আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গঞ্জিকার দিনরাত্রি

সবাইকে শুভেচ্ছা...
মগজের গোপন কুঠুরীতে লালিত গাঞ্জার কল্কিটা আজকাল ঘন ঘন ব্যবহার করতে হয়। দুনিয়াটা যেন ঘুরছেনা, ঘুরছে চন্দ্র-সূর্য সহ সমগ্র সৌরজগত। আমিও ঘুরছি, সাথে ঘুরছে আমার মগজ। ঘুরাঘুরির এই চক্রখেলায় গাঞ্জার কল্কিটাই আমাকে বাচিয়ে রাখে। পত্রিকা খুলি, তাতে কি সব লেখা বুঝতে কষ্ট হয়, টিভি খুললে নিজকে মনেহয় পঞ্চম শ্রেনী ফেল বখে যাওয়া কোন টোকাই।

ইন্টারনেটে আস্‌লে মগজের শিরা উপশিরায় শুরু হয় বিরামহীন দাপাদাপি। আমি কি সময়যন্ত্রে চড়ে ফিরে গেছি আমার কৈশোরের নিস্পাপ যুগে! এমন একটা চিন্তা আমাকে অহঃনিশি যন্ত্রণা দিচ্ছে আজকাল। ব্যাপারটা একটু খুলেই বলি। এক্কাবর মোল্লা আর মোতাব্বের খলিফা সাড়া জীবনের দোস্ত, পান হতে খসে যাওয়া চুনটাও দু’জনে ভাগাভাগি করে খায়। একটা জায়গায় অবশ্য দু’বন্ধুর সাপে-নেউলে বৈরীতা।

বস্তাপচা আওয়ামী-বিএনপি, বাংলাদেশী-বাংগালী, রাজাকার-মুক্তিযোদ্বা, পিতা-ঘোষক জনিত দেশীয় রাজনীতির রামায়ন নিয়ে দুই বন্ধুর অবস্থান দু মেরুতে। একজনের নেত্রী অন্যজনের সিঁদকাটা চোর, একজনের দল অন্যজনের দেশ বিক্রীর রিয়েলটর, ইত্যাদি, ইত্যাদি!!! যখন ফকু-মকু নামের ’বর্গিরা’ এসে এই দু’বন্ধুর নেত্রীদের হাতে আংটা পড়াল, একাব্বর আর মোতাব্বের সব ভূলে একে অপরকে জড়িয়ে হু হু করে কেদে উঠল। গণতন্ত্র গেল! এই বানীটা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে দেয়ার মানষে কোন এক সুন্দর সকালে মহিশের গাড়িতে মাইক লাগিয়ে রাস্তায় নেমে পরল দুই বন্ধু। গ্রীষ্ম গড়িয়ে বর্ষা এল, হেমন্তের বিদায় শেষে মাঘের ইতিউতি দুই বন্ধুর মহব্বতকে আরও পোক্ত করল, এবং সবশেষে 'বর্গীরা' যে পথে এসেছিল সে পথেই বিদায় নিল। ক্ষমতার পালাগান এতদিন ছিল একাব্বরের গলায়, গলা বদল হয়ে তা উঠল মোতাব্বেরের গলায়।

শুরু হল পুরানো সেই বৈরীতা, প্রথমে কথা কাটাকাটি, হুমকি-ধামকি এবং সব শেষে হাতাহাতি। এবার দু’বন্ধু আলাদা ভাবে দুটি মহিষের গাড়ি ভাড়া করে নিজ নিজ কীর্ত্তন গাইবার সিদ্বান্ত নিল। মাঘের শেষ বিকেলে পুকুরে নাইতে গিয়ে একাব্বর আর মোতাব্বেরকে আবিস্কার করলাম পুকুরের দুই পাড়ে। খলিফাকেই প্রথম জিজ্ঞেষ করলাম গণতন্ত্রের মহামৃত্যু নিয়ে তার আহাজারির সর্বশেষ হালহকিকতের কথা। এরপর এল মোল্লার পালা।

একজন জানাল গণতন্ত্রের মা গেল শীতে ইন্তেকাল করেছে, অন্যজন বলল্‌, গণতন্ত্র এখন পোয়াতী, সবেমাত্র প্রসব বেদনা উঠেছে, ডিজিটাল বাচ্চা বের হল চারদিকে দুধের নদী বইতে শুরু করবে। আমার মগজ চক্কর দিয়ে উঠল, গাঞ্জার কল্কিটাকেই ঐ মুহুর্তে একমাত্র সীদাসাধা জিনিষ বলে মনে হল। দুই চোর চুরি করে, চুরির রাজত্ব দখল নিয়ে খুনাখুনি করে। প্রতিবেশীদের জীবন হয় অতিষ্ঠ, পুলিশ এসে চোরাদের হাতে আংটা পরায়। ভোজাবাজির মত দুই চোর এবং তাদের চ্যলা-চামুন্ডারা বন্ধু বনে যায়, পুলিশকে হটাতে শুরু করে দেয় যৌথ লড়াই।

র্দুযোগ সময়ে এক চোর অন্য চোরকে বুঝায়, আরে রাজত্বই যদি না থাকল তাহলে নিজদের ভেতর মারামারি করে হবেটা কি! এমন সমীকরন বুঝতে আমাকে গঞ্জিকার সাহায্য নিয়ে হয়। আসলেই আমার মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে, চুরির রাজ্যে কে রাজা আর কে প্রজা বুঝতে বড়ই কষ্ট হচ্ছে! একসাথে দুই দল চোর জেলে গেল, অথচ আইন করে একদল চোরকে ফেরেস্তা ঘোষনা করা হল, আর অন্য দলের চোরদের বলা হল তোমরা চোর এবং জেলই তোমাদের উত্তম জায়গা। বড় গোলমেলে ব্যাপার, আমার আরও এক সিলিম গাঞ্জা চাই, তা চাই এখনই।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।