আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইমাম আবু হানিফা এবং আবু ইউসুফ, মজাদার গুরু-শিষ্য এবং একটি কৌতুক!

যদি কখনও সুযোগ পাই, সাত বাজারের চুড়ি এনে দেব, যত্ন করো!

ইমাম আবু হানিফা হচ্ছেন ইসলামের চার মাযহাবের অন্যতম একটি মাযহাবের প্রবক্তা। মাযহাব সম্পর্কে হালকা একটু বলে রাখি যে এক একটি মাযহাব হচ্ছে এক একটি স্কুল। মৌলিক বিষয়সমূহে মাযহাবের ইমামদের মাঝে কোন দ্বিমত ছিল না। তবে কিছু কিছু বিষয় পালন সম্পর্কে তাদের মাঝে দ্বিমত আছে। যেমন জাময়াতে নামায আদায় করা কারও মতে ফরযে আইন, কারও মতে কেফায়া আর ইমাম আবু হানিফার মতে ওয়াযিব! ইমাম আবু হানিফার অসংখ্য ছাত্র ছিল।

অনেকেই পরবর্তীতে বিখ্যাত হয়েছেন এবং ফিকাহ, হাদীস ইত্যাদি শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন। তন্মমধ্যে অন্যতম প্রধান ছাত্র বা তাঁর ডান হাত ছিলেন ইমাম আবু ইউসুফ। তিনিও ছিলেন বেশ বিখ্যাত। অনেক লেখা লিখেছেন। তখনকার সময়ে ইমামরা নির্দিষ্ট কোন স্কুল বা মাদ্রাসায় বয়ান এবং বক্তৃতা করতেন, অণেক দূল থেকে হাজার হাজার ছাত্র তাঁদের বয়ান শুনতে আসতেন এবং গবেষণা করতেন।

এরকম হঠাৎ একদিন নতুন এক স্কুলের এক প্রতিষ্ঠাতা এসে ইমাম আবু ইউসুফকে অনুরোধ করলেন যে মাঝে মাঝে তিনি যেন ঐ নতুন স্কুলে কিছু বয়ান করে আসেন। তাহলে ঐ স্কুলের ছাত্ররা উপকৃত হবে। আবু ইউসুফও রাজী হয়ে গেলেন, এবং তিনি সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিনে ঐ স্কুলে গিয়ে বয়ান করতেন। কিন্তু আবু হানিফাকে তিনি এ প্রসঙ্গে কিছুই বলেননি এই ভেবে যে তাঁর উস্তাদ (আবু হানিফা) হয়ত কিছু মনে করতে পারেন। এই কথা আর গোপন থাকে নি।

আবু হানিফার কানে এই কথা চলে গেল। তিনি ভাবলেন ঠিক আছে তাহলে আমার ছাত্র কি শিখেছে সেটার একটা পরীক্ষ নিয়ে দেখি। তিনি ৪ টি প্রশ্ন সহ এক লোককে ইউসুফের নিকট পাঠালেন সমাধান চেয়ে। লোকটি নির্দিষ্ট দিনে আবু ইউসুফের নিকট গিয়ে বলল যে তার ৪ টি প্রশ্ন আছে, ইমাম যেন সেগুলো সমাধান করে দেন। আবু ইউসুফ রাজী হয়ে বললেন যে কি তার প্রশ্ন।

প্রশ্ন ১: আমরা নামায কি দিয়ে শুরু করি? ফরয না সুন্নত দিয়ে? ইউসুফ বললেন ফরয দিয়ে। লোকটি বলল, হয় নি। তখন ইমাম বললেন সুন্নত দিয়ে....? লোকটি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল তাও হয় নি। প্রশ্ন ২: একটি ডেকচিতে গোশত রান্না হচ্ছে, এমন সময় একটি পাখি এসে ডেকচির মধ্যে পরলএবং মারা গেল। এখন ঐ গোশত খাওয়া উচিৎ হবে না হবে? (খুব সম্ভবত হারাম বা হালাল কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন) ইউসুফ বললেন, উচিৎ হবে না।

লোকটি বলল, হয় নি। এবার ইমাম বললেন, উচিৎ হবে! এবারো লোকটি বলল, হয় নি। প্রশ্ন ৩: (৩নং প্রশ্নটি আমি একেবারেই ভুলে গেছি, অণেক চেষ্ট করেও মনে করতে পারছি না। মনে পড়লে বা জানতে পারলে উল্লেখ করব। তবে সেটাও খুব ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন ছিল।

