আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কইন্যার নাম টেলিভিশন

আমি স্বপ্ন দেখি একদিন বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে “কইন্যার নাম টেলিভিশন” নামে একটা নিবন্ধ একটি পত্রিকায় পড়েছিলাম ২৫ জানুয়ারিতে; লিখেছেন জনাব ফারুকী। তিনি লিখেছিলেন, মেয়ের বিয়ে দেবার মতোই উদ্বেগের মধ্যে কাটছে তাঁর দিন, কারণ তাঁর পরিচালিত (মূল গল্প ফারুকীর, চিত্রনাট্য রচনা করেছেন জনাব আনিসুল হক) চলচ্চিত্রটি ঐ দিন (২৫ জানু: ২০১৩) মুক্তি পাচ্ছে। যা হোক, ফারুকী প্রসঙ্গে বেশি বলতে চাই না। আমাদের ৮ম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন এর অংশ হিসেবে“টেলিভিশন” দেখতে গেলাম বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড-এ। বুয়েটে পড়াকালে বন্ধুদের সাথে “বিহঙ্গ” নামে একটি সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র দেখার মানসে ২০০০ সাল নাগাদ একবার ওমুখো হয়েছিলাম; অর্ধেক ছবি দেখে বমি চেপে বেরিয়ে এসেছিলাম (ভাল ভাল কলাকুশলী দিয়ে যে এত ভূয়া একটা সিনেমা বানানো যায়, আগে জানা ছিল না)।

নিউমার্কেটে অন্য কাজ ছিল, তাই গত শনিবার সস্ত্রীক গেলাম বলাকায়। দেখলাম পেক্ষাগৃহে কিছু উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে; তবু অনেক অব্যবস্থাপনা চোখে পড়ল। কোন্ হলে “টেলিভিশন” আর কোন হলে “চোরাবালি” প্রদর্শিত হচ্ছে সেটা কোথাও সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকায় অনেক দর্শক ছিল দ্বিধান্বিত; প্রদর্শনীর সময়সূচি কোথাও লেখা না থাকায় তা তৈরী করেছিল এক অহেতুক উদ্বেগ। বসার আসনগুলোও মধ্যম মানের; ১৫০ টাকার টিকেটে “Centrally Air Conditioned” লেখা থাকলেও ভেতরে দেখলাম কয়েকটা Split Type AC লাগানো, সেগুলোর একটাও একবারও চালানো হয়নি; বরং কিছু তিন ব্লেডের ফ্যান ঘুরিয়ে আমাদেরকে গরমের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছে…; কর্তৃপক্ষকে অশেষ ধন্যবাদ। Dolby Digital Sound কথাটা অনেক ফলাও করে প্রচার করা হলেও শব্দের মান তেমনটা লাগেনি, বরং মূল প্রদর্শনীর আগে-পরে বিকট আওয়াজে পুরনো দিনের ঘ্যানঘেনে গান শুনে মাথা ধরে গিয়েছিল।

সিলভার স্ক্রীণ বলে যেটা চালানো হলো, সেটার মানও মধুমিতা বা স্টার সিনেপ্লেক্সের থেকে ভাল নয়। এবার বলি “টেলিভিশন” কেমন লাগলো। প্রথমার্ধ পর্যন্ত বেশ ভাল; দর্শককে হাসানোর ও আনন্দ দেবার প্রচেষ্টা প্রায় সার্থক। কিন্তু নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষার সংলাপগুলো কোন কোন দর্শক ভালভাবে বুঝতে পারেননি। অন্যদিকে, চঞ্চল চৌধুরীর পাবনার টানে নোয়াখাইল্যা সংলাপ উচ্চারণ ছিল বেশ প্রকট ও বেমানান।

কোন সাবটাইটেল ছিল না; ফলে ছবির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় রয়ে গেল। মূলগল্পটি বলে ফেলতে চাই না, তাই সংক্ষেপে বলি। ভাল লেগেছে প্রত্যেকটি লোকেশন, কংক্রিট দিয়ে একটি বিশাল টিভি তৈরীর আইডিয়াটাও চমৎকার। চমৎকার লেগেছে মোশাররফ করিমের প্রতিটি সংলাপ ও দৃশ্য। তিশা তাঁর স্বভাবসুলভ অভিনয় করেছেন, যা দর্শকের মনে দাগ না কাটলেও ভাল লাগতে বাধ্য।

ধর্মান্ধতার প্রতি চপেটাঘাতের যে চেষ্টা করা হয়েছে, তাও প্রশংসনীয়। কিন্তু এমন একটি দৃশ্যের কথা বলতে পারব না যেটা হৃদয় কেড়েছে (শেষ দৃশ্য ছাড়া)। সমগ্র চলচ্চিত্রটি ছিল হাল্কা মেজাজের (ছবিয়াল-এর নির্মাণ যেমন হয়)। কিন্তু এই একই গল্প দিয়ে দর্শকের মনে গভীর রেখাপাত করার মতো চলচ্চিত্র বানানো যেত। বাংলাভিশন এর প্রযোজক শামীম শাহেদকে কয়েকটা দৃশ্যে দেখা গেল; সুবিধাবাদী একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন; কিন্তু সেটার মানও গড়পরতার চেয়ে ওপরে নয়।

সবচেয়ে ভাল লেগেছে শেষদৃশ্য, যেখানে দর্শকের আবেগকে একটা নাটকীয় উচ্চতায় (আক্ষরিক অর্থে যাকে বলা যায় "ক্লাইম্যাক্স") নিতে পেরেছেন পরিচালক ও অভিনেতা (শাহীর হুদা রুমী) দুজনই । এটি যদি কোন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পায়, তবে তা হবে এর অসাধারণ ক্যামেরার কাজ (কিছু ফ্রেম ও অ্যা্ঙ্গেল ছিল অদ্ভুত সুন্দর) এবং নদীতীরবর্তী হৃদয়কাড়া লোকেশনের কারণে। সব মিলিয়ে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র হিসেবে “টেলিভিশন” আরো একটি মাইল ফলক, সপরিবারে বা সবান্ধব দেখা যেতে পারে। -কাজী মিতুল ১০/২/২০১২ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।