আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাশাদ খলিফা ১ : সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত

মেঘমুক্ত নীলাভ দিঘীর কবোষ্ণতা খুঁজছে মন!

রাশাদ খলিফার পরিচয় নতুন করে দিতে চাচ্ছি না ,উইকিপিডিয়ায় দেখুন রাশাদ খলিফা রাশাদ খলিফার সবচেয়ে আলোচিত দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম যেটি সেটি হল তার ১৯ তত্ত্বের মাধ্যমে কোরআন শরীফের ৯ নং সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত বাদ দেয়া। তার দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক আসুন তা দেখার চেষ্টা করি। ১. সূরা তাওবা পর্যন্ত আল্লাহ শব্দ সংখ্যা কোরআন শরীফে শুরু থেকে সূরা ৯ এর ১২৭ আয়াত পর্যন্ত আল্লাহ শব্দটা এসেছে ১২৭৩ (১৯ *৬৭) বার। যেহেতু পরের দুই আয়াতে আর একবার আল্লাহ শব্দ এসেছে সুতারাং রাশাদ আয়াতদ্বয় বাদ দিয়ে দিল এবং যুক্তি দেখাল যেহেতু সূরা তাওবা বিসমিল্লাহ বিহীন একমাত্র সূরা সুতারাং এ সূরা পর্যন্ত আল্লাহ শব্দটা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হওয়া আবশ্যক। সূত্র: সাইটলিঙ্ক মন্তব্য : এটা রাশাদ খলিফার অন্যতম দুর্বল যুক্তি,তার নিজ থিওরী মতেও কোন সূরার শেষ পর্যন্ত আল্লাহ শব্দটা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হওয়ার কথা নয়।

কারন এমন করতে হলে প্রত্যেকটি সূরার কিছু আয়াত বাদ দিয়ে তা তার মনমতো মিলানো উচিত। ধরে নিচ্ছি এটা একমাত্র সূরা যা বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু হয় নি , তার মানে এই নয় এ সূরার শেষ পর্যন্ত আল্লাহ শব্দসংখ্যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য হতে হবে। এটা আসলে এমন এক যুক্তি যা নিজের মনের মত করে তৈরি করে নেয়া। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল সূরা তাওবা এমন এক সূরা যার ক্রম সংখ্যা ৯ ওহি দ্বারা নির্দেশিত নয়। সাহাবা (রা) দের ইজতেহাদের মাধ্যমে সূরা তাওবা সূরা আনফালের পরে স্থান দেয়া হয়।

( ফতহুল বারী: ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩২-৩৫) রাশাদ খলিফা সাহাবাদের কোন সিদ্ধান্ত বা কাজকে সমর্থন জানায় না, স্বভাবতই ধরে নেয়া যায় এই ইজতেহাদের ব্যাপারেও তার একই মনোভাব ছিল। কিন্তু তার উপরোক্ত যুক্তির জন্য ক্রমিক সংখ্যা ৯ হওয়া আবশ্যক। তাই তাকে এ যুক্তির জন্য স্ববিরোধী অবস্থানে আসতে হয়। তাছাড়া একমাত্র সূরা যা বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু হয় নি এ জন্য এখানে ১৯ এর ব্যাপারটা থাকতে হবে বিষয়টা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন সূরা তাওবায় বিসমিল্লাহ লাগানো হয়নি এটাও কোন ঐশি নির্দেশ ছিল না, এর কারন হল - প্রতিটি সূরার বিসমিল্লাহ দেয়ার উদ্দেশ্য দুটি সূরার পৃথকীকরণ। আর একাজ হয়েছিল মহানবী সা. এর তিরোধানের পর।

সূরা আনফাল ও সূরা তাওবা দুটি সূরা যা কিনা মহানবী সা. এর স্পষ্ট বাণী না থাকার সংশয়ে এ উভয় সূরার মধ্যে বিসমিল্লাহ ব্যবহার করা হয় নি, তাছাড়া সূরা দ্বয়ের বিষয় বস্তুও একই ধরনের হওয়ায় এ বিষয়গত ব্যাখ্যা বিসমিল্লাহ ব্যবহৃত না হওয়ার অন্যতম কারন। ( মাদারেক) সুতারাং দেখা যাচ্ছে রাশাদ খলিফা বিসমিল্লাহ ব্যবহার না হওয়ার কারন হিসেবে যে কথা বলেছে অর্থাৎ পরবর্তীতে তার মত মেসেঞ্জার আবির্ভূত হয়ে দুটো আয়াত বাদ দেবে এ কারনে বিসমিল্লাহ নেই তা ভিত্তিহীন। এ বক্তব্য যদি কেউ মানতে না পারেন তাহলে ২য় পয়েন্টের মন্তব্য দেখুন। ২. মোট আল্লাহ শব্দ সংখ্যা কোরআনে আল্লাহর নাম মোট এসেছে ২৬৯৯ বার যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয় , এখন যদি ৯:১২৮-১২৯ আয়াতদ্বয় বাদ দেয়া হয় তাহলে এ সংখ্যা হবে ২৬৯৮ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য (২৬৯৮=১৯*১৪২)। সুতারাং আয়াতদ্বয় বাদ দিতে হবে।

