আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টাঙ্গুয়ার হাওর: আনসার পুলিশের প্রতি ক্ষুব্দ হয়ে ওঠছে হাওরবাসী

দাগ খতিয়ান নাইতো আমার/ঘুরি আতাইর পাতাইর...

সুনামগঞ্জের রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের কয়েকটি গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। মাছধরা নিয়ে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের নৌকায় হামলার জের ধরে ভয়ে জেলেরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর এই সুযোগে কর্তব্যরত আনসার-পুলিশরা একটি নির্দিষ্ট জেলে গোষ্ঠিদের দিয়ে মাছ ধরে অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা কামাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ-আনসাররা জেলেদের খোজে বিভন্ন গ্রামে চিরুনি অভিযান চালিয়ে তাদের পরিবার ও নীরিহ গ্রামবাসীকে হয়রানি করছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। এদিকে হামলাকারীদের খোজার নামে হাওরপাড়ের নীরিহ লোকজনকে লাঞ্চিত করায় ুব্দ হয়ে উঠছেন হাওরপাড়ের লোকজন।

যে কোন মুহুর্তে আরো বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। গত ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার টাঙ্গুয়ার হাওরের মরা পাটলাই নদীতে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু নাসের বেগসহ তার সঙ্গীদের আক্রমণ করে কতিপয় বিুব্দ জেলে। স্থানীয় লোকজন জানান, আনসার-পুলিশদের পরো সহায়তায়ই ম্যাজিস্ট্রট ও তার মাঝির উপর হামলা করা হয়েছে। এখন এর জের ধরে আনসার পুলিশরাই পছন্দের জেলেদের দিয়ে ফায়দা লুটতে গণহারে সব জেলে পরিবারের উপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন শুরু করেছে। জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ টাঙ্গুয়ার হাওর ২০০১ সাল থেকে জেলা প্রশাসনের রণাবেণে ম্যাজিস্ট্রেটটের নেতৃত্বে আনসার-পুলিশ পাহারা দিচ্ছে।

রামসার নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে প্রশাসন রণাবেণে নিয়োজিত হলেও শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ রয়েছে আনসার পুলিশ মাছ না মারার জন্য পাহারা দিলেও প্রত্যভাবে টাকা নিয়ে তারা জেলেদেরকে মাছ ধরতে উদ্ভুদ্ধ করে। এমনকি এর ভাগবাটটোয়ারা জেলা প্রশসানের কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হয়। যার ফলে টাঙ্গুয়ায় দায়িত্ব নিয়ে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসাররা মুখিয়ে থাকে এখানে ডিউটি নিতে। বর্তমানে গোলাবাড়ি, রামসিংহপুর, হাতিরঘাটা ও রংচি ক্যাম্প থেকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৬০ জন আনসার পুলিশ পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে।

প্রতিটি ক্যম্প থেকে প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ টাকা আদায় করে আনসার-পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যেকটি ক্যম্পকেই জেলেরা নৌকা ও জালপ্রতি প্রতি ৩শ ও ১হাজার টাকা করে প্রতি সপ্তাহে টাকা দিয়ে থাকেন। যখন নিয়মিত টাকা পেতে বিলম্ব হয় তখননই নাটক শুরু করে আনসার-পুলিশ। শুরু করে জেলেদের ধরপাকড় নির্যাতন। যারা টাকা দেয়না তাদের নৌকা, জাল পুড়ানোসহ তাদের উপর শারিরিক নির্যাতন শুরু করে তারা।

সুষ্ঠু রণাবেণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট হাওরে অবস্থান করার কথা থাকলেও টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্পের রেস্ট হাউজে থাকায় তার চোখে ধরা পড়েনা নিয়মিত মাছ ধরার দৃশ্য। যখন ম্যৗজিস্ট্রিট তদারকিতে বের হন তখনই আনসার-পুলিশ মোবাইলে মৎস্যজীবিদের সতর্ক করে দেয়। এভাবেই আনসার-পুলিশের মদদে দিনরাত প্রকাশ্যে মাছধরা হয়। এসব মাছ ধরে প্রকাশ্যেই মন্দিয়াতা, ছিলাইন তাহিরপুর, জয়পুর, ইন্দ্রপুর. বিনোদপুর, লামাগাও, বাঙ্গালভিটা, রংচিগ্রাম, সুলেমানপুর, শ্রীপুর, কলাগাওসহ হাওরপাড়ের বিভিন্ন বাজার পাইকারী বিক্রি হচ্ছে টাঙ্গুয়ার মাছ। শ্রীপুর বাজারের ব্যবসায়ী হারিছ মিয়া জানান, ঘুষখোরা আনসার-পুলিশরা টাকা দিয়ে মাছ ধরতে দেয়।

