আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গান্ধী



মাঝে মাঝে খুব ডুমুর খেতে ইচ্ছে করে। সবুজ কঁচি ডুমুর কান্ড থেকে ছিঁড়লেই দুধের মত সাদা কষ বের হত। লবণ আর মরিচের সাথে একটু তেঁতুল মিশিয়ে সেটাই খেতাম। এখানে বাংলাদেশী কচুর লতা, কচু মূখী, লাউয়ের ডগা সব পাওয়া যায়। কিন্তু কেন যেন দোকানী আমার মনের কথাটা ধরতে পারে না।

কাঁচা ডুমুর সে এখনো আমদানী শুরু করে নাই। মনের ভেতর কাঁচা ডুমুরের অভাবে কচি ব্যাথাটা এখনো গুমরে গুমরে কাঁদে। আহা যদি পেতাম! কাঁচকী মাছ, কচুর লতি, লাউয়ের লতা, কাজী পেয়ারার থলেটা টেবিলের নীচে রাখতে রাখতে খবরের কাগজটার উপর চোখ পড়ল। অবশ্য সেটা এমন কোন দরকারী জিনিস নয় বলে আমি কখনো কিনি না। দরকারী কফির কাপে চুমুক দিয়ে কাগজে চোখ বুলাচ্ছি, সেটা দেখেই ম্যাডামের মেজাজ একটু ‘তারা’র দিকে।

অবশ্য এখনও কিনিনি তাই ‘রাগ’ এখনো ‘মুদারা’র ঘরে। কাগজ কিনলে একেতো পয়সা গেল; সেটা পড়তে আবার সময় যাবে। আমি খুব দ্রুত চোখ বুলিয়ে সব দরকারী খবর পড়তে পারি না। একটু আরাম করে, মনে মনে উচ্চারণ করে পড়ি। তাতে সময় আরো বেশী লাগে; এর মধ্যে পরিচিত কেউ কিছু বললে সেটা শুনিই না, জবাব দেয়াতো দূরের কথা।

অভদ্রতার চরম! ম্যাডাম এই নিয়ে বেশ বিরক্ত। অনেকদিন আগে খবরে পড়েছিলাম দুই বাংলাদেশী গার্মেন্টস শ্রমিকা জার্মানে এসেছেন। এদেশের মানুষকে তাদের কষ্টের কথা বুঝিয়ে বলতে। রাবারের তালি দিয়ে জিন্সের হাল ফ্যাশনের প্যান্ট সেলাই করতে করতে তাদের একজনের আবার ক্যান্সার হয়েছে। সে রাজ রোগের চিকিৎসা করাতে পারবেন এমন আয় তারা করতে পারে না।

কোন রকমে বেঁচে থাকা যায়, এমন তাদের রোজগার। অথচ এখানে অনেক দামে তাদের শ্রমে সেলাই করা প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে। অবাক হয়ে তারা সেটা দেখছে! অবশ্য এর পেছনে কাপড়, সেলাই মেশিন, ট্রান্সপোর্ট খরচ কতকিছু আছে! সে সব দেখার চোখতো আর এদের নেই। কাজেই দামতো বেশী হবেই। পুঁজি খাটানোর কথা না হয় বাদই দিলাম।

তো সেদিনের কাগজটা কিনেই পড়েছিলাম। ম্যাডামও কিছু বলেননি। বছরে এমন দুএকবার আমার ঘোড়া রোগ সহ্য করেন তিনি। আর আমাদের দেশের খবর এরা একদম ছাপে না। যদিও দৈবাৎ এমন ঘটনা ঘটে তখন সেখানে পড়তে পারব-“ট্রান্সাপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের দাবী অনুযায়ী বাংলাদেশ দুর্নীতিতে তৃতীয় বারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান ! মেজাজ খারাপ হয়।

চাপা বাজির আর জায়গা পায় না। শতকরা আশি ভাগ মুসলমানের দেশে এসব কেউ করে নাকী! আমাদের দেশে কত লোক আল্লাহর আইনে চলে! সৎ লোকের শাসনও আমরা দেখেছি। যত্তসব ফাইজলামী! কিন্তু আজকের কাগজে তেমন কিছু নেই। একটা সুসংবাদ আছে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্য। সে দেশের এক বেক্কল লোক জীবনে একজোড়া চটি একটা থালা আর একটা চশমা রেখে গেছেন তার সন্তানদের জন্য।

অবশ্য এই তিনটি জিনিস আমেরিকা থেকে নিলামে কিনে আনতে ব্যাঙ্গালোরের এক সফ্টয়্যার কোম্পানীর মালিককে আঠার লাখ ডলার খরচ করতে হয়েছে! যে কিনা সেই বেক্কল ভারতীয়েরই সন্তানতুল্য! ভাবলাম বাঁচা গেল। দেশের জিনিস দেশে এল! অহিংসার পরিত্যক্ত পথে হাঁটতে গিয়ে বেক্কল লোকটার জানটা গেল! আর এখন তার চশমা দিয়ে দুনিয়া দেখতে গিয়ে, তার দেশের কৃতি সন্তানেরা লাখ লাখ ডলার খরচ করছে! কপাল ভাল যে তারা অহিংসার পথে পা বাড়ায় নি! অর্থ বৈভব না কামালে এই চশমাটা কিনতে পারতো! ইশ লোকটা যদি আরো কিছু এমন জিনিস রেখে যেত! ভারতের এটম বোমা আছে; মহাকাশেও কি যেন একটা পাঠিয়েছে। এত উন্নতির দিকে এগুতে গিয়ে ক্ষেতের ফসল ফলানো চাষীদের কথা মনে ছিল না। আকাশ থেকে খবর পাওয়া গেল- ঋণের দায়ে ভারতের লাখে লাখে কৃষক গলায় দড়ি দিয়েছে। অবশ্য ফাঁসিতে ঝোলা কৃষকের সংখ্যা বেক্কল লোকের চশমার দামের তুলনায় অনেক কম! ভাগ্যই বলতে হবে!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।