আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘‘উচ্ছল মেয়েটিকে কেরোসিনে পুড়িয়ে দিলো স্বামি’’

আমি লিখতে চাই...................

২০০৭ সালের শেষের দিকে একবার আমি আমার দেশের বড়িতে গিয়েছিলাম। গ্রাম আমাকে সব সময়ই টানে। আমার বাড়ী মফস্বল এলাকায়। আমার এক বন্ধু একদিন তার বাড়ীতে নিয়ে গেল তাজা ডাব খাওয়াবে বলে। বিভিন্ন কারণে ঢাকায় থাকি এমন তিন বন্ধু ওর সাথে গেলাম ডাব খেতে।

দুপুরের দিকে আমরা যখন ভরপেট ডাব খেয়ে ফেরার উপক্রম করছি তখন বন্ধু মাতা বেশ দাবি খাটিয়ে বললেন “বাবা আমার বাড়ী থেকে তোমরা দুপুরে না খেয়ে যাবে তা কখনোই হইতে পারে না। ’’ অগত্যা রাজি হয়ে গেলাম। দুপুরের খাবার প্রস্তুত হতে এখনও বেশ কিছু সময় লাগবে দেখে আমরা চার জন গেলাম গ্রামের গভীরে। আমরা ঘুরছি আর বন্ধু বাকুর আতলামি সহ্য করছি। হঠাৎ এক সময় আমি কাউকে দেখে আনমনা হয়ে গেলাম।

আমার দৃষ্টি আটকে গেল এক কিশোরীর দিকে। বয়সটাই যে খারাপ। আমি খেয়াল করলাম মাঝারী গড়নের এক বেশ রূপবতি কিশোরী আনমনে হাঁটাহাটি করছে আমাদের কিছুটা দুরে। আমি তাকে দেখছি মুগ্ধ নয়নে। উচ্চতায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চির কম না, মাঝারী সাস্থ্য, গায়ের রং পাকা সাগর কলার খোসার মতো, টানা মায়াবী চোখ, মাথার চুল কোমর ছাপিয়ে নীচে নেমেছে খানিকটা।

এক কথায় যে কেউই পছন্দ করবে মেয়েটিকে। আমি আর আমার মধ্যে নেই। হারিয়ে গেলাম তার মধ্যে। এক সময় টের পেলাম আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে টিপ্পনি কাটা শুরু করেছে। মেয়েটি এখনও টের পায়নি আমাদের।

যার বড়ীতে বেড়াতে এসেছি ওর নাম নাজমুল। শেষটায় ওর শরণাপন্ন হলাম। -দোস্ত মেয়েটা কে? -কেন? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? -তুই বল কে? -আগে বল বিয়া করবি না খালি টাংকি মারবি? -বিয়েই করব। -বিয়ে করে খাওয়াবি কি? তোর তো এখন চাকরি নাই..... -তোর চিন্তা করা লাগবে না, তুই আমাকে বল, মেয়েটা কে? মেয়েটির নাম শান্তা, ওদের বাড়ির খানিক দুরে শান্তাদের বাড়ি, লেখা পড়া করে তবে কোন ক্লাশে পড়ে তা নাজমুল জানে না। আমাকে জেনে পরে জানাবে।

এরপর আমরা চলে এলাম। ওকে নিয়ে নানা স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করলাম। আমার বাবা মা আমার ব্যাপারে সবসময়ই উদার মানষিকতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন। বিশেষ করে মা। মায়ের কথা হচ্ছে আমার যাকে পছন্দ হবে তাকই বিয়ে দিবে আমার সাথে।

কিন্তু খবরদার এমন কিছু করা যাবে না যাতে আমার সনাম ধন্য শিক্ষক বাবার মানইজ্জত নষ্ট হয়। সেই সাহস নিয়ে মাকে ওর কথা বলব বলে ভাবছি। রাত দশটা বজে। আমি আছি সেই কিশোরীর মধ্যে। এক সময় মা আমার রুমে এসে আমকে বললেন -কিরে তোর কি হইছে? -কই কিছু নাতো! -আমার কাছে লুকাচ্ছিস? -না মা, আমার কিছুই হয়নাই।

মা আর আমাকে ছাড়লেন না। আমি মাকে সব কিছু খুলে বললাম। মা শুনে খুশিই হলেন। -মেয়ের বাবা কি করে? -আমাদের বাজারে তার মটর সাইকেলের গ্যারেজ আছে। মটর সাইকেল সারে।

-মটর সাইকেল সারে? -হ্যা, কেন সমস্যা আছে? -না সমস্যা কি? কিন্তু তোর বাবা কি রাজি হবেন? -তুমি বুঝিয়ে বললে রাজি হয়ে যাবেন। -ঠিক আছে আমি বলব। মেয়ের বাবার নাম কি? -জাহাঙ্গির হোসেন। আমি খুশি হলাম। সারা রাত ঘুমাতে পারলাম না।

এক সময় মনে হল আমি এখনই আবার যাই ওই গ্রামে। আবার নিজে নিজেই শান্ত হলাম। জীবনে এটা যে প্রথম ভাল লাগা তা কিন্তু নয়। তবে আর কারো কথা আমার পরিবারের কাউকে কখনও বলা হয় নি বা যাকে পছন্দ হয়েছে তাকেও না। এই প্রথম বলাবলি।