মন্তব্য : এ দাবির বিপরীতে যে জবাব তার মাধ্যমে রাশাদ খলিফার আরো অনেক অযৌক্তিক দাবির খন্ডণ সম্ভব। এ দাবি রাশাদ খলিফা করেছে কারন রাশাদ খলিফা কোরআন নিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক সিদ্ধান্তে এসেছে। কোরআন শরীফে আল্লাহর নাম ২৬৯৮ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য তার চেয়ে ২৬৯৯ হওয়াটা অনেক বেশি যৌক্তিক এবং ১৯ তত্ত্বেরই স্বপক্ষে যায়। অবাক হবেন না, আসুন ধীরে সুস্থে বিশ্লেষণ করি। আমরা প্রথমে ধরে নেই ১৯ একটি অলৌকিক সংখ্যা, কোরআন শরীফের অনেক কিছুই তার সাথে মিলে যায়।

যেমন বিসমিল্লাহ শব্দে ১৯ হরফ, মোট সূরা সংখ্যা ও মোট বিসমিল্লাহ আয়াত ১১৪টি ( সূরা তাওবায় নেই আর সূরা আন নামলে দুই বার),প্রথম ওহি নাযিল হয় যে পাঁচটি আয়াত তাতে শব্দ সংখ্যা ছিল ১৯ টি। অর্থাৎ অনেক কিছুই আছে যা ১৯ দিয়ে ভাগ করলে অবশিষ্ট কিছু থাকে না বা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। কিন্তু আল্লাহ শব্দটা যতবার আছে তাকে ভাগ দিলে এক বাকি থেকে যায়। এটা কি ১৯ তত্ত্বের সাথে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ না সামঞ্জস্যপূর্ণ এ প্রশ্নকরা হলে আমরা বলব তা অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। লক্ষ্য করুন এর মাধ্যমে আল্লাহ তার নিজের স্বাতন্ত্র বা একত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন।

১৯ দ্বারা কোরআনের অনেক কিছুই বেঁধে দেয়া থাকলেও আল্লাহ নিজের নামকে একই ভাবে সীমাবদ্ধ করবেন না এটাই স্বাভাবিক। বরঞ্চ ২৬৯৯ বার আসা আল্লাহ শব্দটা ১৯ দ্বারা ভাগ করলে বাকি থাকে আর একটি আল্লাহ শব্দ, যা প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টিকর্তার এককত্ব প্রকাশ করেছে। রাশাদ খলিফার মাথায় বিষয়টা আসেনি কারন সৃষ্টিকর্তাকে সে তার থিওরীর বাইরে নিতে রাজি হয় নি, তার নিজের অনেকগুলি মনগড়া ব্যাপারের মত আল্লাহ শব্দটাকে সে কিছুতেই নিজের থিওরীর মধ্যে ফেলতে পারেনি বলে নিজের চুল ছিড়তেই বোধহয় বাকি রেখেছিল, এবং এ কারনে যখন ১৯৭৪ সালে সে প্রথম তার থিওরী প্রকাশ করে তখনও যেমন তাকে জোচ্চুরি করতে হয় ( সূরা ফাতেহার বিসমিল্লাহ বাদ দিয়ে গণনা করে) তেমনি তার কয়েক বছর পর আবার তাকে আরেক জোচ্চুরির আশ্রয় নিতে হয়। আর সেটা হল সূরা তওবার শেষের দুই আয়াত বাদ দেয়ার দাবি। এরকম রাশাদ খলিফার আরো কয়েকটি দাবি দেখুন তার সাইটে-সাইটলিঙ্ক দাবিগুলো হল- [1] The first violation of the Quran's code by Verses 9:128-129 appeared when the count of the word "God" (Allah) in the Quran was found to be 2699, which is not a multiple of 19, unless we remove one. The count of the word "God" is shown at the bottom of each page in this translation. The total shown at the end of the Quran is 2698, 19x142, because the false injections 9:128-129 have been removed. [3] As shown at the end of Sura 9 in this translation, the total occurrence of the word "God" to the end of Sura 9 is 1273, 19x67. If the false injections 9:128-129 were included, the total would have become 1274, not a multiple of 19. [4] The occurrence of the word "God" from the first Quranic initial ("A.L.M." of 2:1) to the last initial ("N." of 68:1) totals 2641, or 19x139. Since it is easier to list the suras outside the initialed section of the Quran, Table 1 shows the the 57 occurrences of the word "God" in that section. Subtracting 57 from the total occurrence of the word "God" gives us 2698- 57 = 2641 = 19x139, from the first initial to the last initial. If the human injections 9:128 and 129 were included, the count of the word "God" in the initialed section would have become 2642, [5] Sura 9 is an un-initialed sura, and if we look at the 85 un-initialed suras, we find that the word "God" occurs in 57 of these suras, 19x3. The total number of verses in the suras where the word "God" is found is 1045, 19x55. If 9:128-129 were included, the verses containing the word "God" would increase by 1. [6] The word "God" from the missing Basmalah (Sura 9) to the extra Basmalah (Sura 27) occurs in 513 verses, 19x27, within 19 suras (Table 2). If the false Verses 9:128-129 were included, the number of verses containing the word "God" would have become 514, and this phenomenon would have disappeared. [7] The word "Elaah" which means "god" occurs in Verses 9:129. The total occurrence of this word in the Quran is 95, 19x5. The inclusion of 9:128-129 causes this word to increase by 1, to 96. তার সাইটের ১ ,৩,৪,৫,৬ও ৭ নম্বর এ দাবি গুলোর উত্তর একই।

