আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্প-গল্পঃ কিংবদন্তী

দিনে চাকরী করি আর ব্লগাই।
“ আমার কেন যেন মনে হচ্ছে ঠিক একই কাজ আমরা আগেও করেছি। ”, অস্বস্তি নিয়েই কথা গুলো বললেন ফ্রেডার। বলে চলেছে ও,“ এই যে সিউলদের সাথে যুদ্ধ। কী দরকার।

থাকুক না ওরা ওদের মতন। আমরাও থাকি আমাদের মতন। সমস্যা কী? কত মানুষ প্রাণ হারিয়ছে এই যুদ্ধে জান? ” “ এটাকে বলে ডে জা ভূঁ। মনে হয় যেন আগেও করেছ। এটার বইজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই জান।

তোমার দুই চোখ একসাথে দেখে। একই সিগন্যাল অস্তিষ্কে পাঠায়। মাঝে মাঝে কয়েক মাইক্রো সেকেন্ড আগে পিছে হয়ে যায়। বাম চোখের সিগন্যাল যদি আগে যায়, তাহলে ডান চোখের সিগন্যাল যাওয়ার পর মনে হবে এটা তো আগেও দেখেছি। যাক, তবে এসব যুদ্ধ বিরতির কথা আমাদের মানায় না।

সিউলরা আমাদের কত মানুষ মেরেছে? ”, পিরো থামেনা । কথা চালিয়ে যায় ও, “ সিউলদের আমি ঘৃণা করি। জেড আর কে এর অন্ধকার বলয় থেকে ওরা এসে আমাদের জন্য কোন সুবিধা হয়েছে কী? ” একটা স্পেস ফ্লীটের নেতৃত্ব দেন ফ্রেডারিক। ওর ফ্লীটে ছয়টা ডেস্ট্রয়ার, বারোটা স্পেস নকার, আটটা শীপ ক্যাচার আছে। আর আছে একটা সিজিয়াম ট্যাঙ্কার।

এই ফ্লীটের মাদারশীপের লেভেল ডেকে বসে কথা বলছে ও পিরোর সাথে। পিরো এই এরিয়ার স্পেস স্টেশনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত অবজার্ভেশন অফিসার। অল্প কয়েকদিন এখানে থাকবে ফ্রেডারের ফ্লীট। সিউলদের একটা এলাকা দখল করার নির্দেশে এসেছে ওর কাছে। কাছাকাছি একটা ট্রান্সপোর্টেশন চ্যানেল আছে।

ওটা দিয়ে বের হতে পারলেই ওয়ার্ম হোল। সেখান দিয়ে সোজা সিউলদের সেই এরিয়ায়। সিউলদের কথা ভাবছেন ফ্রেডার। অদ্ভূত একটা প্রাণী। কোন দেহ নেই।

শুধু একটা আলোর বলের মতন। ওদের সব ইকুয়েপমেন্টও এই রশ্মির মতন কিছু একটা দিয়ে বানানো। মাঝে মাঝে ভাবে, এটা আলোর মতন কী আসলে? আলোকে ত এভাব আটকে রাখা যায় না। তাহলে ওদের এই গঠনটা কীসের? বলা যায় না কিছুই। ছুলেই দপ করে নিভে যায়।

এখনও তাই মানুষ ওদের সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না। ৩০২৯ এই ওরা প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। আগে থেকেই নাকি পৃথিবিকে লক্ষ্য রাখছিল ওরা। পৃথিবীতে হয়ত আসতেও পারে আগে। কে জানে? মাঝে মাঝে অনেক বইয়ে অনেক বড় বড় লেখক পুরোনো সভ্যতার মানুষের ভূতের ভয়ের কথা বলেছিলেন।

ভূতের যেই বর্ণনা, সেগুলার সাথে সিউলদের বর্ণনা অনেকটাই মেলে। সিউলদের সাথে প্রথম থেকেই যুদ্ধ। একেবারে গোড়া থেকেই। মানুষ সিজিয়ামে ভর্তি একটা গ্রহ খুঁজে পায়। ব্যস, মানুষ তাদের নতুন সভ্যতা গড়া শুরু করে।

এর এক বছরের মাথায় সিউলদের আক্রমণ শুরু হয় ওটা কেড়ে নিতে। সিজিয়াম স্পেসশীপের জ্বালানী হিসেবে অত্যন্ত দারুণ। আর গতিও পাওয়া সম্ভব অনেক বেশি। মজার ব্যাপার হল, আর কিছুতে না মিললেও সিউলদের সাথে এই সিজিয়ামের ব্যবহারটা মানুষের মিলে যায়। ওরা আরও কিছুতে হয়ত ব্যবহার করে।

সাদা রঙের একটা ধাতু। অথচ তার জন্য কত যুদ্ধ। ওই গ্রহটা মানুষ ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু, অদ্ভূত ভাবে মানুষ যুদ্ধের খাতিরেই সিউলদের সাথে পাল্লা দিতে অনেক কিছু তৈরী করে ফেলে। অনেক অস্ত্র।

