আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিটার ভাড়া সংযুক্ত ও লোডশেডিংয়ের কারণে জনমনে ক্ষোভ

thanks all over

একদিকে প্রচন্ড গরম ও তাপদাহে জন জীবন নাবিশ্বাস। অপরদিকে অব্যাহত বিদ্যুতের লোড শেডিং এর ফলে এসি বা ফ্যান চালাতে না পারায় হিটাঘাতে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাছাড়া পল্লী বিদ্যুতের অব্যাহত লোডশেডিংয়ের ফলে মৌলভীবাজার জেলার চা বাগান ফ্যাক্টরীতে চা উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদনের ভরা মওসুমে জেলার ৯১টি চা বাগানের মধ্যে প্রায় ৬০টি চা কারখানা বন্ধ থাকায় চা-এর গুণগত মান এবং রং নষ্ট হচ্ছে। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক দুইক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি বিল বৃদ্ধি ও মিটার ভাড়া সংযুক্ত করায় দেখা দিয়েছে জনমনে ক্ষোভ ।

নিজের অর্থে বিদ্যুতের মিটার ক্রয় করে আবার প্রতি মাসে মিটার ভাড়া ১০ টাকা কেন দিতে হবে, এ নিয়ে শ্রীমঙ্গলসহ মৌলভীবাজারের সকল গ্রাহকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। বিদ্যুতের বিল ও মিটার ভাড়া নিয়ে কানসাটে আন্দোলনের পর মিটার ভাড়া বাতিল করা হলেও শ্রীমঙ্গলস্থ মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কোন নোটিশ বা কারণ না জানিয়ে গত মে মাস থেকে মিটার ভাড়া ১০টাকা সংযুক্ত করেছে। প্রত্যেক গ্রাহককেই সার্ভিস চার্জ ছাড়াও আজীবন ১০ টাকা করে প্রতি মাসে মিটার ভাড়া দিতে হবে। এব্যাপারে মৌপবিস এর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- মিটার ভাড়া এতদিন ধরা হয়নি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন রোর্ডের নির্দেশে মিটার ভাড়া ধরা হচ্ছে।

তবে তিনি বলেন মিটার ভাড়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও দ্বিমত রয়েছে। বিদ্যুতের লোড শেডিংএর ব্যাপারে পল্লীবিদ্যুতের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এলডিসি) দেশে বিদ্যুতের দৈনিক উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে সারা দেশে গ্রিড নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে (কেন্দ্র) বিদ্যুৎ, সরবরাহ করে থাকে। দৈনিক উৎপাদনের রেসিও অনুযায়ী (এলডিসি) সিলেট বিভাগের গ্রিড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র শ্রীমঙ্গল গ্রীডকে বিদ্যুৎ বরাদ্দের পরিমাণ জানানোর পর সিলেট জোনের পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী (সরবরাহ) সিলেট বিভাগের ৫টি উপকেন্দ্রকে শতাংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বরাদ্দ করে থাকেন। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে গড়ে মাত্র ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে। সরবরাহকৃত বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে সিলেট বিভাগের ৫টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের মধ্যে সিলেটে ৯০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৪৮ মেগাওয়াট, শ্রীমঙ্গলে ৩০ মেগাওয়াটের মধ্যে ১৮ মেগাওয়াট, হবিগঞ্জে ২৫ মেগাওয়াটের মধ্যে ১৫ মেগাওয়াট, ছাতকে ১২ মেগাওয়াটের মধ্যে ৭ মেগাওয়াট, ফেঞ্চুগঞ্জে ১৮ মেগাওয়াটের মধ্যে ১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এদিকে সিলেটের সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ থেকে রেসিও অনুযায়ী মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে প্রতিদিন ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রাপ্ত ওই ১৬ মেগাওয়াট থেকে মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) মৌলভীবাজার শহরের জন্য সাড়ে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয় এবং সাড়ে ৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ শ্রীমঙ্গলস্থ মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎকে পিক আওয়ারে (সন্ধা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত) বরাদ্দ দেয়া হয়। মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন পিক আওয়ারে শ্রীমঙ্গল থেকে ২১ মেগাওয়াট এবং ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ৪ মেগাওয়াট নিয়ে মোট ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু শ্রীমঙ্গল উপকেন্দ্র হতে ২১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে মাত্র সাড়ে ৯ মেগাওয়াট এবং ফেঞ্চুগঞ্জ উপকেন্দ্র হতে ৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে, সব এলাকায় প্রতিদিন চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

শ্রীমঙ্গল উপকেন্দ্র হতে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়। সূত্র আরো জানায়, শুধুমাত্র শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকায়ই ৩ দশমিক ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদার প্রসঙ্গে সমিতির সূত্র আরো জানায়, মৌলভীবাজার ও রাজনগরের জন্য প্রয়োজন ৮ মেগাওয়াট। শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলার একটি অংশর জন্য প্রয়োজন ৯ দশমিক ৩ মেগাওয়াট, বড়লেখা ও কুলাউড়ার একাংশের জন্য প্রয়োজন ৪ মেগাওয়াট। এদিকে ঘন ঘন লোডশেডিং-এর কবলে পড়ে জেলার চা-শিল্পে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে।

জানা যায়, জেলার ৯১টি চা বাগানের মধ্যে প্রায় ৬০টি চা কারখানা রয়েছে। ফিনলে ও ডানকান-এর বাগান ছাড়া অধিকাংশ বাগানগুলোতেই নিজস্ব বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। ঐসব বাগানের কারখানা প্রতিদিন ৫-৬ ঘন্টা লোডশেডিং-এর জন্য বন্ধ থাকে। উৎপাদনের ভরা মওসুমে অনেক কারখানা বন্ধ থাকায় চা-এর গুণগত মান এবং রং নষ্ট হচ্ছে। সিলেট বিভাগের ৩টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে দৈনিক ১১৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।

২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ১৮ মেগাওয়াট, ৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ৩০ মেগাওয়াট এবং শাহজীবাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ১৩২ মেগাওয়াটের স্থলে ৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। সামগ্রিকভাবে শ্রীমঙ্গলসহ সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি ও মিটার ভাড়া বাতিল করা করা প্রয়োজন। ্এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি নিবদ্ধ করা জরুরী বলে সচেতন মহল মনে করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.