আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কল্পগল্পঃ বাইশ শতকের বিয়ে !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !!

সুমন মনের ভিতরে একটা আলাদা আনন্দ অনুভব করছে ! আজকে সে মিনিনকে বিয়ের জন্য অফিশিয়াল ভাবে প্রোপোজ করতে যাচ্ছে ! অনেক দিন তো ডেট হল ! এবার বিয়ের দিকে এগোনো যাক ! বিয়ের আগে এটাই মনে হয় সুমনের শেষ ডেট ! মনের ভিতর আনন্দের এটাই আসল কারন !

একটা সময় সুমন ধরেই নিয়েছিল যে ওর পছন্দের মত কাউকে পাওয়া যাবে না । ছোট বেলা থেকেই সুমন একটু অন্য রকম ! যদিও প্রত্যেকটা মানুষই একে অন্যের থেকে আলাদা তবুও কিছু বেসিক জিনিসে সবার মানষিক অবস্থা প্রায় একই রকম ! কিন্তু সুমনের সেই বস ক্ষেত্রে একেবারেই আালদা !

ও যেমন টা চিন্তা করে, যেমন টা চায় ঠিক তেমন কেউ ওর জীবন সঙ্গী হবে এটা যেন একটা স্বপ্ন মনে হচ্ছিল । এনবিএমকে এখন আসলেই একটা কাজের প্রতিষ্ঠান মনে হচ্ছে ওর কাছে !



বিকাল চারটার সময়ে মিনিনের সাথে দেখা করার কথা ! সুমন একটু আগে আগেই পৌছে গেল ! মোটামুট নিশ্চিত মিনিন কিভাবে আসবে কি সাজ দিয়ে আসবে এমন কি, কি পরে আসবে, এটাও সুমন খানিকটা অনুমান করতে পারে !! নিশ্চই ওর পছন্দের কোন পোষাক ! এনবিএম (NBM) থেকে সুমনকে জানানো হয়েছে ওদের সিএসএম (CSM) স্কোর ৮৯ ! ৯১ এর ভিতর ৮৯ ! ভাবা যায় ?
এর অর্থ হল সুমন আর মিনিনের চিন্তা ধারা প্রায় একই রকই ! অবশ্য দুই টা ক্ষেত্রে এক না ! না হোক ! মোটামুটি ৭০ পার হলেই ন্যাশনাল বিউরো ফর ম্যারেজ বিয়ে করার অনুমুতি দিয়ে দেয় ! আর যদি কোন ভাবে ৬০ এর নিচে স্কোর থাকে তাহলে তো কোন ভাবেই বিয়ে করার অনুমুতি পাওয়া যাবে না !


সুমন বসেছে রেস্টুরেন্টার ঠিক দক্ষিন পাশের একটা বড় জানালার কাছে । ১১০ তলা রেস্টুরেন্টটার এইটাই সব থেকে উচু এবং ছোট হল রুম ! মাত্র অল্প কয়েকজন মানুষ বসা তাদের প্রিয় জনদের নিয়ে ! এখানে বুকিং পাওয়াই খানিকটা কষ্টের বিষয় ! বিশেষ করে যে কেউ চাইলেই এখানে আসতে পারে না ! তবে নতুন বিয়ে হবে কিংবা হতে যাচ্ছে এমন সার্টিফিকেট দেখালে এই স্থানে বুকিং পাওয়া যায় ! যদিও পকেট থেকে বেশ মোটা অংকের অর্থ গায়েব হয়ে যায় ! তবুও প্রিয় মানুষটিকে খুশি করে এমন সকল কাজ করা যায় নির্দ্বিধায় !
প্রিয় মানুষ ?
আপন মনেই হেসে উঠল ও ?
আসলেই প্রিয় মানুষ !
নিজের পছন্দের প্রিয় মানুষ ! এই নিয়ে বেশ কয়েকবার মিনিনের সাথে ওর দেখা হয়েছে ! একে অন্যের অনেক কাছে চলে এসছে দুজনই !
এমন কি গত পরশুদিন মিনিনের ঠোটে খাওয়া চুমোটার স্বাধ যেন এখনও সুমনের ঠোটে লেগে আছে ! চুম খাওয়ার পরে মিনিনের ভেতর কেমন একটা অন্য রকম চাঞ্চল্য দেখেছিল ও ! সুমন নিশ্চিত এর আগে মেয়েটার আর কাউকে কোন দিন চুম খায় নি ! তাই তো একটু ওমন আচরন করছিল ! সুমনের মনটাই ভরে গিয়েছিল মিনিনের সেই ভাল লাগা মিশ্রিত অস্বস্তি আর লজ্জা ঘন মুখটার দিকে তাকিয়ে !
সুমন আবারও খানিকটা হেসে উঠলো আপন মনে !

