আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদ শ্রমিকের দিন...



এক. গণমাধ্যমের কাছে জনগণের চাইবার আছে অনেককিছু। সরকার ও জনগণের প্রতি গণমাধ্যমেরও অনেককিছু চাইবার আছে। এ চাওয়া দেশের সকলের জন্যই। দেশে অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ তৈরি হলে দেশের সকল সুবিধাভোগীরই সুবিধা হবার কথা। দেশের মানুষ ১/১১ র পরে যে সময় পার করেছে তার একমাত্র পরিপূর্ণ প্রাপ্তি হয়েছে গণতন্ত্রে ফিরে আসায়।

কিন্তু গফরগাঁওয়ের একের পর এক ঘটনাপ্রবাহ কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের জন্যই সুখকর নয়। তার ক্ষমতার লাগাম টেনে না ধরলে বর্তমান সরকারকেই মূল্য দিতে হবে। এ নব্য গড ফাদার বোধ করি কোনো অতীতের প্রতিই নজর দেবার সময় আর স্মৃতিচারণের সময়টুকুও পান না। তার জন্য আফসোস। দুই. ৩ মে আমাদের দিন।

মানে ফোর্থ স্টেটের দিন। সংবাদ শ্রমিকদেরও দিন। শ্রমিক হিসেবে একটু নিজের অবস্থানগত ফিরিস্তি দেবার চেষ্টা করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সাংবাদিক পরিচয় দিতে খুবই লজ্জা পাই। লজ্জা পাবার অনেকগুলো কারণও আছে।

সব কারণও হয়তো পাঠকের সাথে শেয়ার করতেও লজ্জা লাগবে, তারও নিযুত কারণ আছে বৈকি। প্রিয় পাঠক, এত লজ্জার কথা বলছি বলে আপনি আবার অতি লজ্জাবতী ভাববেন না যেন। যত লজ্জাই থাকুক- নাচতে নেমে ঘোমটা টেনে আরেক উপহাসের পাত্র হওয়ার সুযোগটা দিচ্ছিনা। তিন. রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বিবেচিত এ স্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংবাদ শ্রকিদের প্রতি মিডিয়া মোগলদের যে বৈষম্যমূলক আচরণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং ছলচাতুরি করে যে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তার দায় কে নেবে? শুধুকি রাষ্ট্র কিংবা ক্ষমতাধর ব্যাক্তি অথবা সন্ত্রাসী গডফাদারাই নিগৃহিত করে সংবাদ শ্রকিদের? আমার তা মনে হয় না। খোদ যাদের জন্য আমরা জীবনবাজী রেখে কাজ করি, সংবাদের পেছনের সংবাদ বের করে আনি তারা কি আমাদের যথাযোগ্য সম্মান আর শ্রমের মূল্যটুকু দেয়? নানা কৌশলে আমাদের প্রতি তাদের বৈষম্যসমূহ অত্যাচারের সত্য গল্পটাকে আরো বেশি দীর্ঘায়িত করেছে।

একদিকে তথাকথিত শহুরে বনেদি! সাংবাদিকদের দৌরাত্ম অন্যদিকে কেন্দ্রে বসা সবজান্তা শমশেরদের মহাপান্ডিত্য আমাদের মত সংবাদ শ্রমিকদের জন্য খুবই বিব্রতকর। আবার তাদের কিন্তু আমাদের স্বার্থ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তার সুযোগ নেই। এমনিতে ছড়ি ঘোরানোতে ওস্তাদ। হুকুমতেরও কমতি নেই। চার. মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সাংবদিক না হয়ে সংবাদ হতে।

একবার ভেবেছিলাম স্থানীয় একটি জুট মিলে শ্রমিকের কাজটাই নেব। নিয়ে গাঁটের পয়সা খরচ করে হলেও আট/দশটা সংবাদপত্রের প্রতিনিধি দু-চার জন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের ডেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানান দিতাম একজন সংবাদ শ্রমিক কতটা কষ্টে থাকলে জুট মিলে শ্রমিকের কাজ নেয়। এতে যদি আমাদের মিডিয়া মোগলদের টনক নড়ে। যদিও তথাকথিত চাকরিটা খোয়ানোর জোগাড় হবে বৈকি। তবে গত চার বছর যতবার এ প্রতিষ্ঠানের নাম উচ্চারণ করেছি, যা পরিশ্রম করেছি এ পরিশ্রম ও নামযপ যদি ধর্মকে দিতাম তাহলে আর যাই হোক অন্তত পীর খেতাব কিংবা অনেক বড় আল্লাহওয়ালা হতাম।

পাঁচ. লেখাটির শুরুতে বলেছিলাম সাংবাদিক পরিচয় দিতে লজ্জা পাই। লজ্জা পাই এ জন্য যে, সৎ সাংবাদিকতা করে পেটের রাক্ষসগুলোকে দমাতে পারিনা। লজ্জা পাই এ জন্য যে, তিলাওয়াতি সংবাদ লিখতে পারিনা। লজ্জা পাই এ জন্য যে, অন্য অনেকের মত আমার পোষাকি ঠশক নেই। লজ্জা পাবার আরো অনেক কারণ আছে।

পাঠক নিশ্চয়ই বাকিগুলো বুঝতে পেরেছেন। এতসব নেতিবাচকতার ভেতরে আমাদের দমানোর যন্ত্র রাষ্ট্র, ক্ষমতাধর ব্যাক্তি ও মালিক পক্ষের রোলারটি ’পোলার’ হয়ে ধরা দেবেনা নিশ্চয়ই। তবুও জয় হোক সাংবাদিকতার। জয় হোক মানবিকতার। জয় হোক সহনশীলতার।

চেতনা ফিরে আসুক ক্ষমতাধরদের সংবাদ শ্রমিকদের কল্যাণে। সম্মানের সঙ্গে সৎভাবে বাঁচার সুযোগটুকু প্রসারিত হবে এমনটাই আমাদের আশার বৈতরণী। ভাসুকনা চৈতি হাওয়ায় খন্ড খন্ড স্বপ্নগুলো। জামাল হোসেন বিষাদ একজন কবি ও সংবাদ শ্রমিক।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.