আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবণ সংগ্রাম



নিশান কনফেকশনারির সামনে দাঁড়িয়ে আমি আর ফিরোজ আইসক্রিম খাচ্ছি, হঠাত কেও একজন সালাম দিল, পিছন ফিরে দেখি একটা ছেলে । বলল, ভাইয়া আমি রতন । আমি বললাম, রতন কে? সে বলল, ওই যে সেদিন আপনি আমার আম্মা কে মেডিকেল এ পৌঁছে দিয়েছিলেন। ২০০৫ সালের ঘটনা । সকালে প্রাইভেট পড়া শেষে আমি আর ফিরোজ রাজশাহী যাব একটা কাজে।

মহানন্দা এক্সপ্রেস এর টিকিট কেটে দুইজন দাড়িয়ে আছি। আটটা দশের গাড়ি । শীতের সকাল, প্রচন্ড ঠান্ডা বাতাস । গাড়ী ছাড়ার কয়েক মিনিট আগে, দেখলাম চৌদ্দ-পনের বছরের দুটো ছেলেমেয়ে একজন অসুস্থ মহিলাকে নিয়ে গাড়িতে উঠছে । থ্রি সিটের দুটোয় আমি আর ফিরোজ বসেছি, আর বাকিটা ফাঁকা ।

ছেলেটা বলল,”ভাইয়া আপনারা দুজন পাশের সিটে বসবেন , আমরা এই ছিটে বসতাম”। আমরা দুই জন পাশের সিটে গিয়ে বসলাম। দেখলাম অসুস্থ মহিলাটিকে সামলাতে গিয়ে দুজন হিমশিম খাচ্ছে । ছেলেটা অঝর ধারায় কাঁদছে, মেয়েটি চুপচাপ। মহিলাটি অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে।

ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। সে বলল মহিলাটি তার মা, অসুস্থ্‌, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। সিটি বাইপাসে বাস থেকে নামতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিল। আমরা দুইজন ধরে হাসপাতালে নিয়া গেলাম । ডাক্তার বললেন, রক্ত লাগবে ।

সারা রাজশাহী শহর হন্নে হয়ে ঘুরে রক্ত জোগাড় করলাম। রাতে জ্ঞান ফিরল । সারারাত তাদের সাথে কথা বলে কাঁটালাম। রতন বলল, তার বাবা ছিলেন গ্রানীন ব্যাংকের ম্যানেজার। ইলেকট্রিক শক এ মারা গেছেন গত ৫ বছর আগে ।

আত্তীয়-স্বজন কেউ নেই । মা অসুস্থ গত ৩ বছর থেকে। প্রতি ২ মাস পর রক্ত দিতে হয় । রতন বলল যে, তার কোনো মামা, চাচা বা অন্য কেউ নাই। কেন নাই সে জানে না।

তাদের মা তাদের কোনদিন বলেন নাই। পরদিন সুস্থ হলে আমরা তাদের বাসায় পৌঁছেদিলাম। এ বছরের মার্চ মাসের দিকে রাজশাহী নিউমার্কেটে হঠাত করে দেখা হয় রতনের সাথে, আমাকে দেখে সে অঝর ধারায় কাঁদতে শুরু করে । বলে তার মা মারা গেছেন গত দেড় বছর আগে। তার সাথে অনেক কথা হল, সে SSC তে golden A+ পেয়েছে ।

HSC পরীক্ষা দিয়াছে। এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোচিং করছে । তার বোনও SSC তে golden A+ পেয়েছে । এখন একটা কলেজ এ সেকেন্ড ইয়ার এ পড়ে। প্রিয় পাঠক, জীবণ অনেক কঠিন, রতন সেই কঠিন জীবনের সাথে সংগ্রাম করে চলেছে।

বাবা-মা ছাড়া বাবার একমাত্র পেনশনের টাকা দিয়ে সে আজ এ অবস্থানে। পাঠক আমি নিশ্চিত সে একটা ভাল জায়গায় চান্স পাবে, জীবনে অনেক বড় হবে। আসুন আমরা তাদের জন্য দোয়া করি, তারা যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীর সব ভাষা নূয়ে পরে তাদের কৃতজ্ঞতা জানায়। জীবনের সকল ক্ষেত্রগুলো তাদের জন্য সহজ হয়ে উঠুক।

তারা যেন ভাল থাকে, অনেক ভাল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।