গতকালই মিনিনকে বিয়ে করার পারমিশন হাতে পেয়ে গেছে এনবিএম থেকে ! এখন চাইলেই যে কোন দিন ওকে বিয়ে করতে পারে ! এই সুসংবাদটাই দেওয়ার জন্য আজকে এই দেখা করা !


অথচ একটা সময় সুমনের মনে হচ্ছিল ওর বুঝি আর বিয়েই হবে না ! সুমনের সাথে সিএসএম বা ক্যারেকটার সিমিলিয়ারিটি ফর ম্যারেজ স্কোরে ৫০ এর আশে পাশে কোন মেয়ে পাওয়া যাচ্ছিল না ! কত শত মেয়ের খোজ পাওয়া যায় কিন্তু এনবিএম থেকে যখন রিপোর্ট আসে তখন পিছিয়ে যেতে হয় !


একুশ শতকের শেষের দিকেই এই নতুন নিয়ম টা প্রথম চালু হয় ! পৃথিবী অন্যান্য দেশের মত এদেশও তখন জ্ঞান বিজ্ঞানে চরম উৎকর্ষ সাধন করেছে ! কৃত্রিম বোরট তৈরি করছে যার সাথে আসল মানুষের তেমন কোন পার্থক্যই খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ! নিউক্লিয়ার শক্তির সুষ্ঠ ব্যবহার করে জ্বলানী সমস্যার সমাধান হয়েছে, পথে পথ চালু হয়েছে এয়ার বাস এয়ার কার ! খাদ্য সমস্যা সমাধান হয়েছে, তার উপর রোদ বৃষ্টিও খানিকটা নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির মাধ্যমে ! আরও কত কিছু !

কিন্তু এতো উন্নতির পরেও একটা সমস্যা খুব ভাল দেখা দিল !
বিবাহিত নারী পুরুষের মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যেতে লাগলো খুব হারে ! মানুষ বিয়ে করছে ঠিকই কিন্তু কোন বিয়ে চার মাস মাসের বেশি টিকানো দায় হয়ে যাচ্ছিল ! এমনিতেই এ আধুনিক যুগে এসে মানুষের বাচ্চা কাচ্চা নেওয়ার প্রতি আগ্রহ করে গিয়েছিল বিবাহ বিচ্ছেদ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির ফলে বাচ্চা নেওয়ার হার কমে আগে আরও বেশি করে ! এর ফলে কয়েক বছরের ভিতর দেশে জনসংখ্যা কমে যেতে শুরু করলো আশংকা জনকভাবে !
বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে বের করলেন যে এই আধুনিক যুগে বিবাহ বিচ্ছেদএর প্রধান কারনটাই হল চারিত্রগত মিলের পার্থক্য ! আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন কোন আবেগ বোঝে না তেমনি আধুনিক জীবন যাত্রা কোন প্রকার আবেগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে না ! নারী পুরুষ কেউ কাউকে একটুই ছাড় দিতে প্রস্তুত নয় ! যে আছে যার মত, কেউ কারো উপর নির্ভরশীল নয় সে কারনে কেউ কাউকে ছাড়ও দিতে প্রস্তুত নয়, এমন কি একটু মতে অমিল হলেই ঝগড়া বেধে যাচ্ছে ! একটু ঝগড়া থেকে ডিভোর্স !
আইন করে ডিভোর্স থামানোর চেষ্টা করার হলে মানুষ বিয়ে করাই বন্ধ করে দিচ্ছে ! তখন অনৈতিক সম্পর্ক বেশি গড়ে উঠছে !