লক্ষ করুন প্রত্যেকবারই আল্লাহ শব্দটা একবার করে বেশি আছে যা আমাদের উপরোক্ত বক্তব্যকে সমর্থন করে, এমনকি আল্লাহর প্রতিশব্দ ইলাহ ও রাহিমও একই ভাবে ১৯ দ্বারা ভাগ করলে একই ভাবে একবার বাকি থেকে যায়। ৩. সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত সম্বন্ধে আরো কিছু জানুন- বয়ানুল কোরআনে উল্লেখ আছে -প্রত্যেক বার সালাত আদায়ের পর এ আয়াতদ্বয় পাঠ করলে মুহম্মদ সা. তার জন্য সুপারিশ করবেন। যদি মহানবী সা. এর মৃত্যুর পর আয়াতদ্বয় যোগ করা হয় তাহলে এ রেওয়াতের ব্যাখ্যা কি হবে, এটা কিভাবে তাফসীরে স্থান পেল? রাশাদ খলিফা যেহেতু হাদীস মানে না, সুতারাং তার কাছে এর কোন গুরুত্ব নেই ,কিন্তু যেহেতু তিনি হাদীস ও তাফসীর ব্যবহার করেছেন তার এই দাবিতে সুতারাং এ প্রশ্নও এখানে প্রাসংঙ্গিক। ৪. মক্কী -মাদানী আয়াত ও আবু খুজাইমা রা. এবার রাশাদ খলিফার আরেকটি দাবির কথা উল্লেখ করা যাক, সূরা তাওবা একটি মাদানী সূরা কিন্তু শেষের দুই আয়াত শুধুমাত্র মক্কী। আবার এগুলো পাওয়া গেছে একজন মদীনাবাসী সাহাবীর(আবু খুজাইমা রা. ) কাছে,যিনি প্রাথমিক যুগে মুসলমান হন নি।

তার মানে এ আয়াতদ্বয় বাদ দিতে হবে। রাশাদ খলিফার ভাষায় How could these `Meccan' verses be found with Khuzeimah, a late `Medinan' Muslim?! How could a Medinan sura contain Meccan verses, when the universal convention has been to label as `Medinan' all revelations after the Prophet's Hijerah from Mecca??!! মন্তব্য : প্রথমত, এ অভিযোগ পড়ে ধারনা হয় মাদানী সূরায় মক্কী আয়াত থাকা বোধহয় বেশ অবিশ্বাস্য, আর মক্কী মাদানী বিষয়টা বোধহয় ঐশী নির্দেশ দ্বারা নির্দেশিত যেমনটা নির্দেশিত সূরার আয়াতের ক্রম। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায় মক্কী সূরায় মাদানী বা মাদানী সূরায় মক্কী আয়াত থাকাটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। যেমন সূরা আ’রাফ মক্কী কিন্তু তাতে কয়েকটি আয়াত মাদানী। আবার সূরা হজ্জ মাদানী কিন্তু এ সূরার চারটি আয়াত মক্কী।

সাধারণত যে সূরায় মক্কী আয়াত বেশি থাকে তা মক্কী সূরা আর মাদানী আয়াত বেশি হলে মাদনী সূরা। মহানবী সা. থেকে এমন কোন রেওয়াত বর্ণিত হয়নি যা দ্বারা জানা যায় যে কোন সুরা মক্কী আর কোনটি মাদানী, মূলত সাহাবী রা.গণ ও পরবর্তী তাবেয়ী রাহ. গণ মক্কী বা মাদানী নির্ণয় করেছেন। এমনকি কোন সূরা বা আয়াত কারো দৃষ্টিতে মক্কী আবার কারো দৃষ্টিতে মাদানী হতে পারে। (কুরআন সংকলনের ইতিহাস, মুফতিমুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ,পৃ ৯৯-১০১) দ্বিতীয়ত, আবু খুজাইমা রা. একজন মদীনাবাসী মুসলমান হওয়ায় তার উপর অভিযোগের আনে রাশাদ। যেহেতু তিনি ছিলেন মদীনাবাসী এবং পরের দিকে মুসলমান হয়েছেন সুতারাং তার নিকট সূরা তাওবার মক্কী আয়াতদ্বয় থাকতে পারে না।

