আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রতিবন্ধীদের বোঝা ভাবা ঠিক নয়

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

প্রতিবন্ধীদের বোঝা ভাবা ঠিক নয় livingdead নামক একজন ব্লগারের একটি চিঠি পেয়েছি ২ দিন পুর্বে। তাঁর প্রফাইল পড়েই এই লেখা লিখতে উদ্ভুদ্ধ হয়ে এই লেখা লিখেছি) livingdead ব্লগারের লিঙ্কটা দিয়ে দিলাম-কেউ পড়লে বুঝতে পারবেন-জীবনের অসহায়ত্ব কতটা গভীর! http://www.somewhereinblog.net/blog/livingdead/28896363 জীবনে দুর্ভাগ্যের শিকার হন অনেকেই, তার থেকে আবার পরিত্রাণও পেয়ে যান। কিন্তু, দুর্ভাগ্যের অমানিশা কাউকে বুঝি সারাজীবনের জন্য এমনভাবে গ্রাস করে যা থেকে সে কোনভাবেই নিস্তার পায় না। এমনি একজন প্রতিবন্ধী নারী হেলেন কেলার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাত্র দেড় বছর বয়সে গুরুতর অসুস্থতার কারণে তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরতরে হারিয়ে যায়।

কিন্তু, অসাধারণ তীক্ষè বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি দুর্ভাগ্যকে পায়ে ঠেলে সফলতার দ্বারে পৌঁছে ছিলেন। শুধু সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছেই বসে থাকেননি, নিজের প্রতিবন্ধিতার কথা চিন্তা করে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বাক, শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্য তৈরী করেছেন স্কুল, লাইব্রেরী, ট্রেনিং সেন্টার। অভিশপ্ত জীবনের ওপর নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র। প্রতিবন্ধী হয়েও তিনি সাঁতার কাটা, নৌকা চালানো, তাস ও দাবা খেলা খেলতে পারতেন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধাহত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নাবিক ও সৈন্যদের আশার বাণী শোনাতেন।

১৯৫৯ সালে হেলেন কেলার জাতিসংঘ কর্তৃক বিশেষ সম্মানে ভূষিত হন। তার এই অসামান্য অবদানকে চির অম্লান করে রাখার জন্য ১৯৭৭ সালে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। "হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল"। সাধারণত প্রতিবন্ধি ব্যক্তি বলতে স্বাভাবিক কর্ম সম্পাদনে অক্ষম ব্যক্তিকে বুঝায়। প্রতিবন্ধী বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা অনুযায়ী ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ বলতে অসুখে, দুর্ঘটনায়, চিকিৎসায় ত্রুুটি, জন্মগত ত্রুুটি কোন ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মাধ্যমে কর্মক্ষমতা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে লোপ পাওয়া ব্যক্তিকে বুঝায়।

প্রতিবন্ধী মূলত: শারীরিক, মানসিক, দৃষ্টি, শ্রবণ ইন্দিয়ের ক্ষতির কারণে হয়ে থাকে। ইংরেজীতে প্রতিবন্ধীত্বের প্রায় সমার্থক শব্দগুলি হচ্ছে, দুর্বলতা, অক্ষমতা এবং প্রতিবন্ধীত্ব। বিশ্বসংস্থার মতে প্রতিবন্ধি ব্যক্তির সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১০ ভাগ। সেই হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে প্রতিবন্ধি ব্যক্তির সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লক্ষ। নেহায়েত কম নয়।

এদের একটি বৃহৎ অংশ শিশু ও কিশোর। সংবিধানের ১৫, ১৭ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে অন্যান্য নাগরিকের সাথে প্রতিবন্ধীদের সমান সুযোগ ও অধিকার প্রদানের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধিতার মাত্রাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, মৃদু, মাঝারি এবং চরম। প্রতিবন্ধী কারাঃ (১) জন্মগতভাবে বা রোগাক্রান্ত হয়ে বা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে, অপচিকিৎসা বা অন্য কোন কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙ্গ বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে কর্মসম্পাদনে অক্ষম। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীঃ (২) এক চোখের বা উভয় চোখের দৃষ্টি নাই (৩) শারীরিক প্রতিবন্ধী (ক) এক হাত বা দুই হাতেই পূর্ণ বা আংশিকভাবে কর্মসম্পাদনে অক্ষম।

(খ) একটি বা উভয় পা নাই। (গ) শারীরিক গঠন বিকৃত বা অস্বাভাবিক। (ঘ) স্নায়বিক বৈকাল্যের কারণে স্থায়ীভাবে শারীরিক ভারসাম্যহীন। (৪) শ্রবণ প্রতিবন্ধী ঃ সুস্থ কানের শ্রবণ ক্ষমতা সাধারণ কথোপকথন শ্রবণের ৪০ ডেসিবল, বা ততোধিক মাত্রায় নষ্ট। (৫) বাক প্রতিবন্ধী ঃ যার স্বাভাবিক অর্থবোধক ধ্বনি উচ্চারণ করার ক্ষমতা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বিনষ্ট।

