আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃষ্টিস্নান... ছোটবেলার কিছু নস্টালজিক মেমোরীর রি-কল...

মৌনতার দীর্ঘশ্বাস...

আজকে তো দারুন একটা বৃষ্টিদিন গেল। অনেকক্ষন বৃষ্টি হইছে। ভালো লাগছে। আমার আবার একটু বৃষ্টি প্রীতি আছে । বৃষ্টি হলেই আমি ভেজার চেষ্টা করি।

আজও এমন মন পাগল করা বৃষ্টি দেখে নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না। কাপড় পাল্টে খালি পায়ে গামছা গায়ে নেমে গেলাম রাস্তায় । শহরে আবার বৃষ্টিতে ভেজা খুব ঝামেলা। খোলা আকাশ ছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে মজা নাই । কিন্তু আমাদের এই এলাকাটা ( কলাবাগান ) মোটামুটি খোলামেলা।

বড় বড় ভবন আছে কিন্তু রাস্তার উপরের আকাশটা খোলা । যাক একটু পরে আমার আরেক রুম মেট + বন্ধুও আমার সাথে বৃষ্টি উৎসবে যোগ দিল। ভিজতে ভিজতে মনে হল মেইন রোডে চলে যাই। হাটতে হাটতে চলে গেলাম স্কয়ার হাসপাতালের রোডে। তখন ভাবলাম ধানমন্ডি লেকে চলে গেলে কেমন হয়।

উপরে বৃষ্টি নিচে লেকের পানি, জমবে ভাল। যেই ভাবা সেই কাজ। আমার আবার এই ধরনের একটা বাতিক আছে । যখন যা ইচ্ছা তাই করি। বন্ধুরও অমত নেই।

ব্যস। মেইন রোড দিয়ে হাটতে হাটতে ভিজতে ভিজতে চলে গেলাম ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে। রাস্তার পাশের দোকানে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে জড়ো হওয়া লোকজন, বাসের যাত্রী অনেকেই আমাদের দিকে কপাল কুঁচকে তাকাচ্ছে। অনেকে আবার করূণ নয়নে তাকাচ্ছে। মনে হয় তাদেরও ভিজতে ইচ্ছা হচ্ছে আমাদের মত।

লেকে পৌছে মাথায় খেয়াল চাপল লেকে সাঁতরে ৩২ থেকে ধানমন্ডি ৮ এ পানসী রেস্টুরেন্টের পেছনের দ্বীপ মত জায়গাটায় যাব, সম্পূর্ণই সাঁতরে । ঐ জায়গাটা আবার বিশেষ জায়গা। ওখানে একটা নির্দিষ্ট স্থানে আমরা (বিশেষ করে আমি) কয়েকজন প্রতিদিনই বসি। ধানমন্ডি ৩২ এ এসে দেখলাম কয়েকজন ছেলে লেকের উপরের লোহার ব্রীজ থেকে পানিতে লাফ দিচ্ছে। আমাদেরও ইচছা চাপলো লাফ দেয়ার।

আজকে হল বৃষ্টিতে ইচ্ছাপূরণ দিবস.... সো... ব্রীজে উঠে রেলিং এর উপর থেকে দু'জন একসাথে ঝপাং। ছোটবেলার মত। পিচ্চি কালে গ্রামের নদীতে কিংবা পুকুরে গাছের উপর থেকে কত লাফালাফি করেছি তার ইয়ত্তা নেই। লাপ দিয়ে লেকে পড়েই অঘোষিত সাঁতার প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে গেল যেন আমাদের মধ্যে। কে কার আগে ওখানে যেতে পারে।

কিন্তু হলনা। প্রায় ৩ বছর পরে পানিতে সাঁতার কাটছি। অল্পতেই দু'জনে হাঁপিয়ে ওঠলাম । কিন্তু পাড়ে যাওয়া যাবেনা। প্রতীজ্ঞা ।

পানিতেই আলগোছে ভেসে ভেসে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে অবশেষে পানসী-র পেছনের আমাদের জায়গাটায় যাত্রা শেষ করলাম। বিরাট সাঁতার। অনেক দুর। বাপরে!! পানি থেকে উপরে এসে অনেকক্ষন বসে রইলাম। মারাত্বক ক্লান্ত।

চাওয়ালার কাছ থেকে চা খেলাম। যদিও পকেটে টাকা নাই। আর আমার বন্ধুতো লুঙ্গি পরেই চলে এসেছে । তবুও খেতে পারলাম কারণ এক জায়গায় অনেকদিন ধরে নিয়মিত বসতে বসতে ওখানকার কিছু চাওয়ালা, বাদামওয়ালা, মূড়িওয়ালাদের সাথে ভালই পরিচিত হয়ে গেছি। তো চা খেয়ে বিশ্রাম নেবার পর আবারো পানিতে নামলাম দু'জনে।

বৃষ্টি কিন্ত তখনও থামেনি। মাথায় ঠান্ডা বৃষ্টি শরীরে উষ্ঞ পানি এক অপূর্ব কম্বিনেশন। আরুও কিছুক্ষন পানিতে সাঁতার কাটলাম। তারপর আস্তে আস্তে বৃষ্টির ঝাপটা কমে এলে উঠে এলাম। ভেজা শরীর নিয়েই খালি পায়ে হেটে আবার বাসায় চলে এলাম।

বাসায় ফিরে ভাল করে একটা শাওয়ার নিয়ে ভদ্র হলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ। এখন ঘুমাবো। প্রচুর শক্তি খরচ হয়ে গেছে। রিকভারী দরকার।

বিদায়। ভালই হল আমাদের আজকের বৃষ্টিস্নান উৎসব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।