সেই সমস্যা সমাধানের জন্যই এনবিএম নতুন পদ্ধতি চালু করেছে ! মানব চরিত্রের মোট ৯১ টি দিকের উপর গবেষনা করে একটা মানদন্ড ঠিক করা হল । দেশের প্রত্যেকটি নারী এবং পুরুষের চরিত্র বৈশিষ্ট, ডিএনএ, ব্লাড সেম্পল আর প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে ডাটা বেজ তৈরি করা হল ! এর পর যারা বিয়ে করতে প্রস্তুত কিংবা বিয়ে করার ইচ্ছা করে তাদের চরিত্র বিশ্লেষনের তথ্য একে অন্যের সাথে মিল করে স্কোর তৈরি করা হয় ! ৯১ এর ভিতর অন্তত ৭৫ এর উপর মিল পাওয়া গেলেই কেবল বিয়ে করার অননুমুতি পাওয়া যায় ! নতুনবা নয় ! অনেক ক্ষেত্রে বিয়ের জন্য যখন পছন্দ মত মেয়ে কিংবা ছেলে পাওয়া যায় না তখন এনবিএমকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ! তারাই মেয়ে খুজে দেয় !

সুমনের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন টা হয়েছিল ! যে কয়টা মেয়ে পছন্দ করা হয়েছিল তার একজনের সাথেও সিএসএম পয়েন্ট ৫০ পার হয় নি ! সবার শেষে যখন এনবিএমে এপ্লাই করা হল তখনও সেখান থেকে কোন আশানুরুপ খবর আসলো না !
ওরা বারবার বলছিল ওদের ডাটা বেজে ওরা খোজ চালাচ্ছে ! একটু সময় লাগবে !
সুমনের মনে হয়েছিল মেয়ে মনে হয় পাওয়া যাবে না ! কারন সুপার কম্পিউটার দিয়ে পুরো ডাটাবেজ টেক করতে খুব বেশি হলে একদিন সময় লাগার কথা ! তাহলে ?
তাহলে কি ওর মনের মত মেয়ে এই দেশেই নেই !
বাইরের দেশে গিয়ে খোজ করা লাগবে ?
যখন প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিল ঠিক তখনই এনবিএম থেকে খবর এল যে এমন এজনের খোজ পাওয়া গেছে ! মেয়েটির নাম মিনিন !

এনবিএম থেকেই ওদের মিটিং ঠিক করে দেওয়া হল ! আর কিছু বলা হয় নি ! আর কোন তথ্যও সরবারহ করা হয় নি ! অবশ্য সুমনের সে সব দিকে খুব একটা আগ্রহও ছিল না ! আগে মেয়েটির সাথে দেখা হোক, কথা বার্তা হোক, তারপর না হয় এসব খোজ খবর নেওয়া যাবে ।



প্রথম দেখা হওয়ার দিন টা কথা সুমনের এখনও বেশ পরিস্কার মনে আছে । এখনও যেন চোখের সামনে ভাসছে ! অফিসের কাছের একটা রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করছিল সুমন ! সারাদিন অফিস করে একটু ক্লান্ত ছিল তারপরেও একটু দুরু দুরু বুক নিয়ে অপেক্ষা করছিল ও !
কেমন হবে মেয়েটি ? ওর পছন্দ হবে তো ? কিংবা মেয়েটি আবার ওকে বিয়ে করবে তো ?
কে জানে ?
দেখা যাবে পরিচয় হওয়ার পর দুজনের ভিতর অনেক কিছুতেই অমিল !

এমন ঘটনা ঘটছিল সুমন যখন কলেজে পড়তো ! একটা মেয়েকে খুব মনে ধরেছিল ! সাহস করে একদিন মেয়েটিকে মনের কথা বলেও ফেলল ! মেয়েটি রাজিও হয়ে গেল ! কিন্তু তারপর থেকেই সমস্যা দেখা দিল ! যত খানি মনে করেছিল মেয়েটি ওর মত আসলেই সেরকম কিছুই না !
শেষে বাধ্য হয়ে সম্পর্ক শেষ করতে হয় ! এবারও তেমন কিছু হবে কি না কে জানে !


