আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লোডশেডিং আর এক ভয়ন্কর জোৎস্না!

আসেন দুর্নীতি করি। আর এই দুনিয়াটাকেই খুচাই!

মাঝরাতে কারেন্ট যায়। ঘুম ভেঙ্গে গেলে মনে হয় আজকের রাতেও মজার ঘুমটা পুরো হলো না। অফিসে শিওর ঝিমোতে হবে। জানালা খুলে বসে বসে অন্ধকারে আকাশ দেখি।

পাশের বিল্ডিং এও দেখি একজন সিগারেট ধরিয়ে আকাশ দেখছে। আমি হাক দিলাম," কয়ডায় বাত্তী গেলো?" - দেখি নাই, উইঠা দেখি সব বন্ধ, গরমে মনে হইলো দোজখ শুরু হইয়া গেছে! -আর দোজখ, বাজারে দোজখ, বাসে দোজখ, অফিসে দোজখ, সব জায়গায় দেখি দোজখ আর দোজখ আর টিভি খুললে তো দোজখের হুর পরীগো ভাষন -ঠিকই কইছেন। তাও ভালো আছেন পানি আছে। সকালে এখনও ডরে থাকি টাট্টি কড়তে বইসা টেপ ছাড়লে পানি পড়বো তো, না পড়লো ঐ অবস্হায় অফিস যাইতে হইবো। আমি হাইসা দিলাম।

এমন সময় পাশের বিল্ডিং এর তিন তলার জানাল থেকে আরেক ভদ্র লোক," আরে ভাই আর কইয়েন না, এমুন দিনই বদলাইছে অহন তো দেখি কারেন্ট যায় না, মাঝে মাঝে ভুলে চুকে আইসা পড়ে। " এরকম ভাবে চলতে থাকে কথার মিছিল, মাজে মাজে ওপেনে চলে খিস্তি খেউড়। অন্যান্য বিল্ডিং অন্যান্য তলা থেকে জানালার উকি দিয়ে আড্ডায় কেউ যাগ হয়, অদ্ভুত লাগে এই ইন্টার বিল্ডিং চ্যাটিং। ইয়াহু ম্যাসেন্জ্ঞার বা স্কাইপ আলার জানতে পারলে সুবিধা হতো, এই মধ্যরাতের খিস্তি খেউড় আরো ডাইনামিক হতে পারতো। সেদিন অফিসে বসে নানা ডকুমেন্টস রেডী করতে গিয়ে হঠাৎ মোবাইলটার দিকে চোট পড়লো।

নতুন অফিসে মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখি। এখন আর সারা দেশের এজ আর ইন্টারনেট দেখতে হয় না। জাতে উঠেছি বৈকি! দেখলাম ৮ টা মিসড কল। হঠাৎ রাসেলের কথা মনে পড়লো। মনে হয় এখন ও ঘুমিয়ে অথবা কাজে যাবার জন্য রেডী হচ্ছে! ফোন দিলাম,"কিরে, কি করস?" : রেডী হইতাছি, কামে যামু।

আজকা ক্লাস নাই। : মন খারাপ ক্যান? অফলাইন ম্যাসেজে কি লেখছস? : আর কইস না। গতকাল একটা জায়গায় কাজ করলাম, বিয়া বাড়ি। মাত্র ২১ পাউন্ড। : ভালোই তো! দেশে ফিরা আয়, এর চেয়ে ভালো টাকা পাবি! : আর দেশ, দেশে থাইকাও সুখ নাই, এইখানেই সুখ নাই।

৪০০০০ টাকা দরকার, সিকিউরিটি লাইসেন্স করাইতে হইবো, ট্রেনিং নিয়া বারে কাজ করুম তখন মেলা পাউন্ড! কিন্তু এত টাকা দিবো কেডা? : সত্যি নাকি? এ্যাকাউন্ট নম্বর দে? : বাদ দে, মেলা তো লইছি, অহন আর ভালো লাগে না! : কেন? পিয়ারীর কথা মনে পড়ে? : আর পিয়ারী? এইহানে এর চেয়ে সুন্দর হাজার পিয়ারী ক্লিভেস দেখাইয়া পথে পথে ঘুরে। একটু কইয়া অফার দিলেই লিভ টুগেদার করন যায় কয়েক মাস! : তোর সেই মালয়েশিয়ানের কি খবর? : আরে ও তো আমার পাশের ফ্লাটেই থাকে। আইতে কইছিলো, আমি উল্টা কইছিলাম আমার ফ্লাটে আইতে। এহন আর এই সব ভালো লাগে না। ভাবছিলাম বোনটারে টান দিবো।

