আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাবুলিওয়ালার কথা (চার) : কাবুল শহরে নতুন আগন্তুক!!!

মনের খোলা জানালয় কত আলো কত রঙ, খেলা করে চুপি সারে, আসে যায় কড়া নাড়ে ... ...

দেড় দিন ঘুমাই না। ঘাড় কাত করে নীল সাগর আর মরুভূমীর বালির মিলন দেখতে দেখতে, ঘাড় মোড় ভেঙ্গে, তলিয়ে গেলাম গভীর ঘুমে। হাতে একে৪৭, কাধে রকেট-লান্চার নিয়ে তলেবানরা হানা দিল বার বার। সুবিধা করতে না পেরে একে একে বিদায় নিল। কিন্তু জীবন্ত এয়ার হোষ্টেসের লাস্যময় রমণীয়-রিনরিনে আহ্বানে নড়ে চডে বসলাম।

বাইরে তাকিয়ে দেখি, সারা পৃথিবী এরিমাঝে পাথর হয়ে গেছে। আদিগন্ত মাথা উচু করে, হাত বাড়িয়ে, লাফিয়ে-ঝাপিয়ে নেচে-কুদে বেডাচ্ছে ন্যড়া পাহাড়ের দল। যতদূর চোখ যায় খাড়া, সূচালো পাথুরে পাহাড়, লালচে-ধূষর, অপাংতেয় অনমনীয়, আমানবীয়। সবুজ শ্যামলীমা গত হয়েছে বহু আগেই, এক্ষণে মৃত হয়েছে ধরিত্রি। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে উড়ে মায়াবী কোমল সব স্পর্শ।

ঠায় দাড়িয়ে আছে হাজার বছর ধরে মহাকাল। যেন কারো অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে। পেট-পূজোর ফাঁকে না না করেও এক-আধ বার চোখ চলে গেল! তাতেই ভয়ে ভিমরি খাবার যোগাড়। মনে হয়, এই বুঝি সব সুদ্ধ ধপাস করে পড়লাম! খাওয়া শেষে ভাল ভাবে নজর চালিয়ে দিলাম এক দফা। আসলে ও পর্বত যতই হাত বাড়াক, আমায় ধরা দায়।

কাছে মনে হলেও সে বহু দূর-অতলে। তবে প্রথম বার এই শুষ্ক-রিক্ত কিম্ভুত-কিমাকার বন্ধূর বিজন প্রান্তর দেখে কলজে ধড়-ফড় করা স্বাবাভিক। আমি আবার বেশি সাহসী কিনা, নাহয় আমারটা বেশিই কাপল একটু। হালও নাই, পালও নাই, হাতের পাচ? তাও নাই। তাই বেহুদা বদচিন্তা বাদ দিয়ে আবার নাক ডাকায় মন দিলাম।

কাবুলের আকাশে এসে হাওয়াই জাহাজখানা হটাৎ গোত্তা খেয়ে নাক বাকা করে নামা শুরু করল। প্রথমে চমকে গিয়ে ভাবলাম, বুঝি সামনের খাড়া পাহাড়ের ন্যাড়া মাথার সাথে মিলনের স্বাদ জেগেছে! ভালভাবে তাকিয়ে দেখি, সাদা বরফের টুপির কোনঘেসে, হলদাভ সমতলের মাঝে একটুকরো কাল দাগ। ওই তার গন্তব্য, আখেরি মনযিল। আশ পাশের পর্বতরাজির মাঝে সমতল কাবুল উপত্যকা। তারই উচ্চতা সমূদ্রপৃষ্ট থেকে ১৮০০ মিটার উপরে।

শুনেছি পৃথিবীর উচ্চতম রাজধাণী। বহু দিন চড় খাইনি। আর সাধু ভাষার যে চপেটাঘাত তা তো কখনোই না! শূন্য ডিগ্রির রাম-ঝাকুনিতে বাংলাভাষার অবোধ্য একটা শব্দের মর্মোদ্ধার হয়ে গেল! বন্গবাজার থেকে আমি আর শৈকাত ভাই যে সু-বিশাল যম্বুল কিনে সবার তির্যক দৃষ্টির সামনে ভেজা বেডাল হয়ে ছিলাম এ-কদিন, তার কাজে এবার দক্ষতার আভাষ মিলল। স্যুট-টাই পরে বাবু হওয়া জুয়েল ভাই কাচু মাচু হয়ে আমার ব্যাকআপ মাফলারে শিরস্ত্রান বানানোর ব্যর্থ প্রয়াস পেল। ঠান্ডায় সবার চেহারা আশ্চর্য রকম সাদা হতে দেখলাম।

তাতে আমিও আমার আঁধার-কাল ররণ পরিবর্তনের আশায় ছিলাম। অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়! ইইমিগ্রেশন রুমে ঢুকতেই আশা সেত মরিচিকা হয়ে তা দ্রততার সাথে কর্পূর হয়ে উবে গেল। লাউন্জে অফিসের একজন অপেক্ষায় ছিল। পরিচিত হলাম। এদিকে চেক-ইন লাগেজ পাওয়া গেল না কারোই।

যার যার হাতব্যাগটা কাধে ফেলে পথদিলাম, যেন অজানার দিকে। কাষ্টমসের লোকজন আমাদের দিকে ফিরেও চাইল না! আরে এ-কি কান্ড! আগে জানলে দুবাই থেকে বেশি করে পানি-টানি আনা যেত। গাড়িতে উঠে ভাবলাম আবার একটা ঘুম দেই। কিন্তু ১৫-২০ মিনিটেই নাকি অফিসে পৌছে যাব। ইতি-উতি চেয়ে দেখি ভাঙা গাডি, হুমডি খেয়ে থাকা আর্মাড কার বা ট্যাঙ্ক দেখা যায় কিনা? জীবন্ত আর্মাড কার চোখে পড়ল, কিন্তু কাবুল এক্সপ্রেসের মত কামান অলা ট্যাঙ্ক-ট্যুন্ক জাতিয় কিছুর দেখা পেলাম না।

আমদের গন্তব্যা শারে-নাও বা নতুন শহর। গাডি মুজতবা আলীর ফেলে যাওয়া স্মৃতির পানে ছুটে চলল। কাবুল শহরে নতুন আগন্তুকের আগমন!!! কাবুলিওয়ালার কথা (এক) কাবুলিওয়ালার কথা (দুই) কাবুলিওয়ালার কথা (তিন) (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।