আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উদ্ভট উটের পিঠে চলছে স্বদেশ

মন তুমি কৃষিকাজ জানো না, এমন মানবজমিন রইলো পতিত; ফলালে ফলতো সোনা

রাতে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে বেশ রোমান্টিক একটা মুড নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলাম। তখনো কল্পনাও করি নাই কি আজাব পরদিন নাজিল হতে যাচ্ছে। সকাল ৭:৫৫ এ অফিসে যাওয়ার জন্য বাসার নীচে নেমে দেখি এক হাটু্‌ পানি। জুতা হাতে নিয়ে আমি আর বন্ধু দিলাম হাটা। ময়লা পানিতে হেটে পুরা এলাকা পার হয়ে শেষ পর্যন্ত বন্ধুর পরিচিত একটা গাড়ী পেলাম, যে গাড়ীতে কিছু বখশিস দিয়ে ও প্রায় সকালে বাসে চাপাচাপি করে যাওয়ার ঝামেলা থেকে বাঁচে।

যাই হোক, ৮:২০ এ এই গাড়ীতে উঠে ভাবলাম যাক কপাল অত খারাপ না। কপাল যে কত খারাপ সেটা পরের ৫ ঘন্টায় বুঝছি। একটা একটা করে ঘন্টা যাইতেছে আর মাথা আউলা হয়ে যাইতেছে। অফিসে ফোন করে জানলাম, বস আসে নাই আর আজকে আমার অফিসে আসাটা বিশেষ জরুরী। এরমধ্যে অফিস থেকে ১০টা ফোন পেয়ে গেলাম একটা ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে।

সকালে বুয়া আসে নাই দেখে কিসু খাইতেও পারিনাই। পেটে আগুন, মাথায়ও আগুন। বাসায় যে ফেরত যাবো তার উপায়ও নাই। গেলে আবারো সাঁতরাতে হবে। এক রাতের বৃষ্টি ঢাকা শহর পুরা ধসায় দিছে।

রীতিমত মাথা ব্যাথা শুরু হলো। হেটেও যাওয়ার উপায় নাই, পানিতে থৈ থৈ করতেছে, কতটুকু হাটতে হবে জানিনা। সাড়ে চার ঘন্টা পরে ১২:৪৫ এ বিরক্ত হয়ে আর্মি স্টেডিয়াম পার হয়ে যখন গাড়ী থেকে নেমে গেলাম, সামনে দেখি কোমর সমান পানিতে রাস্তা ভর্তি। গাড়ীগুলা সব স্হবির হয়ে দাড়ায় আছে। লোকজনে মিছিল করে পানির ভিতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

আমি আর আমার বন্ধু যোগ দিলাম মিছিলে। আইল্যান্ড ধরে যাওয়ার চেস্টা করার ফলে কাঁটাগাছে হাত ছিড়ে গেলো কয়েক জায়গায়। শেষ পর্যন্ত যখন বনানী গোরস্হানে ডাঙা দেখতে পেলাম, তখন লাভের লাভ বনানী থেকে তীব্রবেগে বের হয়ে আসা কিছু বড়লোকের গাড়ী আমাদের ভিজিয়ে দিয়ে গেলো। অনেকদিন চিৎকার করে কাউকে কুৎসিত গালি দেইনা, আজকে দিলাম। সেই সাথে মনপ্রাণ দিয়ে গালি দিলাম সরকার, সিটি কর্পোরশন আর নগর পরিকল্পনাবিদদের।

শালার ঢাকা শহরটা যে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এটা কি ওদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝায় দেতে হবে? লাখ লাখ মানুষ, লাখ লাখ গাড়ী, বিল্ডিংয়ের গা ঘেসে বিল্ডিং। ড্রেইনেজ সিস্টেম নাই, একদিন বৃষ্টি হলে শহর অর্ধেক কলাপ্‌স করে। এই শহরের পরিণতি কি? শুধু আজকের ঘটনা থেকে না, দিনের পর দিন ঢাকা শহরের অবস্হা দেখে তিক্ত বিরক্ত হয়ে গেছি। গতকাল অফিস টাইমে গুলশান থেকে ২ ঘন্টা ২ ঘন্টা ৪ ঘন্টায় মতিঝিল যাওয়া আসা করতে গিয়ে রীতিমত অসুস্হ বোধ করতেছিলাম। এর মধ্যে ভয়াবহ জ্যামে বসে থাকতে থাকতে চোখের সামনে দেখলাম রমনা থানার সামনে ছিনতাই হচ্ছে পুরা ফিল্মী স্টাইলে রিভলবার উচিঁয়ে।

লোকজন ঘটনা বুঝে রিআ্যাক্ট করতে করতে দুইটা বাইকে ছিনতাইকারী হাওয়া। হায়রে! আস্তে আস্তে আমাদের বোধগুলাও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় এখান থেকে পালিয়ে যায়, কিন্ন্তু পারিনা। সুযোগ সুবিধাও সব ঠাসাঠাসি করে এই ঢাকা শহরে, বন্ধু-বান্ধবও সব এখানে। তাই লোভে পড়ে এখানে থাকতে হচ্ছে।

চিটাগাংএ কিছুদিন চাকরী করেই বুঝেছিলাম, ক্যারিয়ার তৈরী করতে চাইলে ঢাকা না এসে উপায় নাই। আর ঢাকায় থাকা মানে এইসব শারীরিক, মানসিক অত্যাচার সহ্য করে থাকা। অন্যান্য শহরগুলোতে সরকার কোন উদ্যোগ নেই না কেন? আমাদের সরকার কি কোন ধরনের ভালো পরিকল্পনা করতে পারেনা যাতে মানুষজন সুস্হ সুন্দরভাবে জীবানযাপন করতে পারে? গত দুইবছর ধরে ট্যাক্স দেই; এক বন্ধু বলতেছিলো, ট্যাক্স হুদাই দেয়, এই টাকা ভালো কোন কাজে আসেনা। তখন প্রতিবাদ করছিলাম, "আরে! আমরা টাকা না দিলে এই গরীব দেশের চলবে কিভাবে?" এখন মনে হয় আসলে কি ভালো কিছু হচ্ছে? নাকি কিছু লোকের দূর্নীতির নিত্য নতুন পথ তৈরী হচ্ছে? এই দেশ আসলে কিভাবে যে চলছে সেটাই একটা রহস্য। মাঝেমধ্যে রাগে দু:খে কান্না পায়, কিন্তু কিছুই করার নেই।

গত ৪/৫ বছর ধরে বাসা থেকে অনেক করে বলতেছিলো বাইরে পড়তে যেতে। আমি কথা ঘুরাতে থাকি। সবসময় মনে হয়েছে, "দূর! নিজের দেশ ছেড়ে বাইরে গিয়ে পড়ে থাকার কোন মানে আছে?" নিজের ভিতরের প্রতিরোধটা ভেঙে যাচ্ছে একটু একটু করে বেশ বুঝতে পারছি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।