আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনি কি ই-মেইল আসক্ত?

মহলদার
মেইলটা পেয়েছিলাম আমার অফিস হেডকোয়ার্টার(মলয়েশিয়া) থেকে। ভাল লেগেছে বিষয়টা তাই সবার সাথে শেয়ার করলাম। হুবুহু না লিখে একটু এদিক ওদিক করে তুলে দিলাম । ১৯৯০ সালে জন্ম হওয়ার পর থেকে ইমেইল নিঃসন্দেহে মানুষকে সুবিধাদি দিয়ে আসছে বিস্তর । গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, অনুরোধ, উত্তর প্রভৃতি আমাদের ইনবক্সে জমা হয়ে থাকে দলিল হিসাবে।

আপনার ব্যবসায়িক কিংবা দূর, সুদূর প্রবাসে থাকা বন্ধু-বান্ধব কিংবা পরিবারের সাথে খুব সহজে, দ্রুত এবং কম খরচে যোগাযোগ করার মাধ্যম এটি। এখন কে আর টেলিফোনের রিসিভার টা তুলে কথা বলে কিংবা পাশের রুমের সহকর্মীর কাছে হেঁটে গিয়ে আলাপ করে যদি না তার অফিসে আগুন লাগে? জন্মের ২০ বছরের ও কম সময়ের মধ্যে ই-মেইল এবং ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং(আই.এম) ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু আমাদের এই অতি ই-মেইল নির্ভরতা কে আজ অনেকেই মনে করছে ক্ষতির কারণ হিসেবে। নিচের বৈশিষ্ট গুলো পড়ে দেখুন তো আপনি ই-মেইল আসক্ত কি না? ই-মেইল চেক না করে ১৫ মিনিটের বেশী কোন কাজ মনোযোগের সাথে করা আপনার কাছে কি কঠিন মনে হয়? মাত্র কয়েক ঘন্টা যদি আপনি ইমেইল চেক করতে না পারেন তাহলে কি আপনি ভীত হয়ে পড়েন? (সর্বনাশ কি না জানি কি হয়ে গেল, ভেবে?) অফিসে মধ্যাহ্ন বিরতির পর ফিরে যদি কোন মেইল না পান তাহলে কি আপনি একাকিত্ব বোধ করেন?(কেউ একটু মনে করে না আমাকে, ভেবে?) প্রতিদিন সকালে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অন্ততঃ একবার ইনবক্সটা চেক করেন? কেন এটা ক্ষতিকর? গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে ই-মেইলের প্রতি এই সময়ের অপচয় আসলে মানুষকে তার কর্মদক্ষতা/উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয়। একইভাবে রাত জেগে এর পেছনে সময় নষ্ট (ওয়াইফাই স্পট খুঁজে বেড়ানো) কিংবা অবসর সময়ে এটা আপনার পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধবের সাথে একটু রিলাক্স করা থেকে বিরত রাখে আপনাকে।

মোকাবেলা করবেন যেভাবে এই ব্লগ পড়তে পড়তে যদি আপনার মনে হয় ইনবক্সটা এখনই একবার দেখা দরকার, থামুন, আপনার এই আসক্তিটা থামাতে এই চারটি টিপ্স পড়ে নিন। ১. তৈরি করুন ভার্চুয়াল কারফিউঃ কাজের সময়টার বাইরে আপনার এবং আপনার প্রিয়জনদের উপর ই-মেইলের ক্ষতিকর প্রভাবটা কমিয়ে আনা দরকার আপনার। ইনবক্স নিয়ে পড়ে না থেকে তারা চায় অন্ততঃ আপনি তাদের সাথে একটু সময় দিন। কাজ থেকে (অফিস থেকে) ফেরার পর সত্যিই যদি এটার পেছনে আপনার একঘন্টা সময় দেওয়া প্রয়োজন হয় তবে দিন। কিন্তু এর ঠিক পর পরই বন্ধ করে ফেলুন আপনার কম্পিউটার।

বিশ্রাম নিন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আর অন লাইন্ড হবেন না যেন। এমনকি সপ্তাহে অন্ততঃ একটি ই-মেইল ফ্রি দিন কাটান। ২. কথা বেশী, টাইপ কমঃ অধিকাংশ সময় আমরা এমন মেইল পাঠাই যা মেইল গ্রহীতার কাছে উত্তরের চেয়ে বরং বেশী প্রশ্নের জন্ম দেয়। কাজেই এই দূর্বোধ্য মেইল না পাঠিয়ে বরং একটু ফোন করে আপনি আপনার সময় বাঁচান।

৩. চিঠি লিখুনঃ অনেকদিন হয়ত চিঠি লেখেন না। আপনার আঙ্গুলগুলো হয়তবা ভুলে গেছে কিভাবে কলম দিয়ে লিখতে হয়। মাঝে মাঝে চিঠি লিখুন এবং উপভোগ করুন চিঠি লেখার মজা। চিঠি পাওয়ার মজাই কিন্তু আলাদা। বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদেরকেও এই বিষয়টায় উদ্বুদ্ধ করতে পারেন, অন লাইনের বাইরে জীবনে আরো কিছু আছে।

৪. ঘুরে আসুন কোথাওঃ ছুটির দিনে সাথে ল্যাপটপ না নিয়েই বেরিয়ে পড়–ন কোথাও। ই-মেইলের কথা ভুলে যান। ফেরার পর আশ্চর্য হয়ে যাবেন আপনি, দেখবেন আপনাকে ছাড়াও পৃথিবী চলে! পরিশেষেঃ ইনবক্স নামক এই ছোট্ট জিনিষটি আপনার সময় অপচয়ের একটা বড় কারণ হতে পারে। আরো বেশী কর্মক্ষম/উৎপাদনশীল, এবং জীবনটাকে উপভোগ্য করার জন্য আপনার ঐ ইনবক্সের বাইরে অন্য কিছু নিয়ে ভাবুন। এতক্ষণ যে বিষয়টি আলোচনা হলো তা হয়ত আমাদের জনবহুল এই দেশের সীমিতসংখ্যক লোকজনের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।

তবে আমার মনে হয় এই ই-মেইল শব্দটির স্থলে ব্লগিং বললে তা সামুর কিছু ব্লগারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে। তখন প্রশ্নটি হবে এরকম, আপনি কি (সামু) ব্লগ আসক্ত? কারণ কিছু ব্লগারকে দেখি তারা বোধ হয় ২৪ ঘন্টাই লগডইন থাকেন। যাক, যা বলছিলাম, কেউ যদি প্রশ্ন তোলেন তাহলে এই বাস্তবতা বিবর্জিত ব্লগ কেন? উত্তরটা তো সবার জানা, বাংলাদেশ তো ডিজিটাল হতে চলছে। কোন এক রাজনীতিবিদ নাকি বলেছেন, বাংলাদেশের কৃষকের কাধেঁ থাকবে লাঙ্গল আর হাতে থাকবে ল্যাপটপ। কিন্তু এই কৃষককুল যদি উৎপাদনশীল কাজ বাদ দিয়ে মাঠে যেয়ে চ্যাটিং করে, ব্লগিং করে আর মেইল চালাচালি করে সময় নষ্ট করে তাহলে কি হবে এই দেশের অবস্থা একবার ভেবেছেন?
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.