আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুক্তগদ্য: শোনো, এইখানে বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়

ডুবোজ্বর

০১. আমার জন্ম হয়েছিলো শ্রাবণ শেষে। হয়তো ঝিরিঝির ঝরছিলো বাদল। আর দূর থেকে সাঁতরে আসছিলো শরতের শাদামেঘ। অনেক দিন ভেবেছি মাকে শুধাবো, মা, আমার জন্মের সময় বৃষ্টি হচ্ছিলো...? কিন্তু মায়ের কাছে গেলে, অনেকদিন পর মায়ের কাছে গেলে এইসব জিজ্ঞেস করতে ভুলে যাই, মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন; আমার মায়ের চোখেই তখন বর্ষা। আমার জন্ম ৯ ভাদর।

শরৎকাল। কিন্তু বৃষ্টি ছিলো অবশ্যই। আমি জানি, আমি জানি... ০২. আমার কখনো কোনো ছাতা ছিলো না। যেনো আমি বাদল থেকেই এসেছি। সারা বর্ষা বৃষ্টিতে ভিজেছি।

প্রথমদিকে কেনো ছাতা নিতাম না, এখন আর মনে পড়ে না। হয়তো ঘরে সবার জন্যে ছাতা ছিলো না। পরে অভ্যেস হয়ে গেছে। ছাতা পৃথিবীর অশ্লীলতম জিনিশের একটি। ০৩. একদিন বৃষ্টিতে কথা ছিলো সে কথাটি বলবে; প্রতীায় ভিজেছে নিয়মিত দুপুরের আলো।

মৃন্ময়ী বলেছিলো, চিঠি দিও। চিঠি লিখেছি কবে! পোস্ট অফিসে ডাকবাকশো ভর্তি আমার চিঠি। কখন খুলবে বাকশো? কী জানি, তার বালিশের নিচে হয়তো কাঁদছে আমার পত্রাবলি। না, প্রত্যুত্তর পাই নি। সেও কি মরে গেছে বর্ষায়, নিবিড় বৃষ্টির ভিতর? ০৪. বৃষ্টিদগ্ধ গাছ ডাক দেয়।

গিয়ে দেখি সে হাত পেতেছে আমার কাছে। কী চাই? আমার তৃষ্ণা। আমার হাসি পায়। সে বলে, জল দাও। অবশেষে আমি বলেই ফেলি, আমিই সেই বৃষ্টি, যে তোমাকে দগ্ধ করেছে... ততণে সে সরিয়ে ফেলে মুখোশ।

বলে, আমার জল নয়, আগুনের তৃষ্ণা... ০৫. আমার ছোট্টো একটা বোন ছিলো। পাখির মতো। পাখির সাথে বিভেদ শুধু-- তার ডানা ছিলো না দুপাটি। নাম ছিলো দোয়েল। বেঁচে থাকলে ১৩ জুলাই উনিশবছর হতো।

এক বর্ষায় জন্ম হলো, অনেকদিন পর এই বর্ষায় দুপাটি ডানা পেলো। এবং উড়ে চলে গেলো। সে চলে গেলো ১৭ জুন সকালবেলায়। এখন আষাঢ় চলছে। কিন্তু কতারিখ দেখতে মন চাইছে না সেদিন।

তার মৃতদেহ আমি দেখতে যাই নি। যাক, সে চলে গিয়ে ভালোই করেছে। সবসময় তার মৃত্যু কামনা করতাম। কেননা তার যন্ত্রণা সহ্য হতো না; কী যে যন্ত্রণায় থাকতো সে! তাকে দেখলেই কান্না পেতো। ভালো।

এখন আর কান্না পাবেনা। সে প্রতিবন্ধি ছিলো। ০৬. যে চাইলে অনায়াসে বৃষ্টি হতে পারে-- সে যদি বৃষ্টিতে ভিজে... কার জন্যে এ চাতকজন্ম রাতভর দিনভর? শেষবেলা মরা-জল নিভু নিভু; বৃষ্টিবাতি আর ভেজাতে পারে না নরোম আলোর দংশনে। যে রাতে বন্ধ্যা-েেত শস্যের বীজ ছড়িয়ে এসেছি, যে দিন সূর্যকে করে নি নমস্কার... আর কালগুচ্ছ হাতে ধরে বয়ে চলেছি খরাপ্রাণ... ০৭. সেদিন বিষ্যুদবার ছিলো। চিত্রাঙ্গদা এসে বললো, সে মারা গেছে।