) প্রশ্ন ৪: এক মুসলিম এক ইহুদি নারীকে বিয়ে করেছে। স্ত্রী যখন সন্তান সম্ভবা, তখন তিনি মারা গেলেন। এখন এই মহিলাকে কোন কবর স্থানে দাফন করা হবে। ইহুদিদের নাকি মুসলমানদের? ইমাম প্রথমে বললেন, ইহুদিদের কবরস্থানে। লোকটি একটু সময় নিয়ে বলল, আর কিছু? ইমামকে চুপ থাকতে দেখে তিনি বললেন হয় নাই।

তখন ইমাম বললেন, মুসলমাসদের কবর স্থানে। লোকটি বলল, তাও হয় নি! উপুর্যোপরি ৪ টা প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে আবু ইউসুফ বিস্মিত এবং উত্তর জানার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। এবার লোকটি বলল ঠিক আছে উত্তর শুনেন.... উত্তর ১: নামায ফরজ এবং সুন্নত ২টা দিয়েই শুরু হয়। "আল্লাহু আকবার" বলে তাকবীর তাহরীমা বাঁধা ফরজ। আর দুই কান পর্যন্ত হাত তোলা সুন্নত।

উত্তর ২: গোশত সিদ্ধ হয়ে যাবার আগে যদি পাখি এসে পরে এবং মারা যায় তাহলে ঐ মাংস আর খাওয়া যাবে না। ফেলে দিতে হবে। কিন্তু সিদ্ধ হয়ে যাবার পরে যদি হয় তাহলে সমস্ত ঝোল ফেলে দিয়ে সিদ্ধ মাংস আলাদা করে অন্য একটি পাত্রে নিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে খাওয়া যাবে। উত্তর ৩: ব্ল্যাংক উত্তর ৪: ঐ মহিলাকে ইহুদিদের কবরস্থানেই দাফন করা যাবে তবে তাকে এমন ভাবে দাফন করতে হবে যেন পেটে অবস্থিত সন্তানের মুখ কেবলা মুখি থাকে। সেক্ষেত্রে ঐ মহিলাকে যতদূর সম্ভব উপুর করে বা কাৎ করে দাফন করতে হবে।

লোকটি চলে যাবার পর ইমাম আবু ইউসুফ চিন্তা করলেন, এই সব প্রশ্ন কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এটা নিশ্চয় তাঁর উস্তাদের কাজ। ইমাম আবু হানিফা নিশ্চয় জানতে পেরে তাঁকে পরীক্ষা করতে পাঠিয়েছেন যে তাঁর শিষ্য কতটুকু জ্ঞানোর্জন করেছে। এইসব দিক চিন্তা করে তিনি ঐদিনই ঐ স্কুল ত্যাগ করে আবারো ইমাম আবু হানিফার স্কুলে যোগদান করেন! ইমাম আবু ইউসুফ লেখা পড়া এবং জ্ঞানোর্জনের জন্য একনিষ্ঠ ছিলেন। একবারের ঘটনা।

তিনি অণেক রাত জেগে লেখা পড়া করতেন। রাতে ক্ষুধা লাগলে যেন তিনি খেতে পারেন এজন্য তাঁর স্ত্রী তাঁকে বেশ কিছু খেজুর দিয়ে রাখতেন। তো একদিন তিনি এত মগ্ন ছিলেন যে খেজুর খেতে খেতে বিচি সহ খেয়ে ফেললেন। এরপর তাঁর পেট ব্যাথায় জান যায় যায় অবস্থা। আবু হানিফা তাঁকে দেখতে আসলেন।

তাঁর অবস্থা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন যে যেমন গুরু তেমন শিষ্য। তাঁরও নাকি মাঝে মাঝে এরকম হয়!!!!!!!!!! যাই হোক, খেজুরের বিচির কথা যখন চলেই আসলো, একটা কৌতুকের (এইটা একটা সহীহ হাদীস, তবে ভাষা আমার নিজের) কথা মনে পরে গেল। সেইটা বলি। [হাদীসটার ব্যাপারে সন্দেহ থাকার করণে এবং সেটার বর্ণনায় (লেখকের) ঘাপলা থাকার কারণে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে এইটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে মেশকাত শরীফে এই রকম একটা হাদীস আছে এবং সেটা সহিহ! ]


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.