আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পারমাণবিক যন্ত্রণা!

১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে মহা-লজ্জার একটি দিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে ৬ আগস্ট বেলা আড়াইটায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী বিশ্ব মানবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে। মুহূর্তের মধ্যে চমৎকার ঝকঝকে শহরটি পরিণত হয় মৃত্যুকূপে। লিটল বয় নামক বোমাটির ওজন ছিল ৬০ কেজি।

নিজস্ব গন্তব্যে পেঁৗছতে এটি সময় নেয় ৫৭ সেকেন্ড। এই সময়ে এটি অতিক্রম করে ৬০০ মিটার দূরত্ব। এ বিস্ফোরণটি ঘটে ১৩ কিলোটন (ঃহঃ)-এর সমান এবং সে সময় তাপমাত্রা হয়েছিল ৩৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বিস্ফোরণের পর ১ মাইল ব্যাসার্ধের এলাকাজুড়ে ধ্বংসলীলা শুরু হয় এবং হিরোশিমার প্রায় ৯০ ভাগ বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ঘটনার পর ওই দিন সকাল ১১টায় হিরোশিমা শহরে দেখা গেল অসংখ্য মানুষের লাশ আর আহতদের চিৎকার।

বোমা নিক্ষেপকারী পাইলট টিবেটস বিমান থেকে শহরের ভয়াবহ ধ্বংসের দৃশ্য দেখে ভয়ে-আতঙ্কে চিৎকার করে বলে উঠেছিলেন, হায় ঈশ্বর এ কি করলাম!

হিরোশিমার ভয়াবহতার কারণ বুঝে ওঠার আগেই এর ঠিক তিনদিন পর জাপানেরই নাগাসাকি শহরে দ্বিতীয় বোমা 'ফ্যাট ম্যান'-এর বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই কলঙ্কজনক ঘটনার নেপথ্যে ছিল অস্ত্রের উন্নয়নে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের প্রত্যাশায় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নির্লজ্জ অমানবিক প্রতিযোগিতা। আণবিক অস্ত্রের জন্ম হয়েছিল এই ভীতি থেকে যে, হিটলারের জার্মানি একচেটিয়া অধিকারী হয়ে গোটা বিশ্বে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণ হয় যে, জার্মানিতে এ ধরনের বোমা তৈরিতে শুধুমাত্র একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া ছাড়া কোনো কার্যকর উদ্যোগ আদতেই নেওয়া হয়নি। কিন্তু এর আগেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।

তারও আগে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী হিসেবে বসবাস করা হাঙ্গেরির বিজ্ঞানী ড. লিও জিলার্ড সর্বপ্রথম বোমা তৈরির উদ্যোগ নেন। এ বোমার মানবতাবিরোধী ভয়ঙ্কর ভয়াবহতার কথা বিবেচনা না করেই বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সমর্থন জোগান জিলার্ডকে। এরা দুজন যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানকে এ বোমার কার্যকারিতা উল্লেখ করে জানান, তখনো বিষয়টি প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানের কাছে গুরুত্ব পায়নি বিশেষভাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই অস্ত্রকেই বেছে নিলেন তারা। আর মানবতা হার মানল সেই পৈশাচিক বর্বরতার কাছে।

১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে আনুমানিক প্রায় ১৪০,০০০ লোক মারা যান। নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ লোক মারা যান। শুধু তাই নয় পরবর্তী সময়ে দুই শহরে বোমার পাশর্্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন। জাপানের আসাহি শিমবুন-এর করা হিসাব অনুযায়ী বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের ওপর হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য গণনায় ধরে হিরোশিমায় ২৩৭,০০০ এবং নাগাসাকিতে ১৩৫,০০০ লোকের মৃত্যু ঘটে। দুই শহরেই মৃত্যুবরণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক লোকজন।

নাগাসাকি আক্রমণের ৬ দিন পর ১৫ আগস্ট মিত্রবাহিনীর কাছে আত্দসমর্পনণ করতে বাধ্য হয় জাপান।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.