আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিপাইমুখ বাঁধ যেন না হয় মরণফাঁদ


নদীমাতৃক দেশ হয়েও আজ বাংলাদেশের সর্বত্রই পানির জন্য হাহাকার পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক সময় যে মাঠে দিগন্তজোড়া ফসলের সমারোহ দেখে প্রাণ জুড়িয়ে যেত আজ সেই মাঠই শুধু ধুধু বালুচর। পরিবেশের ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্যের অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে দেশ আজ প্রচণ্ড অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও আমাদের চৈতন্যবোধ হয় না। দেশপ্রেমকে আজ আমরা সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতি আর টক শোতে আবদ্ধ করে ফেলেছি।

তাই তো ১৯৭৬-এ ফারাক্কার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ পরিলক্ষিত হয়েছিল এখন টিপাইমুখের ক্ষেত্রে তা রাজনৈতিক বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে থাকছে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি-ভাগীরথী নদীতে ৪০ হাজার কিউসেক পানি ধরে রাখার জন্য ১৯৭৫ সালে ভারত গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করে। এতে করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গঙ্গার প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, মৎস্য চাষ, বন, নৌ-চলাচল, গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত পানির ব্যবহার ও বিভিন্ন শিল্পের প্রসার দ্রুত হ্রাস পায়। গঙ্গার পানিপ্রবাহ কম হওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর বৃহত্তম ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ সুন্দরবন এখন প্রচণ্ড হুমকির মুখে।

পাশাপাশি রাজশাহী বিভাগের ১৬টি জেলা ও খুলনার বৃহৎ অংশ আজ মরুভূমি হতে চলেছে। সর্বজনশ্রদ্ধেয় মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী জাতির এই সর্বনাশা বিপদ উপলব্ধি করে এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিবাদ-আন্দোলনের ডাক দেন। তার সেই প্রতিবাদী কণ্ঠের আহ্বানে বাংলাদেশের সর্বত্রই ফারাক্কার বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয়। লং মার্চ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকারের গঙ্গার পানিচুক্তি অনুযায়ী ন্যায্য পানি ভারত এখনো পর্যন্ত আমাদের দেয়নি।

গঙ্গা ব্যারেজ ও তিস্তা নদীর গর্জনডোবা ব্যারেজ নির্মাণের ফলে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও পরিবেশ যখন হুমকির মুখে ঠিক সেই মুহূর্তে নতুন করে ভারত বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখ (বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১০০ কিলোমিটার উজানে) নামক স্থানে বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে। জানা যায়, এ বাঁধ নির্মাণের ফলে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় ২৭৫.৫ কিলোমিটার এলাকার পরিবেশ বিপর্যস্ত হবে। পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে সুরমা-কুশিয়ারার অববাহিকায় পানির পরিমাণ শতকরা ৬০ ভাগ এবং ভরা মৌসুমে শতকরা ১২ ভাগ হ্রাস পাবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের সিলেট, নোয়াখালী, বরিশাল এবং ঢাকা বিভাগের বিশাল এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে পরিবেশের ভারসাম্য, দেখা দেবে নানা ধরনের বৈরী আবহাওয়া।

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অভিন্ন নদীর উজানে যে কোন ধরনের কাঠামো নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই ভাটিতে বসবাসকারী জনপদের ওপর এর প্রভাব চিন্তা করতে হবে। এ ধরনের কাঠামো হতে হবে উভয় দেশের স্বার্থকে রক্ষা করে। অর্থাৎ তাতে যেন উভয় দেশই উপকৃত হয়। কিন্তু ভারত বরাবরই আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে এ ধরনের গর্হিত কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের দুর্বল পররাষ্ট্রনীতি এবং বলিষ্ঠ গঠনমূলক সমালোচনা বা পুরো জাতির ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদের অভাবে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার যদি টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে ফেলে তাহলে বাংলাদেশ সঙ্কটে পড়ে যাবে।

কারণ দেশের একটা বৃহৎ অংশ পুরোটাই মরুকরণের পথে অগ্রসর হবে। তাই আসুন, দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মাওলানা ভাসানীর ফারাক্কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠের বলয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভারতের এই আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাই। আর এ ক্ষেত্রে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের এ বিষয়টা নিয়ে ভারতের সাথে দরকষাকষি করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ভারতকে যেন বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আন্দোলনে সোচ্চার হতে হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা করতে হবে।

সূত্রঃ Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.