এনবিএম থেকে আর কিছুই জানানো হয় নি ! মেয়ে কে ? দেখতে কেমন কোথায় থাকে এসব কিছুই জাননো হয় নি । কেবল নাম টা বলা হয়েছে ওকে ।
মিনিন !
নামটা শুনেই কেমন যেন পছন্দ হয়ে গেল !
মিনিন !
অদ্ভুদ নাম ! অদ্ভুদ সুন্দর নাম !

সুমন সেদিন এমন একটা জায়গায় বসেছিল যেখান থেকে প্রবেশের দরজাটা দেখা যায় ! মিনিন আসার আগে একটু অস্থির বোধ করছিল । কেমন হবে কে জানে এইটা নিয়ে !
কখন আসবে কখন আসবে এমন করছে ঠিক তখনই সুমনের চোখ গেল প্রবেশ পথটার দিকে ।

কাঁচে ঘেরা দরজা ঠেলে মেয়েটা প্রবেশ করছে রেস্টুরেন্টে !
চেহারাটা গোলগাল তবে চোখ দুটো বেশ ঘন ! দরজা দিয়ে ঢুকেই এদিক ওদিন কাউকে যেন খুজছে মেয়েটি !
কালো মসৃন লম্বা চুল পিছনে একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো ! আর সামনে এক গাছি চুল চেহারার সামনে বারবার চলে আসছে ! মেয়েটি বারবার হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিচ্ছে !
হঠাৎ সুমনের দিকে চোখ পড়তেই মেয়েটি ওর দিকে হাটতে লাগলো ! মেয়েটি পরনে রয়েছে ধবদবে সাদা রংয়ের একটা কামজি সাথে সাদা ল্যাগিংস !
সুমনের কেন জানি মনে হল এই মেয়েটিই মিনিন ! ও নিজে একটা মেয়ের ভিতর যা যা পছন্দ করে মেয়েটির তার সব কিছু বিদ্যামান ! একেবারে কাটায় কাটায় বিদ্যামান !
মেয়েটি আস্তে আস্তে সুমনের কাছে এসে লজ্জা মিশ্রিত চোখে বলল
-আমি মিনিন ! আপনি সুমন, তাই না ?
সেদিন কেবল অবাক ভাল লাগার চোখে মিনিনের দিকে সুমন তাকিয়েই ছিল ! কোন কথা যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না ! একই ভাবে মিনিনেরও একই অবস্থা !
কোন কথা না বলে কেবল লজ্জা মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে ছিল একে অপরের দিকে ! কখন যে সময় চলে গেল কেউ বলতে পারবেন না !

বাসায় ফেরার পর সুমন তখনই মিনিন কে ফোন দিল !
-বলুন !
-আমাকে বিয়ে করতে তোমার আপত্তি নেই তো ?
খানিক্ষন নিরবতা !
তারপর মিনিন বলল
-আপত্তি থাকলে তো দেখা করতে যেতাম না । তাই না ?
-আচ্ছা ! তাহলে আমি কাজগ পত্র রেডি করি ?
-আচ্ছা !!

দেখতে দিন পার হাতে লাগলো ! একে ওপরের সাথে দেখা হতে লাগলো ! সুমন যতই মিনিনের সাথে মিশতে লাগলো ততই অবাক হতে লাগলো ! বারবার কেবল একটা কথাই মনে হতে লাগলো যে একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের এতো মিল কেমন করে হতে পারে !
মিনিনের সাথে কথা বলার সময় সুমনে মনে হত যেন ও ওর নিজের সাথেই কথা বলছে ! কখন ওর মনে চাচ্ছে মিনিনের কথা শুনলে মনে হত যেন এই কথাটাই ও বলতে চেয়েছিল কিংবা এই ও শুনতে চেয়েছিল ! বারবার মনে হয়েছে যে মিনিন কেবল ওর জন্যই সৃষ্টি হয়েছে !



সুমন মিনিনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ! ও জানে কিছুক্ষনের ভিতরেই ও চলে আসবে ! তারপর ... নিজের পকেটের রাখা আংটিটার অস্তিত্ব টা অনুভর করলো নিজের মনের ভিতরেই ! মনের ভিতরে আপনা থেকেই একটা খুশির ঢেউ বয়ে গেল !
মিনিনও নিশ্চই খুব খুশি হবে !