(৬) বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ঃ বয়:বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক বুদ্ধির পূর্ণতা ঘটে নাই বা বুদ্ধাংক স্বাভাবিক মাত্রা অপেক্ষা কম। (৭) বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ঃ যার একাধিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে। তথ্যমতে, দেশের ৬টি বিভাগের মোট ২৯২ জন নারীর ওপর পরিচালিত "বাংলাদেশের প্রতিবন্ধি নারী" শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবন্ধিদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহরভিত্তিক হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের প্রতিবন্ধি নারীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গবেষণায় আরো বলা হয়, ৭২ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারী পরিবারের সাথে থাকে। এই নারীদের ৩০ শতাংশ কর্মসংস্থানের সাথে জড়িত।

বাকি এক-তৃতীয়াংশের বেশী কোন আয়মূলক কাজ করে না। গবেষণায়, ৫৫.১ শতাংশ মহিলাই বলেছেন, তাদের যানবাহনে ওঠানামা করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। দেশে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এক শতাংশেরও কম নারী প্রকল্পগুলো সম্পর্কে জানে। বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ। এখনো গ্রাম বা শহরাঞ্চলে কোন প্রতিবন্ধীকে পরিবারের বোঝাস্বরূপ মনে করা হয়।

একজন প্রতিবন্ধীর পেছনে যে ব্যয় হয় তা অনেক পরিবারেরই বহন করার ক্ষমতা নেই। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং শিশু-কিশোরদের শিক্ষা লাভের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধী উপবৃত্তি প্রদান কর্মসূচি প্রবর্তন করেছেন। নিঃস্বন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যেগ। এ উপবৃত্তি ১ম শ্রেণী থেকে স্নাতোকত্তর পর্যন্ত প্রদান করা হয়। সরকারী উদ্যোগ ছাড়াও ইউএনডিপি, সুইড-বাংলাদেশ (সোসাইটি ফর দি ওয়েলফেয়ার অব দি ইন্ট্যালেকচুয়ালি ডিজএব্যাল্ড-বাংলাদেশ") কিছু স্বেচ্ছাসেবী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রতি-বন্ধীদের সাহায্য প্রদানের লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এর মধ্যে. (১) সমন্বিত অন্ধ শিক্ষা কার্যক্রম ঃ ৬৪টি জেলাশহরে ৬৪টি স্কুলের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। (২) মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতিষ্ঠানঃ এটি চিটাগাং-এ রাউফাবাদ নামক স্থানে প্রতিষ্ঠিত। এখানে ১০০ জন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। (৩) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ঃ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল-এ অবস্থিত। এখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া হয়।

(৪) শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ঃ শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা দেয়া হয়। (৫) ব্রেইল প্রেস ঃ ইআরসিপিএইচ কেন্দ্রে অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইড ব্রেইল প্রেস রয়েছে। এ কেন্দ্র থেকে মুদ্রিত ব্রেইল পুস্তক বিভিন্ন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। (৬) প্লাস্টিক সামগ্রী উৎপাদন কেন্দ্রঃ প্রতিবন্ধী কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা উৎপাদিত প্লাষ্টিক সামগ্রী উৎপাদন কেন্দ্র টঙ্গীতে অবস্থিত। (৭) মিনারেল ওয়াটার প্লান্ট ঃ "মুক্তা" নামে বাজারজাত মিনারের ওয়াটার প্লান্টে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।

(৮) কৃত্রিম অঙ্গ উৎপাদন কেন্দ্র ঃ শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পুর্নবাসন (ইআরসিপিএইচ) কেন্দ্রের অভ্যন্তরে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য হেয়ারিং মোল্ড, কৃত্রিম হাত-পা উৎপাদিত হয়। প্রতিবন্ধীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যে দেশে কিছু স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি কার্যক্রম চালু আছে। এর মধ্যে - বাস, ট্রেন, লঞ্চ-ষ্টিমারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন সংরক্ষিত রাখা। - প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারী চাকুিরতে ১০% কোটা যথাযথভাবে পূরণ। - প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধ করার লক্ষ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অভিযোগ বাক্স খোলা।

- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা। - প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাণের কারখানার পণ্যসামগ্রী বিনা টেন্ডারে ক্রয় করার ব্যবস্থা করা। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। দেশে জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ প্রতিবন্ধী। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কি করে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তাও মাথায় রাখা প্রয়োজন।

এদের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসা উচিত। শুধু এগিয়ে আসলেই হবে না, এদের দুর্গম পথকে সহজতর করার লক্ষ্যে এবং তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল করার জন্যে সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তার পরিবার অযথা হয়রানির শিকার হয়ে নিজেদের বোঝা মনে না করে। এ ক্ষেত্রে প্রচার মাধ্যমগুলোও রাখতে পারে বিশেষ ভূমিকা। (তথ্য সুত্রঃ "হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল" কর্তিক গবেষনা পুস্তিকা)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.