আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বঅর্থনীতি ও বিনিয়োগ

কি যে বুঝি তাও বুঝি না।

বিশ্বঅর্থনীতি ও বিনিয়োগ ঃ আজকের বিশ্বঅর্থনীতির যে চালচিত্র বা অবস্থা তাতে মুক্তবাজার অর্থনীতি অনেকটাই মুখ থুবড়ে পরার উপক্রম হয়েছে। অর্থনীতির গতি-প্রকৃত বড়ই বিচিত্র। মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রবক্তারা সব সময় বলে এসছে যে, বাজার নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার মতা রাখে। তাই বাজারের উপর সরকার বা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন পতিষ্ঠা করা চলবেনা।

অন্যদিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রবক্তারা যখন বাজারের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রনের পে জোড়ালো যুক্তি পেশ করতেন তখন পঁজিবাদীবা একে কথার কথা হিসেবে দেখে এসেছেন। অর্থনীতির এই মহাবিপর্যয়ে পুঁজিবাদী বিশ্বের অর্থনৈতিক ¯তম্ভগলো যখন জাতীয়করণ করতে হচ্ছে তখন স্বাভাবিক ভাবেই মুক্তবাজার অর্থনীতির ত্র“টিগুলোর সাাত মিলছে। রাষ্ট্র যেহেতু মানুষের কল্যাণের নিমিত্তেই গড়ে উঠে, সেহেতু রাষ্ট্রের শাসন ধারায় এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে গণমানুষের কল্যাণধর্মীতাকেই মুখ্য করে তোলতে পারলে তবেই কেবল একটি সমৃদ্ধ দেশ প্রতিষ্ঠা পায়। আর এ কারণেই ‘‘কল্যাণ রাষ্ট্রের’’ ধারণা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। সমাজতন্ত্র শ্রমিকরাজ বা মেহনতি মানুষের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার যে আকাঙ্খা তৈরি করেছিল তা সমাজের এক শ্রেণী শিতি তথা অগ্রবর্তী শ্রেণী মানুষের সুবিধাবাদী ভূমিকার কারণেই ধরাশায়ী হয়েছে।

তবে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মেহনতি মানুষের চেতনা প্রখরতর হবার সুযোগ পায়। আর এরই সূত্র ধরে কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনাটি রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের কাছে গুরুত্ব লাভ করে। তাই কল্যাণ রাষ্ট্রে আমরা নাগরিকের মৌলিক ও আর্থিক অধিকারগুলি সংরণের জন্য যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র দর্শনের মধ্যে আকাঙ্খা বা স্বপ্নের রূপ নিয়ে বিদ্যমান ছিল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, মার্কিন অর্থনীতি মন্দার কারণে উন্নত বিশ্বে ভীতি সঞ্চারক হলেও এর প্রভাব আমাদের দেশের মত দরিদ্র দেশগুলির উপর সহসাই মারাত্মক আকার ধারণ করবে না। কারণ আমাদের দেশে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ কম।

বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা মোকাবেলায় জি-৮ এর পাঁচ দফা ঃ বিশ্ব অর্থনীতির ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রনকারী জি-২০ নেতৃবৃন্দ সংকট মোকাবেলার জন্য নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ কাজ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন এবং পাঁচ দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। জি-২০ এর অর্থমন্ত্রীদের পাঁচ দফার মূল ল্য প্রধান ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে রা করা এবং সরকারি বেসরকারি খাত থেকে পুঁজি বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। এতে ঋণ প্রবাহের বাঁধা দূর করা ও সঞ্চয়কারীদের রার উদ্যোগের কথাও বলা হয়েছে। কিšতু এই পরিকল্পনায় সুনির্দিষ্ট কোন পদেেপর কথা বলা হয়নি। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দায় বিকৃত রাজনীতি ঃ ১৯২৯ সালের বিশ্ব আর ২০০৮ সালের বিশ্ব কিন্তু এক কথা নয়।

১৯২৯ সালের জাতিপুঞ্জে মতো আšতর্জাতিক সংস্থা বিদ্যমান ছিল বটে, কিন্তু ২০০৮ সালের বিশ্ব বাজার অর্থনীতির সংহতিবোধে অনেক বেশি ইনটিগ্রেটেড। বিশ্বায়নের প্রবল আকর্ষণে অনেকটা অঙ্গীভূত। ঋণ নেওয়া বা ঋণ দেওয়া উপভোগের সংস্কৃতি শুধু মার্কিনীদের নয়। নয় শুধু পাশ্চাত্যের। বিশ্বায়নের জোয়ারে তা এসে পড়েছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায়।