সুমন আবার ঘড়ির দিকে তাকালো !
সময়ের আধা ঘন্টা ইতি মধ্যে পার হয়ে গেছে ! মিনিনের কোন দেখা নেই !
কোথায় গেল ? কোন সমস্যা হল নাকি ?

কয়েকবার ফোন করেও মিনিনের সেলফোন টা বন্ধ পাওয়া গেল ! ঠিক মত কিছু বুঝে উঠতে পারলো না ! এমন তো কিছুইতই হওয়ার কথা না ! এটা তো ওর চরিত্রের সাথে যায় না ! এই কদিনে যতবার ওদের দেখা হয়েছে ততবার মিনিন একেবারে ঠিক সময়েই এসে হাজির হয়েছে । বলতে গেলে একেবারে সঠিক সময়ে । কোন কোন সময়ে সময়ের চেয়ে একটু যেন আগেই এসে গেছে !
তাহলে আজকে কি হল ?
তবুও সুমন বসে রইলো ! বারবার মনে হতে লাগলো মিনিন চমে আসবে ! কোন সমস্যা হয়েছে নিশ্চই । চলে আসবে ! ওকে যে আস্তেই হবে !

কিন্তু রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত মিনিনের দেখা পাওয়া গেল না ! বিষন্ন মন নিয়েই সুমন নিজের বাসার দিকে রওনা দিন ! শেস বারের মত ফোন করে দেখলো মিনিন কে !
নাহ ! ফোন বন্ধ !

সুমনের মনে হয়েছিল মিনিনের ফোন যে কোন সময়েই এসে হাজির হতে পারে ।

নিশ্চই বড় কোন ধরেনর বিপদ হয়েছে ! ফোন করে গড়গড় আগে মিনিন ওকে সেই কথা বলবে তারপর হাজারবার সরি বলবে !
কিন্তু দেখতে দেখতে আরও সাত দিনেও মিনিনের কোন খোজ পাওয়া গেল না ! একেবারে যেন গায়েব হয়ে গেল !
এনবিএমে খোজ নিয়েও মিনিনের বাসার কোন ঠিকান পাওয়া গেল না ! সেখানে যে ঠিকানা টা দেওয়া আছে সেই জায়গাটা বেশ কদিন আগেই তাহলে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেছে সরকার !

সুমন কিছুই বুঝতে পারছিল না ! এমন তো কিছুতে হওয়ার নয় ! সুমনের মাথায় কিছুতেই ব্যাপারটা ঢুকছিল না ! প্রথমে ওর জন্য কোন মেয়েই পাওয়া যাচ্ছিল না তার পর একজন কে পাওয়া গেল যে কিনা একেবারে তার মত ! কদিন তার সাথে মেলা মেশা ! বিয়ের আগেই তাকে ভালবেসে ফেলা ! এবং সুমন নিজেও মেয়েটি চোখের দিকে তাকিয়ে দেখেছে । সেখানে সে ওর জন্য অফুরন্ত ভালবাসা দেখতে পেয়েছে !
তারপরপ যে দিন সুমন মিনিনকে বিয়ের জন্য অফিসালি প্রোপোজ করতে যাবে তখনই মেয়েটা গায়েব !
গায়েব বলতে একেবারেই গায়েব ! কোন খোজ নেই !
যেন মেয়েটি শুন্যে মিলিয়ে গেল ! কোথায় কোন রেকর্ড নেই !

এনবিএম অবশ্য ওকে আশ্বাস দিয়েছে সামনে ওর জন্য এর থেকেও ভাল মেয়ে খুজে দেওয়া হবে ! একটু যেন অপেক্ষা করে ! কিন্তু সুমনের আর কিছু ভাল লাগছে না ! বারবার কেবল ওর মিনিনের কথাটাই মনে হচ্ছে ! ওর চেহেরাটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছে । এই অবস্থায় অন্য কাউকে বিয়ে করা সুমনের পক্ষে সম্ভব না ! তার উপর কাউকেখুজে পাওয়া যাবে কি না কে জানে !




