আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্কার - আমার চেখে সম্ভাব্য বিজয়ী (সেরা চলচিত্র)

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

আমি চলচিত্র বোদ্ধা নয়, নয় অখ্যাত বা বিখ্যাত কোন পত্রিকার চলচিত্র সমালচক। নিতান্তই সাধারন দর্শক আমি। যা কিছু দেখি এবং বলি, একজন দর্শকের দৃষ্টিতেই। কখনও সে দৃষ্টি খানিকটা বিস্তৃত করার চেষ্টা করি বটে, তবে তাও দর্শকের পর্যায়েই থাকে, হয়তো এক 'আতেল' দর্শক! সিনে-ওয়ার্ল্ড যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় সিনেমা গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাদের 'আনলিমিটেড' অফারের কল্যানে গত গছর আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে প্রায় সারা বছর মুভি দেখার সুযোগ হয়েছে।

যে কোন সিনেমা রিলিজের প্রথম দিন দেখাটা যেন নেশায় পরিনত হয়েছিল। তারপর ধীরেধীরে ব্লগে রিভিউ লেখা, আই.এম.ডি.বি-তে কাজ করা এবং সর্বপরি রোটেন টমাটোর ভক্ত হয়ে প্রতি সপ্তাহে মুভির উত্থান-পতন দেখতে দেখতে এখন সাহস করে বসেই পড়লাম এবারের অস্কারের কয়েক ঘন্টা আগেই সম্ভাব্য বিজয়ী অনুমান করার বিপজ্জনক কাজে! এ বছর সারা বিশ্বে বেশ কিছু ভালো ইংরেজী ছবি তৈরী হয়েছে। এর অধিকাংশই হলিউড বা ব্রিটিশ মুভি তবে ফ্রান্স, স্পেন বা অন্যান্য দেশ থেকেও কিছু ইংরেজী চলচিত্র এসেছে। যে পাঁচটা ছবি এবার সেরা চলচিত্রের নমিনেশন পেয়েছে তাদের থেকেও যে সেরা ছবি এ বছর তৈরী হয়নি, সেটা কিন্তু বলার উপায় নেই। বিশেষত রেভুলেশনারী রোড-কে অস্কারের সেরা ছবির নমিনেশন না দেয়াটা রীতিমত বিস্ময়কর।

অনেকে ডার্ক নাইট-কেও দেখতে চেয়েছিলেন এই তালিকায়। তবেও এটাও সত্য যে কমার্শিয়ালী সফল ছবিগুলো সাধারনত অস্কারের জন্য মনোনিত হয় না, যদিও ব্যাতিক্রম ছিল টাইটানিক। এবারের সেরা ছবিগুলো নমিনেশন পাওয়া পর্যন্ত যে ব্যাবসা করেছিল, ডার্ক নাইট একা প্রথম চার দিনে তার থেকে বেশি আয় করেছে! যাইহোক, সরাসরি চলে যাচ্ছি নমিনেশন লিস্টের মুভিগুলোকে কাঁটাছেড়া করার জন্য। এবারের সেরা ছবির তালিকায় অন্যতম ফ্রস্ট-নিক্সন। দুই ঘন্টারও অধিক দির্ঘ্য এই ছবিটি ব্রিটিশ লেখক পিটার মর্গানের লেখা নাটকের চলচিত্ররুপ।

লন্ডন ভিত্তিক সাংবাদিক ফ্রস্ট ১৯৭৭ সনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সনের যে সাক্ষাৎকার নিয়েছিল তারই ঘটনা নিয়ে তৈরী এই মুভিটি। ছবির প্রথম অর্ধেক মারাত্মক ধীর গতির হলেও শেষের দিকে এসে চমৎকার গতিময়তা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। তবে বছরের সেরা পাঁচ হলেও, অস্কার জেতার জন্য সবচেয়ে দুর্বল চলচিত্র এটি। মিল্ক, আরেকটি ঐতিহাসিক ছবি। হার্ভে মিল্ক ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম গে যিনি পাবলিক অফিসে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাধারন জনতার মাধ্যমে।

