আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাভার ট্রাজেডী: সম্মিলিত জনতার মানবতা ও ঐক্যের চেতনার প্রতিফলন হোক রাজনৈতিক ময়দানে।

লেখিতে এবং পড়িতে ভালবাসি। অ্যন্তত ব্যথিত এবং বেদনার্ত হৃদয় নিয়ে কীবোর্ডে হাত রাখলাম। খবরের কাগজে আর চোখ রাখা যায় না। প্রায় ৪০০শত মানুষের স্বপ্ন-ভালোবাসার অকাল প্রয়াণ দেখে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। আবার ঠিক উল্টোটাও হয়, বেদনার্থ হৃদয় আনন্দে সকচিত হয়।

চোখ মেলে ধরি পত্রিকার পাতায়, অনলাইন সংসকরণে বা টিভি পর্দায়। দেখি ১০০ ঘন্টা পর জীবিত উদ্ধার হয়ে বেঁচে আসছেন মান নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থাপক কিউ এম এ সাদিক। নতুন আশায় উজ্জীবিত হয় উদ্ধার কাজে নিয়োজিত সরকারী ও বেসরাকরী কর্মীরা। মানুষ নতুন আশায় বুক বাধে। আবার জীবিত শাহানাকে উদ্ধার করতে না পেরে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠে উদ্ধার কর্মীরা।

তখন মনে এই হলো মানবতাবোধের উজ্জল দৃষ্টান্ত। যখন এই লেখা লিখছি (সকাল ৯:৩০) তখন পর্যন্ত জানতে পারিনি শাহানার ললাটে কি ঘটেছে। মহান রাবুল্লামিনের দরবারে প্রার্থণা করি আল্লাহ যেন মায়ের সন্তানকে মায়ের কোলে জীবিত ফিরিয়ে দেন, মানবতার জয়কে নিশ্চিত করেন। কিছু লোভী, নরপশু, অর্থলিপ্সু, দানবের নির্মমতায় যখন হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুকূপ "রানা প্লাজার" ধংস্তুপের তলায় জীবিত বা মৃত আটকা পড়ে উদ্ধারের আকুতি করে দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করে। আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তখন সেই হায়না-দানব-শকুনের দল বিপন্ন মানুষের উদ্ধারের কাজে এগিয়ে না এসে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পালিয়ে গিয়ে বাচঁতে চেয়েছিলো।

এইসব নরপশুদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা অসুস্থ রাজনীতির অসুস্থ মানুষ গুলোর নির্লজ্জ প্রচেষ্টা ছিলো তাঁদের বাঁচানোর। দেরীতে হলেও রাজনীতিবিদদের বধোদয় হয় এবং খুনী রানা গ্রেফতার হয়। আহত-নিহত মানুষের ক্ষত হৃদয়ে সরকার এই কাজটি করে বিন্দু পরিমাণ প্রলেপ দিতে সক্ষম হয় বলে আমার ধারনা। মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক, বর্বর ও ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড সাভারের "রানা প্লাজা" ট্রাজেডী একটি বিষয় প্রমাণ করেছে যে, সাধারণ মানুষ কতটা নিঃস্বার্থ, জনদরদী এবং মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ। তাঁরা মানবতাবোধের উজ্জল দৃষ্টান্ত হয়ে পৃথিবীর বুকে উদাহরণ হয়ে থাকলেন বলেই আমার বিশ্বাস।

দূর্ঘটনার পর আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফুর্ত অংশ গ্রহণ তা সত্যিই অনন্য এবং মানবতার মূর্ত প্রতিক। "রাজা প্লাজা" ধংসের দিন (২৪ এপ্রিল, ২০১৩) সকাল থেকেই রাজনীতিবিদরা নির্লজ্জ মিথ্যাচার এবং দোষ চাপানোর হীন প্রচেষ্টায় জড়িয়ে পরে। ভারসাম্যহীন বক্তব্য, সাক্ষাতকার এবং বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের অনৈক্যের পূর্ব ঘৃণিত চেহারাটিই সবার সামনে তুলে ধরে। অথচ ঘটনার পরপর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ গুলো অসহায় আটকে পড়া মানুষ গুলোকে উদ্ধার নিয়োজিত হয়। মিডিয়াগুলো তড়িত খবর প্রচার করতে থাকে।

টিভি পর্দায় ভয়াবহ বিপর্যয় এবং মানুষের জীবন বিপন্ন দেখে শহর থেকে যুবক-তরুনের ছুটে যায়, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সেনাবাহীনি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে মিলে কাজ করতে থাকে। জীবিতদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিতে থাকে। কয়েকঘন্টার মধ্যেই অসংখ্য সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় উদ্ধার কর্মী হয়ে যান। নিজের জীবন বাজি রেখে, খাওয়া-দাওয়া ভুলে, নিজের বাড়ির কথা ভুলে প্রচন্ড রোদের মধ্যে একে একে জীবিত এবং মৃত মানুষদের ধংসস্তুপ থেকে বেড় করে নিসে আসতে থাকেন। আর অন্যদিকে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রুমে বসে বক্তব্য বিবৃতি দিতে শুরু করেন।

কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্যে শুধুই দোষারোপ। কেউ কেউ টিভি চ্যানেলের টক শোতে কি করতে হবে, কি ভুল হয়েছে, কারা দায়ী এইনিয়ে তর্ক শুরু করেন। আমাদের মন্ত্রীদের কথা শোনে তো মানুষ পাগলের খেতাব দিতে দ্বিধাবোধ করলো না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাহায্যের আকুতি ছড়িয়ে পড়লো সারা দেশে। জরুরী রক্তের প্রয়োজন সংবাদটি ফেসবুকে আসা মাত্র লাইন পড়ে গেল, শাহাবাগ গণজাগণ মঞ্চে, হাসপাতালে, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংঠন গুলোর কার্যালয়ে।

ছাত্র-যুবক-কর্মজীবি থেকে শুরু করে সবাই রক্ত দিয়ে আহত শ্রমিকদের বাঁচানোর জন্য মানবতাবোধকে জাগ্রত করে তুললো। সরকার যেখানে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও লজিস্টিকের সরবরাহ করতে ব্যর্থ তখন সাধারণ মানুষ এগিয়ে এলো মানবতার তাড়না, ভালবাসায়- সমবেদনায় এবং সর্বোপরী মানুষের জীবন রক্ষায়। সরকার যখন সংসদের, মিডিয়াতে, বক্তব্যে সবধরনের সহযোগিতা প্রদান করছে বলে শান্তির ডেকুউর তুলছে তখনি ফেসবুকে বিপন্ন মানুষ গুলকে রক্ষায়- আলো চেয়ে (টর্চ ও মোমবাতি), খাবার চেয়ে, অক্সিজেন চেয়ে, ঔষুধ চেয়ে -একের পর এক স্ট্যাটাস আর অসহায়ত্ব থেকে মুক্তির আবেদন। আর আধুনিক মনের মানুষ গুলো সব ফেলে যে যা পেয়েছে, পেরেছে তাই নিয়েই ছুটেছে সাভার রানা প্লাজার দিকে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার এক মহান দৃষ্টান্ত।

জাত-ধর্ম-বর্ণ-দল ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধারণ মানুষ যে চেতনার জন্ম দিয়ে মানবতাকে সম্মান জানালো, দেশের ক্রান্তকালে এক হবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো সেই থেকে কি আমাদের রাজনীতিবিদদের কিছুই শিখার নেই? পরস্পরকে অচেনা, অজানা আবির হোসেন, মোঃ হাবিব, রুবেল এবং কাওসার যে চেতানায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবন বাজি রেখে একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা কি সেই চেতনা ধারন করে, দেশের কল্যাণে, উন্নয়নে, মানবতা সমুন্নত রাখতে, সত্যিকারের গণতন্ত্র বিকাশে, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে, খুন-গুম রাহজানী, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, দূর্ণীতি, অনিয়ম মোকাবেলায় এক বিন্দুতে মিলতে পারেন না? রানা প্লাজার ঘটনায় সাধারণ মানুস ঐক্যের যে মহান স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করে দিল, সেখানে কি আমরা আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যাশা করতে পারি না? রাজনৈতিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, অবিশ্বাস আজ আমাদের ধংসের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। সহিংসতা আজ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি অবস্থান আর প্রাণহানী প্রতিদিনকার খবরের হেডলাইন। দোষারোপ আর মামল-হামলা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার খবরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। দূর্ণীতি আজ প্রশাসনের অস্থিমজ্জায় মিশে গেছে, পদ্মা সেতু তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

অস্রের উম্মুক্ত প্রদর্শনী, প্রশাসন নীরব, ত্বকীর মত মেধাবী ছাত্রের সন্দেহভাজন খুনীরা প্রকাশ্যে সমাবেসে অস্র নিয়ে প্রতিবাদী মানুষকে হুমকি দেয়, দূরে দাড়িয়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী নীরব দাড়িয়ে থাকে। সামাজিক ন্যায় বিচার আজ সোনার হরিণ! সমাজ থেকে এইসব ব্যধী দূর করার জন্য, নিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য, বর্তমান রাজনৈতিক অচল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তণের জন্য কি আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের মত একবিন্দুতে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একবার এক হতে পারেন?? পারে, আমি জানি পারে, হয়েছিলো স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে। আর একবার দেশের জন্য, মানুষের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, উন্নয়নের জন্য এক হয়ে আপনারা প্রমাণ করুন, সাধারণ মানুষের চেয়ে আপনারা আলাদা কিছু নন, আপনার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেন, সাধারণ মানুষ আপনাদের চেতনা এবং অনুপ্রেরণা। এর সুফল আপনারা এবং দেশের খেটে খাওয়া মানুষ পাবে। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে বাস্তবতা এবং সত্য বুঝার এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেহার তৈফিক দান করেন।

আমীন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।