আবার এখন নিজেরাই নাটক সাজিয়ে নির্বিচারে নীরিহ জেলেসহ এলাকাবাসীদের উপর নির্যাতন করছে। পান ব্যবসায়ী নেকবর আলী জানান, পুলিশ আনসার হাওরপাড়ের মানুষের ঘুম হারাম করিয়ে দিয়েছে। তাদের অত্যাচারে নারীপুরষরাও তটস্থ। হামলাকারীদের খোজে বিভিন্নগ্রামে অভিযান চালানোয় বাচ্ছাদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটছে বলে তিনি জানান। শ্রীপুর বাজারের ডাক্তার শামসুজ্জামান জানান, হাওরপাড়ের মানুষের ভাগ্যবদলের কথা বলে রামসার নীতি বাস্তবায়ন শুরু হলেও এখন নির্যাতনের মাত্রায় তারা অতীষ্ট হয়ে উঠেছে।

তারা অনেকেই ঐতিহ্যবাহী এই পেশা না পারছে চালাতে না পারছে ছেড়ে দিতে। ভয়ঙ্কর নির্যাতনের মুখে তারা অনেকেই এখন পেশা বদলের কথা চিন্তা করছে। তিনি প্রশ্ন তুলেন, রামসার নীতিতে পুলিশ আনসার সহায়তায় কি মাছ মারার নিয়মের কথা রয়েছে তা জানতে চাই আমরা। এদিকে ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলার ঘটনা আনসার পুলিশের সাজানো বলে মৎস্যজীবি ও হাওরপাড়ের লোকজন মনে করেন। তারা বলেন, প্রতিনিয়ত আনসার পুলিশ ব্যষ্ঠিত হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালনে গেলেও ওইদিন কেন তাদের ছাড়াই ডিউটিতে যান তা খতিয়ে দেখা উচিত।

কারণ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির উপর হামলা কোনমতেই কাম্য নয়। আর তার প্রতি জেলরাও ুব্দ নয়। গত মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় এমদাদুল, কামরুল, রুহুল আমীন, মোয়াজ্জেম হোসেন ও আলীম উদ্দিনকে আসামী করে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আলীম উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের মানুষ অসহায় ।

তাদের ঘরে ভাত থাকেনা। যুগযুগ ধরে তারা হাওরে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তাদের জীবিকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করায় তারা অসহায় ও অনেকে ুব্দ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, বড় ধরনের ঘটনা ঘটার আগেই কর্তৃপরে এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবা উচিত। তিনি বলেন, প্রথমে এই ঘটনার জের ধরে আনসার-পুলিশ খুব আক্রমণাতœক ছিল।

কিন্তু এখন সব স্বাভাবিক হয়ে আসছে। হাওর গভেষক পাভেল পার্থ জানান, টাঙ্গুয়ার হাওরের এই ব্যবস্থাপনার বিপে শুরু থেকেই মৎস্যজীবিরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে আসছে। কিন্তু প্রশাসন এই বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে রণাবেণের কাজ করছে। মৎস্যজীবিদের জীবিকার উপর আঘাত হানছে প্রতিনিয়ত। তিনি বলেন, জনগণের সম্পদ জনগণই ভালো সংরক।

সেখানে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাছে বন্দুক দিয়ে তা কোন দিন সংরণ করা যাবেনা। বরং হিতে বিপরিত হতে পারে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহির উদ্দিন জানান, পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আসামী ব্যতিত নীরিহ লোকদেরকে হয়রানি না করার জন্য। এরকম কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.