গে-দের অধিকার সংরক্ষনে তার ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ ভাবে প্রসংশনীয় ছিল। তারই জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরী এই ছবিটি। ছবিতে বেশ কিছু গে-সেক্সের দৃশ্যের কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর রেটিং ১৬-১৮ ছিল। গল্প ও অভিনয় অসাধারন হলেও সম্ভবত সেরা চলচিত্রের থেতাব জেতার জন্য খানিকটা পিছিয়ে আছে মিল্ক। একই কথা কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটনের ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।

এক অসাধারন গল্পের উপর দাড়িয়ে আছে মুভিটি। তবে কেন যেন অস্কার জেতার সম্ভাবনা কম। এই ছবিতে একজন মানুষের জীবনের পুরোটা ঠিক উল্টো করে দেখানো হয়েছে। জীবনের সেই জটিল সময়গুলোতে সমাজ ও মানুষের সাথে তার মনসিক সংঘাত এবং এর প্রতিক্রিয়া নিয়েই যেন পুরো গল্পটা। এটিও বেশ দির্ঘ্য চলচিত্র, দুই ঘন্টার উপরে তবে বেশ চমৎকার।

এবারের অস্কারে সর্বাধিক তেরটি নমিনেশন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ছবিটি। জার্মানীর প্রেক্ষাপটে তৈরী দ্যা রিডার এক কথায় অসাধরন। একজন বয়ষ্ক মহিলার সাথে এক পনেরো বছরের বালকের শারীরিক সম্পর্কের ঘটনা নিয়ে গড়া ছবিটি। তবে যতই সময় গড়াতে থাকে প্রকাশিত হতে থাকে মানুষের অন্য এক চাহিদা, যা শারীরিক চাহিদাকেও অতিক্রম করতে সক্ষম। এক অন্যরকম অব্যাক্ত প্রেম।

কেট উইনসলেটের অসাধারন অভিনয় নজর কেড়েছে সবার। এবারের অস্কার যদি রিডার জিতে নেয়, অবাক হবার কিছুই থাকবে না। সম্ভবত অস্কারের সবচেয়ে স্ট্রং ক্যানডিডেট এবার রিডার। স্লামডগ মিলেনিয়ার, এক স্বল্প বাজেটের ব্রিটিশ ফিল্ম যা কি না সবাইকে অবাক করে জিতে নিয়েছে গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা এ্যাওয়ার্ড। কি ছিল এই ছবিতে? কেন এত জনপ্রিয়তা? প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গল্পের মাঝে ঢোকা প্রয়োজন।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একজন মানুষের জীবনের একটা বেশ বড় অংশ দেখানো হয়েছে অথচ গল্প বলার ধরনটা এমন যেন বিরক্ত লাগার উপায় নেই। এখানে মিলেনিয়ার হওয়াটা কিন্তু মূখ্য ছিল না। সেই প্রতিযোগীতাটা ছিল গল্প বলার একটা আসর মাত্র। এই নুতন ডাইমেনশনটাই অধিকাংশ মানুষকে নাড়া দিয়েছে। ছবির গাঁথুনীও বেশ ভালো, অভিনয় অসাধরন এবং সর্বপরি সিনেমাটোগ্রাফিও চমৎকার।

তবে বছরের সেরা চলচিত্র সম্ভবত এটা নয়, অন্তত রিডার বা কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটনের থেকেতো নয়ই। তবুও এবারের অস্কার সম্ভবত স্লামডগই জিতে যাবে। আমার পক্ষ থেকে তাই এবারের বিজয়ী স্লামডগ মিলেনিয়ার। প্রিয় পাঠক! সেরা পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং অন্যান্য নমিনেশন নিয়ে শীগ্রই ফিরে আসবো। অতএব নজর রাখুন ব্লগের মূল পাতায়।

(কমার্শিয়াল ব্রেক!) ২২ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।