ছোট ভাইটা এই বার এইচএসসি দিবো। পাশ কইরা কই ভর্তি হইবো কে জানে! ওরেও আনার দরকার, কিন্তু এইখানকার অবস্হা খুব খারাপ। দিনের রাইতে কোম্পানী বন্ধ হয়। পাশ করলে ইন্জ্ঞিনীয়ারগো চাকরি আছে কিন্তু পাশ করার আগ পর্যন্ত আগের মতো টাকা কামানোর স্কোপ এখন নাই! : দেশে ফিরা আয়, দেশের অবস্হা এখনও খারাপ হয় নাই। হয়তো আরো ৩-৪ মাস লাগবো।

অবশ্য এইবার এই দেশে মন্দা লাগলে টানা ৫-৬ বছর থাকবো। ৯০ এর পরের ঠেলা সামলাইতে পাক্কা ৯ টা বছর লাগছে। এইবারেরটা নিদেনপক্ষে আরো ৫-৬ টা বছর লাগবো যদি সেরকম মিরাক্যাল ইনভেস্ট না আসে। টানা ২০ মিনিট কথা হলো অফিসে বসে। প্রচুর কাজ তবুও রাসেলের কথা মাঝে মাঝেই মনে পরে।

অবশ্য রাসেলর জায়গা এখন শুভ্র দখল করেছে। আমার একসময় কলিগ এখন বন্ধুর থেকেও বেশী। ও ওর দুঃখ গুলো শেয়ার করে, মাঝে মাঝে আমরা বোটানিক্যাল গার্ডেন যাই, বিভিন্ন বিষয় দেখি রাস্তা থেকে, কিছু করার স্বপ্ন দেখি, শুধু স্বপ্নই দেখা হয় আর বাস্তবে কিছু করা হয় না। ও অবশ্য আছে ম্যাংগোতে। টেলিকম নিয়ে ওর আইডিয়া অনেক, কিন্তু পুজি নাই, তাই আফসোসের শেষ নাই।

সেদিন ঢাকা ভার্সিটির ফুলার রোডের মোড়ে বসে রইলাম কিছুক্ষন। রাত তখন ৯:৩০ টা। কিছু ছেলে আসলো ঢোল তবলা নিয়ে, মনে হয় বাংলা একাডেমীর বৈশাখ মেলা থেকে ফিরছে। বেশ আয়োজন করেই বসলো, আশোপাশের কিছু সাগরেদ জুটে গেলো। শুরু হলো লালনের গান।

একে তো জোৎস্না রাত তারপর এরকম লালনের গান। চারিদিকের পরিবেশে কেমন যেনো বিষাদের চাদরে নস্টালজিক স্মৃতিগুলো গড়া গাড়ি খেতে লাগলো। আমি যার চোখেই তাকাই সবাই যেনো সম্মহিত। আমি ভাবলাম কি হলো এখন, সবাই এমন কেনো ঠায় দাড়িয়ে? এত গুলো লোক এক সাথে মন্ত্রমুগ্ধ হতে আমি কখনোই দেখিনি। জোৎস্নার আলো আরো প্রকট হচ্ছে, আশেপাশের মন্ত্রমুগ্ধের লোকের সংখ্যা বাড়ছে।

মনে সবাই অপেক্ষায় কোনো আদেশের জন্য। কেউ খাকি পোশাকে, কেউ লুঙ্গী পড়ে ভবঘুরে, কেউবা চড়ালিপস্টিকের পতিতা। শুধু আমি চেস্টা করছি এই জাদুর মায়া থেকে পালাতে। আমাকে যে পালাতেই হবে, এই ভয়ন্কর জোৎস্না আমার নয়!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।