সব এখনও পারফেক্ট না। তবে কাজ চলে। অন্তত, ধাওয়া দেয়া যায়। অস্বাভাবিক শক্তি উদিগীরণ করে এমন রশ্মি। আবার, শক্তি শুষে নেয় এমন রশ্মি।

আবার, ছড়িয়ে পড়ে এমনও অনেক ধরণ আছে। এটুকুর জন্য বসে বসে মার খেতে হয়েছে প্রায় ২০ বছর। অনেকদিন পর্যন্ত মানুষের যুদ্ধ ছিল বিস্ফোরক নির্ভর। এখান সেই প্রযুক্তি, সেই প্লাটফর্ম পরিবর্তনে মানুষ বাধ্য হয়েছে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে অজিন।

তরুণ এক সাহসী স্পেস নকার পাইলট। এ পর্যন্ত তার কিলড লিস্টে প্রায় ১৯ টার মত সিউলের কথা লেখা আছে। একাই এতজন। “ স্যার ওয়ার্ম হোলের গেট খোলা হয়েছ। ঝাঁকে ঝাঁকে সিউল আসতেছে এই স্পেস স্টেশন উড়িয়ে দেয়ার জন্য।

এখনই আমাদের স্পীড মুড থেকে গ্যারিসন মুডে যেতে হবে। ডিফেন্ড পজিশনে যেতে হবে। ” ফ্রেডার অবাক হল। তারা ত উলটা রওনা দেবার কথা ভাবছিল। সে সাথে সাথে বলল, “ সবাইকে ডিফেন্ডের জন্য গ্যরিসনড হবার দরকার নেই।

নকার গুলোকে রেডি হতে বল। ওরা এট্যাক করবে সরাসরি। সিজিয়াম ট্যাংকারকে পিছে পাঠিয়ে দাও। ডেস্ট্রয়ার গুলাকে মাদার শীপের ছয়দিকে ডিফেন্ড পজিশনে নাও। ক্যাচার গুলোকে ইঞ্জিন চালু রাখতে বল।

দরকার হলেই যেন স্পেস নকারগুলাকে সাপোর্ট দিতে পারে। ” “স্যার, আমি ত পাইলট। এসব অর্ডার আর এরেঞ্জের কোড আমি জানিনা। ”, মাথা চুলকে বলল অজিন। ফ্রেডার একটু যেন বিব্রত হলেন।

মাদারশীপের সেন্ট্রাল কম্পিউটারকে বললেন একটু আগের কথাগুলোকে যথাযথ এজেন্টের কাছে যেন পাঠিয়ে দেয়া হয়। পিরো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে ফ্রডারকে দেখছে। তার সামনে এই কিংবদন্তী লোকটা দাঁড়িয়ে আছেন। দুর্গম সব এলাকায় গত ২ বছর যতগুলো বড় যুদ্ধ মানুষ জিতেছে তার পঁচিশ শতাংশ নাকি একা ফ্রেডরিকেরই অবদান। যতগুলো গ্রহে মানুষের বসতি ছিল, সবখান থেকে সিউলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে মানুষ নেমে গেছে।

মানুষের এই ভাবটা ভাল লাগে পিরোর। স্পেস স্টেশনে ফেরত যাবার জন্য পা বাড়ালো ও। অজিনের এসব যুদ্ধ কেমন যেন লাগে। সিউলদের সাথে কোনভাবেই ভাবের আদান প্রদান করা যায় নি। কেউ কারও কোড ডিসাইফার করতে পারেনি।

ওদের সভ্যতা একেবারেই আলাদা। শুধু কথা একটাই। একে অপরকে দেখা মাত্রই আক্রমণ। এত কিছু না ভেবে স্পেস নকারে উঠে পড়ে। এলার্ম বেজে উঠে এ সময়।

সিউলরা আর দুই ঘণ্টার মাঝে এসে পড়বে। ম্যানুয়েল হোমপ্যাডটা হাত বুলায় অজিন। ও ম্যানুয়েলেই চালায়। অটোমেটিকে কেন যেন ওর মনে হয় যে আগে থেকেই বলা যায় যে কে কোথায় যাচ্ছে। এটা অজিনের পছন্দ না।

ও অটো ট্র্যাকারও ফায়ার করেনি কখনও। নিশানা করে মারতেই ভাল লাগে ওর। সময় হয়ে এসেছে। সবগুলো স্পেস নকার রেডি। গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

সিউলদের দেখার সাথে সাথে সবাই একসাথে লঞ্চ করবে। মনে মনে অজিন বলল, “ এবার তবে শুরু হোক। ” মানুষদের এ পর্যন্ত সব মিশন ছিল নিজেদের এলাকা পুনুরুদ্ধার। ই প্রথম ওরা সিউলদের এলাকা দখল করার কথা ভাবছিল। শুরু হল নতুন এক কীংবদন্তীর।

চলবে।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।