আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতুড়ে গদ্য (একটা সকালের আগে থেকে)

© এই খানে প্রকাশিত সকল লেখার এবং অন্যান্য হাবিজাবি সমুহের সর্বসত্ত্ব লেখকের...©

রহমতজান লুঙ্গীটা কষে বাঁধতে বাঁধতে একটা গালি ছুঁড়ে দিলো নেমে যাওয়া প্যসেন্জারটাকে উদ্দেশ্য করে। "মাদারচোত দুই ট্যাকা ভারা দিয়া য্যান গাড়িটারে কিন্যা লইছে, ঘরের বগলেই নামায়া যাইতে হইবো লাটসাবরে" গজগজ করতে করতে বাসের দরজায় দুইটা থাপ্পর দিয়ে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে হাঁক ছাড়লো "বাড়ান ওস্তাদ। ডাইনে চাপায়া, বায়ে জমা পেলাস্টিক। " সেই ভোর সক্কালে যখন কাজে আসছিলো রহমতজান তখনও ছেলেটা ওঠেনি। এখন গাড়ি জমা দিয়ে, দিনের বেতন নিয়ে যখন বেড়ি-বাঁধের ছাপড়াতে ফেরত যাবে তখনও বাচ্চাটাকে ঘুমাতেই দেখবে।

"বালের হ্যালপারি" নিজের উপরেই কেন জানি রেগে উঠলো সে। ওস্তাদের যদি মনমেজাজ কিছুটা ভালো থাকে বা গাঁজায় দমটা বেশী পড়ে তখন তাকে মাঝে মাঝে গাড়ি চালাতে দেয়। "হাতের জ্যামটাও হালার কাটতেছে না, নাইলে কবেই এই বালের হ্যালপারি ছাইড়া দিতাম"। বেড়ি-বাঁধের কাছে পৌছুতে পৌছুতে রাস্তার পাশের বিরিয়ানীঅলার কাছ থেকে তিরিশ টাকার বিরিয়ানী কিনে নেয় সে। "বউ-পুলাডাটারে বহুতদিন ভালামন্দ কিছু খাওয়ানি হইতাছে না।

ঐ বেডিও তো হারা দিন মাইনষের বাড়িত কাম-কাইজ কইরা আসে। আমার লগে বিয়া বইয়্যা বেডির সব শক-আল্লাদ মইরা গেছে। হেইদিন কইলাম ল সনি হলে ফিরদুসের বই লাগছে দেইখা আসি, হেয় কয় টেকা বেশি হইয়া গেসে নি? জমায়া রাহো, পুলার ইসকুলে লাগবো। আইজকা হেরে মুখে তুইলা বিরানী খাওয়ায় দিবার পারলে ভালা হইতো, বেডি তো কইবো গতর ছ্যানবা তো বুজতেছি, অত সুহাগ দেহাও ক্যা?" ভোরে কোনোমতে চোখে পানি দিতে দিতে গাবতলী ছুটলো রহমতজান। আজকে যে ড্রাইভারের সাথে তার ডিউটি সে খুবই বদ।

অল্পতেই গালাগালির ঝড় তুলে ফেলে। এদিকে রাতে ঘুমাতেও বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিলো। "ওস্তাদে পুরা চৈদ্দগুস্টির ভুত ছাড়ায়া দিবো আইজকা"। বাসের গায়ে পানি ছিটাতে ছিটাতে ওস্তাদকে রিকশা থেকে নামতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রহমতজান। "যাউক ওস্তাদে গাইল্লাইতে পারবো না"।

ড্রাইভার স্টিয়ারিংএ বসার পর রহমতজান চিরাচরিত হাঁক শুরু করে "ঐ কইল্যানপুর-শ্যামলি-কলেজগেট-আসাদগেট-ফারামগেট-শাহাবাগ-মতিঝিল-সায়দাবাদ"। এক দুইজন করে প্যাসেন্জার উঠতে থাকে। চেহারা দেখেই বুঝা যায় বেশীর ভাগই ফার্মগেটের উপরে যাবে না। একটু ভরে উঠার প্যাসেন্জাররা চেঁচামেচি শুরু করলে ড্রাইভার বাসটাকে চালানো শুরু করে। দুইজনকে রহমতজান ধরে তোলে, দুজনই সায়দাবাদ যাবে।

বাসের গায়ে দুইটা থাপ্পর দিয়ে রহমতজান হাঁক ছাড়ে "বাড়ান ওস্তাদ"। সাথে সাথেই আবার দরজা থেকে নেমে গিয়ে একটা থাপ্পর মেরে হাঁক ছাড়ে "ওস্তাদ দৌড় দিসে। দৌড় দেন, দৌড় দেন, কই যাইবেন? ওঠেন ওঠেন, নামায়া দিমু। বাড়ান ওস্তাদ। " বাস টা ফার্মগেটে (ঠিক ফার্মগেট না, ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল থেকে ফার্মগেট সিগনালের দিকে) আসতে আসতে দেখে যে ট্রাফিক হাত তুলছে থামার জন্য।

রহমতজান ট্রাফিকের ইশারা অগ্রাহ্য করে বাসের দরজায় দুইটা থাপ্পর মেরে এগিয়ে যেতে বলে। ড্রাইভারও টান দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। ওদিকে আরেকটা আট নম্বরও রহমতজানদের বাসটাকে ওভারটেক করার চেষ্টায়। অতি উৎসাহে রহমতজান শরীরটাকে প্রায় পুরোটাই বের করে দিয়ে পাশের বাসটার গায়ে থাপ্পর দিতে দিতে হাঁক ছাড়ে "ওস্তাদ বায়ে নম্বর আছে, হাল্কা চাপ দিয়া। " ড্রাইভার কি ভেবে স্টিয়ারিংটা একটু বাঁয়ে ঘুরিয়ে দেয়, আর বাস দুটো একসাথে লেগে যায়।

মাঝে ডিভাইডার হিসেবে রহমতজান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।