আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাতুড়ে গদ্য (তন্বী বা তার টেবিলের গর্ভে)

© এই খানে প্রকাশিত সকল লেখার এবং অন্যান্য হাবিজাবি সমুহের সর্বসত্ত্ব লেখকের...©

রুমের বিশাল এই রহস্যময় টেবিলটা নিয়ে তপতী, নীতু আর উর্মির আলোচনার অন্ত নেই। আর এটার মালিক যেহেতু তন্বী সেহেতু আলোচনায় তার অংশগ্রহনের কোনোই সুযোগ নেই। আসলে তন্বীকে নিয়েও তপতীরা কিছুটা সন্দেহের ভিতর থাকে। কেমন যেনো মেয়েটা। এমনিতে সুস্থ্য-স্বাভাবিক, কিন্তু রাত বাড়ার সাথে তার আচরণে কেমন একটা অস্থিরতা ভর করতে থাকে।

প্রায় রাতেই তিন রুমমেটের কেউ না কেউ তার ঘুম পাড়ানী গুনগুন বা মিহি সুরে কাঁদার শব্দ শুনতে পায়। প্রথম প্রথম তপতী কয়েকবার এ ব্যাপারে তন্বী কে জিজ্ঞাসাও করেছে তবে কোনোই উত্তর পায় নি। আরেকটা রহস্য তন্বীর বিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিলটা। যেটা নিয়ে তন্বীর আদিখ্যেতা লক্ষ্য করার মতো। প্রায় প্রতি ভোরেই তাকে নিজের বিছানার বদলে টেবিলের পাশে মেঝেতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।

আর শুক্রবার সারাটা দিন সে টেবিলটা নিয়েই মেতে থাকে। একবার এভাবে সাজায়, একবার ওভাবে গুছায়, একবার ধুলো ঝাড়ে। কিন্তু অন্য কেউ তার টেবিলের আশে পাশে গেলেই খেঁকিয়ে ওঠে। এই দু'টো অস্বাভাবিকতা ছাড়া তন্বীর মতো ভালো মেয়ে হয় না। এই কথাটা তার রুমমেটরা একবাক্যে স্বীকার করে।

গত একমাস তন্বীকে অতিরিক্ত অস্থির লাগছে। অন্ততঃ তপতী উর্মির কাছে। নীতু এসবের সাতে-পাঁচে নেই। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে বিয়ে করা, তার লেখাপড়ার কারণও এটাই। সেদিন রাতে তন্বী যখন টেবিলের কাছ থেকে নিঃশব্দে ফিরে আসছে তখন তপতী আর উর্মি জেগেই আছে।

আজকে তারা দেখবেই কি আছে তন্বীর গোপন ড্রয়ারে। কিন্তু আধো অন্ধকারে, কাপড়ে মোড়ানো আবছায়া একটা আকৃতি ছাড়া আর কিছুই দেখা গেলো না। তন্বী সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে খানিকটা হাঁপিয়েই গিয়েছে। সমস্যা হলো বাড়িওয়ালা পাঁচতলা করেছে ঠিকই কিন্তু কোনো লিফট রাখেনি। অবশ্য যখন বাড়িটা বানানো হয়েছে তখন পাঁচতলা বাড়িতে লিফটের প্রচলন ওভাবে ছিলো না।

ঘরের দরজাটা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই দেখে সবগুলো রুমমেট মিলে তার টেবিলটা ঘিরে কি যেনো করছে। একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার দিয়ে উঠলো তন্বী। তপতী, উর্মি, নীতু ছিটকে সরে গেলো টেবিলটাকে ছেড়ে। এদিকে তন্বীও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। সবাই মিলে ধরাধরি করে তন্বীকে বিছানায় নিয়ে আসলো, আশপাশের রুম গুলো থেকেও অন্যান্য মেয়েরাও এসে ভীড় করেছে তাদের দরজায়।

কিছুক্ষণ পর তন্বীকে নড়েচড়ে উঠতে দেখে ভীড় পাতলা হওয়া শুরু করলো। এরমধ্যে অবশ্য তপতী বানোয়াট একটা গল্প শুনিয়ে দিয়েছে অন্যদের। জ্ঞান ফিরে পেতেই তন্বী ছুটে গেলো টেবিলের কাছে। ড্রয়ারটা ঠিকমতো তালাবদ্ধ আছে দেখে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলো, যেনো কোনো কারণ ছাড়া জ্ঞান হারানোটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আজকে তপতী আর উর্মি ডেসাপরেট, দেখতেই হবে কি এমন অমূল্য জিনিস আছে ওই ড্রয়ারটায়।

তাই সকাল সকাল ফিরে এসেছে একজন তালা সারাইআলাকে নিয়ে। পুরো বিল্ডিংটাতেই নীরবতা যেনো চিৎকার করছে। এর মাঝে তারা তালা সারাইয়ের লোকটা কে দিয়ে একটা চাবি বানিয়ে নিলো। লোকটা তাদের আচরণ বুঝতে পেরে স্বাভবিকের চেয়ে ডাবল মজুরী নিয়ে চাবিটা বানিয়ে দিলো। এর মাঝে নীতুও এসে হাজির।

তালা সারাইয়ের লোকটাকে বিদায় করে তিনজন ড্রয়ারটা ঘিরে বসলো। উত্তেজনায় তাদের হৃদপিন্ড এমন ভাবে লাফাচ্ছে যেনো বুকের খাঁচা ছেড়ে বের হয়ে যাবে। কাঁপা কাঁপা হাতে তপতী চাবিটা দিয়ে ড্রয়ারটা খুললো। কয়েকটা ডায়েরী আর একটা কাপড়ে মোড়ানো বয়াম আছে। ডায়েরী গুলো বাদ দিয়ে তপতী বয়ামটা বের করে নিয়ে আসলো।

বেশ ভারীই লাগছে। মাটিতে নামিয়ে রেখে কাপড়ের আবরণটা সরিয়েই তিনজন একসাথে ভয়ংকর একটা চিৎকার দিয়ে বয়ামটার কাছ থেকে ছিটকে গেলো। বয়ামের ভিতর ফর্মালিনে ডোবানো প্রায় তিনমাস বয়সী একটা শিশুর দেহ রয়েছে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।