আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবিধানে বিসমিল্লাহ : হাফ প্যান্টের বুক পকেট

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

আমার ছোটকালে আমাদের বাড়ির পাশে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ওয়াজ করতে আসতেন। তার এক ওয়াজে তিনি বিসমিল্লাহ সংক্রান্ত একটি ঘটনা বলেছিলেন। বিসমিল্লাহ যে সব জায়গায় বলা যায় না, সেই উদাহরণ টানতে গিয়ে তিনি এই ঘটনাটি বলেছিলেন। ঘটনাটি এ রকম ------ একবার এক মাতালকে এক হুজুর উপদেশ দিলেন একজন মুসলমানের সকল কাজ শুরু করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা উচিত। প্রতি কাজের আগে বিসমিল্লাহ বললে খুব সওয়াব।

মাতালের কথাটা মনে ধরল। যদি শুধু বিসমিল্লাহ বলেই সওয়াব কামানো যায় তো মন্দ কী । সে রাতে মাতাল মদের গ্লাসে প্রতিবার চুমুক দেয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলে নিল। সে মনে মনে খুশি -- মদ খেলেও তো সওয়াব পাওয়া যাচ্ছে। পরের দিন হুজুরের সাথে দেখা।

পুরো ঘটনা বলল মাতাল। হুজুর তো সব শুনে ক্ষেপে উঠলেন। বললেন, আরে ভুদাই, তুই করছিস কী ? একটা হারাম কাজের আগে বিসমিল্লাহ বলছিস ! তোর তো ঈমানই চইলা গেছে। তোকে আবারও কলেমা পড়ে মুসলমান হতে হবে। আমাদের সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহ আছে।

জিয়াউর রহমান সাহেব বিসমিল্লাহ সংযোজন করেছেন। তার নিচেই লেখা আছে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি। এই মূলনীতিগুলো হল --- ৮৷ ১[ (১) সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার-এই নীতিসমূহ এবং তৎসহ এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এই ভাগে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে৷ (১ক) সর্বশক্তিমান আল্লাহের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি৷] (২) এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ-পরিচালনার মূলসূত্র হইবে, আইন-প্রণয়নকালে রাষ্ট্র তাহা প্রয়োগ করিবেন, এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যাদানের ক্ষেত্রে তাহা নির্দেশক হইবে এবং তাহা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হইবে, তবে এই সকল নীতি আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হইবে না৷ এই মূলনীতিতে একটা আজব খিচুড়ি আছে। গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র ইসলামসম্মত না হলেও বিসমিল্লাহ বলে এই জাতির ঘাড়ে এই দুটি অনৈসলামিক শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। জাতীয়তাবাদও ইসলামসম্মত নয়।

তাহলে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা বলে যা করা হল, তা তো আল্লাহর তথা ইসলাম পরিপন্থী হল। তাহলে এই সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করে কী লাভ ? মূল লাভটি হল, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়া খেলা করা। ধর্মভীরু মানুষের সহানুভূতি নিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাওয়া। সেই কাজটি করেছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান যে ইসলাম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সংবিধানে বিসমিল্লাহ যোগ করেন নাই, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ শেখ মুজিবুর রহমান মদের লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, আর জিয়া মদের লাইসেন্স দিয়ে ক্লাবে ক্লাবে মদ খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।

তাছাড়া সারা দেশে হাউজি, ভ্যারাইটি শো ইত্যাদির নামে নগ্ন নৃত্য চলত বেশুমার। তার সময়ে এই সব ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডকে কখনও বাধা দেয়া হয় নি। বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে উৎসাহ দেয়া হত। ইসলামের প্রতি যদি জিয়ার দরদ থাকত, তাহলে কেবল বিসমিল্লাহ দিয়ে থেমে থাকতেন না। পুরো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়ই ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা করতেন।

সংবিধানটি পুরো্টাই প্রচলিত আইনী কাঠামোর মধ্যে তৈরি। এসব আইনী কাঠামোর কোনটাই ইসলাম সমর্থন করে না। এর পূর্বে বিসমিল্লাহ দিলে মাতালের মদ খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলার মতো হয় না কি ? হাফ প্যান্টের বুক পকেটের মতো এই নাজায়েজ (ইসলামী মতে) সংবিধানের আগে বিসমিল্লাহ থাকলেই বা কি , না থাকলেই বা কি ? ওতে জিয়ার ফায়েদা হয়েছে। ইসলামেরও লাভ হয় নাই, সংবিধানেরও লাভ হয় নাই। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মভীরু বলে এবং ভুদাই বলে রাজনীতিবিদরা ইসলামের নাম দিয়ে আমাদের বার বার ঠকিয়েছে।

আমাদের সংবিধান খবর ১ খবর ২

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.