কিন্তু এটা কখনো কোন যুক্তি হতে পারে না কারন তিনি অনেক পরেই মহানবী সা. এর তত্ত্বাবধানে থেকে তা লিখে নিতে পারেন, আমরা বুখারী শরীফের এক হাদীস থেকে আমরা জানি দুজন সাহাবী কোরআনের কিছু একই আয়াত ভিন্ন সময়ে মহানবী সা. এর তত্ত্বাবধানে থেকে শিখে নিয়েছিলেন,(সহী বুখারী, ভলিউম ৬, বুক ৬১,হাদীস ৫১৪) তারমানে মহানবী সা. শুধুমাত্র একবারই তার ওহী সাহাবীদের বলতেন না, বরঞ্চ পরবর্তীতেও সাহাবী রা. দের শিক্ষা দিতেন। সেক্ষেত্রে খুজাইমা রা. যদি ইসলাম গ্রহনের পর কোন মক্কী আয়াত মহানবী সা. থেকে শিক্ষা লাভ করেন তাহলে আপত্তি কোথায়? তৃতীয়ত, রাশাদ তার বক্তব্যের সমর্থনে উপস্থাপিত করেন যে হাদীস সেটা হল Narrated Zaid bin Thabit: Abu Bakr sent for me and said, "You used to write the Divine Revelations for Allah's Apostle : So you should search for (the Qur'an and collect) it." I started searching for the Qur'an till I found the last two Verses of Surat At-Tauba with Abi Khuzaima Al-Ansari and I could not find these Verses with anybody other than him. (Volume 6, Book 61, Number 511) যদিও রাশাদ হাদীসে বিশ্বাস করে না,তথাপি তার বক্তব্যের সমর্থনে হাদীস ও সূয়ূতি রহ. এর তাফসীর ব্যবহার করেছে,তাই আমরা হাদীস ও তাফসীরের মাধ্যমে ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করি। হাদীস অনুসারে সূরা তওবার রাষ্ট্রীয় ভাবে লিখন সম্পন্ন হয় আবু বকর রা. এর সময়। আবু বকর রা. হযরত জায়েদ ইবনে সাবেত রা. কে নির্দেশ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় ভাবে পুরো কুরআনের একত্রীকরণ করার জন্য । এখানে উল্লেখযোগ্য হযরত যায়েদ বিন সাবেত রা. নিজে কুরআনের হাফেজ ছিলেন, তিনি অন্যতম ওহী লেখক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন, পুরো কুরআন তিনি নিজ স্মৃতি থেকেই লিখতে সমর্থ ছিলেন, তাছাড়া শত শত হাফেজও তখন ছিলেন,তাঁদের সবাইকে এক করেও তিনি সহজে লিপিবদ্ধ করতে পারেতেন,এমনকি মুহম্মদ সা. এর সময়কালীন একটি পান্ডুলিপি তৈরি হয়েছিল, সেটা থেকেই তিনি কপি করে নিতে পারতেন, কিন্তু যায়েদ বিন সাবেত রা. আরও সতর্কতার সাথে এগুলেন, প্রতিটি আয়াতের ক্ষেত্রেই তিনি নিজ স্মৃতি, লিখিত দলীল, হাফেজগণের তেলাওয়াত প্রভৃতি সবকিছুর সাথে যাচাই করে সর্বসম্মত বর্ণণার ভিত্তিতে পান্ডুলিপি তৈরি করেন।

এ গুরুদায়িত্বের কারনেই হয়তো যায়েদ বিন সাবেত রা. বলেছিলেন By Allah If they had ordered me to shift one of the mountains, it would not have been heavier for me than this ordering me to collect the Qur'an. (Shahi Bukhari, Volumn 006, Book 061, Hadith Number 509.) তারপর মহানবী সা. এর সময়কালীন ওহী লেখকদের সাধারণ ঘোষণার মাধ্যমে তাদের নুসখা একত্র করা হয়। সেসব লিখিত দলীল যায়েদ রা. এর কাছে একত্র করা হয়। সেসব যাচাই করার জন্য নিম্নোক্ত চারটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। (১) সর্বপ্রথম তিনি তাঁর স্মৃতির সাথে মিলিয়ে যাচাই করতেন। (২) হযরত উমর রা. ও প্রখর স্মুতিসম্পন্ন হাফেজ ছিলেন, তিনিও আবু বকর রা. এর নির্দেশে নুসখা গ্রহণ ও তা স্ব স্মৃতির সাথে যাচাই করতেন।

(৩) এমন কোন আয়াত গ্রহণ করা হত না যতক্ষণ না অন্তত দুজন বিস্বস্ত সাক্ষী সাক্ষ্য না দিতো যে তা মহানবী সা. এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে লিখিত হয়েছিল (৪) অত:পর লিখিত আয়াতগুলি অন্যান্য সাহাবী কর্তৃক লিখিত পান্ডুলিপির সাথে যাচাই করা হত। এ ব্যাপারে দুজন বিজ্ঞজনের মত দেখা যাক- সুয়ূতি (রহ) বলেন- এ কথার উপর সাক্ষ নেয়া হত যে লিখিত আয়াতগুলি রাসূল সা. এর ওফাতের বছর তাঁর সামনে পেশ করা হয়েছিল এবং সেগুলো নাযিলকৃত সাত কেরাত্ব অনুযায়ী বলে তিনি সত্যায়িত করেছেন। ইমাম আবু শামা (রহ) বলেন-কুরআন লিপিবদ্ধকরণ ও সংরক্ষনের ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনই উক্ত পদ্ধতির মূল কারন। শুধু স্মৃতি শক্তির উপর নির্ভর না করে ঐগুলো মহানবী সা. এর সম্মুখে লিপিবদ্ধ আয়াত থেকে নেয়া হয়েছে। (কুরআন সংকলনের ইতিহাস,মুফতি মুহম্মদ উবাইদুল্লাহ,বইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত, পৃ ১৯৮,১৯৯) হযরত আবু বকরের রা. এর সময়ে কুরআন সংকলনের ব্যাপারে উপরোক্ত পদ্ধতি আলোচনা করার পর আবু খুজাইমার কাছে পাওয়া আয়াতের বিষয়টা ব্যাখ্যা করাটা আমাদের জন্য সহজ হবে।

