আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাবুলিওয়ালার ক্রিকেট

কম্পিউটার বিশারদ পেশায়, নেশায় যুক্তিবাদী

কাবুলিওয়ালা আর ক্রিকেট দুটো শব্দ মনে হয় এক অভিধানে পাওয়া শক্ত। যদিও এখন আর দশটা জিনিসের মত খেলাও পণ্যের মত ব্যবসার উপাদান হয়ে যাচ্ছে তবে ক্রিকেটের ব্যবসায় কাবুলিওয়ালাদের কখনই বোধহয় দেখা যায় নি। তবে এবার হয়ত দেখা যাবে। কাবুলিওয়ালারা পয়সার থলি হাতে নয়, ক্রিকেটের ব্যাট হাতে ভালমতই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। বছরের পর বছর যুদ্ধের পাশাপাশি তারা আরো একরকমের যুদ্ধে পটু হয়ে উঠেছে।

যা লেখার জন্য ভণিতা, আজকে আফগানিস্তান একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে, এমন নয় যে তারা অনেককাল হল ক্রিকেট খেলে আসছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশটার অধিকাংশ খেলোয়াড়ের ক্রিকেট পরিচিতি পাকিস্তানে রিফিউজি হিসাবে বসবাসকালে আর তাদের ক্রিকেট-যাত্রার শুরু ১৯৯২ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিজয়ের উল্লাস শুনে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতেখড়ি বলতে ২০০৮ সালের আই-সি-সি পরিচালিত পঞ্চম ডিভিশনের ক্রিকেট থেকে। লক্ষ্য ২০১১র বিশ্বকাপ ক্রিকেট।

আর অভিষেকেই বিজয়। ফাইনালে আয়োজক জার্সিকে হারিয়ে চতুর্থ ডিভিশনে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে আফগানিস্থান। একই বছরের শেষের দিকে তারা ফাইনালে হংকং-কে হারিয়ে জিতে দেয় চতুর্থ ডিভিশনের শিরোপাও। এরপরে বুয়েনস আইরেসে তৃতীয় ডিভিশন ও প্রথম দুয়ের মধ্যে শেষ করে তারা বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং খেলা খুব একটা সহজ ছিল না।

প্রতিপক্ষে অনেক দেশই আগে বিশ্বকাপে খেলেছে বা অনেকদিন ধরে বিশ্বকাপে খেলার দাবীদার। ওমান, আফগানিস্তান, উগান্ডা আর ডেনমার্ক ছাড়া বাকি সবাই একবার না একবার বিশ্বকাপে খেলেছে। বিশেষজ্ঞদের মত ছিল, এই চার দলই প্রাথমিক পর্যায়ের গণ্ডি পেরোতে পারবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ভুল প্রমাণ করে বারমুডাকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠে গেল আফগানিস্তান। চারটি দেশ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করবে, আর একদিনের আন্তর্জাতিক খেলার যোগ্যতা পাবে ছ'টি দেশ।

সুপার এইটে স্কটল্যান্ড এমনকি আয়ারল্যান্ডকেও হারিয়ে দেয় তারা অথচ কানাডার কাছে হেরে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের দৌড় থেকে বিদায় নেয়। শেষ ম্যাচে নামিবিয়াকে হারিয়ে দৌড়ে ষষ্ঠ স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। বিশ্বকাপে যেতে না পারলেও আগামী চার বছরের জন্য তারা একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। আর সামনের এ-সি-সি কোয়ালিফায়ারে জিতে ২০-২০ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ আছে এখনও। যুদ্ধবিদ্ধস্ত এই দেশের কিছু রিফিউজির এই যাত্রা নিয়ে একটা ডকুমেন্টরি বানাচ্ছেন ইউরোপীয় তিন সাংবাদিক।

তারা আফগান দলের সাথে সাথে আছেন পঞ্চম ডিভিশনের ম্যাচ থেকেই। তাদের ডকুমেন্টরীর ট্রেলার দেখতে পারেন, আমার খুব ভাল লেগেছে তাদের এই উদ্যোগ। বেশ কিছু মজার ঘটনা বলা হয় এই টিমের সম্পর্কে। দলের সকলেই খুব ধার্মিক হওয়ায় বাইরে কোথাও গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার অসুবিধা। তাই টিমের এক ফাস্ট বোলার হস্তি গুল টিমকে রান্না করে খাওয়ানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।

আরেক ক্রিকেটার বলেন যে তার ছোটবেলায় তারা একটা ফেলে যাওয়া হেলিকপ্টারকে ড্রেসিংরুম হিসাবে ব্যবহার করেই খেলতেন। টিমের সবথেকে প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার ফাস্ট বোলার হামিদ হাসান নিয়মিত ব্লগ লেখেন। পারলে তাকে একটু উৎসাহ দিয়ে তার ব্লগে কমেন্ট করতে পারেন। উনি কিন্তু সব কমেন্ট পড়ে দেখেন। ট্রেলার - ১ ট্রেলার - ২ লম্বা ট্রেলার (৯ মিণিট)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।