আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রসূলের (দঃ) প্রবীণতম সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)

পরাজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে, স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না ।

“আমি ইসলামের সন্তান। আদমের বংশধর। ” বংশ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ইসলাম গ্রহণের পর এভাবে যিনি উত্তর দিতেন দ্ব্যর্থকণ্ঠে তিনি হলেন ধার্মিক, রহস্যময়, ফকীহ, জ্ঞানী এবং দরবেশ হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)। তিনি ছিলেন প্রবীণতম সাহাবী।

তিনি হিজরতের পরপর ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সালমান ফারসী নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ফারেস বলা হয় পারস্যকে, যার অপর নাম ইরান। পারস্যের কোন্ স্থানে সালমানের জন্ম সে সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তার জন্মস্থান রামহরমুজ যা আহওয়াজ, শওর ও ইস্পাহানের মিলন পথে ফোজিস্থানে অবস্থিত।

আবার কারো কারো মতে ইস্পাহান এলাকায় অবস্থিত ‘জী’ নামক একটি গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। প্রথমে তার নাম ছিল মাবা ইবনে বুজ খাতান ইবনে মোরসালান ইবনে বাহবুজান ইবনে ফিরোজ। ইসলাম গ্রহণের পর তার কুনিয়াত বা ডাকনাম হয় আবু আবদুল্লাহ। হযরত সালমান ফারসী (রা)ঃ এর পিতা ছিলেন গ্রাম প্রধান। সে ছিল ঐ এলাকার সবচেয়ে ধনী এবং বৃহৎ অট্টালিকার বাসিন্দা।

তার পিতা তাকে এতবেশী ভালবাসতো যে তাকে এক প্রকার গৃহবন্দী করে রাখতো ফারসী (রাঃ) কে হারানোর ভয়ে। জানা যায়, সালমান (রাঃ) প্রথমে অগ্নি উপাষক ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, তার জাতির লোকেরা ‘আবলাক’ নামক অভিজাত ঘোড়ার পূজা করত। আগেই বলা হয়েছে, তার পিতা অত্যন্ত ধনী ছিলেন। তার ছিল বিপুল জায়গা-জমি যা দ্বারা প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো।

তিনি নিজেই তার জায়গা-জমি দেখাশুনা করতেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে সালমানের (রাঃ) অবস্থা ও চিন্তাধারা সম্পর্কে এটুকু জানা যায় যে, তার দেশে অবস্থানকালে একজন সন্ন্যাসীর সাথে তার ভালবাসা হয়ে যায় এবং তিনি এই সন্ন্যাসীর মতবাদ বিশ্বাসকে উত্তম মনে করতে থাকেন। তাই সাধারণতঃ তিনি সন্ন্যাসীর খেদমতে নিয়মিত উপস্থিত হতে থাকেন। তাকে তিনি এত গভীরভাবে ভালবাসতে থাকেন যে, এক সময় তিনি নিজের ঘরবাড়ী ত্যাগকরতঃ সন্ন্যাসীর সঙ্গী হয়ে যান। ঘটনাচক্রে তিনি রাস্তা ভুলে গিয়ে সন্ন্যাসী হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন এবং মদীনা হতে সিরিয়া আগত খ্রীষ্টানরা তার সাথে প্রতারণা করতঃ তাকে মদীনায় নিয়ে গোলাম করে রাখে।

অপর বর্ণনা মোতাবেক, সালমান দ্বীনের সন্ধানে সফরে বের হন এবং সর্বপ্রথম তিনি নাসারা খ্রীস্টানদের ধর্মে দীক্ষিত হন। তাদের বই পুস্তকাদি পাঠ করেন এবং এই ধর্মে বহু কষ্ট নির্যাতন ভোগ করেন। অতঃপর তিনি আরবদের হাতে বন্দী হন। তারা তাকে ইহুদীদের হাতে বিক্রি করে। আরও একটি বর্ণনা হতে জানা যায় যে, হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) সিরিয়া গমন করার পর একজন খ্রীষ্টান পাদ্রীর নিকট অবস্থান করেন।

সেখানে তিনি খ্রীস্ট ধর্মে দীক্ষিত হন। তিনি লোকদেরকে দান-খয়রাত করার উপদেশ দিতেন। সালমান (রাঃ) লক্ষ্য করলেন ঐ পাদ্রী মহোদয় দুর্নীতিগ্রস্ত ও অসৎ। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার জন্য তার কাছে লোকজন যা দিতো তা জমা রাখতেন তিনি নিজের কাছে। এভাবে তিনি পুঞ্জিভূত করেন অনেক স্বর্ন মুদ্রা।

