আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকা মহানগরীর পানি ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী



"পানির অপর নাম জীবন" কথাটি সর্বজনবিদিত। জীবন ধারণের জন্য প্রতিদিন প্রতি মূহুর্তে পানির প্রয়োজন। খাওয়া, গোসল, রান্না, কাপড় ধোওয়া, টয়লেটে ব্যবহার, বাগান, কস্ট্রাকশন এর কাজসহ নানা কাজে পানির ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমানে ওয়াসা কর্তৃক ঢাকার পানিসরবরাহ ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। ওয়াসার সূচনালগ্নে বার লক্ষ মানুষের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

সে সময় ঢাকার লোসংখ্যা ছিল চার থেকে পাঁচ লক্ষ। এই মূহুর্তে ঢাকা সিটি কর্পেরেশন এলাকায় প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ মানুষের বাস। সে অনুসারে ঢাকায় বর্তমানে পানির চাহিদা রয়েছে দুইশত কোটি লিটার। ঢাকা ওয়াসার হিসাব মতে, তাদের বর্তমান অবকাঠামো একশত আশি কোটি লিটার পানি যোগান দেওয়ার উপযোগী। কিন্তু লোডশেডিং, পর্যাপ্ত জেনারেটরের অভাব, লাইন মেরামতের কাজ করতে গিয়ে একশত ষাট থেকে পয়ষট্টি কোটি লিটার পানির যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

ওয়াসা কর্তৃক ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরিকল্পনা বাসত্দবায়নের কাজ চলছে। ওয়াসা পূর্ববর্তী ঢাকার পানি সরবরাহ পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা: পানি সরবরাহ: ১৮৭৪ সালে চাঁদনী ঘাটে প্রথম পানি পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপিত হয়। এটি বর্তমানে ওয়াসা তত্ত্বাবধানে পরিশোধন কেন্দ্রটি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেই সময় ঢাকায় ৪০/৫০ টি ডিপ টিউবওয়ের ছিল।

দেখাশুনা করতো পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট (ডিপিএইচই)। মিউনিসিপালটি পানি সরবরাহের কাজ তদারকি করতো। এছাড়া ঢাকায় পানির উৎসের মধ্যে টিউবওয়েল, রাসত্দায় ২০০ কল, পাতকুয়া (প্রায় বাসায়), পুকুর, খাল, বিল ছিল এবং মশকে করে করে পানি সরবরাহ করা হতো। মানুষ সাধারণত খাওয়ার জন্য টিউবওয়েল ও রাসত্দার কলের পানি ব্যবহার করতো। কাপড় ধোয়া, রান্না, গোসল ইত্যাদিতে কুয়া, পুকুর, খাল ও বিলের পানি ব্যবহার করা হতো।

পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা: প্রথম ট্রিটমেন্ প্লান্ট নির্মিত হয় ১৯২৩ সালে। যেটি নারিন্দাতে অবস্থিত। বিভিন্ন এলাকা থেকে বজর্্য পাম্পিং করে নারিন্দা ট্রিটমেন্ট প্লান্টে দেওয়া হতো। ১৯৫০-৬০ সালে ঢাকায় খাটা পায়খানা ব্যবহৃত হতো। পায়খানার নীচে মাটির হাড়ি থাকতো।

বর্জ্য পুরো হয়ে গেলে দূরে ফেলা হতো। ওয়াসা: ওয়াসা (ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড সূ্যয়রেজ অথরিটি) অর্থ পানি সরবরাহ এবং পয়নিষ্কাশন কতর্ৃপক্ষ। ১৯৪৭ সাল পরবর্তী সময়ে ঢাকা তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্দানের রাজধানী হওয়ার প্রেক্ষিতে পানি সরবরাহ ও পয়নিষ্কাশনের জন্য একটি সংস্থা চালু করার প্রয়োজন দেখা দেয়। অবশেষে ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে সংসদে বিল পাশ হওয়ার মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা'র যাত্রা শুরু হয়। ওয়াসা এলাকা: ৩৬০ বর্গ কিমি।