যখন জায়েদ রা. বললেন আবু খুজাইমা রা. এর নিকট শুধুমাত্র এ আয়াত পাওয়া গেছে এ কথার অর্থ এই নয় যে তা শুধু খুজাইমা রা. এর স্মৃতিতে ছিল বা শুধুমাত্র তার কাছে লেখা ছিল। বরং মহানবী সা. এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে লিখিত সূরার অংশটুকু সেই সময়ে শুধু খুজাইমা রা. এর কাছে ছিল। তাছাড়া এ আয়াত দ্বয় উপরের শর্তগুলো পূরণ করে আসে। আয়াতগুলো বহুল প্রচারিত হওয়ায় তা সর্বজন বিদিত বাস্তব সত্য ছিল। শত শত হাফেজের স্মৃতিতে ও তাদের পূর্ণ কোরআনের নুসখায় তা বিদ্যমান ছিল।

যায়েদ রা. সেসব দলীলের পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে লিখিত আয়াত গুলি সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাই যতক্ষন না তা তৃতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে তাঁর হস্তগত হয়নি ততক্ষণ তিনি তা লিপিবদ্ধ করেননি। যেহেতু সূরা তাওবার আয়াতগুলি বহু সাহাবী এর মুখস্ত ছিল,এমনকি জায়েদ রা. এবং ওমর রা. এর মুখস্ত ছিল সুতারাং দুজন বিশ্বস্ত সাক্ষীর সাক্ষ্য পাওয়াটা কোন কঠিন কাজ হয়নি। তাছাড়া এ আয়াত দ্বয় কুরআনের পূর্ণ পান্ডুলিপিতে লিখিত ছিল। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সংগ্রহ সন্ধানের জন্যই এ প্রসংঙ্গ উত্থাপিত হয়। ( কুরআন সংকলনের ইতিহাস, মুফতি মুহম্মদ উবাইদুল্লাহ, পৃ ২০০) ৫. আবার আমরা হাদীসটির আরেকটি দিক শব্দগত অর্থে যাই Narrated Zaid bin Thabit: Abu Bakr sent for me and said, "You used to write the Divine Revelations for Allah's Apostle : So you should search for (the Qur'an and collect) it." I started searching for the Qur'an till I found the last two Verses of Surat At-Tauba with Abi Khuzaima Al-Ansari and I could not find these Verses with anybody other than him. (Volume 6, Book 61, Number 511) এই হাদীসের ব্যাখ্যা তিনি দিলেন যেভাবে ঠিক একই ভাবে দিয়েছিল খ্রিষ্টান মিশনারী জন গিলক্রিস্ট (এ সম্পর্কিত গিলক্রিস্টের জনপ্রিয় বই Jam al-Qur'ân: The Codification Of The Qur'ân Text কুরআন সংরক্ষনের ব্যাপারে পৃথিবীজুড়ে খ্রিস্টানমিশনারী ও ইসলামবিরোধী ব্লগারদের কাছেও এটা তাদের টেক্সট বইয়ের মত।

গিলক্রিস্ট এ সম্পর্কে সাহায্য নিয়েছিল আর্থার জেফরি নামক এক ওরিয়েন্টালিস্ট এর Materials For The History Of The Text Of The Qur'ân: The Old Codices নামক বই থেকে একেবারে অন্ধভাবে। অথচ মুসিলম স্কলাররা অনেক আগেই তাদের উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দিয়ে এসেছে) গিলক্রিস্ট ও রাশাদ খলিফা দুজনই যেটা এড়িয়ে গেছেন সেটা হল - মূল আরবী হাদীসের অর্থকে বিবেচনা না করা। আবু খুজাইমা রা. এর কাছ থেকে সূরা তাওবার শেষ দুই আয়াত পাওয়া প্রসঙ্গে যে আরবী ব্যবহৃত হয়েছে সেটা হল "মাআ খুজাইমা"- যার অর্থ খুজাইমার অধিকারে পাওয়া, তার মানে ফিজিক্যাল পজেশন - কারো স্মৃতিতে যদি তা থাকে তাহলে মাআ শব্দটা ব্যবহৃত হয় না। তাই এই হাদীসের আসল অর্থ কোরআন একই স্থানে পূর্ণাঙ্গরূপে যখন লিখা হচ্ছিল তখন জায়িদ বিন সাবিত রা. তখন খুজাইমা রা. কাছ থেকে সেই আয়াত দুটি তার কাছে লিখিত অবস্থায় পান যা তিনি নবী সা. এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে লিখেছিলেন। তাই এটা ভাবার কোন কারন নেই যে এই আয়াত দুটো শুধুমাত্র একজন সাহাবীর কাছে পাওয়া গেছে, যে কোরআন লিখবার সময় এত শর্ত সতর্কতা পালন করা হয়, সে কোরআনে শুধুমাত্র একজনের কথায় দুটি আয়াত যোগ করা হয়েছে সেটা ভাবার কোন কারন নেই।

