(রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে দিনব্যাপী শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কর্মসূচি। রবীন্দ্রভাষারীতি থেকে একালের ভাষারীতিতে অনুবাদ)
আগের অংশ: Click This Link
নৌকা থেকে এক কাঁচা পাকা চুলের লোক নামলেন। ফটিকের কাছে এসে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলেন। ফটিক অন্যদিকে তাকিয়ে বলল, ওই হোথা।
লোকটি বলল, কোথা?
ফটিক বিরক্ত ভঙ্গিতে বলল, জানিনে।
লোকটি মহাবিরক্ত হয়ে চলে গেল। আজকালকার ছেলেপেলে এতো বেয়াদব হয়েছে। কী আর বলব?
এমন সময় বাঘা বাঘদি এসে বলল, ফটিক দা, মা ডাকছে।
ফটিক বলল, যাবো না।
বাঘা ফটিকের উত্তরের অপেক্ষা না করে দু'হাতে তুলে কোলে করে নিয়ে গেল।
বাড়ীতে আসতেই মা নানাভাবে প্রশ্ন করছে, কেন মাখনকে ফেলে দিয়েছে?
দামী মোবাইলটা ভেঙ্গে কী লাভ হলো তার?
ফটিক সব অভিযোগ অস্বীকার করল। এমন সময় সেই কাঁচা পাকা চুল গোফের লোকটি তাদের বাড়ীতে ঢুকলো। ফটিকের মা চিৎকার দিল, এ যে দাদা! তুমি? কবে এসেছ? কতদিনের ভিসা নিয়ে এসেছ? কিভাবে এলে? বিমানে না বাই রোডে? না ঢাকা-কলকাতা সরাসরি চলা ট্রেন সার্ভিসে?
বোনের এতা কথা শুনে বিরক্ত হওয়ার বদলে বিশ্বম্ভর বাবু খুশিই হলেন। বোন তাকে পেয়ে আনন্দে অস্থির।
কিছুদিন এমন করেই কাটলো।
যাওয়ার আগে বিশ্বম্ভর বাবু ফটিক ও মাখনের অবস্থা জানতে চাইলেন। জানলেন ফটিক চরম দুষ্ট হয়েছে। মাখন ভালো আছে। তিনি বোনকে বললেন, ফটিককে কলকাতায় দেবে? বোন অল্প অল্প রাজী হলেও, ফটিক মহারাজী। সে যাওয়ার জন্য রীতিমতো অস্থির হয়ে ওঠল।
কলকাতা পৌছেই ফটিক যেন ডোবার মাছ সাগরে পড়ে গেল। তার মামী ফটিকের সঙ্গে কথা বলে তা-ই বুঝল। এই বয়সের ছেলেরা যে কেমন হয় তা তার মুখস্থ। ফটিকও বুঝতে পারলো তার মামী তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখছেনা। ।
তাই সে মামীর প্রিয়ভাজন হওয়ার চেষ্টা চালাতো নিয়মিত। মামীর যে কোনো কাজেই সে আগবাড়ীয়ে যেতো। মামী কিছু বলার আগেই সে কাজে নেমে যেত। যা মামীর বিরক্তি আরো বাড়িয়ে দিত। দেখা যেতো, মামী 'ক' বললেন।
ফটিক 'কলা' নিয়ে আসতো। কিন্তু মামীর আসলে দরকার ছিল 'কলম'। তাই মামী যে তাকে দুয়েকদিন হালকা পাকতলা ঝাড়ি দেয়নি তা না।
তাই ফটিকের কলকাতার প্রতি ভালোলাগ কমে আসে। যদিও কলকাতার ট্রামে চড়া, ভিক্টোরিয়া মোমোরিয়াল, সায়েন্স সিটি দেখার বাসনা ফটিকের মনে ছিল বহুদিনের।
কিন্তু এসবের চেয়ে তাকে বেশি টানতো তার গ্রাম। বেশি টানতো ঘুড়ি ওড়ানো, চৌধূরী সাহেবের বাড়ীর আম চুরি, তালুকদার সাহেবের বাড়ীর মুরগী চুরি( যদিও বার্ড ফু'র খবরের পর মুরগী চুরি অনেক কমে গিয়েছিল), খান সাহেবেরদের গাছের ডাব-নারকেল চুরির কথাগুলো বেশি মনে পড়তো। আর মায়ের কথাতো ছিলই। তাই মামাকে জিজ্ঞাসা করতো, মামা বাড়ী যাবো কবে?
মামা জবাব দেন, কার্তিক মাসে। পুজোর ছুটিতে।
কথা শুনে ফটিকের মন খারাপ হয় কার্তিক মাস? সেতো বহু দেরী।
আর কার্তিক মাসে যাবো কেন? তখনতো কলকাতা জুড়ে উৎসব। শুনেছে তখন রাস্তায় সুন্দরী মেয়েদের ঢল নামে। তার মন আরো খারাপ হয়। সে মামার উপর বিরক্ত হয়, বুড়া মানুষ ...।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।