আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একুশ আমাদের চেতনা, আমাদের গর্ব

নিরব যোদ্ধা।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি...। একুশ বাংলাদেশের মানুষের হাজার বছরের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। আমাদের সংগ্রামী চেতনায় দিপ্ত শপথের এই দিন। আজ একুশের চেনতার কথা গোটা বিশ্বাবাসীর কাছে পৌঁছে গেছে।

যে একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের মানুষ, বাঙালির গর্বের দিন, আজ তা গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে এক আদর্শের সংগ্রামের প্রতীক একটি দিন। নতুন সহস্রাব্দের শুরু থেকেই একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। বিশ্বের মানুষ অবাধ বিস্ময়ে স্মরণ করবে বাংলার সেইসব অকুতোভয় চিরঞ্জীব মানুষকে যারা মাতৃভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিতে পেরেছে। আর সেই মহান আত্মত্যাগের বীরগাথা চিরকাল তাদের আদর্শ সংগ্রামে প্রেরণা যোগাবে। ইতিহাসের নজিরবিহীন এ ঘটনা, যার মাধ্যমে বাংলা ভাষা মর্যাদা সম্পন্ন ভাষা হিসেবে বিশ্ববাসীর স্বীকৃতি পেল।

আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৫২ সালে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে রাজপথে নেমেছিল এদেশের ছাত্র জনতা, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দেয়ার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকার রাজপথ সিক্ত হয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউদ্দীনসহ নাম না জানা অনেক বীর শহীদদের রক্তে। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সেদিন এই বাংলার সাহসী তরুণেরা অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে রাজপথ অঙ্কিত করেছিল। চির নিদ্রায় শায়িত হল বাংলার বীর দামাল ছেলেরা, রেখে গেল আমাদের জন্য একটি পবিত্র ও স্বদেশ গড়ার দিকনির্দেশনা। এই শহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসে সংযোজিত হয়েছে নতুন ইতিহাস। বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালি নতুন পরিচয়ে অভিষিক্ত হয়েছে।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির মাএ এক বৎসরের মধ্যেই, মোট জনসংখ্যার শতকরা ৬৩ ভাগ মানুষ বাংলা ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও, উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে গন্য করার প্রস্তাব আসে। সে প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ করে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারন এবং সেই থেকে বাংলাকে মাতৃভাষায় প্রতিষ্ঠিত ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভের প্রয়াসে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম চলতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী জনতা শপথ নেয়, যে কোন মূল্যে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর তাই ১৯৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। কর্মসূচী অনুসারে সেদিন বাংলার ছাত্রনেতারা এমএলএ’দের কাছ থেকে বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংসদ ভবন অভিমুখে যাবার ঘোষণা দেন।

ততকালীন সরকার এ আন্দোলন সামাল দিতে ১৪৪ ধারা জারি করে সভা-সমাবেশ-মিছিলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু সেদিন পূর্ব বাংলার মানুষ মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সরকারের কোন কথাই তাদের দমাতে পারেনি। সেই আইন ভেঙ্গে দলে দলে লোক মিছিল নিয়ে এগুতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা থেকে সর্বদলীয় জনতার মিছিল বের হলে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় মিছিলের উপর, হত্যা করে ছাত্র জনতাকে।

ভাষার প্রশ্নে সেদিনের আন্দোলনের কর্মসূচী বানচাল করতে পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলিতে নিহত হয় সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ নাম না জানা অনেক বাংলা মায়ের সন্তান। জীবন দিয়ে তারা সেদিন বিশ্ববাসীকে এই সত্যই জানিয়ে দিয়েছিল যে বাংলার জাগ্রত বিবেককে বন্দুক আর গুলি দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে না। তাই এত অত্যাচার নির্যাতনের পরও পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি গোষ্ঠীর মুখের ভাষা বাংলাকে সেদিন রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে উর্দুর সঙ্গে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে মর্যাদা দেয়া হয়।

একুশের চেতনা, অঙ্গীকার ও মনোবল তাই চিরদিন বাংলাদেশের মানুষকে পথ দেখাবে, সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা ও সাহস যোগাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।