যাহ্! দুষ্টুমি করছো। না, সে মারা গেছে। আমি কেমন করে বিশ্বাস করি কথাটা? আমার নীল মারা গেছে। তার নাম ছিলো নীলা। আমি তাকে নীল নামে ডাকতাম।

তার একটা বন্ধু ছিলো সুন্দর, এখন বিষণ্ন-সুন্দর। সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছিলো। সে আমার কাছে যে বর্ষায় এসেছিলো সে বর্ষাতেই চলে গেলো। তাকে আমি কখনো দেখি নি। তার একটা পায়ে সমস্যা ছিলো।

সে আমার হাত ধরে পাহাড়ে উঠার স্বপ্ন দেখতো। নীল, তোমাকে কে নিয়ে গেলো? শেষবার আমার বন্ধু নীল আমাকে যে চিঠিটি পাঠিয়েছিলো, তার সাথে অনেক চকোলেট ছিলো। তার চারটা চিঠি আমার কাছে আছে। প্রথম চিঠিটা সে ডাকে পাঠিয়েছিলো, তাই পাইনি। ডাকঘর উঠে গেছে।

তাই সুধা এসে অমলকে পায় নি। সেদিন ছিলো ৩১ আগস্ট ২০০৬. নীল, তুমি কি মাটি হয়ে গেছো? ০৮. তারা পলাশবন পার হয়ে বকুল বনে ঢুকছিলো। ঘোরসন্ধ্যা, আর ঝুমঝুম ঝুমঝুম বৃষ্টি নামছে, একাকার। বকুলবনের দরজায় পা রেখেই একজন কবি তার প্রিয়তম নারীর চোখের পাতায় এঁকে দিলো বর্ষাস্নাত চুম্বন... এবং বকুলবন আলোকিত হলো বাদলের রঙে। ০৯. পঞ্জিকার হিশেবে বাঙলাদেশে বর্ষাকাল দুইমাস, আষাঢ়-শ্রাবণ।

কিন্তু বৃষ্টি শুরু হয় বৈশাখ থেকে; আর সেটা থামতে থামতে ভাদ্রের শেষ। শিরোনামহীনের বর্ষা গানটা মনে পড়ছে। কে যেনো শুনতে বলেছিলো, কে যেনো শুনতে বলেছিলো? সে হারিয়ে গেছে। ১০. জীবনানন্দ হয়তো ঠিক করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ যা লিখেছিলেন তিনি তা লিখবেন না; তিনি লিখেন নি। কিন্তু তারপরও বৃষ্টি নিয়ে তার দুইতিনটা কবিতা আছেই।

জীবনানন্দ দাশ বর্ষাকে উপলব্ধি করেছিলেন সকল ঋতু এবং অস্ফুট শূন্যতার ভিতর দিয়ে। কোনো বাঙালির পে কি বর্ষাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? ১১. হিজলের বনে বর্ষা নামলে তুমি আসো। আমরা পরস্পর হাত ধরে হাত ছেড়ে দিই। হয়ে যাই হিজলের ফুল। বকুলবন সগন্ধ তাকিয়ে থাকে।

১২. অভিমান কখনো আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চায় নি। অথচ আমি কেবল তার সাথেই বৃষ্টিতে ভিজতে চেয়েছি চিরদিন। অভিমান ইদানীং বকুলের বনে বৃষ্টি হয়ে গেছে। ১৩. একটি কান্না ছড়িয়ে রেখেছি মেঘে। মেঘের ভিতর কী? একটি কান্না ভুলে গিয়ে দিয়েছি বৃষ্টির কাছে।

এই সব শুনে বললাম, তোর তবে নাম কী? শ্রাবণ। শ্রাবণ তো চলে গেছে। শ্রাবণ বারবার আসে। সিমেন্টক্রসিং এ রিকশায় বৃষ্টিতে ভিজে যায়। শ্রাবণ! তুই কেমন আছিস রে?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।