবোধের ধারণা বহুমাত্রিক। কথায় বলে, যার চোখে যারে লাগে ভালো। সৌন্দর্যবোধের বহুমাত্রিকতা নিয়ে বেশ একটা গল্পও আছে। "একদা জনৈক রাজার মনে হলো তার জানা দরকার রাজ্যের সবচে সুন্দরী কে?(রাজারা সাধারণত এমনই হয়ে থাকে, এ আর নতুনকি!)। তো সে এক ভিখারীকে ডেকে জানান দিলো "তুই তো ভিখারী; রাজ্যের মোটামুটি সবদ্বারেই তোর পদচারণা ঘটে।

তুই আমাকে জানাবি এই রাজ্যের সবচে সুন্দর মহিলা কে"? ভিখারীর জবান , "রাজামশাই একবছর পরে আমি আপনাকে জানাব কে সেই মহিলা? বছর পেরিয়ে গেলে ভিখারী বলল,"রাজামশাই! উত্তরটা কি আমি ভয়ে দিবো নাকি নির্ভয়ে!" ""নির্ভয়ে"। "এই রাজ্যে সবচে সুন্দরী মহিলা আমার বউ!"। আফ্রিকায় ছেলেদের পছন্দ মোটা মেয়ে। দস্তুরমতো মোটা মেয়ের জন্য অনেকেই অপেক্ষায় থাকে। মৌরতানিয়ায় মায়েরা কিশোরি মেয়েদের উপর রীতিমতো অত্যচার চালায় বেশি খাওয়ার জন্য।

মেয়েদের সৌন্দর্য আর মোটা অবয়ব সেখানে সমার্থক। এসব কিছুই কিন্তু সৌন্দর্যবোধের বহুমাত্রিকতাকেই উপস্থাপন ধরে। তবে সৌন্দর্যবোধের ধারণায় এই বিবিধতার দিন বোধকরি ফুরিয়ে আসছে। বিশ্বায়নের প্রভাবে আরও অনেক কিছুর মতোই এইক্ষেত্রেও একক সংজ্ঞায়ন বহুমাত্রিকতাকে সরিয়ে দিচ্ছে "ফেয়ার ফেটিশিজম(fair fetishism)" এর প্রাদুর্ভাবে দেশে দেশে মধ্যবিত্তদের মানুষের ভাবনায় সৌন্দর্যের যে প্রতিচ্ছবি তা "বদনে ককেশীয় আর বর্ণে গৌর কিংবা শ্বেত"। সমাজতান্ত্রিক কাঠামো থেকে বাজারকাঠামো'র অর্থনীতিতে স্থানান্তরিত দেশগুলোতে এই বৈশিষ্ট বেশ প্রকট।

উদাহরণস্বরুপ ভিয়েতনামে কথায় আসা যাক। ত্বকের উজ্জলতা (Fairness) সংক্রান্ত ভাবনায় এদেশের মেয়েরা আক্রান্ত, ঠিক মতো বলতে গেলো মোহগ্রস্ত। প্রচন্ডরোদে মোটর সাইকেল যাত্রী মেয়েদের পুরো শরীর ঢাকা যদিও এমনিতেই তাঁদের পোষাক যথেষ্টই খোলামেলা। এর কারন, একটিই সুর্যের তাপে যাতে এদের গাত্রবর্ণ কালো না হয়ে যায় থাকে। বৃষ্টিবাদলা আর গরমের এই দেশে উইকএন্ডে রোদের দেখা গেলে কেউই বাসা থেকে বেরুবে না, সেখানেও মুলত বাধা বর্ণ সংক্রান্ত দুর্ভাবনা।

যথেষ্ট গৌর বর্ণের অধিকারী ভিয়েতনামিজদের এমন চিন্তাধারা আমার মতো কালাআদমীর জন্য যথেষ্ট অভিনব (কিছুটা অপমানকর বটে!)। চীনে সবচে জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন হলো মেয়েদের ভাইটাল পার্টস বড় করার নানান কায়দা কানুন এবং সে সংক্রান্ত বিবিধ পরামর্শ। পুর্ব আফ্রিকায় দেখেছি বিজ্ঞাপনের মডেল কিংবা মিডিয়ায় অথবা আমজনতার মাঝে আলোচিত সুন্দরী অপেক্ষাকৃত কমকালো মেয়ে। সেখানে জনসংখ্যার ৫ শতাংশের চেয়ে কম ভারতীয় অভিবাসী অথচ বিজ্ঞাপনে কিংবা নৈশক্লাবে তাদের উপস্থিতি ৫ শতাংশের অনেক অনেক বেশি। "ফেয়ার ফেটিশিজম"-এ আক্রান্ত বিশ্বায়িত মধ্যবিত্তরা কিন্তু নি:সন্দেহে প্রসাধণীর ব্যবসার বেশ ভালো গিনিপিগ।

এই মন্দাক্রান্ত সময়েও তাই প্রসাধণী ব্যবসাতে মড়ক লেগেছে এমনটা শোনা যায়নি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেই ব্যবসার পালে হাওয়া বরং উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.