এক হিসেবে বলা হয় , বিশ্বের সব সম্পদের বিপরীতে বিভিন্ন পর্যায়ে ঋণের পরিমাণ তার প্রায় দেড়শ গুণ। যুক্তরাষ্ট্রের এর পরিমাণ ২৭০ গুণ হলে বাংলাদেশের তা প্রায় ৫০ গুণ। অনিয়ন্ত্রিত বাজার অর্থনীতির প্রভাবে এবং অসংযত ভোগের প্রাবল্যে হাত শূন্য হলেও শূন্য হাত পূর্ণ করার মাধ্যম হিসেবে তৈরি হয়েছে ব্যাংক-বীমা ও বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার কার্যক্রম। প্রথম পর্যায়ে ঋণ পরিশোধের ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতা থেকে জন্মলাভ করা অবিশ্বাস ও আ¯তাহীনতাই সৃষ্টি করেছে আজকের এই মন্দা। এক ডলারের বিপরীতে যেখানে ৭৫ ডলার ঋণ পাওয়া যায়, সেেেত্র আর্থিক ফটকাবাজি অত্যšত স্বাভাবিক।

মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের গতিধারা নির্ধারণকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু নীতিনির্ধারক বহু আগেই কলম ধরেছিলেন, ১৯৮৯ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা ফুকুয়ামা ‘ঞযব ঊহফ ড়ভ ঐরংঃড়ৎু’ নামক প্রবন্ধে লিখেছিলেন,‘‘মানুষের আদর্শগত চূড়াšত পর্যায় এসে গেছে। ইতিহাসও তার চূড়াšত পর্যায়ে উপনীত। পাশ্চাত্যের উদারনৈতিক গণতন্ত্র এবং মুক্তবাজার অর্থনীতি বা পুঁজিবাদ এখন সর্বজন ব্যবস্থারূপে সুপ্রতিষ্ঠিত। ১৯৯০ সালের সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়কে এভাবেই তিনি অভিনন্দিত করেন’’। রাজনৈতিক েেত্র উদারনৈতিক গণতন্ত্র এবং অথনৈতিক েেত্র মুক্তবাজার অর্থনীতিই এ কালের চূড়াšত ব্যবস্থা।

অন্য কথায় , বিশ্ব মানবকুলের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন সাম্যভিত্তিক ব্যবস্থা ও বঞ্চনাহীন ব্যবস্থাপনা বঞ্চিত ও অবহেলিতদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। এই মন্দা কি সেই দুঃস্বপ্নের অবসানের ইঙ্গিত দিচ্ছে ? অর্থনৈতিক মন্দা শুধু অর্থনীতিকেই দুর্বল করেনা এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়ে রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর। কোন সুসংহত জনপদের জনসমষ্টির জীবনধারা শাšিতময় ও স্ব¯িতর হয়ে উঠে সুষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায়। ১৯২৯-৩৩ সময় কালের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করা যায় তাহলে দেখতে পাব ‘‘হিটলার ও মসোলিনীর আঁতুরঘর সেই মহামন্দা। স্টালিনের নির্মমতার মূল নিহিত রয়েছে সেই মহামন্দায়।

আবার ফ্রাঙ্কোর জন্মতিথি এবং সালাজারের উত্থানকে খুঁজতে হবে সেই মহামন্দায়। আমরা যদি ল্যাটিন আমেরিকার প্রতি তাকাই তাহলে দেখতে পাব ১৯২৯ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর কারা কিভাবে রাষ্ট্র মতা হ¯তগত করেছে। ১৯৭৪ সালের সালের দুর্ভি না হলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসে নাও ঘটতে পারত। অর্থনৈতিক মন্দা যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্য, কর্মসংস্থানের অপ্রতুল্যতা, তথা বেকারত্বের ব্যাপ্তি, বিনিয়োগের স্থবিরতা প্রভৃতি সমাজ ও রাষ্ট্রব্যাপী এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে যা সরকারের পে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে উগ্রপন্থীরা তৎপর হতে পারে।

সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ুন্ন হতে পারে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনীতির েেত্র বিদেশীদের হ¯তপে কোন কোন সময় নগ্ন হয়ে উঠে। ফলে অর্থনৈতিক মন্দা দীর্ঘায়িত হলে রাজনৈতিক েেত্রও সৃষ্টি হবে দাবানল যা গণতন্ত্র চেতনাকে পশ্চাতমুখী করতে পারে। অর্থনৈতিক মন্দাই হলো আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের কফিনে প্রথম পেরেক। সমাজতন্ত্রের নতুন সূর্যোদয়ের আর বেশি দেরি নেই।

পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রনায়করা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তবাজার নীতিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। অর্থনৈতিক এই মন্দা সাময়িক হিসেবে গ্রহণ করেই। ১৯২৯ সালের পরের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় মন্দা কাটয়ে উঠার জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে অতি সহজে হত্যাযজ্ঘ সম্পন্ন করার উপযোগী অস্ত্র তৈরি করে। পরে তা বাজার সৃষ্টির জন্য যুদ্ধের দামামা বাজায়। ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়াসহ যুদ্ধাস্ত্রের বাজার গরম হয়ে উঠে।

বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা মোকাবেলায় সুদের হার ঃ বিশ্ব অর্থনীতি এখন পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ১৯৩০ সালের পর থেকে বিশ্ব অর্থনীতি এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য বিশ্বের নামীদামি ব্যাংক গুলো সুদের হার কমিয়ে দিচ্ছে। আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫০ শতাংশ, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সুদের হার ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাছাড়া কানাডা, সুইডেন, সুইজাল্যান্ড ও চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমেয়িছে।

ভোক্তারা ব্যাংক থেকে টাকা পয়সা তুলে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে ভোক্তাদের দায়ভার নিতে হচ্ছে এবং সঞ্চয়ের গ্যারান্টি দিতে হচ্ছে। বিশ্ব শেয়ার বাজারের শেয়ার সূচক পড়া অব্যাহত রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আমেরিকা ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার , ব্রিটেন ২৫ হাজার কোটি পাউন্ড, জার্মানি ৭ হাজার কোটি ডলার, রাশিয়া ৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থনৈতিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার কারণে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে ঃ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯ শতাংশ কমে যাবে।

এই রিপোর্টে আরো বলা হয় ২০০৯ সালে আরো ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমবে। ২০০২ সালের পর এটা হবে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। চলমান সংকটের কারণে আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান ও কানাডার প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পাবে। বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঃ ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে বাংলাদেশের রফতানির ল্যমাত্রা বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৬২৯ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার পরিমাণের পণ্য রফতানি হবে। এই ল্যমাত্র গত অর্থ বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।

মোট রফতানির ল্যমাত্রার মধ্যে ‘আরএমজি’ খাতের দুটি প্রধান পণ্য ‘নিটওয়্যার’ এবং ‘ওভেন’ থেকে রয়তানির ল্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এই হিসেবে নিটওয়ার রফতানির বৃদ্ধির ল্যমাত্রা হচ্ছে শতকরা ১৯ ভাগ এবং ওভেনের ল্যমাত্র হচ্ছে শতকরা ১০ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্র হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক ক্রেতা এবং বাংলাদেশের মোট রফতানি পণ্যের ২৫% বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। আšতর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইতিমধ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে চলতি আর্থিক সংকট থেকে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘসময়ের জন্য মন্দা কবলিত হয়ে পড়তে পারে এবং এর বিরূপ প্রভাব বিশ্বব্যাপী আচড়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা বর্তমানে খুবই উদ্বিগ্ন বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কারণে।

প্রায় ৪শত কোটি ডলারের রফতানি বাজার হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কেননা ইউরোপ আমেরিকা হলো বাংলাদেশের রফতানি বাজার। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা দীর্ঘায়িত হলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পেসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে সংকটের সৃষ্টি হবে। কারণ অর্থনীতি মন্দার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের চাহিদা কমে যাবে এবং তৈরি পোশাক কেনা কমিয়ে দিতে পারে। ফলে রফতানি প্রবৃদ্ধি থমকে যাবে এবং ব্যাংকিং খাতসহ রফতানি ও আমদানি খাতের বহু কোম্পানী শেয়ার বাজারের সাথে সম্পৃক্ত সেখানেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

আজ বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা দায়ী। চাহিদার কারণে বিশ্বের সামষ্টিক অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। এর প্রভার পড়ছে বাংলাদেশের রপতানি আয়ের উপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্বারের জন্য বুশ প্রশাসন ৭০ হাজার কোটি ডলারের (৭০০ বিলিয়ন) বেইল আউট বিলটি কংগ্রেসে পাস হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন , যুক্তরাষ্ট্রের উপর একক নির্ভরশীলতা কমিয়ে ইউরোপে নতুন বাজার সৃষ্টি করা উচিত। পাশাপাশি পণ্যের বহমুখীকরণের দিকেও বাংলাদেশেকে নজর দিতে হবে। অধিক মূল্যসংযোজনী পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে হবে। নইলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর্থিক সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগ গ্রহণ ঃ পদপে-১. বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মহামন্দার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে।