আর এটা একদমই সম্ভব নয় কোন সূরার আয়াত শুধুমাত্র একজন জানে, যারা বাইবেল বা অন্য ধর্মীয়গ্রন্থের রেসপেক্টে কোরআনকে ভাবে তারা এটা হয়তো ভুলে ভাবতে পারে। কিন্তু কোরআনের সাথে অন্য যেকোন বইয়ের একটি মোটা দাগের পার্থক্য হল পৃথিবীতে এমন দ্বিতীয় কোন বই নেই যেটি পুরোটা রিসাইট করা হয়েছে প্রতি বছর কয়েকবার করে। প্রত্যেক রমজান মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোরআন শরীফের পূর্ণাঙ্গটা রিসাইট করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটা কখনোই সম্ভব নয় যে কোন সূরার দুটো আয়াত পরে যোগ করা হয়েছে এবং যেটা কেউই আগে জানত না। ৬. তারপরও যদি রাশাদ খলিফার সমর্থনকারীরা উপরের যুক্তিগুলো না মানে তাহলে তারা নিজেদের ফাঁদে পা বাড়াতে বাধ্য।

কারন শুধুমাত্র সূরা তাওবাই নয়, সূরা আহযাবের একটি আয়াতও শুধুমাত্র আবু খুজাইমার কাছ থেকে যায়েদ বিন সাবিত রা. গ্রহণ করেন,যেহেতু তিনি রাসূল সা. এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে তা লিখেছিলেন। তখন যুদ্ধ, শিক্ষকতা ও অন্যান্য কারনে অনেক প্রাক্তন সাহাবী দূরে অবস্থান করছিলেন, তাদের ব্যক্তিগত নুসখাগুরিতে এসব আয়াত থাকার সম্ভাবনা বেশি ছিল কিন্তু হাফেজগণের কন্ঠে ,নিজ স্মৃতিতে আর মদিনায় উপস্থিত কারো ব্যক্তিগত নুসখায় পাওয়ার পর দূরের তদারকি বা খোঁজাখুঁজির আর মোটেও প্রয়োজন ছিল না, সহজেই তাদের প্রদত্ত শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়েছিল। এখন রাশাদ খলিফা যদি সূরা তাওবার আয়াত বাদ দিতে চায় তাহলে অবশ্যই তাকে সূরা আহযাবের এই আয়াতও বাদ দিতে হবে। ফলে যেটা হবে তার পুরো থিওরীতে আবার হিসাবের গরমিল হয়ে যাবে। ৭. হযরত আলী রা. এর প্রসংঙ্গ ১ রাশাদ খলিফা AL ITQAAN FEE 'ULUM AL QURAN নামক তাফসীরের রেফারেন্স দিয়ে প্রমান করার চেষ্টা করেছেন যে Jalaluddin Al-Suyuty এর লেখা এ গ্রন্থে তিনি আলী রা. এর এক রেওয়াত দেখা যায় , যা দ্বারা রাশাদ প্রমাণ করতে চেয়েছেন আলী রা. কুরআন সংরক্ষনে সন্তুষ্ট ছিলেন না।

রেওয়াতটি হল- `Ali was asked: "Why are you staying home?" He said, "Something has been added to the Quran, and I have pledged never to put on my street clothes, except for the prayer, until the Quran is restored." রাশাদ আরো বলেছে- Ali's protest is documented in many references কথাটা আসলেই সত্যি , অনেক রেফারেন্সেই আলী রা. সম্পর্কে এ ধরনের রেওয়াত আছে। কিন্তু রাশাদ যেটা উল্লেখ করেনি সেটা হল এ অধিকাংশ রেফারেন্স হল শিয়াদের বই পত্র বা রেফারেন্স। শিয়াদের কল্যানে হযরত আলী সম্পর্কে যত বেশি মিথ্যা রেওয়াত তৈরি হয়েছে অন্য কারো সম্বন্ধে তার সিকি ভাগও তৈরি হয় নি। বিস্তারিত জানতে দেখুন -ই বুকলিঙ্ক তবে এখানে রাশাদ যে রেফারেন্স উল্লেখ করেছে তা অবশ্য শিয়া রেফারেন্স নয়, তবে শিয়াদের বহুল প্রচারে একটি দুটি রেওয়াত কোন তাফসীর গ্রন্থে প্রবেশ করাটা অস্বাভাবিক নয়, তাফসীরে দুর্বল রেওয়াত থাকতেই পারে। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. তাফসীর শাস্ত্রের প্রবাদ পুরুষ বলে বিবেচিত, তাকে বলা হত তরজমানুল কুরআন বা কুরআনের মুখপাত্র, প্রবীণ সাহাবীরাও তাঁর অভিমতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, তিনি নবী সা. এর চাচাত ভাই ছিলেন , তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে কুরআনের তফসীর সম্পর্কিত সর্বাধিক রেওয়াত, কিন্তু তাঁর রেওয়াতেরও একটা বিরাট অংশ সনদ সূত্রে দুর্বল ছিল।

