আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বগুড়ার অর্পিত সম্পত্তিতে চেম্বারের বহুতল ভবন

বগুড়া শহরের ঝাউতলায় সেই অর্পিত সম্পত্তি অস্থায়ী ভিত্তিতে ইজারা নিয়ে তাতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন গড়ে তুলছে বগুড়া চেম্বার অব কমার্স। ওই সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকলেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন চেম্বারের নামে জায়গাটি ইজারা নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বগুড়ার শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাজমা সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ৬৭ বছর ধরে জায়গাটি ভোগদখল করছিল। দেড় বছর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন জায়গাটি দখলে নেন। এ নিয়ে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হলে জায়গাটি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল প্রশাসন।

কয়েক মাস পর তাজমা সিরামিকের ইজারা বাতিল করে জায়গাটি চেম্বারের নামে ইজারা দেখানো হয়।
তাজমা সিরামিক সূত্র জানায়, শহরের সূত্রাপুর মৌজার ১২৮৮ দাগের ঝাউতলা সড়কের পাশের জায়গাটি ব্যবসায়ী ঘনশ্যাম দাস আগরওয়ালার ছিল। ১৯৪৩ সাল থেকে জায়গাটি তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘কল্যাণ বিড়ি ফ্যাক্টরী’-এর কাজে ব্যবহার করা হয়। ১৯৫৮ সালে কল্যাণ বিড়ির ব্যবসা বন্ধ হলে বিড়ির ব্যবসায়িক অংশীদারেরা তাজমা প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে জায়গাটি তাজমা সিরামিকের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছিল।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি জায়গাটি অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়। তাজমা তখন থেকে জায়গাটি ইজারা নিয়ে ভোগদখল করছিল। ২০১০ সালের ৩১ মে তাজমার অন্যতম মালিক আমজাদ হোসেন জায়গাটি প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা নবায়ন করেন।
তাজমার অন্যতম অংশীদার ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আমজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মমতাজ তাঁদের ইজারা নবায়ন করতে দেননি। উল্টো ইজারায় থাকা অবস্থায় তিনি জায়গাটি দখল করেন।

ন্যায়বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হতেই ইজারা বাতিল করে অন্যায়ভাবে চেম্বারের নামে জায়গাটি ইজারা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চেম্বারের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের নেতা মমতাজের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। চেম্বারের সহসভাপতি শাহ মো. আকতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। আকতারুজ্জামান আওয়ামী লীগের নেতা মমতাজের শ্যালক।


তবে বগুড়া চেম্বারের একাধিক সদস্য জানান, ঝাউতলা এলাকায় চেম্বারের নিজস্ব ভবন রয়েছে। শহরের বারপুর এলাকায় আরেকটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এই জায়গা ইজারা নিয়ে চেম্বার ভবন নির্মাণের বিষয়টি সাধারণ সদস্যদের জানানো হয়নি। তাঁরা অভিযোগ করেন, চেম্বারের নামে এই ভবনটি নির্মাণ করা হলেও সভাপতিসহ কার্যকরী কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা এটি ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন বলে তাঁরা শুনেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চেম্বারের সভাপতি নির্বাচিত হন মমতাজ।

এরপর জায়গাটি নিজের নামে ইজারা নিতে তিনি প্রশাসনকে চাপ দেন। ব্যর্থ হয়ে ২০১১ সালের জুলাইয়ে তিনি জায়গাটি দখল করেন। আওয়ামী লীগের নেতার চাপে একপর্যায়ে প্রশাসন তাজমা সিরামিকের নামে ইজারা নবায়নে অপারগতা প্রকাশ করে। ইজারা না পেয়ে তাজমা সিরামিকের পক্ষে আমজাদ ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বগুড়ার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলা থাকা অবস্থায় জেলা প্রশাসন ২৯ সেপ্টেম্বর তাজমার ইজারা বাতিল করে।

পরে মমতাজ প্রশাসনকে চাপ দিয়ে জায়গাটি বগুড়া চেম্বারের নামে ইজারা নেন।
ইজারা দেওয়ার সময় ওই জায়গায় স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ ও প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সম্পত্তির কোনো পরিবর্তন ও পরিবর্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ নয়টি শর্তের উল্লেখ ছিল। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে ওই জায়গায় এখন আট তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবন নির্মাণ সম্পর্কে প্রশাসনের লোকজন কিছু জানেন না। এমনকি পৌরসভা থেকে ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদন নেওয়া হয়নি।


সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝাউতলা সড়কে চেম্বার ভবনের পাশেই ওই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। রাস্তার পাশে ইট, বালু, পাথর, সিমেন্ট ও রড স্তূপ করে রাখা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রায় এক মাস ধরে নির্মাণকাজ চলছে। ইতিমধ্যে তলদেশের ঢালাই ও নিচ থেকে বিম তৈরি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, নির্মাণকাজের বিষয়টি যাতে কারও চোখে না পড়ে, সে জন্য শুরুর দিকে জায়গার সামনের দিক ঘিরে রাখা হয়।

রাতে শ্রমিকেরা মাটি খননের কাজ করেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গোলাম কবীরের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে তিনি বগুড়া সদরের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন। সহকারী কমিশনার নাছরিন আক্তার বলেন, বিষয়টি তাঁর এখতিয়ারে নেই।
জেলা প্রশাসনের ডেপুটি রেভিনিউ কালেক্টর নাদিরা আখতার জানান, জায়গাটি বগুড়া চেম্বারকে অস্থায়ীভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। সেখানে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি তাঁরা লোকমুখে শুনেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র এ কে এম মাহবুবর রহমান জানান, ওই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পৌরসভা থেকে নকশার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।