আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসাবিদা (সুভাষিত)

কবিতা লিখি, প্রবন্ধ লিখি, গল্প লিখি, রম্যরচনা লিখি, মানে লেখার চেষ্টা করি আর কী!

মুসাবিদা - ২ (সুভাষিত) "প্রতিবেশী চাঁদ নয় তো অনাত্মীয় রামধনু-রং দেশেও জমাব পাড়ি মাঠের শিশির ঝরবে না একটিও ক্রীতদাস ছায়া গোটাবে না পাততাড়ি"। (পদাতিক) রোদ উঠেছে। আচারের শিশিগুলোর সময় হয়েছে ছাদে রোদ পোয়ানোর। রাতগুলো যেন আজকাল বড্ড বড় মনে হয়। আগে রোজ সকালে দলবেঁধে অন্তত দু’রকম শালিক হাজির হত ছাদে।

এখন তারা কোথায়......। "হয়ত তখন খুলে দেখবে মুঠো - প্রকান্ড সেই নীল আকাশটা কখন গেছে উপে। যখন অনেক বড় হবে আমার মেয়ে পুপে"। (পুপে) কবিতা জগতে কয়েকদিনের যাত্রী আমি পিছন ফিরলেই কয়েকটা লাইন জলে বুদবুদের মত ভেসে ওঠে। আমার প্রয়াত সেজো কাকা আবৃত্তি করতেন - "তার কথা শুনে হাতের মুঠোটা খুললাম।

কাল রাতের বাসি ফুলগুলো সত্যিই শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে"। (যেতে যেতে) সেদিনের বালকের কাছে লাইনগুলো ছিল, কিন্তু ছিলনা কোনো অর্থ। সেটা বুঝেই সম্ভবত সেজ কাকা বোঝাতেন, পিছন ফিরে দেখলে..........। গত সন্ধ্যায় খুব মজা পেয়েছিল ছোট্ট চড়ুই। মাঝে মাঝেই কাকের তাড়া খেয়ে বিরক্ত চড়ুইকে আনন্দ এনে দিয়েছিল কয়েকটা ফিঙে।

উফ! ফিঙের তাড়া খেয়ে কাকগুলোর কী অবস্থা। সাক্ষী আছে নিয়নের বাতিগুলো। বড় হয়ে সুভাষ মুখোপাধ্যায় কে আরো বড় করে পেয়েছি "নির্বাচিত নাজিম হিকমত" এর অনুবাদ কবিতায়। কবির কথায়, "নাজিম হিকমত-এর কবিতা দিয়ে কবিতা-অনুবাদে আমার হাতেখড়ি"। আমরা বরং সেই "হাতেখড়ি"র দু-একটা উদাহরণে চোখ বুলাইঃ "বিংশ শতাব্দীতে খুব বেশী হলে এক বছর মানুষের শোকের আয়ু"।

(জেলখানার চিঠি) একবিংশ শতাব্দীতে ঢুকে পড়েও ওই লাইনগুলোর অনন্ত আয়ু টের পাই। একদম শেষে গিয়ে কবিতাটা তার আসল চেহারা দেখিয়ে দেয় এই লাইনগুলোতেঃ "আশাভঙ্গের অভিশাপ নিয়ে আমি জেগে উঠলাম। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বইতে মুখ রেখে। অতগুলো কন্ঠস্বরের মধ্যে তোমার স্বরও কি আমি শুনতে পাইনি"? (জেলখানার চিঠি) সাইকেলের চাকাটা বিগড়েছে। যে রোজ চড়ত সাইকেলের পিঠ, আজ তারই পিঠে সওয়ার খোদ সাইকেল।

চাকাটা ঘুরে যাচ্ছে শূন্যে, চকচক করছে স্পোকগুলো, সূর্যের আলোয়। এরপর কবির কলমের "কন্ঠস্বর" নিয়ে আলাদা করে ভাবতেই হয়। আর ভাবতে গিয়েই ধরা দিল কিছু চিরকালীন ভাবনাঃ "যে বছর জেলে এলাম একটা পেনসিল ছিল লিখে লিখে ক্ষইয়ে ফেলতে এক হপ্তাও লাগেনি। পেনসিলকে জিজ্ঞেস করলে বলবেঃ 'একটা গোটা জীবন'। আমি বলবঃ 'এমন আর কী, মোটে তো এক সপ্তাহ'।