(কুরআন সংকলনের ইতিহাস, পৃ ৪৬৯) তবে রাশাদ খলিফা হাদীসের মতই তাফসীরেও তার বিশ্বাস না থাকা সত্বেও তাফসীরের যেহেতু সাহায্য নিয়েছে আমরাও কিছু প্রসিদ্ধ তাফসীরের রেওয়াতের মাধ্যমে তার দাবি খন্ডণ করতে পারি- (ক) আলি রা. বলেন -হযরত উসমান সম্পর্কে কোন বিরূপ মন্তব্য কোর না। কুরআনের আয়াত সমূহকে একত্রীকরনের বিষয়ে তিনি যা করেছেন , তা আমাদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতেই করেছেন। (তদবীনে কুরআন) (খ) আলী রা. বলেন- আমি যদি উসমানের জায়গায় থাকতাম আমি তাই করতাম (কুরআনের সংরক্ষনে) যা উসমান করেছে। (আয যরকানী) (গ) রাশাদ খলিফা যার তাফসীরের কথা উল্লেখ করেছে ,সেই আল্লাম সৃয়ূতীর একটি রেওয়াত আমি পূর্বেই দিয়েছি, কোরআন সংরক্ষনের ব্যাপারে তার গ্রন্থ সার্বিকভাবে কোরআন সংরক্ষনের বিশুদ্ধতারই পক্ষেই যায় (ঘ) তাছাড়া আগে উল্লেখ করেছি- সূরা তাওবার আয়াতদ্বয় সম্পর্কে রেওয়াত আছে -প্রত্যেক বার সালাত আদায়ের পর এ আয়াতদ্বয় পাঠ করলে মুহম্মদ সা. তার জন্য সুপারিশ করবেন। (বয়ানুল কোরআন ) (ঙ) Ali bin abi Talib (ra) was quoted to have said: "The person with the greatest rewards with regards to the (compilation) of the mus/haf is Abu Bakr. May Allah's mercy be on Abu Bakr, he was the first person to compile the Book of Allah." (Qatan: Mubahith) সূত্র ৮. হযরত আলী রা. এর প্রসংঙ্গ ২ আর একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল হযরত আলী রা. কে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কুরআন সংরক্ষনের বিশুদ্ধতার বিরুদ্ধে যে রেওয়াতগুলো আছে তার সমাধান মাত্র একটি ব্যাপার দিয়েই সম্ভব।

তা হল তিনি ছিলেন চার খলীফার মধ্যে শেষ খলীফা, তার বীরত্ব , সাহসিকতা, ন্যায়পরায়নতা সর্বজন বিদিত। সেই সময়ে তিনি ছিলেন সমগ্র মুসলিম উম্মাহর একমাত্র শাসক। তিনি যদি মনে করতেন যে কোরআনে কিছু যোগ করা হয়েছে তাহলে নিশ্চয়ই তিনি তা সংশোধন করতেন। আমরা সংশোধন দূরে থাক, তিনি সংশোধনের চেষ্টা করেছেন এমন কোন ঐতহাসিক তথ্য বা বিশ্বস্ত রেওয়াত পাই না। এ সম্পর্কে ইসলাম প্রচার ব্যুরো ,রিয়াদ থেকে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত বইয়ের উদ্ধৃতি দেখুন (ক)প্রচলিত কুরআন ছাড়া যদি অন্যকোন কুরআন নাযিল হয়ে থাকতো তবে অবশ্যই হযরত আলী রা. আপন খিলাফত কালে তার শিক্ষা চালু করতেন।

(শিয়া-সুন্নি ঐক্য: সম্ভাবনা ও প্রাপ্তি , লেখক : মুহিব্বুদ্দীন আল খতীব, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, ই বুকলিঙ্ক ) (খ) জাবের আল-জা’ফি থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমি আবুজাফর আলাইহিস্ সালামকে বলতে শুনেছি, ...কুরআন শরীফ অবিকল অবস্থায় সংকলন ও সংরণ করেছেন একমাত্র হযরত আলী বিন আবু তালিব এবং তার পরবর্তী ইমামগণ। এ উদ্ধৃতি সম্পর্কে আহলে সুন্নাহর বক্তব্য , নিশ্চয়ই শিয়ারা আবু জাফর অর্থাৎ ইমাম বাকের রা. এর উপর এ রিওয়ায়েতটিতে মিথ্যা আরোপ করেছে। হযরত আলী রা. নিজেই তার প্রমাণ। কারণ, তিনি আপন খিলাফতকালে কুফায় থাকা অবস্থায় কেবলমাত্র সেই মসহাফের উপর আমল করেছেন আল্লাহ তাআলা যার সংকলন, সংরণ, প্রচার-প্রসার এবং হিফাজত করার তৌফিক তারই এক দ্বীনি ভাই হযরত ওসমান রা.কে দান করেন। আর যদি হযরত আলীর নিকট ইহা ছাড়া অন্যকোন মসহাফ থাকতো তাহলে নিশ্চয় তিনি সর্বপ্রথম নিজে এর উপর আমল করতেন এবং তদানুযায়ী আমল করার জন্য তৎকালীন মুসলমানদের নিদের্শ দিতেন।