পাদ্রী যখন মারা যান, তখন সালমান (রাঃ) লোকজনকে তার দুর্নীতির কথা প্রকাশ করেন। এরপর সালমান (রাঃ) নতুন পাদ্রীর কাছে বায়াত হন। নতুন পাদ্রীও যখন মারা যান তখন তিনি মোসেল, নিসিবিস, আমুরিয়া প্রভৃতি স্থানে ঘুরে বেড়ান। আমুরিয়ার একজন খ্রীষ্টান সাধক তাকে জানান যে, শেষ নবীর আগমন হয়েছে যার কথা “নিউ টেস্টামেন্ট (জোহান ১ঃ১৯ঃ২৫) এ বলা হয়েছে। যিনি ‘‘জাতুন নাযল’ ভূখণ্ডে হিজরত করে আসবেন।

তিনি সদকা গ্রহণ করবেন না। আমুরিয়া হতে কতিপয় ইহুদী সালমানকে (রাঃ) ওয়াদিউল কোরা নামক স্থানে নিয়ে আসেন এবং সেখান হতে বনী কোরাইজার এক ব্যক্তি তাকে মদীনায় নিয়ে আসে। (উল্লেখ্য, তখন মদীনার নাম ছিল “ইয়াছরিব” যার কথা আমেরিকার খ্রীষ্টান সাধক বর্ণনা করেছিলেন। ) মদীনায় তার অবস্থানকালেই হিজরতের ঘটনা ঘটে। সালমান (রাঃ) সব খবরাখবর শোনার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হন এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।

মদীনায় আগমনের পর সালমান ফারসী (রাঃ) কিভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হন - এ সম্পর্কে আরো বর্ণনা পরিলক্ষিত হয়। মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে সালমান (রাঃ) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। খন্দকের যুদ্ধে তিনি নিজেকে একজন যুদ্ধ কৌশলের উদ্ভাবক/ প্রবক্তা হিসাবে প্রমাণ করেন। তিনিই খন্দকের ধারণা দেন। তাই যখন কোরেশ নেতা আবু সূফিয়ান খন্দকে অবলোকন করলেন তখন মন্তব্য করেন- “এই কৌশল আরবরা আগে ব্যবহার করেনি।

” এরপর সালমান (রাঃ) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে অন্য সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) খুব সাদাসিধে জীবন-যাপন করতেন। তার কোন স্থায়ী আবাসস্থল ছিল না। তিনি হয় গাছের নীচে নতুবা দেয়ালের পাশে রাত্রী যাপন করতেন। বাগদাদের নিকটে একটি এলাকার গভর্নর হিসাবে তিনি পাঁচ হাজার দিরহাম বৃত্তি পেতেন।

কিš' তিনি পুরোটাই সদকা হিসাবে বিতরণ করতেন। তিনি সবসময় নিজ উপার্জন দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। একবার কিছু লোক মদীনায় এসে যখন সালমান (রাঃ) খেজুর গাছের নীচে কাজ করতে দেখলেন, তখন তারা বললেন, “আপনি এখানকার নেতা এবং আপনার ভবিষ্যৎ নিশ্চিত তবুও আপনি এই সমস্ত কাজ করছেন?” সালমান (রাঃ) উত্তরে বললেন- “আমি নিজ হাত কাজ দ্বারা অর্জিত আয় দ্বারা খেতে পছন্দ করি। ” সালমান ফারসী (রাঃ) সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সালমান আমার আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত এবং তিনি তাদের একজন জান্নাত যাদের আগমনের প্রত্যাশী। সালমান (রাঃ) এর প্রজ্ঞা ও জ্ঞান সম্পর্কে হযরত আলী (রাঃ) মন্তব্য করেন- “সালমান (রাঃ) ছিলেন হযরত লোকমান (আঃ) এর মত জ্ঞানী।

” অবশ্য ইমাম জাফর সাদেকের (র) মতে, “তিনি লোকমান (আঃ) এর চেয়েও বেশী জ্ঞানী ছিলেন। ” সালমান (রাঃ) জরথ্রস্টবাদ, খ্রীষ্টান ধর্ম এবং ইসলাম- এই তিনটি প্রধান ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানী ছিলেন। কোরানের কিছু অংশ তিনি ফারসী ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি কোরান বিদেশী ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.