আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্কার - আমার চেখে সম্ভাব্য বিজয়ী (সেরা অভিনেতা/অভিনেত্রী)

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

গত দুই পর্বে লিখেছিলাম সেরা চলচিত্র, কাহিনী এবং পরিচালকদের নিয়ে। এবারের এই শেষ এবং চুড়ান্ত পর্বে লিখতে যাচ্ছি সারা বছর যাদের অসাধারন অভিনয় আমাদের মুগ্ধ করে রেখেছিল তাদের গল্প। অস্কারে সেরা অভিনেতার খেতাবটা দেয়া হয় দুটি ক্যাটাগোরীতে - মূল চরিত্র এবং পার্শচরিত্র। একই কথা সেরা অভিনেত্রীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন, তিনটি পুরষ্কার চলচিত্র জগতে খুবই নাম করা।

এর একটি এবং সর্বাধিক সম্মানজনকটি হলো অস্কার। এছাড়াও আরো যে দুটো রয়েছে সেগুলো হলো - গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা। এ বছরের শুরুতেই ক্যালিফোর্নিয়ার বেভার্লি হিলস-এ হয়ে গিয়েছে গোল্ডেন গ্লোব এবং ফেব্রুয়ারীতে লন্ডনে হলো বাফটা। অস্কার নমিনেশনের তালিকায় যারা আছেন তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে এদুটোর একটি বা ক্ষেত্রবিশেষে দুটোই জিতে ফেলেছেন। আবার অনেকে অপেক্ষা করছে অস্কারে কিছু নুতন চমকের।

অস্কারে এবছরের সেরা অভিনেতার খেতাবটি আনেকের মতে প্রায় পকেট বন্দি করে ফেলেছেন মাইক রু'রকী। গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা দুটোই তার জেতা হয়ে গিয়েছে, এখন বাকি অস্কার। রেসলার ছবিতে তার অসাধারন অভিনয়ই এই প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছে। এমন নয় যে মাইক খুব জনপ্রিয় অভিনেতা। প্রায় ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় হাটছেন।

বয়সের ছাপ চোখে মুখে প্রবল। ব্যাঙ্কের অবস্থাও তার করুন। এরকম সময়ে মাইকের বন্ধু, রেসলারের পরিচালক ড্যারেন তাকে ফোন দিয়ে জানায় চাইলে সে এই ছবিতে অভিনয় করতে পারে। তবে আপাতত কোন টাকা-পয়সা পাবে না! সম্মানী নির্ধারিত হবে ছবির সাফল্যের উপর। মাইকের অন্য কোন সুযোগও ছিল না।

ফলে সে ছবিটা করতে রাজী হয়। এর পরের গল্প স্বপ্নের মত। রেসলার চরম ভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে সমালোচকদের, সাথে মাইকের ডুবন্ত ক্যারিয়ারে দিয়েছে এক নুতন মাত্রা। বাফটা এ্যাওয়ার্ডের পর হাতে শ্যাম্পেইনের বোতল নিয়ে এ গল্পগুলো শোনায় মাইক দর্শকদের। তবে কি অস্কারও জিতে যাবে মাইক? ষোলকলা পূর্ন হয় কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে আজ রাতটা গভীর হলেই।

তবে মাইক ছাড়াও আরো বেশ কিছু হাই-ভোল্টেজ পারফর্মেন্স ছিল এবার। বিশেষত মিল্ক ছবিতে শন পেনের অভিনয় রীতিমত এক কথায় অসাধারন। সাদামাটা মিউজিক আর প্রায় চাকচৌক্যহীন এক কাস্টিং-এর উপর দাড়িয়ে প্রায় একাই একটা ছবিকে শন পেন তুলে নিয়ে গিয়েছেন অন্যরকম উচ্চতায়। তাই তার অস্কার জেতার সম্ভাবনাকেও বাতিল করে দেয়া যাচ্ছে না। একই সাথে আমাদের মাথায় রাখতে হবে ব্র্যাড পিটের কথাও।

কিউরিয়াস কেইস অব বেঞ্জামিন বাটন আসলে যেন ব্র্যাড পিটেরই মুভি। পুরো ছবিটা তারই উপর ফোকাসড। বৃদ্ধ শিশু আর কৌশরের বৃদ্ধের মানবিক এবং শারীরিক অভিনয়ের যে অনুপম প্রদর্শন ব্র্যাড দেখিয়েছে, সেটাকে অসাধারন বলাও সম্ভবত কম হবে। এই তিন জনের তুলনায় দ্যা ভিজিটরের রিচার্ড জেনকিন্স এবং ফ্রস্ট নিক্সনের ফ্রাঙ্ক ল্যাঙ্গেলা খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। কোন রকম দুর্ঘটনা না ঘটলে আশা করছি মাইক-ই জিততে যাচ্ছে এবারে সেরা অভিনেতার খেতাব।