তাই হয়তো ভাল লাগার মাত্রাটা একটু বেশীই ছিল। আমি এক কথায় তাকে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। পরের দিন ছুটলাম তার বাড়ীর দিকে। গিয়ে শুনি সে তার নানা বড়িতে বেড়াতে গিয়েছে। নাজমুল তার নানা বাড়ি চেনে না।

এক রাশ মন খারাপ নিয়ে ফিরলাম নিজের বাড়িতে। বিকেলের দিকে মা ডেকে যা বললেন তা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়ল। বাবা কোন ক্রমেই ঐ মেয়ের ব্যাপারে পজেটিভ কোন চিন্তা করতে পারছেন না। কারণ তার বাবা মটর মেকানিক। শুনে মন খারাপ হয়ে গেল।

এইটা কোন কথা? তার বাবা মোটর মেকানিক হয়েছে তো কি হয়েছে? এতে তার সাথে আমার বিয়ে হতে সমস্যা কোথায় আমি বুঝতে পারলাম না। আর মাত্র একদিন সময় আমার হাতে আছে। এর মধ্যে যা করার করতে হবে। মাত্র দুই দিন পরে আমার শুটিং শুরু। আমাকে আগামীকাল ঢাকায় রওনা দিতেই হবে।

সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ফোনে তার সাথে যোগাযোগ করব এবং আমার ভাললাগার কথা বলব। আমি পরের দিন ঢাকায় চলে এলাম। ব্যাস্ত হয়ে পরলাম আমার কাজে। এর পর আমার অনেক শুভাকাঙ্খি বন্ধুরা শত চেষ্টা করেও তার কোন মোবাইল নম্বর আমাকে জোগার করে দিকে পারেনি। আমার দিন চলে যাচ্ছে আমার মত করে।

মাঝে মধ্যে তাকে মনে পড়ে। এক দিন আমার বন্ধু নাজমুল আমাকে ফোন করল। -কি খবর দোস্ত? -তোর পাখি তো উড়াল দিছে। -মানে? -ওর তো বিয়া হইয়া গেছে। আমি আর কোন কথা না বলে গুম মেরে বসে থাকলাম।

বেশ কয়েকদিন কাজে মন বসাতে পারলাম না। এক সময় ধীরে ধীরে ভুলে যেতে লাগলাম তাকে। সে বা তার পরিবারের কেউ কেন দিন যানতেও পারলনা যে কেউ একজন তাকে অনেক অনেক ভালোবাসা দিতে চেয়েছিল। ক্ষণিকের এক ভাললাগা হয়তো এক সময় হারিয়েও যেত এই দম্ভের পৃথিবী থেকে। কিন্তু আমাকে ভুলতে দিলনা গত ২৬-৬-২০০৯ তারিখের প্রথমআলোর শেষের পাতার একটি খবর।

খবরের শিরোনামটি ছিলোঃ ‘‘উচ্ছল মেয়েটিকে কেরোসিনে পুড়িয়ে দিলো স্বামি’’ আমি সংবাদটি পড়লাম। সার মর্ম এরকমঃ শান্তা নামের একটি মেয়ে ২০০৮ সালে সোহেল নামের একটি ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। মেয়েটির বর্তমান বয়স সতের। যৌতুকের জন্য প্রতিদিনই শারিরীক ভারে নির্যাতত হতে হত তাকে। গত ১২ই মে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে তার স্বামি, ননদ ও শাশুরি।

তার শরীরের শতকরা ষাট ভাগ পুড়ে গেছে। সে বর্তমানে বরিশালের কোন একটি ক্লিনিকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। মাত্র ত্রিশ হাজার টাকার অভাবে তাকে চিকিৎসা করাতে পারছে না তার বাবা মা। ছবির মেয়েটিকে পরিচিত মনে হল। পেপারে উল্লেখিত ঠিকানার সাথে মিলিয়ে দেখলাম এ আমার সেই শান্তা যাকে আমার ভালো লেগেছিল যাকে আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলাম যাকে নিয়ে।

চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। সব শেষে আমার বাবাকে আমার দোষী মনে হলো। কারণ বাবার দম্ভের কারণেই তার সাথে আমার বিয়ে না হয়ে বিয়ে হয়েছিল এক মানুষ রূপি কুত্তার বাচ্চার সাথে। যে কিনা এক লাখ টাকার জন্য পুেিড়য়ে মারতে চেয়েছিলো শান্তাকে। প্রিয় ব্লগার, যাঁরা আমার এই লেখাটি পড়বেন তাদের সবাইকে বিনিত অনুরোধ করছি আপনারা আইনের কাছে এর জোড়ালো বিচার দাবি করুন।

যাঁর দ্বারা যেভাবে সম্ভব। আর যদি কেউ তাকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে চান তবে নিু লিখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন। ঠিকানাঃ শান্তা প্রযতেœঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন, (বাবা) গ্রামঃ পাঠাকাটা, ইউনিয়নঃ দাউদ খালি, থানাঃ মঠবাড়ীয়া, জেলাঃ পিরোজপুর। বিনিত সাইফুল বাতেন টিটো।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।