আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্যাগসাংহানের ঝরনা ও পাহাড়ি ক্ষরস্রোতা নদীতে নৌকা !



গত বছর কাজের প্রয়োজনে গেছিলাম ফিলিপাইনের রাজধানি ম্যানিলা শহরে, বরাবরের মত কাজের শেষে এবারেও আমি নিয়ে নিয়েছি কয়েকদিনের ছুটি, ইচ্ছা ১, ২ টা দিন একটু ঘুরে দেখা। আগ্রহের কথা জানাতে হোটেল এর ট্রাভেল ডেস্ক জানালো একদিনে ঘুরে আসা যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এমন ২ টা জায়গা আছে কাছাকাছি। তাগাতাই এর মৃত আগ্নেয়গিরি পাহাড় "তাল", তার ভিতরে লেক, লেকের মাঝখানে আবার একটা পাহাড় আর প্যাগসাংহান এর ফলস। আগ্নেয়গিরির ট্রিপ টা তে কষ্ট বেশি তাই সহকর্মিরা যেতে চাইলো না, আমিও খুব একটা উৎসাহি না কারন আবহাওয়া খারাপ থাকলে নাকি পাহাড়ে উঠা নিষেধ থাকে টুরিস্ট দের জন্য, এদিকে বাইরে মাঝে মাঝে বৃস্টি হচ্ছে। সবাই ঠিক করলাম প্যাগসাংহান যাবো।

আমার বদ-অভ্যাস মতো আমি ট্রাভেল কম্পানির কাছ থেকে কয়েকদিনে চিপে চিপে মোটামুটি সব তথ্য নিয়ে, নেট এ ঘাটাঘাটি করে, উইকিট্রাভেল ভাজা ভাজা করে প্ল্যান করে ফেললাম কিভাবে নিজেরা নিজেরা কম খরচে ওখানে যাওয়া যায়। ফিলিপাইন অফিসের সুন্দরি সহকর্মির সাহায্যে একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে ফেললাম সারাদিনের জন্য। চলুন ঘুরে আসি: জীপনি: প্যাগসাংহান জল প্রপাত এবং এর থেকে সৃষ্ট খরস্রোতা নদী ফিলিপাইনের কয়েকটি নামকরা পর্যটন যায়গার একটি। ম্যানিলা থেকে ২/৩ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে লুজোন শহরে যেতে হবে বাসে অথবা গাড়ি নিয়ে। বাসে গেলে লুজোন থেকে জীপনি (চান্দের গাড়ি টাইপ) নিয়ে বোট ষ্টেশনে যেতে হবে।

এখান থেকে প্যাগসাংহান নদীর পাহাড় ছেড়ে সমতল এ যাত্রা শুরু হয়েছে। বোট ষ্টেশনে আমরা ৪ জন কাপড় চেন্জ করে স্যান্ডেল আর হালকা কাপড় পড়ে গায়ে লাইফ জ্যাকেট বেঁধে ২ টা ক্যানু নিয়ে রওনা দিলাম। যারা ক্যানু কি ভাবছেন তাদের জন্য, ক্যানু একধরনের লম্বা নৌকা, অনেকটা আমাদের দেশের তাল গাছ খুদে যে নৌকা গুলো তৈরী হয় তেমন দেখতে। একেকটা ক্যানুতে সামনে পেছনে ২ জন মাঝি ও মাঝে আমরা ২ জন যাত্রি। সামনে থেকে ইন্জিন নৌকা টেনে নিয়ে চলেছে আমাদের ক্যানু, নেভিগেটর ক্যামেরা দেখে পোজ দিচ্ছে: প্রথমে কিছুক্ষন ইন্জিন নৌকা দিয়ে আমাদের ক্যানুকে টেনে পাহাড়ের নিচে নিয়ে যাওয়া হলো, তারপর মাঝিরা শুরু করলো স্রোতের বিপরীতে বৈঠা মেরে, কখনো বা টেনে টেনে আস্তে আস্তে উপরে উঠা।

স্রোতের বিপরীতে টেনে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ক্যানু: মনে পড়ে যায় বান্দরবনের ঝিরিগুলোর কথা। দুই পাসে উঠে গেছে ৩০০ ফিট পাহাড়, বন জঙ্গলে ভর্তি, বানরের দল চিল্লাচিল্লি করছে অন্ধকারে। যায়গায় যায়গায় দুইপাসে পাহাড় চেপে এসেছে, মনে হচ্ছে গায়ে লেগে যাবে আরেকটু হলেই। দুই পাসে উঠে গেছে জঙ্গলে ভর্তি পাহাড়: পথে পড়ে অনেকগুলি ছোট ছোট ঝরনা ও শান্ত পানির পুল। প্রথম ছোট ঝরনা দেখে মন খারাপ হয়ে গেছিল, ভাবছিলাম এই দেখতে এতো দুর এলাম? পরে দেখি না আমরা থামছি না, পার হয়ে চলে এলাম।

