আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চানাচুরের বর্ষপূর্তি!

............................................
সামইনের খোজ প্রথমে আউলা কোথা থেকে যেন পেয়েছিল। তারপর ও প্রথম রেজি: করে। আমি প্রথমদিকে খুব একটা আগ্রহী ছিলাম না। আউলা তখন প্রচুর পোস্ট সেইভ করতো। ওর মধ্যে একটা পোস্ট ছিল ২১ শে ফেব্রুয়ারির একটা অ্যাড নিয়ে যেখানে পোস্টদাতা বলেছিলেন এই অ্যাডটা বানিয়ে কি বাচ্চাদের চুরি শেখানো হচ্ছে না!! পোস্টটা খুব মজার ছিল।

এইভাবেই ব্লগের প্রতি ভালবাসা জন্মে যায় তারপর আউলা আমাকে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে দিল। ও প্রথমে আমাকে বললো, কি নাম নিবি? আমার তাৎক্ষণিক চানাচুর নামটাই মনে এসেছিল তাই বললাম। ও শুনে হাসল। এরপর ব্লগ শিরোনাম দিলাম ডালভাজা। দুঃখের বিষয় এই যে, প্রথমে আমি বাংলা লিখতে পারতাম না।

আস্তে আস্তে আমি বিজয় দিয়ে টাইপ করতাম। ছোট ছোট পোস্ট দিতাম। প্রথম পোস্টটা ছিল, বেগুন ভর্তা। চিটিং করেছিলাম অবশ্য। নয়টা কমেন্ট পেয়েছিলাম।

এত ভাল লেগেছিল এসএসসি পরীক্ষার পর আমি ধুমসে ব্লগিং করতাম। একটার পর একটা পোস্ট দিতাম। তখন তো আর এত ইউজার ছিলনা। যারা যারা ব্লগিং করতো মোটামুটি আমাকে চিনতো আমার পচাধচা পোস্টগুলোর জন্য। কিছুদিন পর উদাসী স্বপ্ন নামে এক ব্লগার আসলো।

তার সাথে সাধারণ নামে আরেক ব্লগার আমাকে ছেলে ভেবে এম্নিতেই পচাচ্ছিল। আমার ব্যাপারটা বেশ মজা লাগছিল তখন। অনেককেই দেখতাম আমাকে চানাচুর ভাই বলতো। আমি আর কারো ভুল ভাঙ্গাতাম না। কলেজে ভর্তি হবার পর প্রথমদিকে আমার কিছুই ভাল লাগতো না।

খুব একটা মেলামেশা করতাম না সবার সাথে। পিছন দিকের আলো বাতাস সমৃদ্ধ একটা জায়গায় সবসময় বসতাম। বসে বসে পুরো ক্লাস শুদ্ধু ছেলে মেয়েদের পর্যবেক্ষণ করতাম। আমার পর্যবেক্ষণে ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়া মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেক বেশি ম্যাচিউরড। তাই চানাচুরও বিভিন্ন ধরনের ছেলেমানুষী পোস্ট দিয়ে বেড়াতো।

আমার পোস্ট হাসান ভাইয়া ওরফে র্যা ভেন ওরফে গন্ডার সব সময় রেটিং এক দিতো। অনেক বকা ঝকাও করতো। আউলার সাথে আমার ঝগড়া হলে পোস্ট দিয়ে দিতাম। এজন্য আউলা সবসময় আমার ভয়ে তটস্থ থাকতো। মাঝে রাগুদি আর আমার দোস্ত উদাসী স্বপ্ন বান্দর গ্রুপ খুলেছিল।

আমাকে ইনভাইটেশন পাঠিয়েছিল কিন্তু আমি জয়েন করতে পারছিলাম না কারণ আমার মেইল আইডিটা আমার আসল নাম দিয়ে খোলা ছিল আর সেটা মেয়েদের নাম। আর আমার ভয় ছিল জয়েন করলে যদি মেইল আইডি দেখা যায় তাহলে তো আমি ধরা খেয়ে যাবো। আর এদিকে আমাকে দুইবার ইনভাইটেশন পাঠিয়েছিল। তাই আমি তখন প্রাণ চানাচুর নিকটা খুলে ব্লগিং করলাম আর বান্দর গ্রুপে জয়েন করলাম। ব্লগে প্রথমদিকে আহামাদ মুজতবা নামে এক ব্লগারের সাথে ঝগড়া ছিল।

ছেলেটা খুব গালি দিতো। পরে অবশ্য ঠিক হয়ে গেছিল। আর কিছু লোকের তো সবসময় এম্নিতেই প্রবলেম আছে, তখনও ছিল আরকি! নাম নিলাম না অনেকের সাথেই তাদের প্রবলেম! আমারো অবশ্য প্রবলেম আছে। ব্লগে এসে অনেক মানুষকে জেনেছি। অনেক খারাপ মানুষ ব্লগে এসে সাধু সাজে আর অনেক ভাল মানুষ নীতিহীন হয়ে যায় পরিস্থিতির শিকার হয়ে।

তবে খারাপ যে তার রূপটা ঠিকই বাইরে চলে আসে। ব্লগার আসিফ ভাইয়া যাকে ব্লগে আসার পরই জানলাম উনি আমাদের প্রতিবেশী। আগে আমরা একে অন্যকে চিনতাম না। কি আজিব ব্যাপার! আগে কোনো ঘটনা হলেই চিল্লাচিল্লি করতাম ব্লগে এসে। এখন আর তা করিনা তেমন, এনার্জিও পাইনা।

কাগজে লিখে সে¬টাকে কুটিকুটি করে ছিঁড়ি। টানা ২বছর ধরে ব্লগের এই নেশাটা আছে। জানিনা আর কতদিন থাকবে। কত অসাধারণ মানুষকে এই ব্লগে পেয়েছি। এখন আসিই ব্লগে কিছু প্রিয় মানুষ কেমন আছে কি করছে দেখতে।

আগের মত আর মজা পাইনা। ব্লগ নিয়ে যে কত সুখ স্মৃতি আছে বলে শেষ করা যাবেনা। আর ব্লগেই অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা যেমন গালি খেয়েছি যা জীবনে খাইনি। (অবশ্য যখন গালি খেয়েছি তখন ছেলে হিসেবে ছিলাম) অনেককিছু জেনেছি ব্লগ থেকে। যেমন: দেশপ্রেম কি জিনিস বুঝতামই না।

ব্লগে এসে দেখলাম দেশপ্রেম কেমন হয়। ধর্ম আর দেশ নিয়ে মানুষ কতটা নিচে নামতে পারে এখানে দেখলাম। সাথে ব্লগ পলিটিক্সটাও বুঝছি ভালভাবে। এই ব্লগটা এখন একটা পরিবারের মত হয়ে গেছে সেটা টের পেলাম ১৬ ডিসেম্বরে। টিভিতে যখন ব্লগারদের দেখতে পারলাম না খারাপ লেগেছে অনেক।

আমার এখনও দুইবছর হয় নি। তার আগেই পোস্টটা দিয়ে দিতে হলো। আরো অনেককিছু বলার ছিল.....বলতে পারলাম না......কিছু প্রিয় ব্লগার হারিয়ে গেছে। তাদের অনেক মিস করি। তারা ফিরে আসুক আবার..... আরেকটা কথা আমার কমেন্ট ভাল না লাগলে মুছে দিবেন।

আমি কিছু মনে করবো না। আর আমিও একই কাজ করবো। কয়দিন বাঁচি আল্লাহই জানে। ভাল থাকবেন সবাই।
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।