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গুলো ক্রমাগত শেয়ারের দরপতন এবং আর্থিক সংকটের কারণে রীতিমত অ¯িতর হয়ে পড়েছে উন্ন বিশ্বের দেশগুলো। তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওলিয়াত্বের হাত থেকে বাঁচাতে আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি সুদের হার কমানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। অর্থনীতির এই তীব্র সংকট মোকাবেলায় বিশ্বের প্রধান প্রধান ছয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একযোগে ব্যাংকের সুদের হার কমিয়েছে। বিশ্ব পুঁজিবাজারকে রার সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে ব্যাপক সিদ্ধাšত গ্রহণ করেছে। পদপে-২. আšতর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে-সংকট নিপতিত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিবে।

১৯৯০-এ এশিয়ায় আর্থিক সংকটে একই ধরণের আর্থিক সহযোগিতা জুগিয়েছিল আইএমএফ। পদপে-৩. বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য জি-৭ পাঁচ দফা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পদপে-৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের ‘বেইল আইট’ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পদপে-৩. বিশ্ব অর্থনীতির সংকট মোকাবেলার জন্য দেশে দেশে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট তার দেশের অর্থনৈতিক সংকট , অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে ৪৪০ কোটি ডলার খরচ করার জন্যে ঘোষণা দিয়েছ।

একই সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেসোর দরপতন ঠেকাতে রিজার্ভ থেকে ২৫০ কোটি ডলার ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিনির্ধারনী সুদ হার ৭ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ৬ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। দণি কোরিয়া, হংকং, তাইওয়ানও বিশ্বের অন্যদেশ গুলোর অনুসরণ করে তাদের নীতিনির্ধারনী সুদহার কমিয়েছে। চীনও নীতিনির্ধারনী সুদহার কমানোর রণাত্মক কৌশল অবলম্বন করেছে। জাপান ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার ব্যাংক ব্যবস্থায় সরবরাহ করেছে।

পদপে-৬.জি-২০ এর সদস্য দেশগুলো বিশ্ব বাজার সিইতশীল রাখার জন্য সব ধরণের আর্থিক সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। পদপে-৭.ইউরোজোনের ১৫টি দেশের নেতারা সংকট মোকাবেলা করার জন্য প্যারিসে বৈঠক করেন। বিশেষ করে আšতর্জাতিক ব্যাংকের ধস ঠেকাতে তারা কয়েকটি প্র¯তাব উত্থাপন করেন। ফ্রান্স এককভাবে ব্যাংকিং খাতের সংকট মোকাবেলা করতে ৪১৬ বিলিয়ন ডলারের জরুরি তহবিল বরাদ্দের পরিকল্পনা করছে। তাছাড়া জার্মানি , ফ্রান্স বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট মোকাবেলায় স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।

পরিশেষে,বলা যায় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশের ধবংসাত্মক অর্থনৈতিক নীতিতে যখন মধ্য শ্রেণী গরীব হচ্ছে, তখন লাভবান হচ্ছে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিরা। আইএমএফ ১৭টি অগ্রসর অর্থনীতির গত ৩০ বছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ উপসংহারে উপনীত হয়েছে ১১৩ টি আর্থিক সংকট্ েঘটনায় প্রায় ৬০ শতাংশ েেত্র অর্থনীতির নিম্নমুখীতায় ব্যাংকিংখাতের বিপর্যয় ছিল জোরালো। বিশ্বের নীতিনির্ধারকরা এ বিপর্যয়ের বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। একটি অংশ মনে করেন, এটি একটি একাšতই অর্থনৈতিক কারণ। ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতাদের প্রত্যাশার সাথে বাজার স্বাভাবিক আচরণ করেনি বলে এ বিপর্যয়।

ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের অমতাকেই দায়ী করা হচ্ছে। তবে আমি মনে করি সংকট সম্পর্কে আগাম কোন ধারণা করতে না পারা এবং যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দায়ী। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা যায় বুশ প্রশাসনকে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন-অর্থবাজার বুশ প্রশাসনের উপর আ¯তা হারানোর ফলেই এই বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, অর্থবাজার সম্পর্কিত বিদ্যমান কাঠামো পুরোনো হয়ে গেছে সুতরাং এর পরিবর্তন দরকার।

আর এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার েেত্র সরকারি নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন রয়েছে। অনেকে আবার একে বাজার অর্থনীতির ‘‘শেষের দিকের শুরু’’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে, মুক্তবাজার অর্থনীতির ধূয়া তুলে সবকিছু বাজার ব্যবস্থার হাতে ছেড়ে দেওয়ার ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলো কোন নিয়মের মধ্যে ছিলনা। যা কিনা আর্থিক ব্যবস্থায় অর্থনীতির নীতি নির্ধারণে সরকারের ভূমিকাও কমিয়ে দিয়েছিল। যেখানে কোন নিয়ম ছিল না, ছিল না অনিয়ম দেখার কেউ।

যার ফলে বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থায় এই বিপর্যয়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.