আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাথাসপ্তশতী: সতের ’শ বছর আগেকার প্রেম ও অপ্রেম

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

প্রাচীন ভারতে একটি উল্লেখযোগ্য রাজবংশ ছিল সাতবাহন । সময়কাল: খ্রিস্টীয় প্রথম শতক থেকে তৃতীয় শতক। উত্তর ভারতে নয়- সাতবাহন রাজ্য গড়ে উঠেছিল দক্ষিণভারতে।

রাজ্যটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন: সিমুক। সাতবাহন বংশের রাজধানী ছিল দক্ষিণ ভারতের প্রতিষ্ঠানপুর । হাল ছিলেন সংস্কৃতমনা একজন সাতবাহন রাজা। ইনি কেবল রাজ্যই শাসন করেননি- প্রাকৃতভাষায় লেখা কবিতার একটি সঙ্কলন গ্রন্থনা করেছিলেন। প্রাকৃতভাষা মানে প্রাচীন ভারতের সাধারণ জনগনের ভাষা- অর্থাৎ উচ্চকোটির সংস্কৃত ভাষা নয়।

রাজা হাল কর্তৃক সঙ্কলিত কবিতার সঙ্কলনটির নাম: ‘গাথাসপ্তশতী। ’ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবির লেখা প্রায় সাতশ স্তবক রয়েছে গাথাসপ্তশতীতে-বিস্ময়করভাবে যা ধর্মনিরেপেক্ষ-শুধু ধর্মনিরেপেক্ষই নয়- গাথাসপ্তশতীর স্তবকগুলো রীতিমতো যৌনতায় আচ্ছন্ন। যেমন: ভেজানো দরজার কাছে দাঁড়ানো ও মেয়ে। কাকে খুঁজছ তুমি? উষ্ণ চোখ, বাদামি বৃন্ত- রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছে। এই চরণগুলোয় ভারতবর্ষের বৈদিক ধর্ম কোথায়? মেয়েটির দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে, তার কাতরতায় কিশোরীর চিরকালীন ছবিটি মূর্ত হয়ে আছে কি না? ছবিটি দেখে কে বলবে ভারতবর্ষ কেবলি ধর্মের দেশ! যজ্ঞপার্বণের দেশ! গাথাসপ্তশতীর কবিতার চরণে চরণে প্রেমকাতর মানবমানবীর মনোদৈহিক ক্ষুধা এমনই তীব্র ভাবে ফুটে উঠেছে যে- মনে হয়- এই যেন ভারতবর্ষের প্রকৃত মানুষে প্রতিচ্ছবি।

গাথাসপ্তশতীর কবিতাগুলি পড়ে কে বলবে যে কবিতাগুলি সঙ্কলনের পর প্রায় সতের শ বছর কেটে গিয়েছে! গাথাসপ্তশতী থেকে ক’টি নির্বাচিত স্তবকের অনুবাদ; ১ ও (মেয়েটি) খুবই দ্রুত ভাবতে পারে। কিন্তু, আজ ও নিজেকে নিল সামলে। বলল,‘সে তোমাকে দেখতে এসেছে। ’ বলে প্রেমিককে দিল স্বামীর দিকে ঠেলে! ২ সে দিনভর কাজ করে । লাঙ্গল চষে জলাভুমির কাছে।

সেই রাতে তার বউ শুয়েছিল। ভারি অস্থির। চোখ খোলা। বৃষ্টির ফোঁটা গুনছে। ৩ মেয়েটির দরজায় সে দাঁড়িয়ে।

সে কেবলি তরমুজ বিক্রি করতে চায় না। কিন্তু, সে তো আর ছল জানে না। যে নারকেল নিয়ে এসেছে সে যে বেশি চতুর! ৪ নারী যখন উর্ধ্বে -তখন তার চুল পর্দার মতো মনে হয়। দুলছে। কানের দুলের রিনরিন গলার হারের ঝঙ্কার।

পদ্মের ওপর মৌমাছির মতো ও ব্যস্ত। ৫ তারা যখন থামে মেয়েটি গলার হার দেখে লজ্জ্বা পায়। কিন্তু যেহেতু মেয়েটি কাপড়ের কাছে পৌঁছতে পারে না- পুরুষটিকে আবার তুলে নেয়। ৬ ভেজানো দরজার কাছে দাঁড়ানো ও মেয়ে কাকে খুঁজছ তুমি? উষ্ণ চোখ, বাদামি বৃন্ত রাস্তার দিকে চেয়ে রয়েছে। ৭ ও চন্দ্রমূখী নারী, তোমার আয়ত চোখের কারণে- রাতও গিয়েছে বেড়ে- আর আমিও সদ্ব্যবহার করি প্রহরের! ৮ আঙুলের ফাঁকে গলে যাচ্ছে প্রেম।

হায়, হারিয়ে যাচ্ছে সবই। মুঠো করো হাত। মুখে মধুর স্তন। একটি ফোঁটাও যেন মাটিতে না পড়ে। ৯ ঈশ্বর ওকে গড়েছে।

ওর সৌন্দর্য আমার মন কেড়েছে। ওর কথা আমার কানে, ওর হৃদয়ে আমার হৃদয়; ওর অঙ্গে অঙ্গ আমার। ১০ আমার মনে আছে- ও আমার পায়ের কাছে বসে। নিশ্চুপ। ওর চুল নিয়ে খেলছিল আমার পায়ের পাতা।

১১ যে নারী জানে- কী করে ভালোবাসতে হয় নিজেকে- জানে কী করে প্রশমিত করতে হয় ক্রোধ যখন সে একই সঙ্গে শূন্য ও পূর্ন। ১২ আমি দেখছি নর্তকীদের কী যে ভালো লাগছে। চুলের সুগন্ধী তুমি আমায় পা দিয়েছিলে। ১৩ মেয়েটি বলেছিল আমায় কী করতে হবে। অথচ সকালে ও কাপড় পড়ল বাঁশের বেড়ার ওপাশে! ১৪ ছোট ঘটনা।

তবু মনে আছে। মা রান্না করছিল। বাবা কী বলল। মা হাসল। তারপর ছুঁলো নিজের ফ্যাকাশে মুখ।

চাঁদের কলঙ্কের মতন মায়ের চাঁদমুখ। ১৫ এইসব নীতিবাগীশরা কেন প্রাকৃত কবিতা এড়িয়ে চলে? এড়িয়ে চলে আমাদের গান, আমাদের প্রেম ও অপ্রেম। ওরাও তো আমাদের গান ও কবিতার নির্যাস চায় জানি তবে কেন তারা আমাদের প্রেমকে বলে ছাই? সূত্র: ১) সুনীল চট্টোপাধ্যায়: প্রাচীন ভারতের ইতিহাস (দ্বিতীয় খন্ড) ২) Willis Barnstone এবং Tony Barnstone সম্পাদিত Literatures of Asia, Africa, and Latin America. (From Antiquity to the Present)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.