শুরুতে ঢাকা, সাভার ও টঙ্গী এলাকাকে ওয়াসার আওতায় রাখার প্রসত্দাব ছিল। পরবর্তী সময়ে সাভার ও টঙ্গী এলাকা বাদ দিয়ে ওয়াসা কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ১৯৯০ সালে নারাযণগঞ্জ এলাকার ওয়াসার আওতায় আনা হয়। ওয়াসার অবকাঠামো: ১৯৭১ সাল পরবর্তী সময়ে ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় দ্রুতগতিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিনত্দ সে অনুপাতে পানি সরবরাহ ও পয়নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় সঙ্কট তৈরি হতে থাকে।

যা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে। তবে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি পর্যায়ক্রমে বাসত্দবায়ন করা হচ্ছে। এর সম্পূর্ণ বাসত্দবায়ন নগরবাসীর পানির পূর্ণ চাহিদা পূরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পানি পরিশোধন কেন্দ্র: বর্তমানে ওয়াসার পানি পরিশোধন কেন্দ্র রয়েছে চারটি।

দুইটি নারায়ণগঞ্জে, ১ টি সায়েদাবাদে এবং অপরটি চাঁদনি ঘাটে। ডিপ টিউবওয়েল: ওয়াসা পরিচালিত মোট ডিপ টিউবওয়েল প্রায় ৪৫০ টি। ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবস্থাপনা: ওযাসা'র মাস্টার প্লান অনুযায়ী ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল মেয়াদে সায়দাবাদে নিজস্ব জায়গায় তিন ধাপে ৯০ কোটি লিটার পানি পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে শীতলক্ষ্যা নদীকে পানির উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে। তিন ধাপে যথাক্রমে ২২.৫, ২২.৫ ও ৪৫ কোটি লিটার পানি পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।

ইতিমধ্যে প্রথম ধাপের পরিকল্পনা বাসত্দবায়িত হয়েছে অর্থাৎ ২২.৫ কোটি লিটার পানি প্রতিদিন পরিশোধন করা হচ্ছে। পানি পরিবহণ ও সরবরাহ অবকাঠামো: ওয়াসা পরিচালিত ৪৫০ টি ডিপ টিউবওয়েল ঢাকার বিভিন্ন জোনে অবস্থিত। প্রতিটি ডিপ টিউবওয়েলের জন্য চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো রয়েছে। পানি পরিশোধন কেন্দ্র থেকে বর্তমান উৎপাদন অনুযায়ী পানি সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে। সায়েদাবাদ পানি পরিশোধন কেন্দ্র হতে শীতলক্ষ্যা নদীর দূরত্ব ৬.৫ কিমি।

শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পরিশোধন কেন্দ্রে প্রথম .৫ কিমি বক্স কালভার্ট এরপর ডিএনডি ক্যানেল ৪.৫ কিমি সর্বশেষ ১.৫ কিমি বক্স কালভার্ট দিয়ে পানি আনা হচ্ছে। এই লাইনটি ১৮০ কোটি লিটার পানি পরিবহণের উপযোগী। বাসা-বাড়িতে পেঁৗছে দেওয়ার জন্য ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রয়েছে। পানির সত্দর: ১৯৬০-৭০ সাল নাগাদ পানির সত্দর ৪৫-৫০ ফুট এর মধ্যে ছিল। ১৯৭০-৮০ সালে সেখানে পানির সত্দর ৬০-৬৫ ফুট এর মধ্যে ছিল।

বর্তমানে পানির সত্দর ১৪০-১৫০ ফুট এর মধ্যে। উল্লেখ্য এখন প্রতি বছর পানির সত্দর ৩ থেকে ৪ ফুট নীচে নেমে যাচ্ছে। পানির চাহিদা পূরণে মূলত ভূ-পৃষ্ঠের পানির উপর নির্ভর করতে হবে। সেক্ষেত্রে পানি দূষণ প্রতিরোধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.