সেরা অভিনেত্রী কে হতে পারে? এ বিষয়েও নিশ্চিৎ বাজি ধরতে পারেন কেট উইন্সলেটের উপর। এই ব্রিটিশ অভিনেত্রীর গত বছর দুটো ছবি মুক্তি পেয়েছিল - রেভুলেশনারী রোড এবং রিডার। গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অভিনেত্রী'র পুরষ্কার দেয়া হয় দুই ধরনের চলচিত্রকে - ড্রামা এবং মিউজিকাল/কমেডী। কেট রেভুলেশনারী রোডের জন্য পেয়েছে সেরা অভিনেত্রী (ড্রামা) এবং রিডারের জন্য পেয়েছে সেরা পার্শ-অভিনেত্রী (এটায় একটা মুভিকেই দেয়া হয়)। বাফটাতে গিয়ে বলা হচ্ছিল যদি সেরার পুরষ্কার কেট না পায় তাহলেও সেটা কেট পাবে! আসলেও হয়েছে তাই।

দুটো ছবির জন্যই কেট সেরা অভিনেত্রীর নমিনেশন পেয়েছিল। মানুষের এ বিষয়ে আলোচনা করার কোন আগ্রহ ছিলনা যে কে জিততে পারে বরং সবাই আলোচনা করছিল কেট কোনটার জন্য জিতবে! এর আগে চার চার বার নমিনেশন পেয়েও অস্কার জেতা হয়নি কেটের। এটা একটা অস্কার রেকর্ডও। সবচেয়ে কম বয়সে কেট প্রথম অস্কারের সেরা অভিনেত্রীর জন্য নমিনেশন পায়। এরপর রেকর্ডটা সে বাড়িয়ে নেয় এভাবে - সবচেয়ে কম বয়সী ডাবল নমিনেশ, এরপর তিনটা এবং পরবর্তিতে চারটা।

এবারের পঞ্চম নমিনেশন কি অস্কারে পরিনত হতে যাচ্ছে তাহলে? না হবার অন্তত কোন কারন আমি দেখছি না। কেট ছাড়া অন্য যারা নমিনেশন পেয়েছে, তাদের মুভিতে অভিনয়ের অবস্থা এতটাই দূর্বল যে এখানে উল্লেখ্য করে জায়গা নষ্ট করতে ইচ্ছে হচ্ছে না! সেরা পার্শ অভিনেতা কে হতে পারে? আমি যদি হিথ লেজার ছাড়া অন্য কারো নাম নেই, পাঠকরাও সম্ভবত আমাকে পাগল বলবেন। না, সেকাজ আমি করবো না। এ পৃথিবী ছেড়ে হিথ চলে গিয়েছে কিন্তু রেখে গিয়েছে অসাধারন কিছু অভিনয় ডার্ক নাইট মুভিতে। হিথের অভিনয় এতটাই চমৎকার ছিল যে অনেককেই বলতে শোনা গিয়েছিল আসলে ছবিতে নায়ক কে ছিল! এবারের গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা, দুটোই জিতেছে হিথ।

এখন বাকি শুধু অস্কার জেতা। আমি বাজি ধরতে রাজী আছি যদি এই এ্যাওয়ার্ড হিথ লেজার না জেতে আমি ২৪ ঘন্টার জন্য আমার ব্লগের নাম গাধার ব্লগ রাখবো। এতটাই নিশ্চিত আমি এই নমিনেশনটায়! অন্যদের নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন এখানেও নেই। উল্লেখ্য যে হিথ হতে যাচ্ছে ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাক্তি (পিটার ফিন্চ-এর পর) যে মৃত্যুর পর অস্কার জিততে যাচ্ছে। সেরা পার্শ-অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে অনুমান করাটা একটু বিপজ্জনক।

ক্লিন-সুইপ পারফর্মেন্স কেউ দিতে পারেনি এই ক্যাটাগোরীতে। পেনিলোপা ক্রজের অভিনয় ভালো লেগেছে ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সিলোনায়। বাফটাও জিতেছে সে এই ভূমিকার জন্য। কিন্তু গোল্ডেন গ্লোবে নমিনেশনই পায়নি। রেসলারে মারিসার অভিনয় অসাধারন ছিল।

ছোট কিন্তু একটা গোছানো রোল ছিল সেটা। অন্যদিকে এ্যামি এ্যাডামস এবং ভিওলা ডেভিস অসাধারন ছিল ডাউটে। দ্বিতীয় জনের পাবার সম্ভাবনা যেন খানিকটা বেশি। আমি তবুও পেনিলোপা ক্রজের দিকেই ভোটটা দেব। আমার দৃষ্টিতে সেরা: অভিনেতা: মাইক রু'রকী অভিনেত্রী: কেট উইন্সলেট পার্শ অভিনেতা: হিথ লেজার পর্শ অভিনেত্রী: পেনিলোপা ক্রজ আর দুটো কথা না বললেই নয়।

এবারের সেরা এ্যানিমেটেড ফিল্মটা অবধারিত ভাবে পেতে যাচ্ছে ওয়াল-ই। সেরা সংগীত এ. আর. রহমান এবং সম্ভবত সেরা গান জয় হো (এ. আর. রহমান এবং গুলজার)। এই সিরিজটা এখানেই শেষ করছি। আজ রাত ঘুরে কাল সূর্য উঠলে ছড়িয়ে পড়বে অস্কারের খবর সবার কাছে। অতীত হয়ে যাবে সবকিছু, তবু এই সব ছোট ছোট অপেক্ষাই যেন জীবনকে অনেক সুন্দর করে।

অপেক্ষা এবং আশা ছাড়া যে জীবনের কোন সার্থকাতাই থাকে না! শুভেচ্ছা সবাইকে। ২২ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন থেকে! আগের পর্বগুলো - ১ম পর্ব, ২য় পর্ব

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।