কেননা,তিনি নিজেই ছিলেন, তখন মুসলমানদের খলীফা এবং ইসলামীজগতের একমাত্র শাসক। এমতাবস্থায় তার নিকট যদি অন্যকোন মসহাফ থাকতো আর তিনি গোপন রাখতেন তাহলে মুসলমানদের নিকট তিনি নিঃসন্দেহে আল্লাহ, তার রসূল ও দ্বীনে ইসলামের প্রতি বিশ্বাসঘাতক চিহ্নিত হতেন। (শিয়া-সুন্নি ঐক্য: সম্ভাবনা ও প্রাপ্তি , লেখক :মুহিব্বুদ্দীন আল খতীব, ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ) ৯. আয়াত সংখ্যা ঠিক করা রাশাদের আর একটি যুক্তি হল ৯:১২৮-১২৯ বাদ দিলে আয়াত সংখ্যা ১৯দিয়ে বিভাজ্য হয় তার লেখায় ১২ নং শর্ত The Quran contains 6234 numbered verses and 112 un-numbered verses (Basmalahs). Thus, the total number of verses in the Quran is 6346, 19x334. The false Verses 9:128-129 violate this important criterion of the Quran's code. মন্তব্য: ক. রাশাদ খলিফা যখন দেখলেন তার ১৯ তত্বে আয়াত সংখ্যা মিলানো যাচ্ছে না তখন তিনি যে কাজ করলেন তা অতি বিস্ময়কর,সূরা শুরুর বিসমিল্লাহকে একটা আয়াত হিসেবে ধরা শুরু করলেন। এবং নাম দিলেন আন নাম্বারড আয়াত। এটি একটি অপরিপক্ক চিন্তার ফসল,কারন বিসমিল্লাহকে কখনোই আয়াত হিসেবে ধরা যায় না।

যেমন কোরআন শরীফের কোন সূরার কত আয়াত তা সাহাবীগণ গণনা করেছেন কিন্তু মুহম্মদ সা. কয়েকটি সূরার মোট আয়াত সংখ্যা উল্লেখ করেছেন, যেমন তিনি বলেছেন সূরা মূলকের আয়াত ত্রিশ ,এমনি ভাবে সূরা ফাতেহার আয়াত সংখ্যা সাত। এখন কেউ যদি বলে সূরা ফাতেহার আয়াত সংখ্যা বিসমিল্লাহ সহ আটটি তাহলে সেটা নিশ্চয়ই নবী সা. এর বিরুদ্ধাচারণ। ( অবশ্য রাশাদ খলিফা সেটা তো করতেই পারে কারন রাশাদ হাদীস মানে না) খ. কোরআন শরীফে আয়াত সংখ্যা বিভিন্ন সাহাবীর গণনায় বিভিন্ন হয়েছে, কারন হল অনেক আয়াতের শেষে মুহম্মদ সা. থেমেছেন, কখনো পরবর্তী আয়াতের সাথে মিলিয়ে পড়েছেন, এজন্য কেউ প্রথম থামাকে আয়াত ধরে কেউ দ্বিতীয় থামাকে আয়াত ধরেছেন। মুহম্মদ সা. যেহেতু প্রকৃত আয়াত সংখ্যা উল্লেখ করে যান নি তাই যে কোন গণনাকেই আমরা গ্রহণ করতে পারি,কিন্তু প্রথম পয়েন্ট অনুযায়ী বিসমিল্লাহকে আয়াত ধরে গণনা করা যাবে না। সাহাবীদের গণনা সমূহ হল হযরত আয়েশা রা. - ৬৬৬৬ হযরত উসমান রা. -৬২৫০ হযরত আলী রা. -৬২৩৬ হযরত ইবনে মাসউদ রা. - ৬২১৮ ============================================= মোটামুটি এ কয়েকটি যুক্তিই রাশাদ খলিফার প্রধান যুক্তি সূরা তাওবার আয়াতদ্বয় বাদ দেবার ক্ষেত্রে ।

তবে এগুলো ছাড়াও তিনি বের করেছেন আরো অনেকগুলি যুক্তি, যার অনেকগুলিই তার নিজের মনের মত করে তৈরি করে নেয়া তা পড়লেই জানা যায়, যেমন কোরআনে কুল (বল) আছে ৩৩৩ বার আর কালু (তারা বলে)আছে ৩৩২ বার। এখন আয়াতদ্বয় বাদ দিলে কুল শব্দটা হয় ৩৩২ বার। অর্থাৎ সমতা বিধান হয়। এ ধরনের সমতা বিধানের জন্য আয়াত বাদ দেবার সিদ্ধান্ত মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া অনেকে দাবি করেছে রাশাদ খলিফা তার বড় বড় হিসাবগুলোতে ইচ্ছেমত বাড়িয়ে কমিয়ে নিজের মত করে হিসাব করেছে।

এ ধরনের হিসাব তার ভুরি ভুরি। সেসব নিয়ে তাই কোন জবাব বের করবার চেষ্টা যেমনি সময়সাপেক্ষ তেমনি অপ্রয়োজনীয়। রাশাদ খলিফার পুরো সাইটে প্রচুর তথ্যবিভ্রান্তি আছে, তা তার কিছু দাবি বিশ্লেষণ করেই আমরা পেয়েছি। আর তা জানতে দীর্ঘদিন সময় নিয়ে অনুসন্ধিৎসু হতে হয়। এই পোষ্টে কতটুকু তথ্য দিতে পেরেছি জানি না, তবে এ লেখায় ভুল ভ্রান্তি থাকাটা খুব স্বাভাবিক।

এ বিষয়ে বিজ্ঞ কেউ যে কোন ভুল ধরিয়ে দিলে উপকৃত হব নিশ্চয়ই। (... and of course Allah knows d best...)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।