আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাজেটঃ সততার অবমূল্যায়ন !

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

চলতি বাজেট বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে বড় বাজেট। বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সেই আলোচনাও হবে বিশাল। সেই বিশাল আলোচনায় আমি যাচ্ছিনা। আমি শুধু দুটি বিশয় নিয়ে আলোচনা কবো-তাতেই বাজেটের চরিত্র উপলব্ধি করা যাবে। প্রথমতঃ কালোটাকা সাদা করার প্রসংগে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটা কথা লিখছিঃ যারা বৈধ ভাবে উপার্জন করেন এবং নিয়মিত আয়কর প্রদান করেন-বাতসরিক ২০ লক্ষাধিক টাকা যাদের আয় তাঁদের আয়কর দিতে হয় শতকরা ২৫ ভাগ।

সেই ২৫ ভাগ আয়কর দিতেও আছে নানারকম ফর্মালেটিজ, আছে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা। সব কিছু সয্য করেও সেই শ্রেনীর করদাতারা কর প্রদান করে নিজের বিবেকের কাছে পরিস্কার থেকে রাস্ট্রীয় কোষাগার পুর্ণ করতে সচেস্ট থাকেন। কিন্তু এক শ্রেনীর লোক আছেন-যারা বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ উপার্জন করে, এদের বেশীর ভাগই আমলা, সরকারী কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ। এরাই সমাজে বিত্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ, এদের টাকায় বিশাল বিশাল সুদৃশ্য ইমাতর তৈরী হয়, খবরের কাগজ বেরোয়, টিভি চ্যানেল সহ দেশী বিদেশী প্রাইভেট ব্যাংকগুলো চলে। এরা সরকারকে কোনপ্রকার আয়কর দেয়না।

এদের আয়করার কয়েকটি সহজ পদ্ধতির কথা উদাহরন দিয়ে উল্লেখ করছিঃ- এবারের বাজেট প্রকাশিত হবার কয়েক মাস পুর্বেই মাননীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন-এবারের বাজেটে গাড়ী সহ বিলাশদ্রব্যের উপড় বেশী করারোপ করা হবে। এই আগাম জানানোর পিছনেও একটা অসত উদ্দ্যেশ্য ছিল। সেই অসত উদ্দেশ্যের নাম দূর্ণীতি। সরকারের আগাম সিদ্ধান্ত জানার কারনে ব্যবসায়ীরা তড়িঘরি করে ২৫০০ গাড়ি আমদানীর জন্য এল সি ওপেন করে। গাড়িবোঝাই জাহাজ বন্দরে ভেড়ার পুর্বেই বাজেট ঘোষনার একদিন পুর্বে আগাম শুল্কায়ন করে নেয় আমদানীকারীরা।

সেই অসত উদ্দেশ্য ফাঁস করার জন্য সরকার শুধু গাড়ি আমদানীকারকদের কাছ থেকেই গত ১০ মে, ২০০৯ তারিখে ৭০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছেন! অর্থাৎ সরকারের ৭০ কোটি টাকা রাজস্ব হারানোয় গাড়ী আমদানীকারীরা ৭০ কোটি টাকা অতিরিক্ত লাভবান হয়েছে। ৭০ কোটি টাকা লাভবান হতে ব্যাবসায়ীরা যদি তথ্য ফাঁসকারীকে/ ফাঁসকারী চক্রদের ২০ কোটি টাকাও প্রদান করে থাকে-তাহলে ২০ কোটি টাকা গ্রহনকারীর ২০ কোটি টাকাই অবৈধ কালোটাকা। এখোন এই টাকা সাদা করতে অর্থাৎ বৈধ করতে সচেস্ট হবেন অবৈধ আয়কারী। তাদের অবৈধ টাকা বৈধ করার জন্য সরকার চলতি বাজেটে ঘোষনা দিয়েছে-মাত্র ১০ ভাগ টাকা আয়কর দিয়েই যেকোন অবৈধ টাকার মালিক তাদের সব অবৈধ টাকা বৈধ করে নিতে পারবেন! সরকার শুধু চলতি বছরই অবৈধ টাকা বৈধ করার সুযোগ দেননি-আগামী তিন বছর পর্যন্ত এই সুযোগ বলবত রাখার ঘোষনা দিয়েছেন! এই তিন বতসরে যারা- মানে নেতা কর্মীরা চাঁদাবাজি, টেনডারবাজী, বদলী বানিজ্য, কমিশন/দালালী এবং ঘুষ খেয়ে যে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়বে-সেই টাকার মালিক তার অবৈধ উপার্জন বৈধ করে নিতে পারবে। কিন্তু যারা বৈধ পথে ব্যবসা বানিজ্য করে উপয়ার্জন করে-তাঁদের কিন্তু বৈধ হতে হলে ২৫ ভাগ আয়কর প্রদান করতে হবে! গতকাল অর্থ মন্ত্রী এন ই সি সম্মেলন কক্ষে বাজেটউত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বীকার করেছেন-গাড়ী আমদানীতে অতিরিক্ত করারোপের সিদ্ধান্ত আগাম জানানো তাঁর ভুল হয়েছে।

তবে তিনি স্বীকার করেছেন- গাড়ী আমদানীতে তিনি "নিজে লাভবান" হবার জন্য এটা করেননি! "নিজে লাভবান" হবার কথা অবশ্য তাঁকে কেউ নাবলতেই-তিনি আগবাড়িয়ে নিজ থেকেই নিজের লাভবান নাহবার কথা ঘোষনা দেন! একান্তই যদি তিনি লাভবান হননি ধরেই নেই-তাহলে সরকার তাঁর ভুলের কারনে ৭০ কোটি টাকা রাজস্বথেকে বঞ্চিত হয়েছে-সেই দ্বায়-দ্বায়িত্ব কে বহন করবে? বিএনপি সরকারও কালোটাকার মালিকদের অবৈধ উপার্জন বৈধ করার সুযোগ প্রদান করেছিল। তখন আওয়ামীলীগ সহ দেশের সুশীল সমাজ, সাংবাদিকগন সবাই এর বিরোধীতা করেছিলেন। আওয়ামী নেতৃবৃন্ধ বলেছিলেন-বিএনপি নেতাকর্মীদের অবৈধ আয় বৈধ করার জন্যই এই বৈধতার সুযোগ দিয়েছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে তারা কখনো অবৈধ কালোটাকার মালিকদের বৈধ হবার সুযোগ দিবেনা। এপ্রসংগে অর্থমন্ত্রী কাল সংবাদ সম্মেলনে কি বলেছেন-তা আমরা আজকের সকল দৈনিক পত্রিকায় পড়েছি এবং জেনেছি।

আমার শুধু সরকারের কাছে একটাই জিজ্ঞাসা-বৈধ উপার্জনকারীদের উপড় সরকারের এই বৈষম্য কেন? তাহলে সরকার কি চায়-সবাই বৈধ পথ পরিহার করে অবৈধ পথে উপার্জন করে মাত্র ১০ ভাগ জড়িমানা দিয়ে বৈধ হয়ে যাক?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।