ছোট ঝরনা ও শান্ত পানির পুল: প্রায় ১ ঘন্টা উঠার পর আমরা পৌছালাম বড় ঝরনা বা প্রপাতের কাছে। বিশাল পানির ধারা নেমে এসেছে পাহাড় থেকে, অনেকটা বর্ষা কালের মাধবকুন্ডের মতো, কিন্তু আরো বিশাল। শব্দে কানে তালা লেগে যায়। পানির পিছনে আছে একটা লুকানো গুহা। বাশের ভেলা আছে প্রপাতের ভেতরে যাওয়ার জন্য, আমি আর আমার ভারতীয় কলিগ লাফাতে লাগলাম যাওয়ার জন্য ভেতরে, সঙ্গের মহিলা কলিগ ২ জন মনে হয় বেশ ভয় পাচ্ছিলো, তাদের হাতে ক্যামেরা আর মানিব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে টিকিট কেটে উঠে বসলাম একটা ভেলায়।

ভেলার মাঝিরা দড়ি টেনে টেনে আগিয়ে নিয়ে চলেছে ভেলা, প্রচন্ড স্রোত, পানি টগবগ করে যেনো ফুটছে। আমি উঠে দাড়িয়ে দড়ি টানতে যেয়ে বিজাতীয় ভাসায় খেলাম রাম ধমক, কিছু বুজলাম না কিন্তু বুজলাম বসতে হবে আমাকে। মনে মনে দোয়া করছি যেনো আমার ভিতু কলিগ রা বুদ্ধি করে ছবি তুলে, শেষ সময় দেখেছিলাম তারা নিজেরা ভেজা মেকাপ ঠিক করতে ব্যাস্ত, ক্যামেরাটাও অটো মোডে দিয়ে এসেছি বুদ্ধি করে। ভেলায় যাত্রা শুরু: প্রপাতের ভেতরে ঢুকার আগের মুহুর্ত: গুহা থেকে ভিজে চুপচুপা হয়ে বের হয়ে আসছি: গুহার মধ্যে এক অপার্থিব পরিবেশ পেলাম, হালকা নীলচে আলো পানি ভেদ করে আসছে, বাইরের কনো শব্দ নাই, শুধু মাত্র পানির গুম গুম শব্দ হচ্ছে। সাথে ক্যামেরা না থাকায় ছবি তুলতে পারি নি, আগে বুঝলে পলিথিনে মুরায়ে নিয়ে আসতাম সিওর।

খুশিতে বাকবাকুম আমি: আমরা ভেবেছিলাম আনন্দের এখানেই শেষ, কিন্তু আমাদের জন্য আপেক্ষা করছিলো আরো ব্ড় চমক। আসার সময় তো টেনে টেনে আস্তে আস্তে নিয়ে এসেছে আমাদের, এইবার নামার সময় ঝড়ের বেগে নামতে লাগলাম আমরা পাথরের চিপা দিয়ে। গায়ের ভেজা লোম ও দাড়ায়ে গেলো একেকজনের। জায়গায় জায়গায় বৈঠা দিয়ে স্পিড কমাতে হচ্ছে সামনের মাঝির। পরে জানলাম এটাকে বলে "রেপিড শুট" এবং এটাই নাকি এই ট্রিপ এর মুল আকর্ষন।

রেপিড শুট: মাঝপথে যাত্রা বিরতি, মাঝিরা স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে পরিশ্রান্ত। পাথরের উপরে ঝাপড়া টাইপের রেস্টুরেন্ট, খাওয়া হচ্ছে টাটকা মাছ (ঐ খান থেকেই ধরা) এর বারবিকিউ সাথে কোক। মাছ খেয়ে মানিব্যাগ হালকা করে আবার রওনা দিলাম, মেজাজ খারাপ মাঝিদের খাওয়ার বিল দিয়ে, এটাই নাকি নিয়ম। একে তো অনেক দাম তারউপর খেয়েছেও মনে হচ্ছে শখ মিটিয়ে। ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম বোট স্টেশনে।

সবাই কাপড় পালটে রওয়ানা দিলাম ফেরার পথে। গত দিন শেষ হয়েছে অফিসের প্রোগ্রাম, ভালো হোটেল সকাল বেলা ছেড়ে দিয়ে বের হয়েছি। ম্যানিলা ফিরে শুরু করলাম শস্তা হোটেল খোজা, মাইক্রোবাস ওয়ালা আমাদের নামিয়ে দিয়েছে আলোকজ্জল এক গলির ভিতরে। বেশ রাত হয়েছে, অচেনা শহর। আসে পাসে অনেক ছোট হোটেল লাল নীল নিয়ন লাগানো।

একটাতে ঢুকে আক্কেল গুরুম, রিসিপশনে ক্যাটালগ ধরিয়ে দিল, অদ্ভুত সব বিছানার শেপ, সংগে আরো অনেক চমকপ্রদ সুজোগ সুবিধা !! সঙ্গে মেয়ে কলিগরা না থাকলে নিশ্চয় ভালো মতো দেখতাম ক্যটালগটা, হয়তো বা রুম গুলোও দেখতাম। যাই হোক লাল গলির সে গল্প নাহয় আরেকদিন বলি.............. এই ট্রিপের আরো ছবি দেখতে দেখুন আমার ফেসবুক পাবলিক এলবাম অন প্যাগসাংহান ফলস প্যাগসাংহান ফলস

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.