পরিশিষ্টঃ
এনবিএমের পরিচালক মুছা-বিন-আসলাম নিজের অফিস রুমে বসে ত্রিমাত্রিক পিসি মনিটরের দিকে তাকিয়ে আছেন ! একটা রিপোর্ট পড়ছেন আর আনমনে নিজের সামনে রাখা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন !
পড়তে পড়তে হঠাৎ হঠাৎই তিনি খানিকটা বিরক্ত হয়ে উঠলো !
বিরক্ত নিয়ে ইন্টারকমে নিজের চীপ এক্সিকিউটিভ অফিসার জবেদ মোস্তফাকে আসতে বললেন !
কিছুক্ষন পরেই জাবেদ এসে হাজির !
বিরক্ত কন্ঠেই পরিচালক বললেন
-প্রজেক্ট ৮৯৫৮৪৭ এর কি খবর ? এটা ফেইল কেন করলো ?
নিজের হাতের ট্যাবের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জাবেদ বলল
-আসলে স্যার ! ওটার পোডাক্ট ফেইল করেছে !
-কিভাবে ?
-সাবজেক্টের সিএসএম এর অনুযায়ী আমরা কাউকে খুজে পাই নি ! আসলে কাউকে খুজে পাওয়া সম্ভব না ! তার মেন্টালিটি সম্পুর্নই আলাদা ! বলতে পারেন পুরা জগতে ওয়ান পিচ !
-তো ? এর জন্য তো আমাদের ব্যাক আপ প্রোজেক্ট আছে ! তাই না ?
-আছে স্যার ! আমরা সে অনুপাতে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম ! সাবজেক্টের মেন্টালিটি অনুযারী একটা নবম মাত্রার রোবো মানবী৬৯৫ তৈরি করেছিলাম !
-তারপর ?
-সাবজেক্টের সাথে দেখা করানো হয় ! কদিন ডেটও হয় ! সব কিছু ঠিকই চলছিল ! কিন্তু ...
-কিন্তু কি ?
-ঐ যে বলেছিলাম ! সাবজেক্টের মেন্টালিটি একেবারেই আলাদা ! আমরা সে অনুপাতেই রোবো৬৯৫ এর ব্রেন তৈরি করেছিলাম ! কিন্তু সেটা টিকে নি ! এতো জটিল জিনিস বেচারী রোব৬৯৫ সহ্য করতে পারে নি ! ক্রাস করেছে ! বিশেষ করে যেদিন ক্রাস করে তার আগের দিন সবজেক্ট রোবো৬৯৫কে চুম খেয়েছিল ! এটাই বলা চলে ক্রাসের অন্যতম কারন ! এতোটা ইমোশন সহ্য করার জন্য রোবো৬৯৫ তৈরি ছিল না ! শেষে আমরা বাধ্য হয়ে তাকে সরিয়ে ফেলেছি !

পরিচালক একটু বিরক্ত সাথে সাথে হতাশ হলেন ! নবম মাত্রার রোবট হচ্ছে সব চেয়ে আধুনিক এবং মানব গুন ক্ষমতা সম্পন্ন রোবট ! সে রোবট যখন টেকে নি তাহলে অন্য কোন রোবটও টিকবে না ! ভাগ্য ভাল যে বিয়ের আগেই এমন টা হয়েছে । বিয়ের পরে এমন কিছু হলে তার নিজের ক্যারিয়ার তো বরবাদ হয়ে যেত ! সাবজেক্ট যদি কেস করে দিত তাহলে জেলে যাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল ! এর আগে বেশ কয়েকটা ক্ষেত্রে এমন রোবো দেওয়া হয়েছে । সেগুলো মোটামুটি কোন ঝামেলা ছাড়াই এতোদিন পার হয়ে এসেছে ।

আর এটা একেবারে গেলই না !
পরিচালক বললেন
-আচ্ছা যাও ! দেখো সামনে কি করা যায় ! সাবজেক্টকের জন্য আর রোব প্রজেক্ট নেওয়া দরকার নেই ! আসল মানুষ খুজতে থাকো ! ঠিক আছে ?
-জি আচ্ছা !



 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।