" (আমি জেলে যাবার পর) এরপর কবি "লাগছে" বললেও "ফুলগুলো সরিয়ে" নেওয়া যায়না। কবি সেটা বুঝেই যেন বলে ওঠেনঃ "ছেলেটা আমার পুঁটুলি পাকিয়ে ব'সে। বোকা ছেলে আমার, ছি ছি এই তুই বীরপুরুষ? শীতের তো সবে শুরু- এখনই কি কাঁপলে আমাদের চলে"? (ফুল ফুটুক না ফুটুক) না, চলেনা। আর চলেনা বলেই খোঁজ করলাম আগুনের, "যেখানে বাড়িগুলোর গায়ে/ চাবুক মারছে বিদ্যুৎ"। এক হাতে লেখনী আর অন্য হাত পাঠকের ঘাড়ে রেখে দিনের পর দিন কবি যা লিখেছেন, "বসন্ত" সত্যিই হাজির হয় পাঠকমনে, "ফুল ফুটুক না ফুটুক"।

অফিসের কাজের চাপে অনেকদিন দেখা হয়না পুরোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে। একটানা কয়েকটা ছুটির ফাঁকে ভাবলাম গুঁজে দি কিছু সামাজিকতা। "আরে, মুখুজ্যে মশাই যে! নমস্কার, কী খবর?", উত্তর আসে, "পুরোনো মানচিত্রে আর চলবে না হে, ভূগোল নতুন করে শিখতে হবে"। (মুখুজ্যের সঙ্গে আলাপ) শিখছি, প্রতিদিন শিখছি। আর শিখতে গিয়ে দেখছি, কীভাবে, "আমার অমন সুন্দর বাইরেটা আমার এই অগোছালো ঘরে হারিয়ে যায়"।

(মুখুজ্যের সঙ্গে আলাপ) কবিতা মোটেই পছন্দ করেনা এমন একজনকে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের গোটা চারেক লাইন শুনিয়েছিলামঃ "তোমাকে বলিনি দজ্জাল ঘড়িটা একদিন আমাকে বাজিয়ে দেখে নেবে ব'লে টিকটিক শব্দে শাসিয়েছে" (তোমাকে বলিনি) আমাকে অবাক করে সেই শ্রোতা এরপর শুনেছি আরও কয়েকজনকে ওই "টিকটিক শব্দে শাসিয়েছে"। এখানেই সুভাষ সার্বজনীন, এখানেই সুভাষ ভিড় থেকে আলাদা। কলমের প্রজ্ঞা কোন পর্যায় গেলে বেড়িয়ে আসে এমন লাইনঃ "ছেঁড়া সেলাইয়ের ছুঁচে, ভাঙা জোড়া দেওয়ার আঠায় তুমি আছ ছুঁলেই টের পাই"। (তুমি তো কাঁদ না) বা, "হঠাৎ আমার চোখের জল পাথর হয়ে গিয়ে ভয়ঙ্কর ভারী করে তুলেছিল আমার কাঁধের ওপর চেপে বসা এক অদৃশ্য শবাধার। আমি সেইদিন বুঝেছিলাম।

জীবনের ভার মৃত্যুর চেয়ে হালকা"। (হিংসে) বা "মার কপালে কাঁচপোকার টিপ চাঁদ হিংসেয় জ্বলে"। (একবার বিদায় দে, মা) এভাবে কোট করতে গেলে, শেষ হবেনা এই অধ্যয়। বরং সেকালে লেখা, তাঁর একালের ক'টা লাইন দিয়ে শেষ করি- "সকালবেলায় জানলার গরাদ ঠেলে ভেতরে আসে হাসপাতলের রুগীর পোশাকে রোদ্দুর! পাশ ফিরে দেখি মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে সকালে কাগজ"। (একটু পা চালিয়ে ভাই)।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।