আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয়জনের খোঁজে ব্যাকুল শিশুরা

সাভারের অধরচন্দ্র স্কুল মাঠে কোনো অ্যাম্বুলেন্স এলেই আরও অনেক লোকের সঙ্গে রুদ্ধশ্বাসে ছুটে যাচ্ছিল আট বছরের আবদুর রহিম। চার দিন ধরে বড় বোন লিজা আক্তারকে খুঁজছে সে। লাশের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠা বাতাসের মধ্যে বোনের ছবি হাতে রহিম ছোটাছুটি করছে রানা প্লাজা থেকে অধরচন্দ্র স্কুলের মধ্যে। কিন্তু বোনের কোনো খোঁজ নেই।
গতকাল রোববার সকালে অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে কথা হয় রহিমের সঙ্গে।

স্বজনেরা জানায়, বড় বোন লিজা রহিমের কাছে মায়ের মতোই। তিনিই ছিলেন পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। ২৪ এপ্রিল সকালে লিজা কাজে যাওয়ার আগে অনেক তাড়ার মধ্যেও ভাইটিকে ভাত খাওয়াতে বসেছিলেন।
রহিম কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আপায় আমারে মারছিল, আমি খাইতে চাই নাই। আমিও বাইর হইয়া গেছি গা।

এক ঘণ্টা পর আইসা শুনি...। ’ কথা শেষ করতে পারে না সে। বুক ফেটে আসা কান্না ঠেকাতে এক আত্মীয়র বুকে মুখ লুকায়।
বাবা মো. রফিককে ব্যাকুল হয়ে খুঁজছে সাত বছরের শিশু আবদুল্লাহ। মা পান্না বেগম ছেলেকে নিয়ে বুধবার থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এমাথা-ওমাথা ছোটাছুটি করছেন।

আবদুল্লাহ একবার ছুঁয়ে দেখতে চায় তার বাবাকে। এখনো তো জীবিত অনেকে উদ্ধার হচ্ছে। তার বাবাও হয়তো বেঁচে আছেন।
এ মাঠেই দেখা পেলাম ছয় বছরের আরেক শিশু স্মৃতি মাহমুদীর। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী সে।

বড় ভাইটির বয়স ১৪। কাজেই বাবা মাহমুদ হাসানের বহু কাঙ্ক্ষিত আদরের মেয়ে। রানা প্লাজার তিনতলার পোশাক কারখানায় মাননিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানের ভাগ্যে কী ঘটেছে, কেউ জানে না। এখনো মৃত্যু না-বোঝা স্মৃতি জানে না কেন তাকে একবার রানা প্লাজায় আর একবার অধরচন্দ্র স্কুলে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন মা। কেন লাশের গাড়ি ঢুকলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

কেনই বা স্বজনেরা হঠাৎ করে তার আবদার মেটাতে এত ব্যস্ত। হতবিহ্বল স্মৃতি শুধু একবার মাকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘বাবা কোথায় মা, অফিসে এত কী কাজ? বাবা তো এত দেরি করে না!’
স্মৃতির মা সাফিয়া খাতুন বললেন, ২৪ এপ্রিল বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে মাহমুদ তাঁকে বলেছিলেন, ‘বিল্ডিংয়ে ফাটল ধরেছে, ভাগ্যে কী আছে কে জানে। ’ তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, এখনো নিশ্চিত করে জানার উপায় নেই।
ব্র্যাক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আরিফের হাতে তার ছোট চাচা আবদুল কাদেরের ছবিঅলা পোস্টার। সঙ্গে বৃদ্ধা দাদি সেলিনা বেগম।

লাশবাহী গাড়ি এলেই দাদিকে নিয়ে ছুটছে সে। আরিফ বলে, ‘আমি ছোট থাইকা এত বড় হইছি। জীবনে ভাবি নাই, কাকারে পাব না। তারে বলছিলাম, আইজ যাইও না কাকা, আজি থাক। সে কথা শুনে নাই।


বাবা একরামুল হককে খুঁজছে নবম শ্রেণীর ছাত্রী নীলুফার ইয়াসমীন। এ কয় দিন ধরে প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় আসছে রানা প্লাজার সামনে। রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সে। কেউ তার বাবাকে দেখেছে কি না, জানতে চায়।
রানা প্লাজা ধসে স্বজনহারা হয়েছে এমন অনেক শিশু।

তাদের কারও মা, কারও বাবা, কারও অন্য নিকটাত্মীয় ইতিমধ্যে মৃত বলে নিশ্চিত। আরও কতজন পর্বতপ্রমাণ কংক্রিটের স্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন, কেউ জানে না। জীবন ভালো করে বুঝে ওঠার আগেই মৃত্যুর সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে এই শিশুদের অনেকের। পৃথিবী এখন তার সবচেয়ে বীভৎস রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সামনে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.